ডাকসু নির্বাচনে ‘প্রতিরোধ পর্ষদের’ ১৮ দফা ইশতেহার ঘোষণা
সংবাদ সম্মেলনে ৭ বাম সংগঠন সমর্থিত প্যানেল ‘প্রতিরোধ পর্ষদ’ এর প্রার্থীরা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে ১৮ দফা ইশতেহার ঘোষণা করেছে ৭ বাম সংগঠন সমর্থিত প্যানেল ‘প্রতিরোধ পর্ষদ’। যেখানে অ্যাকাডেমিক ক্যালেন্ডারে কেন্দ্রীয় ও হল সংসদ নির্বাচনের তারিখ সুনির্দিষ্ট করা ও গবেষণা খাতে অন্তত ১০ ভাগ বরাদ্দ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
রোববার (৩১ আগস্ট) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ ইশতেহার ঘোষণা করেছেন প্যানেলটির জিএস প্রার্থী মেঘমল্লার বসু।
‘প্রতিরোধ পর্ষদ’ এর এই ১৮ দফা ইশতেহারের মধ্যে রয়েছে...
১. ডাকসুর কাঠামোর সংস্কার ও ক্ষমতা বৃদ্ধি: অ্যাকাডেমিক ক্যালেন্ডারে কেন্দ্রীয় এবং হল সংসদ নির্বাচনের তারিখ সুনির্দিষ্টকরণ, সিনেটের কোরাম পূর্ণ করতে ন্যূনতম দুজন নির্বাচিত ছাত্র প্রতিনিধির উপস্থিত থাকার বাধ্যবাধকতা রেখে ৭৩-এর অধ্যাদেশ সংশোধনকরণ সিনেটে ৫ জন নয়, ন্যূনতম ১০ জন নির্বাচিত ছাত্র প্রতিনিধি রাখার বিধান যুক্ত করা।
২. শিক্ষার্থীদের ক্ষমতায়ন করে শিক্ষার মানোন্নয়ন: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ-বেসরকারিকরণ-সংকোচন নিষিদ্ধ ঘোষণা করা। আইএমএফ, বিশ্বব্যাংকের পরামর্শে গৃহীত ইউজিসির কৌশলপত্র বাতিল করা।
৩. গবেষণায় অগ্রাধিকার: বিশ্ববিদ্যালয়ে বাজেটে অন্তত ১০ ভাগ গবেষণা খাতে বরাদ্দ নিশ্চিত করা। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে প্রতিটি গবেষণাগারের আধুনিকায়নের ব্যবস্থা করা।
৪. আবাসন সংকট নিরসন: সকল হলে সন্ত্রাস-দখলদারিত্ব বন্ধ করা। পুরোনো ভবনগুলোর সংস্কার, সম্প্রসারণ এবং নতুন ভবন নির্মাণ করতে প্রশাসনকে বাধ্য করা। ১ম বর্ষ থেকেই প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে সিট নিশ্চিত করা। একই সঙ্গে গণরুম, গেস্টরুম ও র্যাগিং প্রথা নিষিদ্ধ করে ক্যাম্পাস চার্টার প্রকাশ এবং হলগুলোতে পর্যাপ্ত সিসি ক্যামেরা কার্যকর করা।
৫. নারীবান্ধব ক্যাম্পাস: প্রতিটি ফ্যাকাল্টি, নারী হল ও ডিপার্টমেন্টগুলোতে কার্যকরী ভেন্ডিং মেশিন স্থাপন। নারী হলে ‘লোকাল গার্ডিয়ান' নামক হয়রানির নির্মূলসহ হলের যাবতীয় হয়রানিমূলক নিয়মকানুনের অবসান ঘটানো। এছাড়া নারীদের হলে প্রবেশের সময়সীমা প্রত্যাহার করা। উক্ত হলে আবাসিক-অনাবাসিক নারী শিক্ষার্থীদের প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা।
- আরও পড়ুন
- শাহবাগী, হিজাবি ট্যাগ মোকাবিলা করা বড় চ্যালেঞ্জ নারী প্রার্থীদের
- আইনি প্রক্রিয়াকে স্বাগত জানিয়েছেন এস এম ফরহাদ
- ডাকসুতে ভোট দিতে একজন ভোটার সময় পাবেন ৮ মিনিট
৬. সকল জাতিসত্তার অধিকার নিশ্চিতকরণ: পাহাড় ও সমতলে সকল জাতিসত্তার ভাষা, সংস্কৃতি, কৃষ্টি ও ঐতিহ্য সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা। সকল জাতিগোষ্ঠীর সমমর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করা।
৭. খাদ্য এবং পুষ্টিমান সুরক্ষা: হলগুলোত ব্যক্তিমালিকানাধীন ক্যান্টিন নয়, প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে কাফেটেরিয়া চালু করা।
৮. শারীরিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা: শহিদ বুদ্ধিজীবী ডা. মোহাম্মদ মোর্তজা মেডিকেল সেন্টারকে আধুনিক এবং ন্যূনতম ১০০ শয্যায় উন্নীত করা।
৯. মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা: মেডিকেল সেন্টারের আওতায় ‘মেন্টাল হেলথ সাপোর্ট সেন্টার’ গড়ে তোলা এবং অনলাইন-অফলাইনে সেবা প্রদান করা।পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি, পুষ্টি, ব্যায়াম এবং মানসিক প্রশান্তি বিষয়ে কর্মশালার আয়োজন করা।
১০. লাইব্রেরি, সেমিনার, রিডিং রুম এবং কমনরুম: কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি সার্বক্ষণিক উন্মুক্ত রাখা। নতুন লাইব্রেরি ভবন নির্মাণ এবং ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখা।
১১. প্রকাশনা সংস্থাকে সচল করা: বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশনা সংস্থাকে সচল করা এবং নিয়মিত বিভিন্ন বই ও গবেষণাপত্র প্রকাশ করা। মাতৃভাষায় উচ্চ শিক্ষা অর্জনের লক্ষ্যে একটি পূর্ণাঙ্গ অনুবাদ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার কাজ সূচনা করা।
১২. মুক্ত পরিসর পুনরুদ্ধার ও রক্ষণাবেক্ষণ: বিশ্ববিদ্যালয়ের বেহাত হওয়া জমি পুনরুদ্ধারের ব্যবস্থা করা।
১৩. সাহিত্য এবং সংস্কৃতি: হল-অনুষদে নিয়মিত সাহিত্য- সংস্কৃতি বিষয়ক আড্ডার আয়োজন করা। সাহিত্য-সংস্কৃতি বিষয়ক মাসিক পত্রিকা প্রকাশ করা। প্রতিবছর ঐতিহ্যবাহী লোক উৎসবের আয়োজন করা। ভিন্ন ভিন্ন জাতিসত্তার মানুষদের সংস্কৃতি তুলে ধরে সাংস্কৃতিক আয়োজন করা।
১৪. পরিবহণ: বিআরটিসি থেকে ভাড়াভিত্তিক নয়, নিজস্ব অর্থায়নে বাস ক্রয় করা।
১৫. ক্রীড়া: বার্ষিক স্পোর্টস ক্যালেন্ডার তৈরি করা যা অ্যাকাডেমিক ক্যালেন্ডারের সাথে সমন্বিত হবে। খেলার মাঠ নারীবান্ধব করা।
১৬. পরিবেশ ও প্রতিবেশ সুরক্ষা।
১৭. গণতন্ত্র, স্বায়ত্তশাসন ও মতপ্রকাশের অধিকার: ৭৩-এর অধ্যাদেশের অগণতান্ত্রিক ধারা বাতিল করে পূর্ণাঙ্গ স্বায়ত্তশাসন এবং স্বাধীনতা নিশ্চিত করা। প্রশাসনিক এবং অ্যাকাডেমিক কোনো কাজেই রাষ্ট্র-সরকারের হস্তক্ষেপ চলবে না।
১৮. মুক্তিযুদ্ধ এবং গণতান্ত্রিক আন্দোলন: মহান মুক্তিযুদ্ধ, ৯০-এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন এবং ২৪-এর গণঅভ্যুত্থানসহ সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ইতিহাস সংরক্ষণের লক্ষ্যে আর্কাইভ প্রতিষ্ঠা, গবেষণা বৃত্তি নিশ্চিত এবং ত্রৈমাসিক প্রকাশনা বের করা।
এফএআর/কেএইচকে/জিকেএস