কুড়িগ্রামে জজকোর্টের কর্মচারীকে ভ্রাম্যমাণ আদালতে দণ্ড
কুড়িগ্রাম জেলা জজ আদালতের ক্যাশিয়ার মো. আনসার আলী ও অফিস সহায়ক মো. মোশারফ আলীকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের (মোবাইল কোর্টে) মাধ্যমে দণ্ড প্রদান করা হয়েছে।
কুড়িগ্রাম জেলা জজ আদালতের কর্মচারীদের ঈদুল ফিতরের উৎসব ভাতা পাঁচ লাখ ৮০ হাজার ১৩০ টাকা ব্যাংক থেকে উত্তোলন করে রিকশা দিয়ে যাওয়ার সময় ওই দুই কর্মচারীকে এ দণ্ড দেয়া হয়।
এদিকে, ভ্রাম্যমাণ আদালতে জজকোর্টের কর্মচারীকে দণ্ড দেয়ার পর কুড়িগ্রাম জেলায় কর্মরত জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রাবেয়া সুলতানা তার ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। এরপর এ বিষয়ে সুপ্রিমকোর্টের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
সূত্র জানায়, ৫ মে সোনালী ব্যাংক লিমিটেড, কুড়িগ্রাম শাখা থেকে আসন্ন পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে কুড়িগ্রাম জেলা জজ আদালতের কর্মচারীদের উৎসব ভাতা ৫ লাখ ৮০ হাজার ১৩০ টাকা উত্তোলন করে রিকশায় করে আদালতের দিকে যাওয়ার পথে আদর্শ পৌর বাজার নামক স্থানে পৌঁছালে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট অভিজিৎ চৌধুরী রিকশাচালককে থামিয়ে তাদের দোষী সাব্যস্ত করে ২০০ টাকা জরিমানা প্রদান করেন।
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, নির্দেশ মতে রিকশা থামালে ম্যাজিস্ট্রেট তাদের জিজ্ঞেস করেন, কেন তারা দু’জন রিকশায় উঠেছেন? যাত্রীরা বলেন, ‘আমরা দু’জন জেলা জজ আদালতের কর্মচারী। আমরা সরকারি কাজের অংশ হিসেবে আদালতের কর্মচারীদের ঈদ বোনাস উত্তোলনের জন্য ব্যাংকে গিয়েছি। আমাদের সঙ্গে ৫ লাখের বেশি টাকা। এতগুলো টাকা একজনের পক্ষে নিয়ে যাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ হয় বলে আমরা দু’জনে নিয়ে যাচ্ছি।’
উল্লেখ্য, জেলা জজ আদালত কিংবা চিফ জুডিসিয়াল আদালতের কর্মচারীদের বেতন সাধারণত ব্যাংক থেকে উঠিয়ে রেভেনিউ স্ট্যাম্প সংবলিত রেজিস্ট্রারের স্বাক্ষর গ্রহণপূর্বক ক্যাশিয়ার অন্যান্য কর্মচারীদের মাঝে বেতন বণ্টন করে থাকেন।
কিন্তু দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাদের কথা না শুনে দু’জন রিকশায় ওঠায় সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইন-২০১৮ এর ২৫(১)(খ) ধারায় বর্ণিত অপরাধ সংঘটন করেছেন মর্মে উল্লেখে উক্ত আইনের ২৫(২) ধারা মোতাবেক যাত্রীদের একজনকে (মো. মোশারফ আলী) দোষী সাব্যস্তক্রমে ২০০ টাকা জরিমানা করেন।
এ বিষয়ে মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) চেয়ারম্যান সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইন, অনুযায়ী কোনো মানুষের চলাচলের স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপ করার কোনো সুযোগ নেই। আর মোবাইল কোর্টে সাজা দেয়ার তো প্রশ্নই আসে না। এটা সংবিধান পরিপন্থি। উচ্চ আদালতে গেলে এ বিষয়ে মোবাইল কোর্টের দেয়া সাজা সম্পূর্ণ অবৈধ হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এখানে জজকোর্ট মুখ্য বিষয় না, কোনো সাধারণ মানুষকে মোবাইল কোর্টে সাজা দেয়ার কোনো এখতিয়ার নেই। এটা সম্পূর্ণ বেআইনি। আমি ঘরে বসে থাকব, নাকি কোথায় যাব এই স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপ করার কোনো সুযোগ নেই রাষ্ট্রের বা সরকারের।’
মনজিল মোরসেদ বলেন, ‘এখন করোনার প্রাদুর্ভাবে দেশে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা হচ্ছে, সেটা সঠিক আইন মেনে করা হচ্ছে না। যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি বা নির্দেশনা না নিয়ে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা অবৈধ।’
এফএইচ/এফআর/এমকেএইচ