‘মামলায় আগ্রহ নেই পরিবেশ অধিদপ্তরের’
পরিবেশ আদালতে সাধারণ মানুষ অথবা পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো সরাসরি মামলা করতে পারে না। কেউ মামলা করতে চাইলে প্রথমে অধিদপ্তরের কাছে অভিযোগ জানাতে হয়। পরিবেশবাদীরা বলছেন, সেই অভিযোগ নিয়ে অধিদপ্তর আর মামলা করার ব্যাপারে আগ্রহ দেখায় না। কারণ মামলা করতে গেলে তাদের নিজেদের ব্যর্থতাই স্বীকার করে নিতে হয়।
ঢাকার বিভাগীয় পরিবেশ আদালতের সূত্র মতে, ২০০৩ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ঢাকার বিভাগীয় পরিবেশ আদালতে মামলা হয়েছে ৫৭৬টি। এরমধ্যে নিষ্পত্তি হয়েছে ৪৬৩টি। আর বিচারাধীন রয়েছে ১১৩টি।
পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চলতি আইন অনুযায়ী পরিবেশ আইনে মামলা করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তরকে। পরিবেশ অধিদপ্তর মামলা করার ব্যাপারে আগ্রহ দেখায় না। কারণ মামলা করতে গেলে তাকে (পরিবেশ অধিদপ্তর) ব্যর্থতাই স্বীকার করে নিতে হবে।
অপরাধের অনুসন্ধান, মামলা দায়ের ও তদন্ত পদ্ধতি
পরিবেশ আদালত আইনের ২০১০ সালের ১২ (১) ধারায় বলা হয়েছে, পরিবেশ আইনে বর্ণিত কোনো অপরাধ সংক্রান্ত বিষয় সাধারণভাবে একজন পরিদর্শক অনুসন্ধান করিবেন, তবে কোনো বিশেষ ধরনের অপরাধ বা কোনো নির্দিষ্ট অপরাধ সংক্রান্ত বিষয় অনুসন্ধানের উদ্দেশ্যে মহাপরিচালক, সাধারণ বা বিশেষ আদেশ দ্বারা, তাহার অধীন কোনো কর্মকর্তাকেও ক্ষমতা প্রদান করিতে পারিবেন।
১২ (২) ধারায় বলা হয়েছে, উক্ত পরিদর্শক বা কর্মকর্তা, অতঃপর অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা বলিয়া উল্লিখিত, কোনো ব্যক্তির লিখিত অভিযোগ বা অন্য যে কোনো তথ্যের ভিত্তিতে, মহাপরিচালকের নিকট হইতে এতদুদ্দেশ্যে ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তার অনুমোদন গ্রহণক্রমে, এই ধারার অধীন কার্যক্রম শুরু করিতে পারিবেন।
কার্যক্রম শুরুর পর অন্য ৯টি ধারায় বিস্তারিত ধারাবাহিকতা বর্ণনা করা হয়েছে। এসব ধাপ পেরিয়ে একজন কর্মকর্তা পরিবেশ আইনে উল্লিখিত কোনো অপরাধ সংঘটিত হইয়াছে মর্মে অভিযোগ সরাসরি স্পেশাল ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট দায়ের করতে পারবেন। এর ভিত্তিতে স্পেশাল ম্যাজিস্ট্রেট সংশ্লিষ্ট অপরাধ আমলে নিতে ও তার বিচার করতে অথবা ক্ষেত্রমতো, বিচারার্থ প্রেরণ করতে পারবেন।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান জাগো নিউজকে বলেন, পরিবেশ আইনে মামলা কম হওয়ার কতগুলো কারণ রয়েছে। তার মধ্যে প্রধান কারণ হচ্ছে, এ আদালতের এখতিয়ার স্পষ্ট না। এ আদালতকে কেবল পরিবেশ সংরক্ষণ আইনের অধীন অপরাধগুলো বিচার করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। পরিবেশ সংরক্ষণ আইনের অধীনে পরিবেশ সংক্রান্ত অপরাধের সংখ্যা খুব বেশি নেই। ফলে অনেক অপরাধ এই আদালতের এখতিয়ারের বাইরে থেকে যায়।
দ্বিতীয় বড় কারণ হচ্ছে, এখানে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তরকে মামলা করতে। পরিবেশ অধিদপ্তর মামলা করার ব্যাপারে আগ্রহ দেখায় না। কারণ মামলা করতে গেলে তাকে (পরিবেশ অধিদপ্তর) ব্যর্থতাই স্বীকার করে নিতে হবে।
তৃতীয় বিষয় হলো, আদালতটি বিচারিক আদালতে স্থাপন করা হয়েছে। যদি এটি উচ্চ আদালতে স্থাপন করা হতো তাহলে ভারতের ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইব্যুনাল বা কেনিয়ার পরিবেশ আদালতের মতো কার্যকর হতো। নিম্ন আদালতে যদি একটি মামলা জেতেন, সেখান থেকে আপনাকে জেলা আদালত, সেখান থেকে হাইকোর্ট, এরপর আপিল বিভাগে আসতে হবে। সাধারণত পরিবেশ দূষণকারীরা শক্তিশালী হয়। তাদের বিরুদ্ধে দুষণের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের এত লম্বা সময় দাঁড়িয়ে থাকা মুশকিল হয়ে যায়।
‘পরিবেশ আইনটা এমন একটা ব্যবস্থা করা হয়েছে সেখানে বিশেষায়িত জ্ঞানের বিচারক নেই। বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে বিচারকের সমন্বয়ে উচ্চ আদালতে এ বিচারের প্ল্যাটফর্ম করা যায়, তাহলে আমার মনে হয় পরিবেশগত অপরাধগুলো নিষ্পত্তিতে অনেক গতি আসবে। অনেক যুগান্তকারী দৃষ্টান্ত আমরা স্থাপন করতে পারবো।’
হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) প্রেসিডেন্ট অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ জাগো নিউজকে বলেন, পরিবেশ আইনে লঙ্ঘন করলে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে জরিমানা করা হচ্ছে। এতে অপরাধ কমছে না। পরিবেশ আইনের মামলা দিয়ে সাজা দিলে অপরাধ অনেকটা কমে আসবে।
পরিবেশ আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের কৌসুলি জানে আলম জাগো নিউজকে বলেন, পরিবেশ আদালতে যে মামলাগুলো আসে তা ঠিকঠাকভাবে চলছে।
মতামত নিতে পরিবেশ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (যুগ্ম সচিব) কাজী আবু তাহেরের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে বক্তব্যের জন্য মহাপরিচালকে ফোন দিন। আমি এ বিষয়ে কথা বলতে চাই না।
মহাপরিচালক ড. আবদুল হামিদকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেনি।
জেএ/এমএইচআর/জিকেএস