ভিডিও EN
  1. Home/
  2. ক্যাম্পাস

চাকসু নির্বাচনে নারীদের কণ্ঠস্বর হতে চান তারা

সোহেল রানা | প্রকাশিত: ০৮:৩০ পিএম, ১০ অক্টোবর ২০২৫

দীর্ঘ ৩৫ বছর পর অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচনে নারী শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিত্ব এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এই নির্বাচনে মোট ৪২৯ জন প্রার্থীর মধ্যে ৪৮ জনই নারী শিক্ষার্থী, যা জাতীয় রাজনীতিতে নারী অংশগ্রহণের জন্য আশার আলো দেখাচ্ছে বলে মনে করছেন শিক্ষার্থীরা।

নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী এই নারী প্রার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী তথা সমগ্র নারী সমাজের অধিকার আদায়ের কণ্ঠস্বর হয়ে উঠতে চান।

নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে একজন, আইন ও মানবাধিকারবিষয়ক সম্পাদক পদে একজন, ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট ও আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক পদে একজন, ছাত্রী কল্যাণবিষয়ক সম্পাদক পদে ১২ জন, দপ্তর সম্পাদক পদে একজন, নির্বাহী সদস্য পদে ছয়জন, পাঠাগার ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক পদে তিনজন, বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক পদে একজন, মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনবিষয়ক সম্পাদক পদে একজন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে দুজন, যোগাযোগ ও আবাসনবিষয়ক সম্পাদক পদে দুজন, সমাজসেবা ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক পদে দুজন, সহ-খেলাধুলা ও ক্রীড়া সম্পাদক পদে একজন, সহ-ছাত্রী কল্যাণবিষয়ক সম্পাদক পদে ১১ জন, সহ-দপ্তর সম্পাদক পদে একজন এবং সহ-সাহিত্য, সংস্কৃতি ও প্রকাশনা সম্পাদক পদে দুজন নারী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, বাংলাদেশের নারীরা দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতি ও নির্বাচনে অনেকটা পিছিয়ে ছিল। ৫ আগস্ট পটপরিবর্তনের পরে নতুন বাংলাদেশে নারীদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ জাতীয় রাজনীতিতে আশার আলো দেখাচ্ছে। চাকসু নির্বাচনে নারী প্রার্থীরা নারীদের অধিকার আদায়ে কণ্ঠস্বর হবেন বলে প্রত্যাশা শিক্ষার্থীদের।

চাকসু রাজনৈতিক ও অ-রাজনৈতিক এবং স্বতন্ত্র জোটগুলো থেকে মোট ১৩টি প্যানেল এই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। এরমধ্যে ছাত্রদলের প্যানেল থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী নারীরা হলেন ছাত্রী কল্যাণ সম্পাদক পদে নুজহাত জাহান, ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট ও আন্তর্জাতিক সম্পাদক শ্রুতিরাজ চৌধুরী, সহ-ছাত্রী কল্যাণ সম্পাদক শাফকাত শফিক এবং নির্বাহী সদস্য প্রার্থী নুসরাত জাহান।

আরও পড়ুন
ছাত্রদল প্যানেলের ৮ দফার ইশতেহার ঘোষণা
ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেলের ৩৩ দফার ইশতেহার

ছাত্রদলের প্যানেলের সহ-ছাত্রী কল্যাণবিষয়ক সম্পাদক শাফকাত শফিক বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শুরু থেকেই আমি জাতীয়তাবাদী আদর্শের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। চব্বিশের আন্দোলনে সক্রিয় ছিলাম। আমি চাই এমন একটি ক্যাম্পাস, যেখানে শিক্ষার্থীরা নির্বিঘ্নে জ্ঞানার্জন করতে পারবেন, মেধার বিকাশ ঘটবে। গণতান্ত্রিক পরিবেশ বজায় থাকবে। এই চাওয়া থেকেই নির্বাচনে অংশ নেওয়া।’

ছাত্রশিবির সমর্থিত ‘সম্প্রীতির শিক্ষার্থী জোট’ থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সহ-দপ্তর সম্পাদক জান্নাতুল আদন নুসরাত, ছাত্রী কল্যাণবিষয়ক সম্পাদক নাহিমা আক্তার দ্বীপা, সহ-ছাত্রী কল্যাণবিষয়ক সম্পাদক জান্নাতুল ফেরদাউস রিতা, সমাজসেবা ও পরিবেশ তাহসিনা রহমান, নির্বাহী সদস্য পদে জান্নাতুল ফেরদাউস সানজিদা।

ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের প্যানেল ‘সচেতন শিক্ষার্থী সংসদ’-এ রয়েছেন ছাত্রীকল্যাণ সম্পাদক মারজান বেগম ও সহ-ছাত্রীকল্যাণ সম্পাদক ফারজানা আক্তার।

সহ-ছাত্রীকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক পদপ্রার্থী জন্নাতুল ফেরদাউস রিতা বলেন, ‘মেয়েদের সমস্যাগুলো নিয়ে কাজ করতে নির্বাচন করছি। আমি কোনো দল করি না তবুও শিবিরের সঙ্গে জোট করেছি। কারণ, আমার কাছে মনে হয়েছে, ৫ আগস্টের পরে তারা সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থীদের কাছাকাছি পোঁছাতে পেরেছেন। সুতরাং তাদের সঙ্গে জোট করলে আমার কাজের জায়গাটা বেড়ে যাবে বলে আমার কাছে মনে হয়েছে।’

অন্যান্য প্যানেল থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী নারী শিক্ষার্থীরা হলেন ‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী সম্মিলন’ প্যানেলের এজিএস পদে জান্নাতুল ফেরদৌস, ছাত্রীকল্যাণ সম্পাদক সারাহ চৌধুরী, সহ-ছাত্রী কল্যাণ সম্পাদক মারিয়া আলম, আইন ও মানবাধিকার সম্পাদক তানিয়া আক্তার মাহি, পাঠাগার ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক সুমাইয়া সুলতানা।

বাম সংগঠনগুলোর প্যানেল ‘বৈচিত্র্যের ঐক্য’ থেকে সহ-সাহিত্য সংস্কৃতি সম্পাদক পদে কলতানের সভাপতি শামসুন্নাহার রুমী, ছাত্রীকল্যাণ বিষয়ক নারী অঙ্গনের সংগঠক মোসা. সুমাইয়া এবং সহ-ছাত্রীকল্যাণ সম্পাদক পদে লড়ছেন বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সহ-সাধারণ সম্পাদক উম্মে সাবাহ তাবাসসুম শুদ্ধতা।

১৫ অক্টোবর সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত চাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের ভোট হবে। এ নির্বাচনে প্রার্থী রয়েছেন ৯০৭ জন। এরমধ্যে চাকসুর ২৬টি পদের বিপরীতে ৪১৫ জন এবং হল সংসদে ৪৮৬ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।

নির্বাচনে ভোটার রয়েছেন ২৭ হাজার ৫২১ জন। এরমধ্যে ছাত্র ১৬ হাজার ৮৪ জন ও ছাত্রী ১১ হাজার ৩২৯ জন।

এর আগে ১৯৭০ সালে চাকসুর প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এরপর ১৯৭২, ১৯৭৪, ১৯৭৯, ১৯৮১ সালে এবং ১৯৯০ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় চাকসুর নির্বাচন।

এ বিষয়ে চাকসু নির্বাচন কমিশনের সদস্যসচিব ড. এ কে এম আরিফুল হক সিদ্দিকী জাগো নিউজকে বলেন, ‘বাংলাদেশ নারীরা এখনো অনেকটা পিছিয়ে। কেননা বিগত বছরগুলোতে রাজনীতি এবং নির্বাচনে সংঘাত বিরাজ করতো। চাকসুতে যদি সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন হয়, তাহলে আগামী বছর নারীদের উপস্থিতি আরও বাড়বে। তাদের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে যে ভয়ভীতি রয়েছে সেটা কেটে যাবে। তবে বিভিন্ন পদে নারীদের অংশগ্রহণ থাকলেও সহ-সভাপতি পদে কেউ মনোনয়নপত্র জমা দেননি।’

এসআর/জিকেএস