ঘুস-দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ

পেশা থেকে বিরত থাকতে বলা আইনজীবী মাহাবুবুলের পক্ষে রিট

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৪:১৭ পিএম, ২৪ অক্টোবর ২০২২

মানিকগঞ্জে ঘুস-দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও সহযোগীদের নিয়ে মানববন্ধন করা আইনজীবী মাহাবুবুল ইসলামকে ১৫ দিনের জন্য পেশা থেকে বিরত থাকতে আইনজীবী সমিতির সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট করা হয়েছে।

সোমবার (২৪ অক্টোবর) সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মো. আশরাফুল ইসলাম আশরাফ এ রিট দায়ের করেন। বিষয়টি জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেছেন আইনজীবী নিজে।

আবেদনে আইন সচিব, সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল, দুদকের চেয়ারম্যান, বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্টদের বিবাদী করা হয়েছে।

রিটে মানিকগঞ্জের আদালতে ঘুস-দুর্নীতির অভিযোগের বিষয় তদন্তের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। এছাড়া ওই আইনজীবীর বিষয়ে আইনজীবী সমিতিকে মানিকগঞ্জের জেলা জজের পাঠানো চিঠির বৈধতাও চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (২৫ অক্টোবর) হাইকোর্টের বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে এ রিটের ওপর শুনানি হতে পারে।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে বলা হয়, গত বুধবার (১৯ অক্টোবর) জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য মাহাবুবুল ইসলামকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন সমিতির সভাপতি জামিলুর রশিদ খান ও সাধারণ সম্পাদক নূরতাজ আলম বাহার। নোটিশে ১৫ কার্যদিবসের জন্য তাকে আইন পেশা থেকে বিরত থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়।

জানা যায়, ‘ঘুস, দুর্নীতি আর ন্যায়বিচার এক সাথে চলে না’ স্লোগান সম্বলিত লিফলেট বিতরণ ও সহযোগীদের নিয়ে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করার জন্য তাকে এই নির্দেশ দেওয়া হয়। তবে এই নির্দেশনা পাওয়ার পরপরই তিনি আবারও রাজপথে দাঁড়িয়ে এর প্রতিবাদ করেছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত ১০ অক্টোবর জেলার আদালত প্রাঙ্গণে মাহাবুবুল ইসলামের নেতৃত্বে মানিকগঞ্জ বারের কয়েকজন আইনজীবী বিচার বিভাগে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন। কর্মসূচিতে তারা দাবি করেন, এফিডেভিট করতে নির্দিষ্ট ফি থেকে অতিরিক্ত ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা আদায় করা হচ্ছে। এক হাজার টাকার কমে কোনো নকল সরবরাহ করা হচ্ছে না। রেকর্ড রুম থেকে নথি পেতে হলে অতিরিক্ত টাকা দিতে হয়। জেলার বিচার বিভাগের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর জন্য বিচারপ্রার্থীদের মামলা খরচ অনেক বেড়ে যায়।

লিখিত নোটিশে বলা হয়, মাহাবুবুল ইসলাম ও তার সহযোগী আইনজীবীদের কর্মকাণ্ডে বার ও বেঞ্চের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে। জেলা আইনজীবী সমিতির গঠনতন্ত্রের দ্বাদশ অধ্যায়ের ২০ এর ‘ক’ অনুচ্ছেদ লঙ্ঘন করেছেন।

মানিকগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট জামিলুর রশিদ খান বলেন, ‘আমরা সবাই ঘুস-দুর্নীতির বিরুদ্ধে। আইনজীবী মাহাবুবুল ইসলাম প্রতিবাদের নামে সিঙ্গাইর সিনিয়র সহকারী জজ আদালতের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেন। এর প্রেক্ষিতে গত ১৬ অক্টোবর সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ বিষয়টি জানতে চেয়ে সমিতিকে একটি পত্র দিয়েছেন। এ কারণে সমিতির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আইনজীবী মাহাবুবুল ইসলামের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’

এদিকে বুধবার বিকেলে নোটিশ পাওয়ার পরপরই প্রতিবাদে আদালত চত্বরের সামনে শহীদ রফিক সড়কে নেমে পড়েন আইনজীবী মাহাবুবুল ইসলাম। গলায় প্ল্যাকার্ড ঝুলিয়ে তিনি প্রতিবাদ করেন। প্ল্যাকার্ডে তিনি লেখেন, ‘ঘুসের চেয়ে ভিক্ষা উত্তম। করলাম প্রতিবাদ, হইলাম বহিষ্কার। আমাকে ভিক্ষা দিন।’

আইনজীবী মাহাবুবুল ইসলাম বলেন, ‘ঘুস-দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় আমাকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে। আদালতের বিচারকরা অসাধু কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের কথা প্রভাবিত হয়ে হয়রানি করছে। যেখানে প্রতিদিন ঘুসের কারবার চলে, এর বিরুদ্ধে কথা বললে নাকি বিচার বিভাগের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়। এই দেশের নাগরিক হয়ে আমরা আর কত অপরাধ সহ্য করবো।’

এফএইচ/বিএ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।