লোনা পানিই ভরসা উপকূলের মাঝি-মাল্লাদের


প্রকাশিত: ০৪:৪৬ এএম, ০৪ নভেম্বর ২০১৬

নদী থেকে কলস ভর্তি করে পানি নিয়ে যাচ্ছেন জেলেপুত্র সুমন। কাদামাখা আর লবণাক্ত এই পানিই সবাইকে পান করতে হবে দুপুরে। শুধু একটি দুপুরই নয়, এই পানি পান করেই গভীর সমুদ্রে দীর্ঘ একটি মাস কাটাতে হবে ট্রলারের মাঝি-মাল্লাদের।

শুধু সুমনদের নয়, এমন অবস্থা উপকূলের সব জেলের। সাগরের এই নোংরা পানি পান করেই জীবনের প্রায় সবক’টি দিন কাটিয়ে দিতে হচ্ছে উপকূলের জেলেদের। বিশুদ্ধ পানির কোনো ছোঁয়া পাচ্ছেন না তারা। অথচ পানির সমারোহেই ভরা উপকূল। আর এই পানির মধ্যেই যাদের জীবন-সংসার খোদ তারাই ভুগছেন বিশুদ্ধ পানির সংকটে।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, বিশুদ্ধ পানির সঙ্কট রয়েছে উপকূলীয় অঞ্চলের জেলে পল্লীগুলোতে। নিত্য কাজে লবণ পানিই তাদের একমাত্র ভরসা। দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়েও মিলছে না একটি গভীর নলকূপ। কোথাও কোথাও দেখা মিললেও তাতে পানি আসে না। অধিক ব্যবহার, অযত্ন আর পরিচর্যার অভাবে বিকল হয়ে পড়েছে জেলেপাড়ার গভীর নলকূপগুলো। ফলে নদীর লবণাক্ত পানিই তাদের একমাত্র ভরসা। উপকূলের বিস্তীর্ণ এলাকা ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে।

water

জেলেরা জানান, চাল-ডাল-তেল-মরিচসহ প্রয়োজনীয় সব পণ্য নিয়ে কমপক্ষে ১৫ দিন থেকে ৩ মাসের জন্য তারা নদী বা সাগরে মাছ ধরতে যান। কিন্তু তারা বিশুদ্ধ পানি নিতে পারেন না। জেলেরা যে উপকূল থেকে সাগরের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেন সেখান থেকে গভীর নলকূপ অনেক দূরে। তাই দীর্ঘ এ সময় নদীর পানির ওপরেই ভরসা রাখতে হয় তাদের। তবে পানিকে ফুটিয়ে কিংবা ফিটকারি দিয়েই বিশুদ্ধ করে নেন তারা। এছাড়া তাদের আর কোনো উপায় থাকে না।

জেলেদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপকূলীয় অঞ্চলে জেগে ওঠা চরাঞ্চলগুলোতে বিশ্বমানের কোনো বেড়িবাঁধ নেই। নদীতে জোয়ারের পানি সামান্য বৃদ্ধি পেলেই পুরো চরাঞ্চল প্লাবিত হয়ে যায়। এলাকায় সব পুকুর ও জলাশয়ে ঢুকে পড়ে লবণ পানি। অনেক সময় সেইসব পানি পান করেও থাকতে হয় তাদের। ফলে পেটের পীড়া, অ্যালার্জিসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন জেলেরা।  

উপকূলজুড়ে দেখা গেছে, এলাকায় অপেক্ষাকৃত ধনী ব্যক্তিদের বাড়িতেই দুই-একটি গভীর নলকূপ রয়েছে। নদী ভাঙনের কারণে আগে-ভাগেই তারা অন্যত্র চলে যাওয়ায় বাড়ির আঙিনায় থেকে যাওয়া নলকূপগুলোর কেউ পরিচর্যা করেন না। ফলে অল্প সময়েই অকেজো হয়ে পড়ে নলকূপগুলো। তাছাড়া নদীর পাড় থেকে বিশুদ্ধ পানির এই কলগুলোর দূরত্ব অনেক। সে কারণে জেলেরা বিশাল পথ পাড়ি দিতে চান না।

জানতে চাইলে হাতিয়ার বয়ারচরের জেলে আব্দুল জলিল জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমাদের পানির এ সমস্যা আজকের না। এক সময় আমরা সাগর বা নদী থেকে ফিরলে খবর পেয়ে এলাকার দরিদ্র মানুষেরা মাছ কুড়াতে যেতো। তখন যে আমাদের জন্য এক কলস পানি নিয়ে আসতো তাকে আমরা এক কলস মাছ দিয়ে দিতাম। তখন পানির যে সংকট ছিল এখনো তা কমেনি।’

water

উপকূলের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন উপকূল বাঁচাও আন্দোলনের (উবা) সদস্যসচিব সারোয়ার হোসেন হৃদয় জাগো নিউজকে বলেন, ‘উপকূলজুড়েই পানির সমস্যা রয়েছে। বিশেষ করে ভাঙনের কারণে নদী তীরবর্তী এলাকায় গভীর নলকূল পাওয়া যায় না। এক্ষেত্রে পানি ফুটিয়ে কিংবা ফিটকারি দিয়ে বিশুদ্ধ করা ছাড়া অন্য কোনো উপায় নেই।’  

পানিসম্পদ পরিকল্পনা সংস্থার (ওয়ারপো) তথ্যানুযায়ী, দেশের পশ্চিম উপকূলীয় ১৩টি জেলার ছয়টিতে সুপেয় পানির সংকট তীব্র। এগুলো হলো- খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, পটুয়াখালী ও বরগুনা। এছাড়া দক্ষিণ উপকূলের চরাঞ্চলগুলোতে এ সমস্যা প্রকট।  

চরচেঙ্গা ঘাটের মাঝি আয়রুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘আসলে বড়বড় নৌকাগুলো দুই-তিন মাসের জন্য নদীতে মাছ শিকারে যায়। এ দীর্ঘ সময় তারা সাগরে থাকেন। গভীর নলকূপের পানি সংগ্রহ করে নিলেও সেগুলো শেষ পর্যন্ত বিশুদ্ধ থাকে না।’ 

এমএসএস/জেডএ/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।