ভিডিও EN
  1. Home/
  2. কৃষি ও প্রকৃতি

শখের নার্সারিতে রুম্পার সফলতা

জাগো নিউজ ডেস্ক | প্রকাশিত: ০১:১০ পিএম, ২৮ জানুয়ারি ২০২৩

মুহাম্মদ শফিকুর রহমান

শখের বশে মানুষ কত কিছুই না করে। আর শখ থেকে যদি দারুণ কিছু হয়েই যায়। তাহলে মন্দ কী? শখের বাগান থেকেই দারুণ কিছু করেছেন তিনি। ঘরে বসে গাছের ব্যবসা করে আয় করছেন ভালোই। পাশাপাশি পড়াশোনাও চালিয়ে যাচ্ছেন সমানভাবে। ঘরে বসে শখ থেকে যদি আয় রোজগার হয় তাতে ক্ষতি কী! ফেরদৌসী লোমাত জাহান রুম্পা এমনটাই মনে করেন। অনলাইনে গাছ বিক্রি করেন। বিএসসি ইন কম্পিউটার সায়েন্স ইঞ্জিনিয়ারিং পড়া তার শেষের দিকে। সৌখিন গাছপ্রেমীদের কাছে তিনি এখন পরিচিত নাম।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

মা বাগান করতেন। নানুবাড়ির উঠানে ছিল নানা রকম গাছ। এসব তাকে বাগান করতে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। ফেসবুক কেন্দ্রিক গাছের গ্রুপগুলোর নানা রকম ইভেন্ট হয়। রুম্পা নিয়মিত অংশ নেন এসব ইভেন্টে। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই ১৫-১৬ রকমের জবা-গোলাপ, ইনডোর প্ল্যান্ট, জলজ প্ল্যান্ট, সাকুলেন্ট এবং কয়েক রকম ক্যাকটাস সংগ্রহ করেছিলেন তিনি। ইট পাথরের শহরে জায়গার বড় অভাব। তাই সেভাবে বাগান বড় করা সম্ভব হয়নি। বাগান করতে গিয়ে দেখলেন, বিভিন্ন রকম ইনডোর প্ল্যান্ট ও ক্যাকটাসের প্রচুর চাহিদা আছে। মানুষ সুলভ মূল্যে গাছগুলো কিনতে চায়। উন্নতমানের গাছ মানুষ যাতে সহজে ঘরে বসে পেতে পারে, সে জন্য নিজেই গাছের ব্যবসায় নেমে পড়েন। ২০২১ সালে ‘এলকোভ’ নামে পেজে সেলার হিসেবে যুক্ত হন। তার পেজের নাম ‘লিফ-লাভ’।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন: শীতে টবের গাছের যত্ন নেবেন যেভাবে

বিজ্ঞাপন

রুম্পা ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট এলাকার পূর্ব কাফরুলে বাবা, ছোটবোনসহ বসবাস করেন। ২০১৯ সালে তার মা মারা যান। অন্যের থেকে গাছ কিনে সেগুলো রুম্পা বিক্রি করেন। তিনি জানান, থাইল্যান্ড থেকে আমদানি করে বিভিন্ন রকম ক্যাকটাস, সাকুলেন্ট, ইউফোরিয়া এবং সেন্সেভেরিয়া জাতের গাছ আনা হয়। কাঁটাযুক্ত হলেও রঙিন গাছগুলো মানুষের পছন্দের শীর্ষে। ক্যাকটাসের কাঁটার সৌন্দর্য ছাড়াও ফুল খুব সুন্দর। তাই চাহিদা অনেক। ক্যাকটাস জাতীয় গাছ ছোট হওয়ায় টবে অল্প জায়গায় রাখা যায়। লিলিয়াম, অ্যামারিলিস লিলি, রানানকুলাস, জাফরান, টিউলিপ, কসমস, পপি, গাজানিয়া, স্যালভিয়া, ডায়ান্থাস, ক্যালেন্ডুলা, পিটুনিয়া, ডেইজি, ভারবেনা, হেলিক্রিসাম, অ্যান্টিরিনাম, লুপিন, কারনেশন, প্যানজি, অ্যাস্টার প্রয়োজন হলে রুম্পার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন।

বর্তমানে তার কাছে প্রায় ৭০-৮০ প্রজাতির ক্যাকটাস এবং অন্য জাতের গাছ আছে। গাছের মূল্য ৩০০ টাকা থেকে শুরু করে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। শুধু গাছ ও বাল্ব বিক্রি নয়। এগুলো কীভাবে লাগাতে হবে এবং কীভাবে যত্ন করতে হবে, সবই বুঝিয়ে দেন রুম্পা। তার থেকে গাছ নিয়ে যখন অন্যরা ভালো করেন। গাছে সুন্দর ফুল ফোটে। সে খবর জানতে পারলে রুম্পার খুব আনন্দ হয়। তিনি বলেন, ‘বীজ থেকে চারাগাছ হয়ে যখন ফুল ফোটে; তখন তারা আমাকে রিভিউ জানান। এতে কতটা প্রশান্তি আসে, তা বলে বোঝানো যাবে না। আমার কাজে অনুপ্রেরণা জাগে। তারা এ আনন্দ আমার সঙ্গে ভাগাভাগি করে নেন। ভীষণ এক অন্যরকম অনুভূতির সৃষ্টি হয়।’

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন: একটুখানি সবুজের ছোঁয়া

অনলাইনে ঘরে বসে নারী ব্যবসা করতেই পারে। সে পরিবেশ, সুবিধা, সুযোগের কমতি নেই। অবসরটা হয়ে উঠতে পারে রঙিন। এ জন্য পরিবারের সমর্থন বেশি জরুরি। রুম্পা সেটি পেয়েছেন। তার বাবা এ কাজে তাকে উৎসাহ দেন। রুম্পা বলেন, ‘বাবা কখনো কোনো কাজে আমাকে বাধা দিয়েছেন বলে মনে পড়ে না। তিনি এ কাজকে সম্মান দেন। তিনি চান, আমি অন্য পেশার পাশাপাশি বাগান বিষয়ক কাজকে বরাবরের মতো যেন প্রাধান্য দিই।’

বিজ্ঞাপন

অন্য কাজের পাশাপাশি রুম্পার গাছের ব্যবসা। সে কারণে ফুল টাইম সময় দিতে পারেন না। তবুও তার মাসে গড়ে আয় ১৫-২৫ হাজার টাকা। আয়ের টাকার কিছু অংশ নিজের জন্য ব্যয় করেন। বাগানে বিনিয়োগও করেন। শুধু কি আয়। নিজের একটা অবস্থান তৈরি করতে পেরেছেন। শূন্য থেকে উঠে এসেছেন। এইবা কম কীসে। রুম্পা বলেন, ‘সবচেয়ে বড় কথা শূন্য থেকে নিজের অবস্থান কিছুটা হলেও পরিবর্তন করতে পেরেছি।’ রুম্পা মনে করেন, সবুজই প্রাণের স্পন্দন। বেঁচে থাকার মূলমন্ত্র। আগামী প্রজন্মকে উৎসাহিত করতে সবুজের প্রতি বোধোদয়ের জায়গাটা সজাগ করে তুলতে হবে। তবেই ভালো থাকবে আমাদের আগামী প্রজন্ম।

লেখক: অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার, সেলস অপারেশন্স, ফেয়ার ডিস্ট্রিবিউশন লিমিটেড।

এসইউ/এএসএম

আরও পড়ুন

বিজ্ঞাপন

পরবর্তী খবর

ইন্দো-বাংলাদেশ এগ্রি মেকানাইজেশন সামিটে এসিআইয়ের কৃষিযন্ত্র

জাগো নিউজ ডেস্ক | প্রকাশিত: ০৯:৩৬ পিএম, ২৭ জানুয়ারি ২০২৩

আধুনিক সব মেশিন ও যন্ত্রপাতি নিয়ে ইন্দো-বাংলাদেশ এগ্রি-মেকানাইজেশন সামিটে অংশ নিয়েছে দেশের শীর্ষস্থানীয় কৃষি যন্ত্রপাতি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান এসিআই মটরস। সামিটে এসিআই মটরসের নতুন কৃষিযন্ত্র ফার্টিলাইজার স্প্রেডার, নিউমেটিক সিড প্ল্যান্টার উইথ ফার্টিলাইজার, রোটারি রেক, পটেটো প্ল্যান্টার, পটেটো হারভেস্টার, স্কয়ার বেলার, এসিআই মেইজ চপার এবং এগ্রিকালচার ড্রোন প্রদর্শিত হয়েছে।

শুক্রবার (২৭ জানুয়ারি) ঢাকার আন্তর্জাতিক কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) এ সামিট শুরু হয়েছে। খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে ও বাংলাদেশে কৃষি-যান্ত্রিকীকরণের লক্ষ্যে ট্রাক্টর এবং মেকানাইজেশন সংগঠন আয়োজিত ‘ইন্দো-বাংলাদেশ এগ্রি মেকানাইজেশন সামিট’ চলবে ২৯ জানুয়ারি পর্যন্ত।

সামিটের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় কুমার ভার্মা, এসিআই মটরসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. ফা হ আনসারী ও কৃষি সেক্টরের গণ্যমান্য ব্যক্তিরা।

শুক্রবার প্রতিষ্ঠানটির মিডিয়া ম্যানেজার মো. হাফিজ উদ্দিনের পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, মূলত কৃষি যান্ত্রিকরণের মাধ্যমে কীভাবে কম খরচে ও স্বল্পসময়ে অধিক ফসল উৎপাদন করা সম্ভব তা তুলে ধরা হয়েছে।

এতে বলা হয়, ২০০৭ সালে যাত্রা শুরু করে এবং সফলভাবে বাংলাদেশে আধুনিক কৃষিভিত্তিক যন্ত্রের সমাধান দিয়ে আসছে এসিআই মটরস্। জমির চাষাবাদ, ফসল বপন এবং ফসল কাটা, মাড়াই, ঝাড়াই এবং বস্তাবন্দির সব সমাধান দিয়ে আসছে প্রতিষ্ঠানটি। দেশের মোট ফসলি জমির এক তৃতীয়াংশ চাষাবাদ হচ্ছে সোনালিকা ট্রাক্টর ও এসিআইয়ের পাওয়ার টিলার দিয়ে। ধানের চারা বপন এবং কাটা, মাড়াই, ঝাড়াই এর আধুনিক যন্ত্র জাপানি প্রযুক্তির ইয়ানমার ট্রান্সপ্ল্যান্টার ও ইয়ানমার কম্বাইন হারভেস্টার বাংলাদেশ বাজারে নিয়ে এসে দেশের কৃষিখাতে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে এসিআই।

এমএএইচ/এএসএম

পরবর্তী খবর

সয়াবিন উৎপাদন

লক্ষ্মীপুরে শুরুতেই ৮০ কোটি টাকার বীজ উৎপাদন

জেলা প্রতিনিধি | লক্ষ্মীপুর | প্রকাশিত: ১২:০৭ পিএম, ২৭ জানুয়ারি ২০২৩

মেঘনা উপকূলীয় জেলা লক্ষ্মীপুর। এর ব্র্যান্ডিং নাম ‘সয়াল্যান্ড’। এ জনপদের উর্বর ভূমিতে দেশের ৭০ ভাগ সয়াবিন উৎপাদন হয়। বছরে একই মৌসুমে দু’বার সয়াবিন উৎপাদন করেন চাষিরা। রবি মৌসুমের শুরুতে বীজ উৎপাদনের জন্য চাষ হয় এবং মধ্যভাগে উৎপাদিত সয়াবিন বীজসহ বিভিন্ন খাদ্যপণ্য তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। লক্ষ্মীপুরে এবার প্রায় ৪ হাজার মেট্রিক টন সয়াবিন বীজ উৎপাদন হবে, তা-ও জেলার রায়পুর উপজেলার জেগে ওঠা চরের বুকে। যার বাজার মূল্য প্রায় ৮০ কোটি টাকা।

চাষি ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বীজের জন্যই এ অঞ্চলে রবি মৌসুমের (কার্তিক) শুরুতেই রায়পুরের টুনুর চর, চর ঘাষিয়া, চর কাচিয়া, কানিবগার চরে সয়াবিন চাষ করা হয়। প্রথম পর্যায়ে প্রায় ৪ হাজার মেট্রিক টন সয়াবিন উৎপাদন হয়। সয়াবিনগুলো বীজ হিসেবেই বাজারজাত করা হয়। প্রতি মেট্রিক টন বীজ প্রায় ২ লাখ টাকা করে বিক্রি করা হয়। সে হিসেবে ৪ হাজার মেট্রিক টন বীজ সয়াবিন বীজ থেকে শুরুতেই লেনদেন হয় ৮০ কোটি টাকা। মৌসুমের মাঝামাঝি সময় (মাঘ) দ্বিতীয় পর্যায়ে প্রায় ৪০ হাজার হেক্টর জমিতে সয়াবিন চাষ করা হয়। এসব জমির উৎপাদিত সয়াবিন দিয়ে বিভিন্ন ধরনের খাদ্যপণ্য তৈরি হয়।

jagonews24

তারা জানিয়েছেন, প্রতি মণ সয়াবিন দেড় হাজার থেকে ২,৫০০ টাকা দরে বিক্রি হয়। এ সময় উৎপাদিত ফসলে জেলাজুড়ে ৫০০ কোটি টাকা লেনদেন হয়। এতে মৌসুমে চরাঞ্চল ও গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙা থাকে। শেষ পর্যায়ে উৎপাদিত সয়াবিন থেকে স্বল্প পরিমাণ বীজ হিসেবে সংগ্রহ করেন কৃষকরা।

আরও পড়ুন: মাগুরায় রঙিন ফুলকপি চাষের আগ্রহ বাড়ছে 

এদিকে ৩ বছর আগে নোয়াখালী কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট প্রকল্পের মাধ্যমে উন্নত জাতের বীজ উৎপাদনের জন্য রায়পুর উপজেলার চরকাছিয়া গ্রামের টুনির চরে সয়াবিন চাষ করা হয়। গবেষণার জন্য সেখানে উৎপাদিত বীজে ভালো ফলন হয়। বীজের জন্য সেখানকার সয়াবিন দেশব্যাপী জনপ্রিয়। এখানকার বীজ লক্ষ্মীপুরের চাহিদা মিটিয়ে বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রায়পুর উপজেলার টুনির চর, চর কাচিয়া, ঘাষিয়ার চর, চর খাসিয়া, কানিবগার চর, চরবংশী এবং পার্শ্ববর্তী ভোলার চরের কৃষকরা সয়াবিনের বীজ চাষাবাদ করেন। মেঘনার উপকূলীয় এলাকা হওয়ায় এসব চরের পলি মাটি এবং আবহাওয়া সয়াবিন বীজ চাষের জন্য উপযোগী। এ ছাড়া কৃষকরা লাভবান হওয়ায় এ অঞ্চলের চরগুলোয় বীজ সয়াবিনের চাষাবাদ বেশি হচ্ছে।

jagonews24

রায়পুর উপজেলার দক্ষিণ চরবংশী ইউনিয়নের চর ঘাষিয়া নৌ-ঘাটে সরেজমিনে দেখা যায়, ৭-৮ জন লোক সয়াবিন সংগ্রহ করছেন। তারা জানান, বীজ হিসেবে এ সয়াবিন ব্যবহার করা হয়। এ জন্য খুব সাবধানতায় সয়াবিন দানাগুলো পরিষ্কার করছেন। মণপ্রতি এ সয়াবিন তারা ৮ হাজার টাকা করে বিক্রি করেন। ভালো দাম ও লাভজনক হওয়ায় এ অঞ্চলের অধিকাংশ কৃষক মৌসুমের শুরুতেই সয়াবিন চাষে ঝুঁকছেন।

আরও পড়ুন: লালশাক চাষ করার সহজ উপায় 

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, রবি মৌসুমের মধ্যভাগে (জানুয়ারির শুরু) লক্ষ্মীপুর সদর, কমলনগর, রায়পুরে প্রায় ৪০ হাজার হেক্টর জমিতে সয়াবিনের চাষাবাদ হয়। এরমধ্যে রামগতি উপজেলারও কিছু অংশ আছে। সয়াবিন ঘিরে তখন ৫০০ কোটি টাকার লেনদেন হয়। দেশের প্রায় ৭০ ভাগ সয়াবিন পাওয়া লক্ষ্মীপুর জেলার ব্র্যান্ডিং নাম দেওয়া হয়েছে ‘সয়াল্যান্ড’। এ সয়াবিন উৎপাদনের জন্য চলতি মৌসুমে ২,২০০ মেট্রিক টন বীজ প্রয়োজন। বিএডিসি ও বিভিন্ন গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে সংগ্রহ করে কৃষকদের সরকারি মূল্যে ১২০ টাকা দরে বীজ সরবরাহ করা হচ্ছে। প্রতি বছর প্রায় সাড়ে ৫ মেট্রিক টন বীজ স্বল্পমূল্যে সরকারিভাবে কৃষকদের দেওয়া হয়।

রায়পুরের চর ঘাষিয়া গ্রামের কৃষক মিজান বেপারী বলেন, ‘এ বছর ১২০ শতাংশ জমিতে সয়াবিন বীজ উৎপাদন করেছি। ভালো ফলন হয়েছে। এখন বীজ সংগ্রহের কাজ চলছে। গেল বছর আমার প্রায় ১০০ মণ সয়াবিন বীজ উৎপাদন হয়েছিল। তখন দ্বিগুণ লাভ হয়েছে।’

jagonews24

একই উপজেলার টুনির চরের কৃষক ইব্রাহিম হোসেন মিয়া জানান, আশ্বিন মাসের শেষের দিকে বীজের জন্য ৩০ হাজার টাকা খরচ করে ১ একর জমিতে তিনি বীজের জন্য সয়াবিন আবাদ করেন। পৌষ মাস থেকেই সয়াবিনগুলো সংগ্রহ করা হয়। ৩০ মণ সয়াবিন বীজ উৎপাদন হবে। পরে এ সয়াবিন থেকে একই জমিতে মাঘ মাসের শেষদিকে বীজ বপন করা হবে।

আরও পড়ুন: ক্যাপসিকাম এখন ভোলার কৃষকদের গলার কাঁটা 

লক্ষ্মীপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. মো. জাকির হোসেন জানান, বপনের জন্য সাড়ে ৫ মেট্রিক টন সয়াবিন বীজ সরকারিভাবে বিএডিসির মাধ্যমে কৃষকদের মাঝে সরবরাহ করা হবে। বিএডিসিসহ বিভিন্ন গবেষণা কেন্দ্র থেকে এ বীজ সংগ্রহ করা হয়। বাকি বীজ সয়াবিন কৃষক পর্যায়ে উৎপাদন করা হয়। রায়পুরের চরাঞ্চলে প্রায় ১ হাজার হেক্টর জমিতে সয়াবিনের বীজ চাষ করা হয়েছে।

কাজল কায়েস/এসইউ/জিকেএস

পরবর্তী খবর

মরিচ গাছের পোকা দমনে কৃষি তথ্য সার্ভিসের পরামর্শ

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০৪:৫৮ পিএম, ২৬ জানুয়ারি ২০২৩

নানা সময় মরিচ গাছের যত্ন নিয়ে সমস্যায় পড়েন কৃষকরা। বিশেষ করে পোকা দমন নিয়ে। কারণ মরিচ গাছের কচি পাতা ও ডগার রস শুষে খেয়ে ফেলে পোকা। এতে দুর্বল হয়ে যায় গাছ। ফলে কমে যায় ফলন। এ থেকে প্রতিকারের উপায় জানিয়েছে কৃষি তথ্য সার্ভিস।

মরিচের ফল ছিদ্রকারী পোকার লক্ষণ

এই পোকা কচি ফল ও ডগা ছিদ্র করে ভেতরে কুরে কুরে খায়। এরা ফুলের কুঁড়িও খায়।

প্রতিকার

ক্ষেত পরিষ্কার রাখতে হবে। আক্রান্ত ডগা ও ফল সংগ্রহ করে নষ্ট করতে হবে। চারা রোপণের ১৫ দিন পর থেকে ক্ষেত ঘন ঘন পর্যবেক্ষণ করা প্রয়োজন। জৈব বালাইনাশক ব্যবহার যেমন- নিমবিসিডিন ৩ মি.লি. বা লিটার হারে পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।

আরও পড়ুন: টবে সহজে মরিচের চাষ করবেন যেভাবে

এছাড়া শতকরা ১০ ভাগের বেশি ক্ষতি হলে যে কোনো একটি বালাইনাশক ব্যবহার করতে হবে। যেমন- সাইপারমেথ্রিন ১ মি.লি. বা ডেল্টামেথ্রিন ০.৫ মিলি বা প্রোপেনোফস (৪০%), সাইপামেথ্রেন (২.৫%) ২ মিলি বা সুমিথিয়ন ২ মিলি অথবা ডায়াজিনন ২ মি.লি. বা লিটার হারে পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।

মরিচের জাব পোকার লক্ষণ

এই পোকা গাছের কচি পাতা ও ডগার রস শুষে খেয়ে ফেলে। গাছকে দুর্বল করে দেয়।

প্রতিকার

গাছের আক্রান্ত অংশ অপসারণ করা। প্রাথমিক অবস্থায় শুকনো ছাই দেওয়া। পরিষ্কার পানি জোরে স্প্রে করা। ক্ষেত পরিষ্কার রাখা। হলুদ রঙের ফাঁদ ব্যবহার করা। তামাকের গুড়া (১০ গ্রাম), সাবানের গুড়া (৫ গ্রাম) ও নিমের পাতার নির্যাস প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে ব্যবহার করা। প্রতি গাছে ৫০টির বেশি পোকা দেখা দিলে ইমিডাক্লোপ্রিড ০.৫ মিলি/লিটার হারে পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করা।

আরও পড়ুন: জীবন বদলে দিয়েছে গোলমরিচ

মরিচের সাদা মাছি পোকার লক্ষণ

এরা পাতার রস চুষে খায়, ফলে দুর্বল হয়ে পড়ে গাছ। পাতায় অসংখ্য সাদা সাদা পাখাযুক্ত মাছি দেখা যায়। ঝাঁকি দিলে উড়ে যায়।

প্রতিকার

সাদা আঠাযুক্ত বোর্ড স্থাপন বা আলোর ফাঁদ ব্যবহার করা। নিয়মিত ক্ষেত পরিদর্শন করা। ৫০ গ্রাম সাবানের গুড়া ১০ লিটার পানিতে গুলে পাতার নিচে সপ্তাহে ২-৩ বার ভালো করে স্প্রে করা। সাথে পাঁচ কৌটা গুল (তামাক গুড়া) পানিতে মিশিয়ে দিলে ভালো ফল পাওয়া যায়। ইমিডাক্লোপ্রিড ০.৫ মিলি/লিটার বা ২ মিলি ডায়মেথয়েড গ্রুপের কীটনাশক প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।

আরও পড়ুন: মরিচ চাষে লাখপতি আম্বিয়া

মরিচের থ্রিপস পোকার লক্ষণ

এর আক্রমণে পাতা কুঁকড়ে যায়। পোকা গাছের কচি পাতা ও ডগার রস শুষে খেয়ে গাছকে দুর্বল করে ফেলে।

প্রতিকার

গাছের আক্রান্ত অংশ অপসারণ করা। প্রাথমিক অবস্থায় শুকনো ছাই প্রয়োগ করা। পরিষ্কার পানি জোরে স্প্রে করা। ক্ষেত পরিষ্কার রাখা। হলুদ রঙের ফাঁদ ব্যবহার করা। তামাকের গুড়া (১০ গ্রাম), সাবানের গুড়া (৫ গ্রাম) ও নিমের পাতার নির্যাস প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে ব্যবহার করা। বেশি পোকা দেখা দিলে ইমিডাক্লোপ্রিড গ্রুপের কীটনাশক ০.৫ মিলি/ লিটার হারে পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করা।

এনএইচ/জেডএইচ/জিকেএস

পরবর্তী খবর

‘পানি ব্যবস্থাপনায় তরুণদের সম্পৃক্ততা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ’

নিজস্ব প্রতিবেদক | সিলেট | প্রকাশিত: ০১:০২ পিএম, ২৬ জানুয়ারি ২০২৩

তিন দিনব্যাপি ৮ম আন্তর্জাতিক পানি সম্মেলনের সমাপনী অধিবেশনে সম্মেলনের অগ্রগতির পথ হিসেবে নদীর অধিকার নিশ্চিত করতে তরুণদের আরও বেশি সম্পৃক্ত করার উপর জোর দিয়েছেন আলোচকরা। এ ছাড়া দেশের প্রতিটি নদীর জন্য একটি যুব প্ল্যাটফর্ম চালু করার প্রস্তাবনা আসে, যা নদী রক্ষাকারীদের কার্যক্রমকে নেতৃত্ব দেবে। আলোকচিত্র এবং জিপিএস ব্যবহার করে একটি নদীর মানচিত্রের ডাটাবেস স্থাপনে যুবকদের নিযুক্ত করার প্রস্তাবও আসে সম্মেলন থেকে। সর্বোপরি নদী ও পানি সংক্রান্ত বিষয়ে জনগণের সম্পৃক্ততা, সচেতনতা এবং আন্তঃসীমান্ত সংলাপ উন্নত করার পরামর্শ উঠে আসে সম্মেলন থেকে।

গত ২৫ জানুয়ারি বিকেলে ৮ম আন্তর্জাতিক পানি সম্মেলনের সমাপনী অধিবেশনে বক্তারা এসব কথা বলেন।

সমাপনী পর্বে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী এমপি বলেন, ‘নদীকে জীবন্ত সত্তা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ। নীতি ও কর্মের রূপান্তর করার জন্য আমাদের এখন শনাক্ত করতে হবে কীভাবে নদী ও প্রাকৃতিক সম্পদের মূল্যায়ন করা যায়।
সরকার বিবিএসের সহায়তায় প্রাকৃতিক সম্পদের হিসাব করার উদ্যোগ নিয়েছে, যেখানে নদীও একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হবে। এটি দেশের জিডিপিতে প্রতিফলিত হবে এবং প্রাকৃতিক সম্পদের মূল্যায়নের ওপর বার্ষিক প্রকাশনা থাকবে।’

সাবের হোসেন চৌধুরী আরও বলেন, ‘পানি ও এর ব্যবস্থাপনার মধ্যে যোগসূত্রকে সর্বত্র জোর দিতে হবে। যেহেতু আমরা স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের পথে আছি এবং দেশের আরও উন্নয়ন ঘটছে। তাই পানি শাসন একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হয়ে উঠবে।’

তিনি পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় অবস্থিত পানি জাদুঘরকে কীভাবে সমৃদ্ধ করা যায়, তার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন। পানি ও নদী সম্পর্কে মানুষের জানার জন্য একটি প্লাটফর্ম তৈরি করার বিষয়েও অভিমত প্রকাশ করেন।

অ্যাকশনএইড বাংলাদেশের আয়োজনে ‘জীবন-জীবিকার জন্য পানি এবং নদী: যুবদের ভূমিকা’ প্রতিপাদ্য নিয়ে সিলেটে ২৩-২৫ জানুয়ারি ৮ম আন্তর্জাতিক পানি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সিলেট জেলার ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার কুশিয়ারা নদী ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকা পরিদর্শনের মাধ্যমে সম্মেলনের সূচনা হয়।

সম্মেলনে দেশি-বিদেশি নীতিনির্ধারক, শিক্ষাবিদ, গবেষক, সরকার প্রতিনিধি এবং বিশেষজ্ঞদের এক করে পানি ও নদী সম্পর্কিত সমস্যার ক্ষেত্রে যুব সংহতকরণের ওপর আলোকপাত করা হয়। সম্মেলনে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক স্তরে পানি ও নদী শাসনে অবদান রাখতে পারে এমন বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য বিষয় উঠে আসে।

সম্মেলনটি পাঁচটি বিষয়ভিত্তিক ক্ষেত্র- জলাশয় ইতিহাস, রূপবিদ্যা এবং পরিবর্তন; নদী একটি জীবন্ত সত্তা এবং নদীর উপর নৃতাত্ত্বিক হস্তক্ষেপের প্রভাব; পানি ও নদী অধিকারে যুব সম্পৃক্ততা; আন্তঃদেশীয় নদী ও পানি রাজনীতি; উদ্ভাবন, পানি, বাস্তুতন্ত্র ও টেকসই জীবিকাকে আবর্ত করে অনুষ্ঠিত হয়।

অ্যাকশনএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ্ কবির বলেন, ‘নদীর প্রভাব আমাদের জীবন ও জীবিকার ওপর ব্যাপকভাবে রয়েছে। কিন্তু বর্তমানে নদীগুলো দখল ও দূষিত হচ্ছে। নদীগুলোর আয়তনও সংকুচিত হচ্ছে দিন দিন। নদীর অস্তিত্ব ও প্রাণ আছে। জোর করে এর গতিপথ পরিবর্তন করা প্রকৃতি এবং মানবজাতির জন্য হুমকিস্বরূপ। নদীগুলোকে প্রাকৃতিকভাবে প্রবাহিত হতে দিতে হবে।’

সম্পদ মূল্যায়নে সাবের হোসেন চৌধুরীর উদ্যোগের প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, ‘প্রাকৃতিক সম্পদ মূল্যায়ন করার জন্য সামাজিক সূচকের বৈশ্বিক মানদণ্ডের লিঙ্গ সংবেদনশীলতাকে বিবেচনায় রাখতে হবে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ও সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজের পরিচালক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ‘যেহেতু আমরা ৮ম আন্তর্জাতিক পানি সম্মেলন শেষ করছি, আমি বিশ্বাস করি এই সম্মেলনগুলো আমাদের সঠিক পথে অগ্রসর হতে সাহায্য করেছে। বিশেষ করে সারাদেশ এবং দক্ষিণ-এশিয়া অঞ্চলের মানুষকে পানি নিয়ে ভাবতে বাধ্য করেছে। এ বছর যেহেতু আমরা নদীর অধিকার নিশ্চিত করার জন্য তরুণদের সম্পৃক্ত করার গুরুত্বের ওপর জোর দিচ্ছি, তাই নীতিনির্ধারকদেরও ভাবতে হবে কীভাবে দেশের ছাত্র সংগঠনগুলোকে রাজনীতিতে সম্পৃক্ত করার পাশাপাশি নদী ও পরিবেশের সমস্যাগুলোর পক্ষে সমর্থন করার জন্য সংগঠিত করা যায়।’

‘আন্তর্জাতিক এ সম্মেলন ভারত, নেপাল, বাংলাদেশ এবং চীনের পানি এবং নদীগুলোর অভিন্নতা অনুসন্ধানের একটি দ্বার উন্মুক্ত করেছে। আমরা প্রতিটি দেশের নদী এবং এর দূষণের দিকে নজর দিতে পারি এবং ভূ-রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জের নদী রাজনীতির সমস্ত রূপ থেকে দূরে থেকে সর্বোত্তম অনুশীলনগুলো শেয়ার করার জন্য সংলাপের নিমিত্তে একটি আন্তঃসীমান্ত প্ল্যাটফর্ম তৈরি করতে পারি।’ বলেন ড. ইমতিয়াজ আহমেদ।

ভারতের পরিবেশ ও জলবায়ু সাংবাদিক জয়ন্ত বসু বলেন, ‘আমাদের একটি উপায় চিহ্নিত করতে হবে, যাতে আন্তঃসীমান্ত নদীগুলো ভারত ও বাংলাদেশ উভয়েরই উপকার করে। এসব নদীর পানির ওপর উভয় দেশের জনগণের সমান অধিকার রয়েছে। কারণ এসব নদীর সঙ্গে মানুষের জীবন-জীবিকাও জড়িত। কুশিয়ারা নদীর পানি বরাদ্দ চুক্তি অন্যান্য আন্তঃসীমান্ত নদীর জন্য আলোচনার একটি প্রেক্ষাপট শুরু করেছে এবং আমাদের এই গতি ধরে রাখতে হবে।’

সম্মেলনে পোস্টডেম ইনস্টিটিউট ফর ক্লাইমেট অ্যাকশন রিসার্চের বিজ্ঞানী মফিজুর রহমান, নেচার কনজারভেশন ম্যানেজমেন্টের নির্বাহী পরিচালক এস এম মনজুরুল হান্নান খান, অ্যাকশনএইড ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ সোসাইটির ভাইস-চেয়ার ইব্রাহিম খলিল আল জায়াদ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক মো. জহির বিন আলম, রিভারাইন পিপলের সাধারণ সম্পাদক শেখ রোকন, ওয়াটারএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর হাসিন জাহান, সেন্টার ফর আফ্রিকান স্টাডিজের সহযোগী অধ্যাপক এবং ভাইস ডিরেক্টর ডা. ঝাং জিন, সাংহাই নরমাল ইউনিভার্সিটির কলকাতায় অবস্থিত লিভিং ওয়াটারস মিউজিয়ামের (এলডব্লিউএম) আর্ট অ্যান্ড আউটরিচ কো-অর্ডিনেটর সুকৃত সেন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

ছামির মাহমুদ/এসইউ/এএসএম

পরবর্তী খবর

যমুনার বালুচরে সূর্যমুখীর হাসি

জেলা প্রতিনিধি | গাইবান্ধা | প্রকাশিত: ১২:১৯ পিএম, ২৫ জানুয়ারি ২০২৩

গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলায় যমুনার বিস্তীর্ণ বালুচরে সূর্যমুখী ফুলের অপরূপ দৃশ্য মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে। উপজেলার হাসিলকান্দি গ্রামের চরজুড়ে এখন শোভা পাচ্ছে ফুটন্ত ‘সূর্যমুখী’ ফুল। দিগন্তজুড়ে সূর্যমুখী ফুলের হাসি চোখে শান্তির পরশ বুলিয়ে দেয়। এ ফুল দেখতে আর সূর্যমুখী বাগানে নিজেদের ছবি, সেলফি তুলতে নানা বয়সী সৌন্দর্যপিপাসু মানুষ প্রায় প্রতিদিন ভিড় করছেন। এতে বাগানের কিছুটা ক্ষতিও হচ্ছে। ফলে খানিকটা বিরক্ত হয়ে উঠেছেন বাগান মালিক।

উৎসুক মানুষের কাছে এসব সূর্যমুখী ফুল শুধু সৌন্দর্যের ডালপালা মনে হলেও বাস্তবে দৈনন্দিন চাহিদা মেটানোর একটি উপকরণ এটি। সূর্যমুখী ফুলের শুকনো বীজ থেকে উৎপাদিত হয় তেল। পাশাপাশি এ ফুলের উচ্ছিষ্ট থেকে বের হয় ‘খইল’ নামের এক ধরনের গোখাদ্য।

তুলনামূক লাভজনক হওয়ায় সূর্যমুখীর আবাদে উৎসাহী হয়েছেন উপজেলার হাসিলকান্দি গ্রামের কৃষক আলতাফ হোসেন। দ্বিতীয়বারের মতো এবার সূর্যমুখী চাষ করে কাঙ্ক্ষিত ফলন পেয়ে খুশি তিনি। মাটি ও আবহাওয়া এ ফুল চাষাবাদের জন্য উপযোগী হওয়ায় কম সময় ও অর্থ ব্যয় করে সূর্যমুখী চাষ করে লাভবান হওয়ার অপার সম্ভাবনায় দিন দিন চওড়া হচ্ছে চাষির মুখের হাসি।

আরও পড়ুন: কুড়িগ্রামে ১৬ হাজার হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ

আলতাফ হোসেন সরকার (৭০) একসময় একটি কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন। তিনি গত ২০১০ সালে অবসরে যান।অবসর নেওয়ার পর চরের জমিতে কৃষিকাজ শুরু করেন। কৃষক হিসেবেও সফলতা অর্জন করেন। একদিন পত্রিকায় সূর্যমুখীর তেলের পুষ্টিগুণ ও ফলন দেখে গত বছর কৃষি কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করে ৩ বিঘা জমিতে চাষ করে ভালো ফলন পান।

যমুনার বালুচরে সূর্যমুখীর হাসি

তিনি এবারও ৫ বিঘা জমিতে সূর্যমুখী চাষ করেন। এতে তার খরচ হয়েছে প্রায় ৬০ হাজার টাকা। এবার সূর্যমুখীর ফলন আরও ভালো হয়েছে। সূর্যমুখী বীজ বিক্রি করে খরচ বাদ দিয়ে প্রায় দেড় লাখ টাকা লাভের স্বপ্ন দেখছেন আলতাফ হোসেন সরকার।

গাইবান্ধা কৃষি গবেষণা বিভাগ জানায়, চলতি মৌসুমে আলতাফ হোসেনের ৫ বিঘা জমিসহ চরে ২০ বিঘা জমিতে সূর্যমুখী চাষ হয়েছে। চাষের ক্ষেত্রে প্রতি বিঘা জমিতে ১ কেজি বীজ বুনতে হয়। দেড় ফুট দূরত্বে একটি করে বীজ বপন করতে হয়। সারির দূরত্ব রাখতে হয় দেড় ফুট। মাত্র ৮৫-৯০ দিনের মধ্যে বীজ বপন থেকে শুরু করে উৎপাদন করা সম্ভব। প্রতি বিঘা জমিতে সব খরচ বাদ দিয়ে ১৫-২০ হাজার টাকা আয় হয়।

আরও পড়ুন: ফরিদপুরে সরিষার হলুদ ফুলে কৃষকের মুখে হাসি

স্থানীয় চিকিৎসক ডা. উত্তম দেবগুপ্ত বলেন, ‘সূর্যমুখীর তেলে আছে শতভাগ উপকারী ফ্যাট। আরও আছে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন ও পানি। এ তেল ক্ষতিকর কোলেস্টেরলমুক্ত। এতে আছে ভিটামিন ই, ভিটামিন কে ও মিনারেল। এ ছাড়া হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও কিডনি রোগে আক্রান্তদের জন্য সূর্যমুখী তেল নিরাপদ।’

গাইবান্ধা কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আব্দুল্যাহ আল মাহমুদ বলেন, ‘নতুন উদ্ভাবিত সূর্যমুখী উচ্চ ফলনশীল ও বেশি লাভজনক। কম সময়ে কম পরিশ্রমে উৎপাদন ও ভালো দাম পাওয়া যায়। সয়াবিন তেলের চেয়ে বেশি পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ, স্বাস্থ্যসম্মত এবং রোগ প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবারের ফলন দেখে আগামীতে চাষের প্রতি আগ্রহ আরও বাড়বে।’

এসইউ/জেআইএম