দিনাজপুরের পৌর মেয়র জাহাঙ্গীরের বরখাস্ত আদেশ হাইকোর্টে স্থগিত

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৩:৪৮ পিএম, ২১ নভেম্বর ২০২৩
ফাইল ছবি

আদালত অবমাননার মামলায় আপিল বিভাগের রায়ে এক মাস সাজা খাটা দিনাজপুর পৌরসভার মেয়র সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলমকে সাময়িক বরখাস্তের আদেশ এক মাসের জন্য স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট।

একই সঙ্গে তাকে বরখাস্তের আদেশ কেন অবৈধ ও বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন আদালত। সংশ্লিষ্টদের এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। এছাড়া জারি করা রুল শুনানির জন্য আগামী ৩ ডিসেম্বর দিন ধার্য করেছেন হাইকোর্ট।

মঙ্গলবার (২১ নভেম্বর) হাইকোর্টের বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আতাবুল্লাহর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

আদালতে আজ রিটের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়।

আরও পড়ুন>>> পদ ফিরে পেতে দিনাজপুরের বরখাস্ত হওয়া পৌর মেয়রের রিট

আইনজীবীরা জানান, ১২ অক্টোবর বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার রায় প্রসঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিমকে নিয়ে অশালীন মন্তব্য করার ঘটনায় দিনাজপুর পৌরসভার মেয়র সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলমকে এক মাসের কারাদণ্ড দিয়েছিলেন আপিল বিভাগ। ওইদিন (১২ অক্টোবর) আপিলের আদেশের পর দিনাজপুরের আদালতে আত্মসমর্পণ করেন দিনাজপুরের পৌর মেয়র। আদালত তাকে কারাগারে পাঠান। তখন এক লাখ টাকা জরিমানাও পরিশোধ করেন। কারাগারে থাকা অবস্থায় গত ৩১ অক্টোবর তাকে বরখাস্ত করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।

সম্প্রতি তিনি এক মাস সাজা খেটে বের হন। কারাগার থেকে বের হয়ে গতকাল তাকে বরখাস্তের আদেশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম। ওই রিটের ওপর শুনানি নিয়ে এই আদেশ দেন।

এর আগে গত ২৪ আগস্ট বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার রায় প্রসঙ্গে আপিল বিভাগের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিমকে নিয়ে অশালীন মন্তব্য করার ঘটনায় আপিল বিভাগে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেন জাহাঙ্গীর আলম। ওই ঘটনায় তাকে ব্যক্তিগত হাজিরা ও অভিযোগ থেকে অব্যাহতি না দিয়ে শুনানির জন্য আজকের দিন ধার্য করেন আপিল বিভাগ।

তার আগে গত ১৭ আগস্ট মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে তলব করেন আপিল বিভাগ। একই সঙ্গে আপিল বিভাগে বিচারাধীন বিষয় নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করায় তার বিরুদ্ধে কেন আদালত অবমাননার দায়ে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না এ মর্মে কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করেন সর্বোচ্চ আদালত। এছাড়া বিচারপতিকে নিয়ে মেয়র সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলমের বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে অপসারণ করতে বলা হয়।

জানা গেছে, গত ৩ আগস্ট বিএনপির ঘোষিত কর্মসূচি পালনকালে বক্তব্য দেন পৌর মেয়র জাহাঙ্গীর আলম। বক্তব্যে খালেদা জিয়ার মামলায় হাইকোর্টে রায় দানকারী বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিমকে নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করেন তিনি। শুধু বিরূপ মন্তব্য করেই থেমে থাকেননি। বিচারের রায় নিয়েও অবমাননাকর মন্তব্য করেন জাহাঙ্গীর আলম।

মেয়রের এ বক্তব্য সামাজিকমাধ্যমে প্রচার হয়। বিষয়টি নজরে আসায় তার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার আবেদন করেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সমিতির সদস্য শফিক রায়হান শাওন ও মাহফুজুর রহমান রোমানসহ চার আইনজীবী।

আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট শাহ মঞ্জুরুল হক। সেসময় তিনি বলেন, এভাবে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের একজন বিচারপতি ও মামলার রায় নিয়ে এ ধরনের মন্তব্য ধৃষ্টতা ছাড়া কিছুই নয়। এটা আপনাদের বিবেচনায় নেওয়া উচিত।

অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, ইনায়েতুর রহিম আপিল বিভাগের বিচারক। একজন বিচারপতি সম্পর্কে মেয়র যে ভাষায় গালিগালাজ করেছেন তাতে কোর্টের ইমেজ ক্ষুণ্ন হয়েছে।

মেয়রের পক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, পাবলিক মিটিংয়ে তিনি এ বক্তব্য রেখেছেন। তিনি তার বক্তব্য সম্পর্কে জ্ঞাত। তিনি এটা কনটেস্ট করতে চান না। এমনকি বক্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন।

সেসময় শুনানি শেষে মেয়রকে তলব করার নির্দেশ দেন আপিল বিভাগ। একইসঙ্গে বক্তব্যের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে অপসারণ করতে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দেন আদালত।

এফএইচ/এমআইএইচএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।