গোলাম রববানীর সিরিজ কবিতা

সাহিত্য ডেস্ক
সাহিত্য ডেস্ক সাহিত্য ডেস্ক
প্রকাশিত: ০১:২৪ পিএম, ২৩ নভেম্বর ২০২৩

মেঘনার মেয়ে-৪৫

সেদিনও সারারাত খেলা করেছিলে তুমি
একনাগাড়ে একরাতের সাথে, রাত ঘুমাতে পারিনি
বালিশের মাথা শুধু শুধু এবাড়ওবাড় করেছিল
বুঝি, বালিশেরও মাথাব্যথা হয়? হয় নাকি!

মেঘনার মেয়ে তুমি থাকো কার মেধাজুড়ে:
ফলাও কি কবিতার বীজ, চারা, গাছ নাকি উদ্ভিদ?
উড়ে এসো গেঁথে গেলে হয়ে কবিতাপালনবিদ
কবিতার প্রস্বেদন হয়ে ধীরে ধীরে শোষণ কর কারে?

কখনও কখনও কেন মনমরা কৃত্রিম নদীর উজানে
তোলে অবহেলিত মনজঞ্জাল, জলভাসা শ্যাওলা যেমন
ঘুমন্ত মৃত্তিকা কেন জাগাও, জীবিত মৃত্তিকার বুকে
কল্পিত পাখিদের ডানায়, গন্তব্যহীন কুয়াশা নামে

মেঘনার মেয়ে-৪৬

পাখির কোনো নাগরিক সনদপত্রঠত্র নেই
নেই কোনো জন্মসনদ কিংবা জাতীয় পরিচয়পত্র
কোনো পিছুটানই নেই; নেই কোনো কান্নার নদী
পাখির কোনো দীর্ঘরাত কিংবা দীর্ঘদিন নেই

পাখির কোনো পরশ্রীকাতরতার কোঠা নেই
নেই হিসেবনিকেশের হিসেব বই, অবুঝ এরা এসবে
বোঝে না মনখারাপের রহস্য—থ’ মেরে দাঁড়ায় না তো
ভেজায় না স্মৃতির উঠোন; বন্দি আকাশে থেমে নেই
ডানা ঝাপটায়ে উড়ে চলে দিকদিগন্তের দিকে
অথচ পাখিদের মধ্যেও পাখি বেজায় দলছুট আজও

পাখির কোনো সংঘ নেই; নেই দলাদলির দ্যোতনা
নেই কোনো ভাগ-বাঁটোয়ারার ছন্নছেঁড়া দেশ-জাতি
আমি শুধু একটি পাখির জ্ঞাতি, সব জানিয়ে দিয়েছি
রেখেছি স্মৃতিভ্রষ্ট মনপাঁজরে মেঘনার মেয়ে প্রিয়া

পাখির মতো আমিও, বুঝি আমার মতো পাখিও
পাখির ভিড়েও শুকপাখি; ভালোবাসাবাসি নাই বুঝি

মেঘনার মেয়ে-৪৭

দিনেরাতে কতকিছুই না গড়ার উন্মুক্ত বাসনাতে
আপনারা মেতে উঠেছেন; আনন্দোৎসবে ভাসছেন
কিচ্ছুই দেখতে পাচ্ছি না—গড়ার গরমিলে আমিও
ভাঙনের খেলাঘরে, তালমিলিয়ে যাচ্ছি চলে

গড়ার গৌরবে কী সুন্দর আয়োজন এখানে
অথচ ভাঙন বেগ থামাতে পারেনি কেউ
কেউ থামাতে পারেনি, আবেগের নিষ্পাপ বেগ
ভাঙনের অশনিসংকেতে সব তছনছ ভেঙেচুরে

মনভাঙচুর এ কঙ্কালসার অস্থিমজ্জা পুতুলতুল্য
ইচ্ছে হলেই গড়তে পারো; ভাঙনের উদাত্ত আহ্বানে

মেঘনার মেয়ে-৪৮

ফুল ঝরে গেলে দায় কার? কেন যে এ ফুল ফুটে!
জলের ভেতরে কল নড়ে, ফোঁটা অশ্রুজল গড়ে

অত্যন্ত একটি দিন যদি সারাদিন বৃষ্টিতে ভিজে যেত
জেনেছি ঝরেন বৃষ্টি সারাদিন আনমনে অঝোরে
যদি বৃষ্টিমুখর ব্যথায় দু’টি চোখে বৃষ্টি নামানো যেত
হয়তোবা অপূর্ণতার কোনো বালাই থাকতো না মেঘে

মেঘের আড়ালে আছে টাটানো ব্যথার কাহিনি
ভিজে যেতে পারে কত দরকার, যতটুকু প্রয়োজন
ভাদর ছাড়াও ভিজে অভাদরের অনাদর বেদনে
বুকে মেঘনার মেয়ে নিয়ে মনোকষ্টের মরণে

যদি দু’চোখে কান্না নামিয়ে শুষ্ক মরু করা যেতো
যদি ঠোঁট এঁটে এমনইভাবে মনের কথাটি বলা হতো
হাসিতে হাসিতে হেসে, বসে বসে, চেয়ে আসা যেতো
স্মৃতির শহর ধরে, বুকে নিয়ে, এলিজি হতো কবিতা

আসে না কেউই ফিরে, আমি গিয়েছিলাম সেদিন
সব অসময়ে আসে; যেমন বেদনা তেমন যাতনা

মেঘনার মেয়ে-৪৯

তোমার চাহনির বিপরীতে আজও আমি চেয়ে আছি
স্টিলের সেই রেলিং ধরে যেমন তুমি ঠাঁয় দাঁড়িয়ে;
হয়তো তেমন—সেখানেই তো তোমার প্রিয় জন্মভূমি
বৃষ্টিভেজা খোলা ছাদ ওড়ে ঘনকালো খোলাচুলে

তুমুল কোনো বৃষ্টির দিনে টাইলস বাঁধা ভেজা ছাদ
থেকে যাওয়া হালকা জলে যেনও ছায়া পড়েছে
ছায়ামূর্তি, মেঘনার মেয়ে—জলরঙা চিত্রের ক্যানভাস
জেগে থেকে কবির ভেতর, অস্থিরতার অনল রোষে
ছাদ বেছানো টাইলসের পার ছায়া ভর করেছে সমান
মনের আকাশজুড়ে; সরাতে গেলে আটকে পড়ে কেমন!

পেয়ে দু’হাতের স্পর্শ স্টিল রেলিং প্রশান্তিতে ভেজে
যেমন মেঘ ভিজেছে কবির নিষ্পলক দুটি চোখে
মেঘ ভেঙে গেলে পড়ে জল, মন ভেঙে গেলে অশ্রু
মেঘনার মেয়ে তোমারও মিষ্টিমুখে হাসুক চাঁদ আজন্ম

জল আর অশ্রু আমি সঞ্চয়িতা থেকে সঞ্চিত রেখে যাই;
প্রাপ্তি ও অপ্রাপ্তির কানাকড়ির বেদনা ব্যাংকে।

এসইউ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।