ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

কুড়িগ্রাম

ভাঙনে পাঁচ বছরে বাস্তুহারা ১১ হাজার পরিবার

জেলা প্রতিনিধি | কুড়িগ্রাম | প্রকাশিত: ১২:৩৫ পিএম, ১৩ অক্টোবর ২০২৫

উত্তরের সীমান্তবর্তী জেলা কুড়িগ্রামের ওপর দিয়ে বয়ে গেছে ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তিস্তা, দুধকুমারসহ ছোট-বড় ১৬টি নদ-নদী। এসব নদ-নদীর অববাহিকায় রয়েছে প্রায় সাড়ে চারশ চর। দরিদ্রপীড়িত এ জেলায় প্রতি বছর নদীগর্ভে চলে যায় শতশত বসতভিটা। বন্যায় ব্যাপক ক্ষতি হয় ফসলের। শেষ পাঁচ বছরে নদীভাঙনে প্রায় ১১ হাজার পরিবার তাদের বসতভিটা হারিয়েছে। নষ্ট হয়েছে ২১ হাজার ৭৮৭ হেক্টর ফসলি জমি।

‘তিস্তার পানির গতিবিধি আমরা বুঝি না। এত কষ্ট করে আবাদ করে ঘরে তুলতে পারি না। ক্ষেতের ফসল ক্ষেতেই নষ্ট হয়। এ বিষয়ে আমাদের আগাম বার্তা কেউ জানায় না। আমরা নিজ উদ্যোগে বিভিন্ন মাধ্যমে যতটুকু জানতে পারি ততটুকুই।’

জানা যায়, প্রতি বছর বন্যায় শতশত বসতভিটা বিলীন হয়ে যাচ্ছে। নিঃস্ব হচ্ছে ভাঙন কবলিত মানুষ। নদী ভাঙনের ফলে জীববৈচিত্র হুমকির মুখে পড়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে নদী তার চরিত্র পরিবর্তন করেছে। এতে বন্যা ও বৃষ্টির প্রবণতা বাড়ছে। এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে চরিত্র বদলে যাওয়ায় নদ-নদীকে বুঝে উঠতে পারছেন না এলাকাবাসী। এতে অধিক ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে। একই সঙ্গে বন্যা পূর্বাভাস কিংবা আবহাওয়ার আগাম সতর্ক বার্তা দেওয়া হলে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের সংখ্যা ধীরে ধীরে কমবে বলে মনে করেন অনেকে।

আরও পড়ুন
শরতের বৃষ্টিতেও ঢাকায় জলাবদ্ধতা, কাজে আসছে না কোনো উদ্যোগ
টঙ্গীর কেমিক্যালের গুদাম যেন মৃত্যুপুরী
গাছ কেটে সাবাড়, ধ্বংস চর বনায়ন

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যালয় সূত্র জানায়, গত পাঁচ বছরে তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র, ধরলাসহ বিভিন্ন নদ-নদীর ভাঙনে ১১ হাজার ৯টি বসতভিটা নদীগর্ভে চলে গেছে। এরমধ্যে ২০২০ সালে দুই হাজার ৪০০, ২০২১ সালে এক হাজার ৫৭৫, ২০২২ সালে ৯৮৯, ২০২৩ সালে ৭৮০ ও ২০২৪ সালে পাঁচ হাজার ৩৪৬টি পরিবার ভাঙনের শিকার হয়েছে। ভাঙনে এসব পরিবার সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েছে।

‘কুড়িগ্রামের মাটি বালুময়। আমরা ভাঙনরোধে কাজ করে যাচ্ছি। এরইমধ্যে ১৫টি পয়েন্টে ভাঙনরোধে কাজ চলছে। আগামী সপ্তাহে রৌমারী ও রাজিবপুর উপজেলায় ৯০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৬ কিলোমিটার এলাকায় কাজ শুরু হবে।’

চিলমারী উপজেলার নয়ারহাট ইউনিয়নের বজরাদিয়ার খাতা এলাকার আব্দুল আউয়াল বলেন, প্রতি বছর নদী ভাঙে। ভাঙনে সবকিছু সাবাড় করে নিয়ে যায়। আগে কখন নদী ভাঙতো বা ভাঙনের সময়টা বোঝা যেত। এখন আর সেটা বোঝা যায় না। নদী তার চরিত্র বদলে ফেলেছে। দেখা যায় সারাবছরই নদী ভাঙে। ভাঙনের ফলে আমাদের গ্রাম মানচিত্র থেকে বিলীন হয়ে গেছে।

ভাঙনে পাঁচ বছরে বাস্তুহারা ১১ হাজার পরিবার

চিলমারী ইউনিয়নের চর শাখাহাতি গ্রামের স্বপন মিয়া বলেন, ২০২২ সালে আকস্মিকভাবে ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙন শুরু হয়। দেখতে দেখতে গ্রামের প্রায় ৭৫ শতাংশ নদের পেটে চলে যায়। সে সময়ের মতো এত ভয়ঙ্কর ভাঙন আমরা চরবাসী দেখিনি।

এদিকে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (খামারবাড়ি) তথ্য মতে, গত পাঁচ বছরে জেলায় উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও অতিবৃষ্টির কারণে কুড়িগ্রামে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী গত পাঁচ বছরে ২১ হাজার ৭৮৭ হেক্টর ফসলের ক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে। এতে ৭০ হাজার ১৮ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য উৎপাদন ব্যাহত হয়।

আরও পড়ুন
সিলেটে বন্যা এখন বড় আতঙ্কের নাম
বানে ভাসছে সিলেট: এত ভয়াবহতা আগে দেখেনি কেউ
জলবায়ু পরিবর্তন ও মানবসৃষ্ট চাপে বিপন্ন হচ্ছে প্রাণবৈচিত্র্য

রাজারহাট উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙা ইউনিয়নের চর খিতাবখাঁ গ্রামের বয়োবৃদ্ধ জব্বার আলী বলেন, ‘তিস্তা নদীকে বুঝবের পাই না। কখন পানি বাড়ে, কখন ভাঙে সেটি বোঝা যায় না।’

উপজেলার বিদ্যানন্দ নামার চর এলাকার কৃষক আব্দুল হাকিম, মোজাফ্ফর হোসেন বলেন, ‘তিস্তার পানির গতিবিধি আমরা বুঝি না। এত কষ্ট করে আবাদ করে ঘরে তুলতে পারি না। ক্ষেতের ফসল ক্ষেতেই নষ্ট হয়। এ বিষয়ে আমাদের আগাম বার্তা কেউ জানায় না। আমরা নিজ উদ্যোগে বিভিন্ন মাধ্যমে যতটুকু জানতে পারি ততটুকুই।’

ভাঙনে পাঁচ বছরে বাস্তুহারা ১১ হাজার পরিবার

উলিপুর উপজেলার হাতিয়ার গ্রামের ইদ্রিস আলী বলেন, ‘খরার কারণে সেচ দিয়ে ৮৫ শতক জমিতে পাট আবাদ করেছি। পাট বড় হওয়া শুরু করেছে কিন্তু বৃষ্টি না থাকায় দুশ্চিন্তায় পড়ে গেছি। এবার বর্ষা মৌসুমেও বৃষ্টির দেখা নেই।’

রাজারহাট আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র সরকার বলেন, ‘কুড়িগ্রামের ধরলা, তিস্তা, দুধকুমার নদীর সঙ্গে ভারতের সংযোগ। অতিবৃষ্টি বা ভারি বৃষ্টি ছাড়াও তিস্তা ও ধরলা নদীতে আকস্মিক পানি বৃদ্ধি পেয়ে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। ফলে মাঠপর্যায়ে অনেক সময় আগাম বার্তা দেওয়া সম্ভব হয় না।’

ভাঙনে পাঁচ বছরে বাস্তুহারা ১১ হাজার পরিবার

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান বলেন, ‘কুড়িগ্রামের মাটি বালুময়। আমরা ভাঙনরোধে কাজ করে যাচ্ছি। এরইমধ্যে ১৫টি পয়েন্টে ভাঙনরোধে কাজ চলছে। আগামী সপ্তাহে রৌমারী ও রাজিবপুর উপজেলায় ৯০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৬ কিলোমিটার এলাকায় কাজ শুরু হবে।’

কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘আমরা সবসময় কৃষককে বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়ে থাকি। কিন্তু সেটা অনেক সময় মিস হয়ে যায়। ফলে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়, এসব ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের তালিকা তৈরি করে তাদেরকে প্রণোদনার আওতায় আনা হয়।’

রোকনুজ্জামান মানু/এমএন/জিকেএস