বেইলি রোডে আগুন

ভবনে অগ্নিনিরাপত্তা নিশ্চিতে কমিটি গঠনের নির্দেশ

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১২:৫৪ পিএম, ০৪ মার্চ ২০২৪
ফাইল ছবি

অগ্নিকাণ্ড রোধে আইন অনুসারে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে কি না এবং ভবিষ্যতে আরও কী কী পদক্ষেপ নেওয়া যায় সে বিষয়ে বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে দিয়েছেন হাইকোর্ট।

স্বরাষ্ট্র সচিবের নেতৃত্বে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি), রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ও বুয়েট বিশেষজ্ঞদের নিয়ে এ কমিটি গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তা আগামী চার মাসের মধ্যে জানাতে বলা হয়েছে।

রাজধানীর বেইলি রোডে সব আবাসিক স্থাপনায় রেস্টুরেন্ট বন্ধ ও ঘটনা অনুসন্ধানে বিচারিক কমিটি চেয়ে দায়ের করা পৃথক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে সোমবার (৪ মার্চ) হাইকোর্টের বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি কাজী জিনাত হকের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই আদেশ দেন।

আদালতে আবেদনের পক্ষে ছিলেন রিটকারী আইনজীবী ইউনুছ আলী আকন্দ ও আইনজীবী ইসরাত জাহান শান্তনা। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাশগুপ্ত।

আইনজীবীরা জানান, রাজধানীর বেইলি রোডে ভবনে অগ্নিকাণ্ডে ৪৬ জনের মৃত্যুর ঘটনা অনুসন্ধান এবং ঢাকার আবাসিক ও বাণিজ্য ভবনে অগ্নিনিরাপত্তা নিশ্চিতে কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এছাড়া অগ্নিঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোতে দৃশ্যমান স্থানে নোটিশ টানানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত।

আরও পড়ুন

এ বিষয়ে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাশগুপ্ত বলেন, আইনে অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধে পদক্ষেপগুলোর কথা উল্লেখ আছে। সেগুলো যথাযথভাবে নেওয়া হচ্ছে না। এ নিষ্ক্রিয়তা চ্যালেঞ্জ করে পৃথক রিট হয়। আদালত রুলসহ আদেশ দিয়েছেন। রুলে আইন অনুসারে পদক্ষেপ না নেওয়া কেন আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত করা হবে না তা জানতে চেয়েছেন।

এছাড়া অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধে আইন অনুসারে ব্যবস্থা নিতে বলেছেন। পাশাপাশি অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া সংক্রান্ত একটি কমিটি করে দিয়েছেন। সেই কমিটিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা বিভাগের সচিব, ঢাকার দুই সিটির প্রতিনিধি, ফায়ার সার্ভিসের ডিরেক্টর, বুয়েটের একজন প্রতিনিধি ও রাজউকের প্রতিনিধি থাকবে। কমিটিকে চার মাসের মধ্যে একটি প্রতিবেদন প্রস্তুত করে হাইকোর্টে দাখিল করতে হবে।

অতিম দাশগুপ্ত আরও জানান, ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে নিয়মিত নোটিশ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে হাইকোর্ট বলেছেন, অধিকাংশ সময় দেখা যায় এ নোটিশগুলো পকেটে রেখে দেওয়া হয়। এ নোটিশগুলো যেন দৃশ্যমান হয়, বিল্ডিংয়ে সম্মুখভাবে যেন টানানো থাকে, নোটিশ পড়ে যেন বোঝা যায় ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ। তাই দৃশ্যমান স্থানে নোটিশ টানানোর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।

২৯ ফেব্রুয়ারি রাত পৌনে ১০টার দিকে বেইলি রোডের ওই ভবনে অগ্নিকাণ্ডের খবর পায় ফায়ার সার্ভিস। সেখানে ১৩ ইউনিট কাজ করে রাত ১১টা ৫০ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এ অগ্নিকাণ্ডে নারী-পুরুষ-শিশুসহ ৪৬ জনের মৃত্যু হয়। এতে সাংবাদিক, আইনজীবী, শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ নানা বয়সী মানুষ রয়েছেন।

এ ঘটনায় বেইলি রোডসহ ঢাকা সিটিতে আবাসিক এলাকায় বাণিজ্যিক ব্যবসা (কার্যক্রম) বন্ধের নির্দেশনা, হতাহতদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশনা এবং তদন্তে বিচারিক কমিটি গঠনের নির্দেশনা চেয়ে রোববার (৩ মার্চ) রিট করেন আইনজীবী ইউনুছ আলী আকন্দ।

রিটে মন্ত্রিপরিষদ সচিব, গৃহায়ন ও গণপূর্ত সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক, ঢাকার দুই সিটির মেয়র, গ্রিন কোজি কটেজ ও আমিন মোহাম্মদ রিয়েল স্টেট প্রপার্টিকে বিবাদী করা হয়েছে।

আইনজীবী ইশরাত জাহানও একটি রিট করেন। রিটে রুল চাওয়ার পাশাপাশি ভবনটিতে আগুন লাগার কারণ উদঘাটন, সেখানে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ও জরুরি বেরোনোর পথ ছিল কি না— এসব তদন্তে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিশেষজ্ঞ সমন্বয়ে কমিটি গঠন ও আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশনা চাওয়া হয়।

এ ছাড়া ব্লাস্ট, আসক এবং বেইলি রোডে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিহত তানজিনা নওরীনের পরিবারের করা অপর রিটে রুল চাওয়ার পাশাপাশি বেইলি রোডে আগুনে নিহত ব্যক্তিদের পরিবার ও আহত ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া নিশ্চিতের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। এটি বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আতাবুল্লাহর হাইকোর্ট বেঞ্চে শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে।

এফএইচ/বিএ/জেডএইচ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।