ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

ডিলারের কবজায় কৃষকের সার

মোঃ নাঈম ইসলাম | শেরপুর | প্রকাশিত: ০৯:৩০ এএম, ০৮ অক্টোবর ২০২৫

‘বাজারে সংকট নেই, আমাদের সারের সর্বোচ্চ মজুত আছে’—শেরপুর জেলা কৃষি বিভাগের এমন কথার ঢোল পেটালেও মাঠের বাস্তব চিত্র ভিন্ন। ন্যায্য দাম দূরে থাক, সার নিতে গিয়ে হয়রানির শিকার হচ্ছেন কৃষকরা। ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে ডিলারদেরকে জরিমানা করেও কাটছে না সংকট। সার নিয়ে এমন হযবরল পরিস্থিতি শেরপুরে।

সরেজমিন বিভিন্ন বাজারে দেখা যায়, সরকারিভাবে ৫০ কেজি টিএসপি সারের দাম এক হাজার ৩৫০ টাকা হলেও বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৫০০ থেকে এক হাজার ৬০০ টাকায়। ডিএপি বা ড্যাপ সারের দাম এক হাজার ৫০ টাকা নির্ধারণ থাকলেও বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৩৫০ টাকা বা তারও বেশি দামে। আর মিউরেট অব পটাশ (এমওপি) সারের দাম এক হাজার টাকা হলেও বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৩৫০ টাকায়।

কৃষকদের অভিযোগ, কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে ডিলার ও খুচরা বিক্রেতারা সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে অনেক বেশি দামে সার বিক্রি করছেন। বিশেষ করে ধান রোপণের মৌসুমে বেশি প্রয়োজনীয় ট্রিপল সুপার ফসফেট (টিএসপি), মিউরেট অব পটাশ (এমওপি) ও ডায়ামোনিয়াম ফসফেট (ডিএপি) সারের দাম বেড়ে গেছে।

শেরপুর সদর উপজেলার চরশেরপুর ইউনিয়নের কৃষক বরকত আলী, উজ্জ্বল মিয়াসহ অনেকেই অভিযোগ করেন, স্থানীয় সার ডিলারের পেছনে ঘুরেও তারা সার পাননি। অথচ তার গুদামে অনেক সার মজুত আছে। বাধ্য হয়ে খোলা দোকান থেকে প্রতিবস্তা সার এক হাজার ৬০০ টাকা দরে কিনেছেন। তাই বাধ্য হয়ে গোবর সার বেশি ব্যবহার করেছি। যদিও এবার ঠিকমতো সার কিনতে না পারায় ফলন অনেক কম হবে।’

শ্রীবরদী উপজেলার খড়িয়া কাজিরচর ইউনিয়নের ওলুকান্দা গ্রামের জুলহাস মিয়াসহ অন্তত ১৫ জন কৃষকের অভিযোগ, ১৬০ টাকায় পাঁচ কেজি ইউরিয়া কিনতে হচ্ছে তাদের। পুরো এক বস্তা সার পাননি। কোম্পানিতে সার নেই—এমন অজুহাতে তাদের জিম্মি করে বাড়তি টাকায় সার বিক্রি করছেন ডিলাররা।

আরও পড়ুন:
সার কারখানায় গ্যাসের দাম ১৫০% বাড়াতে চায় কেন সরকার?
আমি যতদিন আছি সারের দাম বাড়বে না: কৃষি উপদেষ্টা
সিন্ডিকেটের কবলে সার-বীজ, লাগামহীন মূল্যে দিশাহারা সবজি চাষিরা
চুয়াডাঙ্গায় নকল সার বিক্রির দায়ে লাখ টাকা জরিমানা

একই উপজেলার কুরিকাহনিয়া ইউনিয়নের চিথলিয়া গ্রামের শাহজাহান আলী বলেন, ‘প্রতিবছর ধানের মৌসুমে এলেই একই সমস্যা। ডিলারদের কাছে ঘুরেও যদি সার সময়মতো না পাওয়া যায়, তাহলে ডিলার দিয়ে কী হবে? সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে প্রতি বস্তায় ২০০-৩৫০ টাকা পর্যন্ত বেশি নিচ্ছেন তারা।’

ডিলারের কব্জায় কৃষকের সার

তবে ডিলারদের দাবি, খুচরা ব্যবসায়ীরা বেশি দামে সার বিক্রি করছেন, আর সেই দায় এসে পড়ছে তাদের ওপর। তারা সরকারের বেঁধে দেওয়া দামেই সার বিক্রি করছেন।

শেরপুর পৌর শহরের আখের মামুদ বাজারের মেসার্স মিম এন্টারপ্রাইজের ডিলার আকবর আলী জাগো নিউজকে বলেন, ‌‌‘সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে আমরা সার বিক্রি করি না। সরকারের বেঁধে দেওয়া দামেই সব সার বিক্রি করছি।’

শ্রীবরদী উপজেলার খড়িয়া কাজির চরের আরেক সার ব্যবসায়ী সবুজ মিয়া বলেন, ‘আমরা সবসময় কৃষকের সঙ্গে আছি। এখানকার প্রত্যেকটা কৃষক আমার পরিচিত এবং কোনো না কোনোভাবেই আমার আত্মীয়-স্বজন। সরকার নির্ধারিত দামেই সার বিক্রি করছি। সারেরও কোনো সংকট নেই।’

এ বিষয়ে শেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ সাখাওয়াত হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, জেলায় বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) ডিলারের সংখ্যা ১৪০ জন। আর বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কপোরেশনের (বিসিআইসি) ডিলার ৬১ জন। সারের কৃত্রিম সংকট নিরসনে নিয়মিত অভিযান চালানো হচ্ছে।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আহমেদ ফয়সাল ইমাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘যারা অনিয়মে জড়িত তাদের সবার লাইসেন্স বাতিল হবে। যেসব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া গেছে, তদন্ত সাপেক্ষে তাদেরকেও আইনের আওতায় আনা হবে।’

এসআর/এএসএম