ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

টঙ্গীর কেমিক্যালের গুদাম যেন মৃত্যুপুরী

জেলা প্রতিনিধি | গাজীপুর | প্রকাশিত: ১২:০২ পিএম, ০৬ অক্টোবর ২০২৫

গাজীপুরের টঙ্গী রেল স্টেশনের কাছে অনুমোদনহীন কেমিক্যালের গুদাম যেন মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে। সম্প্রতি একটি কেমিক্যাল গুদামে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর ওই গুদামের ১০০ গজের মধ্যে জনসাধারণকে চলাচল না করার জন্য সাবধানতা অবলম্বনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

অনুমোদনহীন এসব কেমিক্যাল গুদামের কারণে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে গোটা এলাকায়। অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে যাওয়া কেমিক্যাল গুদামে এখনো তেজস্ক্রিয়তা রয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তাগণ। সে জন্য ফায়ার সার্ভিসের একটি টিম সেখানে সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করবে। তাই ওই এলাকায় চলাচলে সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশনা দেওয়া হয় ফায়ার সার্ভিস থেকে। ফায়ার সার্ভিসের কর্মী হতাহতের ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

টঙ্গীর কেমিক্যালের গুদাম যেন মৃত্যুপুরী

এদিকে কেমিক্যালের গুদামে লাগা আগুন নেভাতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন একজন অগ্নিনির্বাপণ কর্মী। এছাড়া অগ্নিদগ্ধ হয়ে বেশ কয়েকজন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন। অনুমোদনহীন এ গুদামটি ইতোমধ্যে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। গুদামের চারপাশে সতর্কতামূলক হলুদ ফিতা টানিয়ে দেওয়া হয়েছে। কেমিক্যাল গুদামে অগ্নিকাণ্ডে হতাহতের পার স্থানীয়দের মাঝেও আতঙ্ক বিরাজ করছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ, প্রশাসন ও সরকারি বিভিন্ন সংস্থার লোকজন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

এদিকে আগুন নেভাতে গিয়ে অগ্নিদগ্ধ ফায়ার ফাইটার শামীম আহমেদ মঙ্গলবার দুপুর ৩টার দিকে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) মারা যান। অগ্নিদগ্ধ অন্য তিন ফায়ার কর্মীর অবস্থাও আশঙ্কাজনক। এরা হলেন, ফায়ার সার্ভিসের পরিদর্শক জান্নাতুল নাঈম (৪৩), নুরুল হুদা (৪৫) ও জয় হাসান (২৫) ও দোকান কর্মচারী বাবু হাওলাদার (২০)।

আহত হয়ে টঙ্গী আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি আছেন টঙ্গী ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন অফিসার মো. শাহিন আলম (৪২), পথচারী আশিক (১৭) ও গোডাউন কর্মচারী লিটন (৪০)।

টঙ্গীর এই ঘটনায় আল-আমিন হোসেন বাবু নামে আরও একজন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি আছেন। তার শরীরের ৯৫ শতাংশ পুড়ে গেছে। আল আমিনের অবস্থাও আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

টঙ্গীর কেমিক্যালের গুদাম যেন মৃত্যুপুরী

মারা যাওয়া ফায়ার ফাইটার শামীম আহমেদের বড় ভাই রুহুল আমিন জানান, তাদের বাড়ি নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার পিজাহাতী গ্রামে। বাবার নাম আব্দুল হামিদ। স্ত্রী মনি আক্তার ও ৩ সন্তান নিয়ে টঙ্গীতে থাকতেন শামীম। ২০ বছর ধরে ফায়ার সার্ভিসে কর্মরত ছিলেন শামীম। সম্প্রতি লিডার পদে পদন্নোতি পান।

মঙ্গলবার বিকেলে পুলিশ কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শনে এসে সাংবাদিকদের জানান, ৭ জনের আহতের ঘটনায় এখনো কোনো মামলা হয়নি। সংশ্লিষ্ট সব সরকারি দপ্তর বলছে, ফেমাস কেমিক্যালের কোনো লাইসেন্স ছিল না। প্রতিষ্ঠানটি অবৈধ ছিল। ঘটনার পর প্রতিষ্ঠানটির মালিকও পালিয়ে গেছে।

ঘটনাস্থলে কর্তব্যরত বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের সহকারী পরিচালক নজমুজ্জামান বলেন, আমরা দায়িত্ব পালন করছি। এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দেবে আমাদের ঢাকা অফিস। অগ্নিকাণ্ডের কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির বিষয় জানতে তদন্ত কমিটি গঠিত হবে।

আরও পড়ুন
টঙ্গীতে দগ্ধ ফায়ার ফাইটারদের চিকিৎসা দেশেই যথাযথ
দগ্ধ ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের সহযোগিতার আশ্বাস স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার
রাসায়নিক গুদামে আগুন: বিয়ে ঠিক হওয়া বাবুও চলে গেলেন না ফেরার দেশে

ঢাকা ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের সিনিয়র স্টেশন অফিসার রাশেদ বিন খালিদ বলেন, সোমবার টঙ্গীতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আমাদের ৪ জন অগ্নিদগ্ধসহ ৫ জন আহত হয়েছেন। ফেমাস কেমিক্যাল লিমিটেডের কোনো ফায়ার লাইসেন্স নেই।

গাজীপুর পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আরেফিন বাদল বলেন, ফেমাস কেমিক্যাল লিমিটেডের পরিবেশের কোনো ছাড়পত্র ছিল না। এ বিষয়ে সোমবার রাতে আমরা প্রতিবেদন পাঠিয়ে দিয়েছি সংশ্লিষ্ট দফতরে।

গাজীপুর সিটি করপোরেশন টঙ্গী অঞ্চলের নির্বাহী কর্মকর্তা জহিরুল ইসলাম বলেন, আমরা কেমিক্যালের লাইসেন্স দিই না। ট্রেড লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে কি না খোঁজ নিতে হবে। টঙ্গী পূর্ব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, এখন পর্যন্ত গোডাউনের মালিক ইসমাইল হোসেনকে খুঁজে পাচ্ছি না। কী কী মালামাল পুড়েছে তা-ও জানি না। মালিক পেলে জট খুলবে।

মো. আমিনুল ইসলাম/আরএইচ/জিকেএস