হাসিনাসহ জড়িতদের গুরুত্বপূর্ণ কলরেকর্ড ফরেনসিক পরীক্ষার নির্দেশ

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে গণহত্যা চলাকালীন শেখ হাসিনাসহ অন্যদের পাওয়া কলরেকর্ডের ফরেনসিক পরীক্ষার (সিআইডিতে) নির্দেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। গণহত্যার মামলার সাক্ষ্য হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ডিজিটাল অথবা ইলেকট্রনিক এভিডেন্স যাচাইয়ে সিআইডি ও সংশ্লিষ্ট সকল সংস্থাকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছেন আদালত।
প্রসিকিউশনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ সংক্রান্ত বিষয়ে সোমবার (১৩ জানুয়ারি) ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এ আদেশ দেন। ট্রাইব্যুনালের অন্য সদস্যরা হলেন বিচারপতি শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মহিতুল হক এনাম চৌধুরী। আদালতে আজ রাষ্ট্রপক্ষের শুনানিতে ছিলেন প্রসিকিউটর বিএম সুলতান মাহমুদ। সঙ্গে ছিলেন প্রসিকিউটর তানভীর যোহা।
এ বিষয়ে প্রসিকিউটর বি এম সুলতান মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন, অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ও বিভিন্ন উৎস থেকে পাওয়া জুলাই-আগস্ট গণহত্যার সময়ে শেখ হাসিনাসহ জড়িতদের গুরুত্বপূর্ণ কলরেকর্ডের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য ফরেনসিক পরীক্ষার অনুমতি দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।
পরে এ বিষয়ে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, আজ কোর্টে প্রসিকিউটর টিমের পক্ষ থেকে তিনটি আবেদন শুনানির করা হয়েছে। রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে হত্যার একজন ও গাজীপুরের কোনাবাড়ীর এক হত্যায় দুই পুলিশকে গ্রেফতার দেখানো এবং ডিজিটাল কোনো তথ্য-উপাত্ত কোর্টে হাজির করার আগে এটার একটা সার্টিফিকেশনের প্রয়োজন হয়। আর এই সার্টিফায়েড অথরিটি হচ্ছে আমাদের সিআইডি। তারা এটা যাচাই-বাছাই করবে যে এটা সঠিক কি না অথবা এটা ভুয়া কি না অথবা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সি (এআই) দিয়ে তৈরি কি না। যাচাই-বাছাই ছাড়া এসব তথ্য-উপাত্ত কোর্টে জমা দেওয়া যায় না। এটা আন্তর্জাতিক এবং বাংলাদেশের উভয় আইনেই তা আছে। জুলাই-আগস্টের গণহত্যার বিষয়ে আমরা ডিজিটাল অনেক এভিডেন্স পেয়েছি। এখানে কলরেকর্ড, ভিডিওসহ অনেক ডিজিটাল এভিডেন্স আছে। এই ডিজিটাল এভিডেন্সগুলোকে ফরেনসিক চেক করার জন্য সিআইডির কাছে পাঠাতে আদালতের কাছে আবেদন করেছিলাম।
- আরও পড়ুন
- শেখ হাসিনাসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালের গ্রেফতারি পরোয়ানা
- হাসিনাকে ফিরিয়ে আনতে দিল্লিকে চিঠি, যা বললেন চিফ প্রসিকিউটর
তিনি বলেন, পাশাপাশি সরকারের কোনো প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতা বা অসহযোগিতার বিষয়ে আমরা কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দিচ্ছি না। কারণ এটা চলমান একটি প্রক্রিয়ার মধ্যে আছে, তথ্য সংগ্রহ চলছে। কারও বিরুদ্ধে ব্লেইম করার মতো অবস্থায় আমরা যাইনি। কোনো সংস্থা যদি তদন্তে সহযোগিতা না করে, সে বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার পদ্ধতি আছে।
তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন সূত্র থেকে ডিজিটাল সাক্ষ্য পাওয়ার পর, আমরা তা প্রথমে সাক্ষ্যমূল্য অনুযায়ী ছাঁটাই করেছি। সেই উপাত্তগুলোর ওপর (ডিজিটাল ) ফরেনসিক রিপোর্ট দেওয়ার জন্য সিআইডির কাছে পাঠানোর ব্যাপারে নির্দেশনা চেয়ে আমরা ট্রাইব্যুনালের কাছে একটি আবেদন করি। এ বিষয়ে শুনানি হওয়ার পর, তথ্যগুলো যাচাইয়ে সিআইডি ও সকল সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল।
চিফ প্রসিকিউটর বলেন, কিছু সংস্থার কাছে তথ্য চাওয়া হয়েছে। তবে সেটি হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলমান এবং কিছু ক্ষেত্রে জটিল ও সময়সাপেক্ষ। কিছু অফিসিয়াল তথ্য যথাযথভাবে পেতে যে সময় লাগার কথা, তার থেকে বেশি সময়ও লাগতে পারে।
তিনি বলেন, বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া কলরেকর্ড, অডিও, ছবি ও মেসেজ ইত্যাদি যেমন তথ্য হিসেবে বিবেচিত হয়, সেই সঙ্গে মামলার সাক্ষীদের বা অন্য কোনো ব্যক্তির কাছে থাকা প্রাসঙ্গিক ছবি, দলিল ইত্যাদিও একইভাবে তথ্য হিসেবেই বিবেচিত হয়। তথ্য কোনো একজন বিশেষ ব্যক্তি বা সংস্থা ভেদে আলাদা নয়, বরং জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানকালীন হত্যাকাণ্ড ও মানবতাবিরোধী অপরাধের সাথে প্রাসঙ্গিক সকল তথ্যই আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ ও সংবেদনশীল।
এ সময় দেশ ও রাষ্ট্রের ক্ষতি হতে পারে কিংবা ন্যায়বিচার ব্যাহত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়, এ ধরনের তথ্য প্রকাশ করা থেকে গণমাধ্যমকর্মীদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানান তিনি।
এফএইচ/এএমএ/জিকেএস