রিফাত হত্যা: খালাস চেয়ে মিন্নির জেল আপিল

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৮:৪৩ এএম, ২০ জানুয়ারি ২০২২
ফাইল ছবি

বহুল আলোচিত বরগুনার রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি খালাস চেয়ে জেল আপিল করেছেন হাইকোর্টে।

মিন্নির এ জেল আপিলের অ্যাডমিশনের (গ্রহণযোগ্যতার) ওপর শুনানির জন্য বৃহস্পতিবার (২০ জানুয়ারি) হাইকোর্টের কার্যতালিকায় রয়েছে।

জেল আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করলে নিয়মিত আপিল ও জেল আপিল এবং মৃত্যুদণ্ডাদেশ অনুমোদনের বিষয়ে ডেথ রেফারেন্সের শুনানি একইসঙ্গে হবে বলে জানিয়েছেন আইনজীবী এ এম জামিউল হক ফয়সাল। তিনি জানান, শুনানিতে থাকবেন আইনজীবী মো. জহিরুল ইসলাম (জেড আই) খান পান্না।

নিয়ম অনুযায়ী, এ মামলার পেপারবুক তৈরি হওয়ার পর প্রধান বিচারপতি মামলার শুনানির জন্য বেঞ্চ নির্ধারণ করেন। তখন এ মামলার আপিল শুনানি শুরু হবে।

২০২০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলার প্রাপ্তবয়স্ক ১০ আসামির রায় ঘোষণা করেন বরগুনার জেলা ও দায়রা জজ বিচারক মো. আছাদুজ্জামানের আদালত। রায়ে নিহত রিফাতের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিসহ ছয়জন অভিযুক্তকে ফাঁসির আদেশ দেন আদালত। এছাড়া মামলার অন্য চার আসামিকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়। বর্তমানে মিন্নিকে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখা হয়েছে।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- মো. রাকিবুল হাসান রিফাত ওরফে রিফাত ফরাজী, আল কাইয়ুম ওরফে রাব্বী আকন, মোহাইমিনুল ইসলাম সিফাত, রেজোয়ান আলী খাঁন হৃদয় ওরফে টিকটক হৃদয়, মো. হাসান ও আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি। খালাস পেয়েছেন মো. মুসা (পলাতক), রাফিউল ইসলাম রাব্বি, মো. সাগর ও কামরুল ইসলাম সাইমুন।

২০২০ সালের ৪ অক্টোবর ছয় আসামির মৃত্যুদণ্ডাদেশ অনুমোদনের জন্য {ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে পৌঁছায়}https://www.jagonews24.com/country/news/614784। পাশাপাশি ৬ অক্টোবর মিন্নিসহ অন্য আসামিরা আপিল করেন।

আইনজীবীরা জানান, ফৌজদারি মামলায় বিচারিক আদালত যখন আসামিদের মৃত্যুদণ্ড দেন, তখন ওই দণ্ড কার্যকরের জন্য হাইকোর্টের অনুমোদনের প্রয়োজন হয়। এজন্য সংশ্লিষ্ট বিচারিক আদালত ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৭৪ ধারা মোতাবেক মামলার সব নথি হাইকোর্টে পাঠিয়ে দেন, যা ডেথ রেফারেন্স নামে পরিচিত।

ওই নথি আসার পর হাইকোর্টের ডেথ রেফারেন্স শাখা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সংশ্লিষ্ট মামলার পেপারবুক প্রস্তুত করেন। পেপারবুক প্রস্তুত হলে মামলাটি শুনানির জন্য প্রস্তুত হয়েছে বলে ধরে নেওয়া হয়। তবে কোনো কোনো মামলার ক্ষেত্রে প্রধান বিচারপতির নির্দেশে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পেপারবুক তৈরি করা হয়।

২০১৯ সালের ২৬ জুন সকালে বরগুনা সরকারি কলেজ রোডের ক্যালিক্স অ্যাকাডেমির সামনে রিফাত শরীফকে কুপিয়ে জখম করে সাব্বির আহমেদ ওরফে নয়ন বন্ড, মো. রাকিবুল হাসান রিফাত ওরফে রিফাত ফরাজী এবং তাদের সহযোগীরা। ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন রিফাতের স্ত্রী মিন্নিও। গুরুতর অবস্থায় রিফাতকে প্রথমে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রিফাত মারা যান।

এরপর রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ বাদী হয়ে সাব্বির আহম্মেদ ওরফে নয়ন বন্ডকে প্রধান আসামি করে ১২ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত আরও পাঁচ-ছয়জনের বিরুদ্ধে বরগুনা থানায় হত্যা মামলা করেন। এ মামলায় প্রথমে মিন্নিকে প্রধান সাক্ষী করেছিলেন নিহত রিফাতের বাবা। পরে ২ জুলাই ভোরে জেলা সদরের বুড়িরচর ইউনিয়নের পুরাকাটা ফেরিঘাট এলাকায় পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ প্রধান আসামি নয়ন বন্ড (২৫) নিহত হন।

হত্যাকাণ্ডের ২০ দিন পর ১৬ জুলাই মিন্নিকে তার বাবার বাসা থেকে বরগুনা পুলিশ লাইনে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে এ হত্যায় তার সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে মনে হওয়ায় ওইদিন রাতেই মিন্নিকে গ্রেফতার দেখায় পুলিশ। একই বছরের ২৯ আগস্ট হাইকোর্ট মিন্নিকে জামিন দেন।

১ সেপ্টেম্বর ২৪ জনকে অভিযুক্ত করে প্রাপ্ত ও অপ্রাপ্তবয়স্ক, দুভাগে বিভক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়। এরমধ্যে প্রাপ্তবয়স্ক ১০ জন এবং অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ জন রয়েছেন। গত ১ জানুয়ারি প্রাপ্তবয়স্ক ১০ আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করা হয়। পরে সাক্ষ্যগ্রহণ, যুক্তিতর্ক শেষে ৩০ সেপ্টেম্বর রায় ঘোষণা করা হয়।

বিচার শেষে গত বছরের ২৭ অক্টোবর অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ জনের বিষয়ে রায় ঘোষণা করেন বরগুনা জেলা নারী ও শিশু আদালতের বিচারক মো. হাফিজুর রহমান। রায়ে ছয়জনকে ১০ বছরের কারাদণ্ড, চারজনকে পাঁচ বছর এবং একজনকে তিন বছরের কারাদণ্ড দেন। বাকি তিনজনকে খালাস দিয়েছেন আদালত।

এর আগে একই মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মিন্নির খালাস চেয়ে ফৌজদারি আপিল করেছিলেন তার আইনহীবী। সেটি ২০২০ সালের ৪ নভেম্বর শুনানির জন্য গ্রহণ করেছেন হাইকোর্ট।

একইসঙ্গে আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত জরিমানাও স্থগিত করেছেন। হাইকোর্টের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

মিন্নির আইনজীবী মাক্কিয়া ফাতেমা ইসলাম বলেন, মিন্নির পক্ষে খালাস চেয়ে আপিল কোর্টে উপস্থাপন করা হয়েছিল। আদালত আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেছেন এবং বিচারিক আদালতের দেওয়া ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড স্থগিত করা হয়েছে। অন্য আসামি মোহাইমেন ইসলাম সিফাতের আপিলও শুনানির জন্য গ্রহণ করা হয়েছে।

এফএইচ/এএএইচ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।