কুষ্টিয়ায় চরমপন্থি সংগঠনের নামে শিক্ষকদের কাছে চাঁদা দাবির অভিযোগ
নিষিদ্ধ ঘোষিত চরমপন্থি সংগঠন পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টির (লাল পতাকা) নেতা ও সদস্য পরিচয়ে কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলায় কয়েকজন শিক্ষকের কাছে চাঁদা দাবি করছে একটি চক্র। এসময় পরিবারের ক্ষতিসহ তাদের প্রাণনাশেরও হুমকি দেওয়া হয়েছে।
চাঁদার দাবিতে হুমকি পাওয়া শিক্ষকরা সবাই সনাতন ধর্মাবলম্বীর। এদের মধ্যে দুইজন এরইমধ্যে বিকাশের মাধ্যমে চাঁদার টাকাও পরিশোধ করেছেন। নিজের ও পরিবারের নিরাপত্তার স্বার্থে বিষয়টি গোপন রেখেছেন তারা। এ ঘটনায় এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
ভুক্তভোগীদের দাবি, অপরিচিত ব্যক্তি নিজেদের উক্ত সংগঠনের সদস্য পরিচয় দিয়ে ভয়ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে অর্থ আদায়ের চেষ্টা করছে। চাঁদা না দিলে প্রাণনাশ ও পরিবারের সদস্যদের ক্ষতি করার হুমকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন তারা।
এদিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বলছেন, অনেক সময় সংঘবদ্ধ অপরাধীরা ভুয়া পরিচয় ব্যবহার করে সাধারণ মানুষকে ভয়-ভীতি দেখিয়ে অর্থ আদায় করে থাকে। তাই ভুক্তভোগীদের যেকোনো প্রকার চাঁদা দাবিকে অগ্রাহ্য করে সঙ্গে সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে অভিযোগ জানানোর অনুরোধ জানানো হয়েছে।
মিরপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা জয়শ্রী পাল বলেন, শনিবার সকাল ১০টা ৩২ মিনিটে একটি নম্বর থেকে কল আসে। ফোনের অপর প্রান্তের ব্যক্তি নিজেকে পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য আবীর হোসেন পরিচয় দিয়ে আমার ও পরিবার সম্পর্কে তিনি সবকিছু জানেন বলে জানান। এরপর তার নেতা আট জেলার প্রধানের সঙ্গে কথা বলতে বলেন। ওই ব্যক্তি চাঁদা দাবি করেন এবং না দিলে পরিবারের ক্ষতি হবে বলে হুমকি দেন।
একই নম্বর থেকে বেলা সোয়া ১১টার দিকে ফোন আসে স্থানীয় মিরপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক বিভাস কুমার পালের কাছে। তার কাছেও পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টির পরিচয়ে চাঁদা দাবি করা হয়।
বিভাস কুমার পাল বলেন, পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টির প্রধান পরিচয় দিয়ে ফোন করে চাঁদা দাবি করা হয়। ভয়ে পরিবারের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে তাদের দেওয়া বিকাশ নম্বরে ১০ হাজার টাকা পাঠাই। টাকা পাঠানোর পরও বিভিন্ন নম্বর থেকে ফোন করে আরও টাকা দাবি করে হুমকি অব্যাহত রেখেছে।
আরও পড়ুন-
রূপগঞ্জে সিমেন্ট ফ্যাক্টরিতে আগুন, নিয়ন্ত্রণে ৫ ইউনিট
চাঁপাইনবাবগঞ্জে ১৯ জনকে ঠেলে পাঠালো বিএসএফ
অর্থছাড় না হওয়ায় থমকে আছে এক হাজার আসনের অডিটোরিয়াম নির্মাণ
বিভাস কুমার পাল আরও বলেন, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ছাতিয়ান আব্দুর রাফেত বিশ্বাস ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক গোপাল দেবনাথের সঙ্গে এই বিষয় নিয়ে কথা বলছিলাম। ঠিক তখন তার কাছেও ফোন আসে। নম্বরটি একই হওয়ায় আর ফোন ধরিনি।
এর আগে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সাগরখালী আদর্শ ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক উত্তম দেবনাথের কাছেও চাঁদা দাবি করা হয়। তিনিও নিরাপত্তার কথা ভেবে রাত ৮টার দিকে তাদের দেওয়া বিকাশ নম্বরে টাকা পাঠিয়েছেন। মনে হচ্ছে আমরা কোনো প্রতারক চক্রের ফাঁদে পড়েছি। থানায় এ ব্যাপারে এখনও কোনো অভিযোগ দেইনি। তবে সবার সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেবো।
কুষ্টিয়া জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জয়দেব বিশ্বাস বলেন, বিষয়টি আমি জানার সঙ্গে সঙ্গে প্রশাসনকে জানিয়েছি। আশপাশের একটি সংঘবদ্ধ চক্র পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টির পরিচয় ব্যবহার করে এই চাঁদাবাজি করছে।
মিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোমিনুল ইসলাম বলেন, এখন পর্যন্ত কোনো অভিযোগ পাইনি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে অভিযোগ জানানোর অনুরোধ জানান তিনি।
র্যাব-১২ কুষ্টিয়া ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার সুদীপ্ত সরকার বলেন, ব্যাপারটি মৌখিকভাবে জেনেছি। যেসব নম্বর থেকে ফোন দেওয়া হয়েছে তার লোকেশন মাদারীপুর জেলা দেখাচ্ছে। সংঘবদ্ধ অপরাধীরা ভুয়া পরিচয় ব্যবহার করে ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায় করে থাকে। তাই ভুক্তভোগীদের আরও সচেতন হতে হবে। বিষয়টি নিয়ে র্যাব কাজ করছে।
আল-মামুন সাগর/এফএ/এএসএম