পেশা শিক্ষকতা, নেশা বৃক্ষরোপণ-মানবসেবা
আট বছরে কমপক্ষে ৬০ হাজার গাছের চারা লাগিয়েছেন শিক্ষক নুরুল ইসলাম। ছবি-সংগৃহীত
ফরিদপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের শিক্ষক নুরুল ইসলাম (৪৬)। তবে তিনি কেবল একজন শিক্ষক নন, মানবিক মানুষ হিসেবেও পরিচিতি রয়েছে তার। শিক্ষকতা পেশা হলেও সমাজসেবা যেন তার নেশা হয়ে উঠেছে।
নুরুল ইসলাম দরিদ্রদের জন্য কেনাকাটা করেন, ভিক্ষুক-অসহায়দের করেন সহায়তা। আর সবই করেন নিজের টাকা খরচ করে। যদিও দেশ-বিদেশ থেকে অনেকে আর্থিক সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছেন, তবে তিনি তা গ্রহণ করেননি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নুরুল ইসলাম ছোটকাল থেকেই প্রতি মাসে কমপক্ষে একটি ভালো কাজ করার অনুশীলন করেন। যা তার বাবা-মায়ের কাছ থেকে শিক্ষা পাওয়া। ২০১৯ সাল থেকে সামাজিক উদ্যোগগুলো আরও নিয়মিতভাবে করা শুরু করেন তিনি।

শিক্ষক নুরুল ইসলাম নিজ অর্থায়নে গত আট বছরে বিভিন্ন স্কুল, সড়ক, রেললাইনের পাশে কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া, শিমুল, নারিকেল, সুপারি, তাল ও বিভিন্ন ফল-ফুলের কমপক্ষে ৬০ হাজার গাছের চারা লাগিয়েছেন। এর মধ্যে তালগাছের বীজ রয়েছে ২৫ হাজার। পাশাপাশি দরিদ্রদের মধ্যে খাবার বিতরণ এবং ঈদের সময় সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নতুন পোশাক উপহার দিতে বেতনের একটি অংশ আলাদা করে রাখেন মানবিক এই শিক্ষক।
নুরুল ইসলাম ২০০০ সালে রসায়নে স্নাতক এবং ২০০১ সালে মাস্টার্স শেষ করেন। এরপর ২০০৬ সালে ফরিদপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে যোগদান করেন। তিনি ফরিদপুর শহরের কমলাপুর মহল্লার বাসিন্দা। বাবা আবদুর রহমান ফকির একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও স্বাস্থ্য সহকারী। মা নূর বেগম একজন গৃহবধূ ছিলেন।
আরও পড়ুন:
শিক্ষকতা পেশাকে আমি উপভোগ করছি: ড. দেলোয়ার
‘গুণী শিক্ষক’ সম্মাননা পেলেন ১২ জন

ছয় ভাইবোনের মধ্যে সবার বড় নুরুল ইসলাম। স্ত্রী শামীমা নাসরিন একজন গৃহবধূ। তার এক ছেলে (১২) ও এক মেয়ে (১৪) রয়েছে।
সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী রাইমা আক্তার। শিক্ষক নুরুল ইসলামের বিষয়ে তার ভাষ্য, “স্যার ক্লাসে একবার আমাদের বলেছিলেন, তুমি যদি একজন ভালো ব্যক্তি হতে পারো, তবে তা হলো বাস্তব শিক্ষা। এ কথাটি আমি সবসময় স্মরণে রাখি। এটি আমার জীবনের সবচেয়ে বড় পাঠ। স্যার কেবল রসায়ন শেখান না, কীভাবে ভালো মানুষ হতে হবে তাও শেখান তিনি।”
এ বিষয়ে শিক্ষক নুরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি কেবল গাছ লাগাই না, তাদের যত্নও নিই। এর পাশাপাশি নিজ অর্থ দিয়ে সমাজসেবা করি। এটি আমাকে তৃপ্তি দেয়। যদি আমার অবসর গ্রহণের পরে বা আমার মৃত্যুর পরেও লোকেরা বলে, তিনি অন্যের জন্য বেঁচে ছিলেন। এটি আমার সবচেয়ে বড় অর্জন হবে।’

‘ওরা এগারো জন’ নামের সামাজিক সংগঠনের পক্ষ থেকে ২০২৩ সালে সংবর্ধনা দেওয়া হয় শিক্ষক নুরুল ইসলামকে। সেখানে তাকে ‘বৃক্ষবন্ধু’ হিসেবে উপাধি দেওয়া হয়। সংগঠনটির সভাপতি মাহবুব হোসেন পিয়াল জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা ছোটবেলা থেকেই নুরুল ইসলাম ভাইকে দেখেছি। তিনি একজন শিক্ষকের চেয়েও বেশিকিছু, তিনি এই সম্প্রদায়ের একজন অভিভাবক।’
ফরিদপুর নাগরিক মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক প্রবীর কান্তি পান্না বালা জাগো নিউজকে বলেন, ‘সমাজ নিঃস্বার্থ মানুষের সংখ্যা সঙ্কুচিত হচ্ছে। সেক্ষেত্রে শিক্ষক নুরুল ইসলাম একজন আলোকিত ও বিরল মানুষ।’
এসআর/জেআইএম