রবীন্দ্রনাথের বিজ্ঞানচেতনার বিশেষত্ব: শেষ পর্ব
![রবীন্দ্রনাথের বিজ্ঞানচেতনার বিশেষত্ব: শেষ পর্ব](https://cdn.jagonews24.com/media/imgAllNew/BG/2019November/robi-20220711114828.jpg)
আসলে চূড়ান্তভাবে বিবেচনায় জড় ও জীবের ভেতর খুব তফাৎ নেই। জড়ের উপাদানের সাথে জীবের উপাদান যেন একই সুতোয় গাঁথা। জীবের মৃত্যুর পর তো সেই একই লীলা! বিজ্ঞান প্রতিক্ষণ বিশ্বভূমির রহস্যাবরণের খোসা ছাড়িয়ে অন্তঃপুরে প্রবেশ করছে। হয়তো রবীন্দ্রনাথ জীবনের শেষপাদে শেষ প্রহরের ঘণ্টাধ্বনি বাজার কিঞ্চিৎ পূর্বে জেনে যেতে চেয়েছেন, ‘সত্যের আনন্দরূপ’। কাব্যরসে সিক্ত হয়েছিলেন জীবনভর; পাহাড়ের অখণ্ডতা দেখেছিলেন দূর থেকে কিন্তু এবার সেই পাহাড়ে উঠতে চেয়েছেন নিজের পায়ে একটা একটা সিঁড়ি মাড়িয়ে। তিনি লিখছেন, “আমি বিজ্ঞানের সাধক নই সে কথা বলা বাহুল্য। কিন্তু বাল্যকাল থেকে বিজ্ঞানের রস আস্বাদনে আমার লোভের অন্ত ছিল না”। (বিশ্বপরিচয়)
অন্যদিকে বিজ্ঞানী সত্যেননাথ বসুকে (১৮৯৪-১৯৭৪) তিনি ভালোবাসতেন, স্নেহের চোখে দেখতেন। অনেকেই তাঁর বিজ্ঞান চেতনার সমঝদার ছিলেন। রবীন্দ্রনাথ বিশ্বপরিচয়, অন্নদাশঙ্কর রায় জাপানে ভ্রমণরচনা ও সুধীন্দ্রনাথ দত্ত অর্কেস্ট্রা কাব্যগ্রন্থ তাঁকে উৎসর্গ করেছিলেন। বিজ্ঞানে সত্যেন্দ্রনাথ বসু ছিলেন একজন তপস্বী মানুষ। রবীন্দ্রনাথের স্নেহধন্য হয়েছিলেন, বিশ্বভারতীর উপাচার্যও হন তিনি তবে সেটা কবির মৃত্যুর পর। ১৯৩১ সালে সাধারণের বিজ্ঞান-সচেতনতার জন্য ‘পরিচয়’ নামে একটা পত্রিকা প্রকাশ করেন সত্যেন্দ্রনাথ। এসময় তিনি রবীন্দ্রনাথকে ওই পত্রিকায় লেখার অনুরোধ জানান। রবীন্দ্রনাথ কয়েকটা লেখা দিয়েও ছিলেন ‘পরিচয়’র জন্য। ‘বসন’ কণার আবিষ্কারক সত্যেন বসুকে রবীন্দ্রনাথ যেমনই পেয়েছিলেন অনেকটা বন্ধুর মতন; তেমনই সর্বকালের সেরা বিজ্ঞানীদের অন্যতম আইনস্টাইনকেও পেয়েছিলেন একই রকমভাবে। ১৯৩০ সালে তাঁদের দু’জনের বিজ্ঞান নিয়ে কথোপকথন তথা বিতর্ক বোদ্ধামহলে প্রচুর আলোচনার বিষয়। সেখানে দেখা যায়, আইনস্টাইন একজন এপিস্টিমলজিক্যাল রিয়েলিস্ট রবীন্দ্রনাথ এন্টি-রিয়েলিস্ট। তাছাড়া বিখ্যাত পরিসংখ্যানবিদ পি সি মহলানবিশের সাথেও ছিল তাঁর অখণ্ড যোগাযোগ। আগেই উল্লেখ করেছি, সেই নয়-দশ বছর বয়সে তিনি সীতানাথ দত্তকে পান প্রথম বিজ্ঞান শিক্ষক হিসেবে। তাঁর যা সামান্য পুঁজি ছিল তা দিয়েই শিশুমনকে কৌতূহল ভরিয়ে দিতেন। কিশোর বয়সে পিতার সাথে ডালহৌসি পাহাড়ে বেড়াতে গিয়ে নক্ষত্রালোক নিয়ে তাঁর বিশেষ আগ্রহ জন্মে। সে সময়ে চিনে নেন সৌরজাগতিক নানা বস্তুর চলাচল ও তাদের বৈশিষ্ট্য।
যা-ই হোক, শান্তিনিকেতনের বিজ্ঞান অধ্যাপক শ্রীমান প্রমথনাথ সেন বিজ্ঞানের ওপর একটা বই লেখার জন্য আদিষ্ট হন কিন্তু রবীন্দ্রনাথ পরবর্তীতে নিজেই এ দ্বায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন। আলমোড়ার নিভৃত পরিবেশে তিনি লেখেন বিশ্বপরিচয়। পাঁচটি প্রবন্ধের সন্নিবেশে সৃষ্টি হয় এ পুস্তিকা। জনাব বিশ্বনাথ ঘোষ ওই প্রবন্ধে আরও লিখছেন, “২০১৩ সালে টেগোর সেন্টার ফর ন্যাচারাল সায়েন্সেস অ্যান্ড ফিলোসফি (টিসিএনএসপি) নামে একটি সোসাইটি গঠন করার জন্য বর্তমান সময়ের তিনজন বিশিষ্ট পদার্থবিদ—অধ্যাপক বিকাশ সিনহা, সুশান্ত দত্তগুপ্ত এবং শিবাজি রাহাকে দ্বায়িত্ব দেওয়া হয়। এ কাজটি মূলত করা হয়, রবীন্দ্রনাথের বিজ্ঞান চেতনাকে মানুষের মাঝে বিস্তার ঘটানোর জন্য”। (প্রাগুক্ত)। আমরা এ অংশে দেখবো প্রকৃতপক্ষে রবীন্দ্রনাথের বিজ্ঞানচেতনা বলে কিছু আছে কি না, নাকি শুধু তাঁকে ঘিরে এটা শুধু অতিশয়োক্তি; নাকি সত্যি সত্যি তিনি বিজ্ঞানের গভীর মর্মবোধ নিজের মাঝে ধারণ করেছিলেন। তবে দ্বিধা না রেখে বলা যায়, বিজ্ঞান ও সাহিত্যকে নিজ নিজ জায়গায় রেখে তিনি তাদের রসাস্বাদন করেছিলেন। খুঁজে ফিরেছেন, কী আছে শেষে!
‘ভারতবর্ষে গড়পড়তায় বিজ্ঞান চেতনা খুবই নিম্নমানের’—এ ধরনের কথা যারা মনে করেন তাদের যথেষ্ট তথ্য উপাত্ত আছে। ভারতীয় শাসক দলের হিন্দুত্ববাদের একটা দুর্নাম আছে। এই দুর্নাম উস্কে দেয় কিছু বল্গাহীন মন্তব্য। ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) দিলিপ ঘোষ নামে জনৈক নেতা বলে ফেলেন, “গরুর দুধের মধ্যে স্বর্ণ আছে”। মুহূর্তের মধ্যে সেটা সামাজিক মাধ্যমে সরগরম। জনাব দিলিপ যে সময়ে এটা বলছিলেন; সে সময়ে অনতিদূরে পালিত হচ্ছিল টিসিএনএসপির অনুষ্ঠান। তাঁরা পালন করছিলেন রবীন্দ্রনাথের বিজ্ঞানচেতনার ওপর বিশেষ অনুষ্ঠান। প্রফেসর বিকাশ সিনহা বলছিলেন, রবীন্দ্রনাথ আজও কেন আমাদের চিন্তায় প্রাসঙ্গিক। অনুষ্ঠানে বিখ্যাত অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় “দুধের ভেতর সোনা তত্ত্ব” নিয়ে হাসির রোল ফেলে দিলেন।
প্রকৃতপক্ষে আমাদের ভাবা দরকার, রবীন্দ্রনাথ যে সময়ে বিকশিত হয়েছিলেন; সেই শতক ছিল বিজ্ঞানের ইতিহাসে সবচেয়ে আলোকিত। জ্ঞানের চরম উৎকর্ষে বিজ্ঞান মানুষকে পৌঁছে দিয়েছিল চেতনার শিখরে, সম্ভবত এর আলো কাউকে উদীপ্ত করতে বাদ রাখেনি। রবীন্দ্রনাথের বিজ্ঞানচেতনা সম্পর্কে টিসিএনএসপির সহ সভাপতি অধ্যাপক দত্তগুপ্ত আরও বলেন, “রবিঠাকুর তার সময়ের চেয়ে অনেক এগিয়ে ছিলেন, কিন্তু আজ অনেকেই তাকে পছন্দ করবেন না কারণ তিনি জাতীয়তাবাদকে ঘৃণা করতেন। এমনকি তিনি গান্ধীকে বলেছিলেন যে বিহারের ভূমিকম্প (১৯৩৪ সালে) হরিজনদের সাথে যেভাবে আচরণ করা হচ্ছিল তার জন্য এটা ছিল ঈশ্বরের শাস্তি। তিনি গান্ধীর কাছে একটি টেলিগ্রাম ছুঁড়ে দিয়েছিলেন এবং অনুরোধ করেছিলেন একটা প্রাকৃতিক ঘটনাকে এভাবে তুচ্ছভাবে ব্যখ্যা না দেবার জন্য”। (প্রাগুক্ত)। সবার ধারণা এরকম চিন্তা বহন করা রবীন্দ্রনাথ কতদূর বাস্তববাদী মানুষ হয়ে নিজেকে তৈরি করেছিলেন। দত্তগুপ্ত আরও যোগ করেন, “আমাদের তরুণদের রবীন্দ্রনাথের কথা বলতে হবে। চীন এবং জাপান সফরের সময়, আমি ভারতে যতটা পাই তার চেয়ে বেশি লোককে, বিশেষ করে তরুণদের, সেখানে রবীন্দ্রনাথের প্রতি আগ্রহ দেখেছি। আমাদের এটা সংশোধন করতে হবে। আমরা সারা বাংলায়, বিশেষ করে গ্রামীণ অঞ্চলে ভ্রমণ করার পরিকল্পনা করি, প্রতিষ্ঠান-নির্মাণ, ধর্মনিরপেক্ষতা, জাতীয়তাবাদ, স্বাধীন ভারত কেমন হওয়া উচিত সে সম্পর্কে তাঁর ধারণাগুলি ভাগ করে নেওয়ার জন্য। আমরা তাদের বলব যে রবীন্দ্রনাথ জাতীয়তাবাদী ছিলেন না কিন্তু তিনি একজন সত্যিকারের দেশপ্রেমিক ছিলেন”। এখানে রবীন্দ্রনাথের জাতীয়তাবাদের প্রসঙ্গ আসছে ঠিক তাঁর উন্মুক্ত বিশ্বচেতনার ওপর উদার দৃষ্টির জন্য।
যা-ই হোক, এবার মূল প্রসঙ্গে আসা যাক। পদার্থবিজ্ঞানের অত্যন্ত মৌলিক বিষয় নিয়ে লেখা প্রবন্ধমালার সম্মিলনে বিশ্বপরিচয় গ্রন্থের শুরুতে তিনি সত্যেন বসুকে তাঁর বিজ্ঞান ধারণার ওপর গ্রন্থ রচনার অধিকার নিয়ে কিছু সংশয়ের কথা জানান। অর্থাৎ এসব লেখার সক্ষমতা তাঁর আছে কি না সেটা নিয়ে কিছুটা লজ্জাও প্রকাশ করেছেন বিনয়ের সাথে। তবে বলতে দ্বিধা নেই, তাঁর লেখাগুলো পড়তে শুরু করলে বোঝা যাবে এর গভীরতা কিছুতেই তাঁর বিনয়বোধকে সমর্থন করে না।
বিশ্বজগতের শুরু কবে? এর শেষটা কখন? এই মহাযজ্ঞের উৎস কী? কীভাবে এই মহা কর্মকাণ্ডের গতি পেল? এখানে আমাদের অবস্থানটাই বা কী? নক্ষত্রালোক, পরমাণুলোক, সৌরজগত, ভূলোক, ইত্যাদি বিষয়গুলো পদার্থবিজ্ঞানের মূল আলোচ্য বিষয় হলেও একটা পর্যায়ে তা দার্শনিক বিশ্লেষণের হাতে গিয়ে পড়ে। বিশ শতকের পদার্থবিজ্ঞান থেকে পুরোটা সময়ই এই দুর্বোধ্য বিষয় নিয়ে ব্যস্ত। ক্লাসিক্যাল পদার্থবিজ্ঞান থেকে শুরু হয়ে অপেক্ষবাদ কিম্বা কোয়ান্টাম বলবিদ্যার নানা জটিল অংশ তাই একদিকে এসব বিজ্ঞানের অংশ, অন্যদিকে অংশ দর্শনের। এই দুর্বোধ্য অংশমালার প্রতি রবীন্দ্রনাথের আগ্রহ দেখে বিস্মিত না হয়ে উপায় নেই।
রবীন্দ্রনাথ যে একজন কবি সেটা ‘পরমাণুলোক’ নিবন্ধ পড়লে হোচট খেতে হবে। এখানে তিনি পুরোদস্তুর একজন বিজ্ঞান লেখক তথা বিশ শতকের সাংঘাতিক বিজ্ঞান সচেতন মানুষ। শুরুর দিকে লিখছেন, “যে নক্ষত্র থেকে এই পৃথিবীর জন্ম, যার জ্যোতি এর প্রাণকে পালন করছে সে হচ্ছে সূর্য। এই সূর্য আমাদের চার দিকে আলোর পর্দা টাঙ্গিয়ে দিয়েছে। পৃথিবীকে ছাড়িয়ে জগতে আর যা কিছু আছে তা দেখতে দিচ্ছে না। কিন্তু দিন শেষ হয়, সূর্য অস্ত যায়, আলোর ঢাকা যায় সরে; তখন অন্ধকার ছেয়ে বেরিয়ে পড়ে অসংখ্য নক্ষত্র। বুঝতে পারি জগতের সীমানা পৃথিবী ছাড়িয়ে অনেক দূরে চলে গেছে। কিন্তু কতটা যে দূরে তা কেবল অনুভূতি ধরতে পারি না”। (বিশ্বপরিচয়) অর্থাৎ তিনি মনে করতেন, আমর দৃষ্টিসীমার মধ্যেই এই জগতটা সীমাবদ্ধ নয়, এর বিস্তৃতি অসীম। তিনি গানেও লিখছেন, “অসীম কালের যে হিল্ললে জোয়ার ভাঁটার ভুবন দোলে”। কতটুকু তার সীমানা? তিনি পরের নিবন্ধে লিখছেন, “একদিন মানুষ ঠিক করেছিল বিশ্বমণ্ডলের কেন্দ্রে পৃথিবীর আসন অবিচলিত, তাকে প্রদক্ষিণ করছে সূর্য নক্ষত্র। মনে যে করেছিল, সেজন্য তাকে দোষ দেওয়া যায় না—সে দেখেছিল পৃথিবী-দেখা সহজ চোখে। আজ তার চোখ বেড়ে গেছে, বিশ্ব-দেখা চোখ বানিয়ে নিয়েছে। ধরে নিতে হয়েছে পৃথিবীকেই ছুটতে হয় সূর্যের চার দিকে, দরবেশী নাচের মত পাক খেতে খেতে। পথ সুদীর্ঘ, লাগে ৩৬৫ দিনের কিছু বেশি। এর চেয়ে বড়ো পথওয়ালা গ্রহ আছে, তারা ঘুরতে এতো বেশি সময় নেয় যে ততদিন বেঁচে থাকতে গেলে মানুষের পরমায়ুর বহর বাড়াতে হবে”। (নক্ষত্রালোক)।
রবীন্দ্রনাথের প্রধান আগ্রহ ছিল সম্ভবত বিশ্বসৃষ্টির অপার রহস্যের একটা কুলকিনারা খুঁজে পাওয়া। যার ফলশ্রুতিতে তাঁর কসমোলজিক্যাল ইঙ্কুজেটিভ মাইন্ডের বিচিত্র অনুরণন ঘটেছে কবিতা ও গানে। বিশ্বপরিচয়ের উপসংহারে তিনি একজন বিবর্তনবাদীর ন্যায় মেনে নিচ্ছেন জাগতিক সুস্থিত পরিবর্তনের অমোঘ নিয়ম। কবে শুরু হয়েছে এই মহাযজ্ঞ? কেনইবা সৃষ্টি হলো এটা? কবে এর বিলুপ্তি? মনুষ্য সমাজে পদার্পণের পূর্বে এই মহাজগতের যে দীর্ঘ পরিবর্তন ঘটেছে তার মূলে কী কাজ করেছে? ‘কোন শক্তি মোরে ফুটাইল এ বিপুল রহস্যের ক্রোড়ে’, সর্বোপরি এই অজানা রহস্যের পশ্চাতে যে শক্তি কাজ করে চলেছে তাকে কি জানা যায়, নাকি সে অজ্ঞাতই রয়ে থাকবে? ইত্যাদি। কোনো সন্দেহ নেই এ ক্ষেত্রে রবীন্দ্রনাথের বিজ্ঞানচেতনার সাথে কবিসত্তার একটা সাংঘাতিক সংঘর্ষ আছে। তিনি পুরদস্তুর বিবর্তনবাদীদের ন্যায় বলছেন, বহুকোটি বছর আগে ‘এই তরুণ পৃথিবীতে দেখা দিয়েছে অদৃশ্য একটি জীবকোষের কণা’। আবার অন্য জায়গায় বলছেন, “দেশশূন্য কালশূন্য জোত্যিঃশূন্য মহাশূন্য-পরি/ চতুর্মুখ করিছেন ধ্যান। সহসা আনন্দসিন্ধু হৃদয়ে উঠিল উথলিয়া, আদিদেব খুলিয়া নয়ান”। কিছুটা আশ্চর্যান্বিত করে বৈকি!
তার আগের ঘটনা যে আরও রোমাঞ্চকর! জীবনশেষে তিনি কিছু জিজ্ঞাসা করলেন, “প্রথম দিনের সূর্য/ প্রশ্ন করেছিল/ সত্তার নূতন আবির্ভাবে—/ কে তুমি?/ মেলে নি উত্তর”। বিশ্বজগত শুরুর মুহূর্তটা বিজ্ঞানের ধারণা মতে একটা মহাবিস্ফোরণের মাধ্যমে ঘটে থাকবে (অন্য একটা মতবাদও আছে, স্টিডি স্টেট থিওরি নামে)। তার পেছনে কী ছিল সেটা কিন্তু অজ্ঞাত। জার্মান দার্শনিক ইমানুয়েল কান্টকে আমরা অনেক সময় বলি এগ্নস্টিক। দৃশ্যমান জগতের পেছনে যে কথিত সত্তার জগত তা কিন্তু আমরা জ্ঞানের সীমাবদ্ধতার কারণে জানতে পারি না। এটাই ছিল কান্টের কথা। একজন অজ্ঞেয়বাদীর মতো তিনিও বলে চললেন, “বৎসর বৎসর চলে গেল।/ দিবসের শেষ সূর্য/ শেষ প্রশ্ন উচ্চারিল/ পশ্চিমসাগর তীরে/ নিস্তব্ধ সন্ধ্যায়—/ কে তুমি?/ পেল না উত্তর”।
পরিশেষে বলি, বিজ্ঞান এই বিশ্বপ্রকৃতির এক অনন্ত যাত্রা, রহস্যের যে পরিবৃতি তার ক্লান্তিহীন উন্মোচন। যদিও এর শেষ নেই তবু জানার বিপুল উন্মাদনা মানুষকে নিয়ে চলেছে চিন্তার শিখরে। রবীন্দ্রনাথের বিজ্ঞান-রচনা তাই শেষ হয় এমনই এক রহস্যের কূলে ভিড়েঃ
যতই তোমার ভাব, ভাবি হে অন্তরে,
ততই বিস্ময়-রসে হই নিমগন;
এমন প্রকাণ্ড কাণ্ড যাহার উপরে,
না জানি কী কাণ্ড আছে ভিতরে গোপন।
(বিজ্ঞান, সামুদ্রিক জীব)
এসইউ/জেআইএম