চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২
বিএনপির ঘাঁটিতেও প্রভাব বেড়েছে জামায়াতের
ছবিতে আমিনুল ইসলাম, মাসউদা আফরোজ হক শুচি, মিজানুর রহমান
চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ জেলার একমাত্র আসন, যা তিন উপজেলা নিয়ে গঠিত। উপজেলাগুলো হচ্ছে নাচোল, গোমস্তাপুর ও ভোলাহাট। অনেক আগে থেকেই এই আসনে জয়লাভ করে এসেছে বিএনপি। ঝামেলামুক্ত বলা হয় এ আসনকে। কারণ ২০১৮ সালের নির্বাচনেও এ আসনে জয়জয়কার ছিল এই দলটির। আওয়ামী লীগের লোকজন দখলে নিতে পারেনি। তবে আগামীর নির্বাচনে আসনটিতে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে বিএনপির লড়াই হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৯৯১ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত এ আসনে পরপর তিনবার এমপি নির্বাচিত হন বিএনপির নেতা সৈয়দ মঞ্জুর হোসেন। প্রয়াত বিএনপি নেতা সৈয়দ মঞ্জুর হোসেন শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে এমপি নির্বাচিত হন মুহা. জিয়াউর রহমান। পরের বার ২০১৪ সালের নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে এমপি নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগ নেতা গোলাম মোস্তফা বিশ্বাস। সেবার বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেয়নি। সর্বশেষ ২০১৮ সালের নির্বাচনে আবার বিএনপি’র দখলে যায় এই আসন। সারাদেশে রাতেই ভোট ডাকাতি হলেও এ আসনটিতে এমপি হন কেন্দ্রীয় বিএনপির শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক মো. আমিনুল ইসলাম। তবে এ আসনটিতে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে বেসামাল বিএনপি। বিএনপি সমৃদ্ধ ভোটব্যাংক থাকলেও ঐক্যের ঘাটতি কাল হতে পারে দলটির।
আগামীর নির্বাচনে বিএনপি থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন আমিনুল ইসলাম। এছাড়া মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন বিএনপি নেতা আব্দুস সালাম তুহিন, রহনপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র বিএনপি নেতা তারিক আহম্মেদ ও মহিলা দলের নেত্রী মাসউদা আফরোজ হক (শুচি)।
সেখানে বিএনপি নেত্রী মাসউদা আফরোজ হক সূচি তৃণমূল থেকে দলীয় হাইকমান্ড পর্যন্ত জোর লবিং চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি প্রার্থী হলে ভোটের মাঠে ভালো করবেন বলে দলটির একাধিক নেতা জানিয়েছেন। তবে এ আসনে বিগত দিনের তুলনায় জামায়াতে ইসলামীর ভোট ও জনপ্রিয়তা দুটোই বেড়েছে। সে ক্ষেত্রে বলা যায় বিএনপিকে চ্যালেঞ্জ ছুড়তে প্রস্তুতি নিচ্ছে জামায়াত।
বিএনপির ঘাঁটি হলেও এখানে জামায়াতে ইসলামীর প্রভাবও কম নয়। ১৯৮৬ সালের তৃতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামায়াতের প্রার্থী মীম ওবাইদুল্লাহ এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনটিতে জামায়াতের প্রার্থী ড. মিজানুর রহমান। তিনিও মাঠে রয়েছেন। দিন দিন বাড়ছে তার জনপ্রিয়তা।
সেখানে বিএনপি নেত্রী মাসউদা আফরোজ হক সূচি তৃণমূল থেকে দলীয় হাইকমান্ড পর্যন্ত জোর লবিং চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি প্রার্থী হলে ভোটের মাঠে ভালো করবেন বলে দলটির একাধিক নেতা জানিয়েছেন। তবে এ আসনে বিগত দিনের তুলনায় জামায়াতে ইসলামীর ভোট ও জনপ্রিয়তা দুটোই বেড়েছে। সে ক্ষেত্রে বলা যায় বিএনপিকে চ্যালেঞ্জ ছুড়তে প্রস্তুতি নিচ্ছে জামায়াত।
সরেজমিনে দেখা যায়, এলাকার সমির বিশ্বাস, আলি হাসানসহ বেশ কয়েকজন বসে আছে একটি চায়ের দোকানে। আলি হাসান বলেন, আমাদের তিন উপজেলা মিলিয়ে একটি আসন। এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় যেতে অনেক সময় লাগে। আমরা সংসদ সদস্যদের চোখে দেখতেই পাই না। এতে উন্নয়নও হয় না। আমাদের এলাকার সড়কগুলো বেহাল দশা; দেখার কেউ নেই।
২০১৮ সালের নির্বাচনে আবার বিএনপির দখলে যায় এই আসন। সারাদেশে রাতেই ভোট ডাকাতি হলেও এ আসনটিতে এমপি হন কেন্দ্রীয় বিএনপির শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক মো. আমিনুল ইসলাম। তবে এ আসনটিতে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে বেসামাল বিএনপি। বিএনপি সমৃদ্ধ ভোটব্যাংক থাকলেও ঐক্যের ঘাটতি কাল হতে পারে দলটির।
নাচোল হাট বাকইল এলাকার বাসিন্দা রহিম উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, গত ১৭ বছর আমরা ভোট দিতে পারিনি। ভোটের দিন সকাল ১০টার পরেই শুনেছি আওয়ামী লীগের প্রার্থী নির্বাচিত। এদিক বিবেচনায় আমাদের ভোট নিয়ে কোনো মাথা ব্যথা নেই।
চায়ের দোকানে জমেছে ভোটের আলাপ-ছবি জাগো নিউজ
চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনের বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক মাসউদা আফরোজ হক সূচি বলেন, জেলার অন্য আসনের চেয়ে এ আসনের বিষয়টি আলাদা। কারণ জেলার অন্য আসনগুলো একটি উপজেলা নিয়ে গঠিত। কিন্তু চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ (নাচোল-গোমস্তাপুর-ভোলাহাট) তিন উপজেলা নিয়ে গঠিত। এতে যে কোনো কাজ করা একটু কষ্টকর। তবে গত ১৭ বছর আমি নেতাকর্মীদের পাশে ছিলাম। তাদের আওয়ামী লীগের লোকজন নির্যাতন করেছে আর আমি পাশে দাঁড়াতাম। সেই দিন বিবেচনা করে আমি আশা করছি। মানুষ আমাকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করবে।
- আরও পড়ুন
- ১৮ বছর পর ফেরা তুহিনের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী জামায়াত
- লাখের বেশি হিন্দু ভোটারের মন জয়ে তৎপর বিএনপি-জামায়াত
মনোনয়নপ্রত্যাশী আমিনুল ইসলাম বলেন, সর্বশেষ ২০১৮ সালের নির্বাচনেও মানুষ আমাকে ভোট দিয়েছে। কারণ আমি মানুষের জন্য কাজ করি। তাই আমি দলীয় নেতাকর্মীদের সব সময় পাশে থাকার চেষ্টা করি। এবারও নিরাশ হবো না বলেই মনে করছি।
জামায়াতের প্রার্থী ড. মিজানুর রহমান বলেন, জামায়াতে ইসলামী কাজ করে মানুষের জন্য। তবে হ্যাঁ মানুষের ভালোবাসা আমরা পেয়েছি। মানুষ আমাদের পাশে আছে। দলও আমাকে সেই সুযোগ দিয়েছে। তাই জনগণের সেবা করার লক্ষ্যে আমরা দিনরাত এক করে তাদের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছি।
- আরও পড়ুন
- প্রার্থী নিয়ে কোন্দল মিটেছে বিএনপির, সুযোগ খুঁজছে জামায়াত
- নিজামীর ছেলে দাঁড়িপাল্লার প্রার্থী, ধানের শীষ চান অনেকেই
তিন উপজেলা নিয়ে গঠিত আসনে মোট ভোটার ৪ লাখ ৩১ হাজার ৭১। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ১৪ হাজার ৩৫৬ ও নারী ভোটার ২ লাখ ১৬ হাজার ৭১৫।
এসওএম/এসএইচএস/এমএফএ/এএসএম