মীর রবির তিনটি কবিতা

সাহিত্য ডেস্ক
সাহিত্য ডেস্ক সাহিত্য ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৮:০৭ এএম, ২৭ নভেম্বর ২০২৩

কুমুদিনী হাজংয়ের দেশে

আমরা পাহাড়ে যাই, পাহাড় দেবে যায় আমাদের ভারে। দেবে যাওয়া পাহাড়ে আমরা টিকটক করি, ভ্লগ করি—আমাদের ঘিরে প্রকৃতি বানায় নিজস্ব কন্টেন্ট। স্ক্রিপ্টে লেখা থাকে পাহাড়ের সংগ্রাম—টংক আন্দোলনের ইতিহাস, সাদামাটির পাহাড় বেয়ে জিজ্ঞেস করি রাসমণির গ্রাম, হাজং পল্লি দূরে কোথায়? আমাদের জিজ্ঞাসা মিলে যায় টিলায় টিলায়। এটিলা-ওটিলা জেগে থাকা ইতিহাসের মানুষ উদাস তাকায় দূর হিমালয়। আমরা দূর্গাপুরের পথ হাঁটি, হাসিভরা ফসলের মাঠে খুঁজি ধানের ইতিহাস। ঢেউ খেলানো মাঠ কানে কানে বলে যায়—আবার কে এলো, নতুন মনি সিংহ? কীটনাশকের দমবন্ধ গন্ধে উত্তরহীন আমরা পাহাড় ডিঙাই—ঘন হয়ে আসা স্মৃতির কপাট খুলে করুণ চোখে তাকায় কুমুদিনি হাজং। আমার বুক কেঁপে ওঠে, হাত কাঁপে তাঁর ছোঁয়ায়। নিশ্চুপ কান্নায় বিস্তর দূরত্ব মাপা দুই প্রজন্ম আক্ষেপের অশ্রু নামায় জল ছলছল চোখে। বুক ভারী হয়ে আসে—আস্ত পাহাড় হেলে পড়ে মন আঙিনায়। নত মস্তকে পিছু পথ ধরি—আমাদের পদরেখা ধরে মাটির গভীরে তাকিয়ে থাকেন কুমুদিনি হাজং।

****

মিথের পুকুর

সকাল দুপুর সন্ধ্যা আমার পিছে ঘুরঘুর করে দুটি হাঁস, একটি নারী একটি পুরুষ। ঘোর বর্ষায় আমি ওদের আনন্দ দেখি, দেখি ভোরের দিঘিতে ডুব সাঁতার। ওদের পাশ কেটে ঝুলে থাকে সংসার। ঘন কুয়াশায় হারিয়ে যায় প্রিয়জনের মুখ, বিচ্ছেদ ভয়ে তাড়িয়ে দিই দূর বহুদূর। ওরা তবু স্মৃতি ঘিরে থাকে বিষণ্ন পুকুর।

বিষণ্ন পুকুর ঘিরে মাছের সংসার অভুক্ত হাঁসের ছানায় তই তই ডাক—রোজ সন্ধ্যা খুন করে মাতৃত্ব। হন্তারকের সংবাদে দীর্ঘ হয় জলছায়া, ঘটপাড় ভুলে যায় মানুষের পদছাপ।

****

ব্যাঙমা-ব্যাঙমি

বাড়ছে নগরের কোলাহল, নাগরিক সভায় নতুন ইশতেহার—গ্রাম হবে শহর। আমরা চলেছি ডিজিটাল থেকে স্মার্ট যুগে। আমাদের পিছু পরে থাকে অরণ্য—বৃক্ষ কেটে দেওয়ালচিত্র আঁকে রূপকথার গল্প। রিকশা পেইন্টিংজুড়ে লেগে থাকে আমাদের আদিস্বর। নতুন করে ফিরে আসে ব্যাঙমা-ব্যাঙমি। বলে নগরের ভবিষ্যৎ—বাক্যবিন্যাসে যতিচিহ্ন মুছে টাইপ করে মেয়রলিপি।

ল্যাম্পপোস্টের আলোছায়ায়, শিশুপার্কের দোলনায় দোল খেতে খেতে কার্টুনের সংলাপ শোনায়। ধ্বংসস্তূপের ভেতর জেগে ওঠে গত বর্ষের ডাইনোসর। আমরা ডাইনোসরের দিকে তাকিয়ে থাকি—পরিবেশবাদীর মতোও সে বকে যায় যাবতীয় প্রলাপ। জলবায়ু পরিবর্তনের বয়ানে হেসে ওঠে শহুরে দেওয়াল, অট্টালিকাগুলো অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে এদো নর্দমায়। অদৃশ্য হয় ডাইনোসর, ব্যাঙমা-ব্যাঙমি টিভি শো শেষে হেঁটে যায় মহাকালের পথে।

এসইউ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।