ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

আধুনিকতার ছোঁয়ায় হারিয়ে যাচ্ছে মহাজনি মিষ্টি পোলাও-ডিম তেলানি

এমদাদুল হক মিলন | প্রকাশিত: ০৩:১৯ পিএম, ১৯ অক্টোবর ২০২৫

হারিয়ে যাচ্ছে দিনাজপুরের ঐতিহ্যবাহী মহাজনি ও নতুন জামাই অ্যাপায়নের মিষ্টি পোলাও ও ডিম তেলানি। এখন আর এই দুটি রান্না খুব একটা চোখে পড়ে না। আধুনিকতার ছোঁয়া আর স্বাস্থ্য সচেতনতায় মানুষ এই দুই পদের মুখরোচক খাবারের স্বাদ ভুলতে বসেছে।

  • মিষ্টি পোলাও

দিনাজপুর জেলার ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে আছে মহাজনি মিষ্টি পোলাও, যা নতুন জামাই অ্যাপায়নের মিষ্টি পোলাও নামেও পরিচিত। দিনাজপুর অঞ্চলের একটি শতবর্ষী ঐতিহ্যবাহী খাবার এটি। আগের দিনে নবান্ন উৎসবে জমির মহাজনরা কৃষকের বাড়িতে গেলে তাদের আপ্যায়ন করতে রান্না করা হতো এই মিষ্টি পোলাও। এখনো বাড়িতে বিয়ের পর প্রথম নতুন জামাই এলে অথবা নতুন মেহমান এলে রান্না করা হয় মিষ্টি পোলাও। এই পোলাও রান্না থেকে বুঝে নেওয়া হতো এরা বনিয়াদি পরিবার কি না।

তবে এই পোলাও যে সুগন্ধি কাটারিভোগ ও তুলশীমালা চাল দিয়ে রান্না করা হতো, সেই ধান এখন আর চাষ হয় না। কিন্তু এখনো যারা এই মহাজনি মিষ্টি পোলাও খান তারা বর্তমানে যেসব সুগন্ধি চাল পাওয়া যায় তা দিয়ে রান্না করেন।

সদর উপজেলার কমলপুর গ্রামের কৃষক আব্দুর রহমান বলেন, আধুনিকতার ছোঁয়া ও রুচির পরিবর্তনে অনেক খাবারই হারিয়ে যেতে বসেছে। যার মধ্যে অন্যতম মহাজনি মিষ্টি পোলাও। তাছাড়া মাটির হাঁড়ি ও পিতলের পাতিলের সেই রান্নার স্বাদ আর পাওয়া যায় না। তবে এটা বাঙালির সংস্কৃতির অংশ।

আরও পড়ুন
হাঁসের মাংস দিয়ে চিতই খেতে ঘুরে আসুন নীলা মার্কেট 
ফরিদপুরে পুরান ঢাকার হাজী ও নান্না বিরিয়ানির নাম ভাঙিয়ে প্রতারণা 

উপশহর মিস্ত্রিপাড়া গ্রামের গৃহবধূ রোজিফা আকতার বলেন, শ্বশুরবাড়িতে এসে শাশুড়িকে মিষ্টি পোলাও রান্না করতে দেখে আমিও তার কাছ থেকে এটি রান্না করা শিখেছি। শ্বশুর-শাশুড়ি বেঁচে নেই। আমার সন্তানরা তাদের কাছ থেকে মিষ্টি পোলাও খেতে শিখেছে। তাই মাঝে মাঝেই রান্না করতে হয়।

  • রান্নার পদ্ধতি

পেঁয়াজ বেরেস্তার সঙ্গে চিনি মিশিয়ে মিষ্টি করা হয় এই পোলাও। এতে বেরেস্তা অনেক বেশি পরিমাণে ব্যবহার করা হয়। প্রথমে হাঁড়িতে সুগন্ধি চাল, গরম মসলা, তেজপাতা ও তেল দিয়ে ঝরঝরে করে ভাত রান্না করা হয়। তারপর সেই ভাত ও মিষ্টি বেরেস্তা তিন স্তরে বা লেয়ারে লেয়ারে সাজানো হয়। মূলত বেরেস্তার কারণে পোলাওয়ের স্বাদ মিষ্টি হয়। আগের যুগে এই পোলাও রঙিন করতে রং ব্যবহার করা হত। এখন আর তা করা হয় না।

  • ডিম তেলানি

দিনাজপুর কৃষি প্রধান একটি জেলা। এই জেলার দরিদ্র কৃষক পরিবারগুলোর জন্য আমিষের একটি অন্যতম উৎস ছিল ‘ডিম তেলানি’। এই ডিম তেলানি কোনো নির্দিষ্ট ঐতিহাসিক ঘটনার সঙ্গে সম্পর্কিত নয়, এটি দিনাজপুরের একটি জনপ্রিয়, ঐতিহ্যবাহী ও সহজলভ্য খাবার। যা বহু যুগ ধরে গ্রাম্য জীবনে জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। এটি প্রধানত ডিম ও বিভিন্ন প্রকার মশলা দিয়ে তৈরি একটি তরকারি।

আধুনিকতার ছোঁয়ায় হারিয়ে যাচ্ছে মহাজনি মিষ্টি পোলাও-ডিম তেলানি

সদর উপজেলার শশরা ইউনিয়নের কিসমত মাধবপুর ডাক্তার পাড়ার আনোয়ার শাহাদাত মানিক বলেন, ডিম মূলত কৃষিপ্রধান অঞ্চলের দরিদ্র কৃষক পরিবারের খাবার ছিল, যাদের জন্য মাছ বা মাংস কেনা সম্ভব ছিল না। কিন্তু এখন আর তেমনটা দেখা যায় না। তবে সহজ রান্না হওয়ায় আমি নিজেই সপ্তাহে একদিন হলেও রান্না করে খাই।

খোদমাধপুর মিস্ত্রিপাড়া গ্রামের মাহফুজা বেগম বলেন, আগে শুধু পেঁয়াজ বেরেস্তার মতো কিছুটা ভেজে নিয়ে ডিম ভেঙে দিয়ে তেল ও কাঁচামরিচ দিয়ে রান্না করে খেয়েছি। এখন কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে। তবে আমাদের বাড়িতে প্রায়ই রান্না হয়।

শহরের রাজবাড়ী হিরাবাগানের বাসিন্দা লক্ষণ সরকার বলেন, মাছ-মাংস-সবজি নেই তো কী হয়েছে। বাড়িতে ডিম-পেঁয়াজ থাকলেই হয়। সহজেই রান্না করে সবাই মিলে ডিম তেলানি দিয়ে ভাত খেয়ে নিই। ছোটবেলায় ঠাকুরমা, মা-কাকিদরকে ডিম তেলানি কত রান্না করতে দেখেছি। এখন খুব একটা চোখে পড়ে না।

  • রান্না পদ্ধতি

প্যানে তেল গরম করে এলাচ, দারুচিনি ও পেঁয়াজ কুচি দিয়ে নেড়েচেড়ে পেঁয়াজ ভাজতে হবে। পেঁয়াজের রঙ বদলে যেতে শুরু করলে আদা বাটা ও রসুন বাটা দিয়ে নেড়ে পেঁয়াজ বাটা দিতে হবে। হলুদের গুঁড়া, মরিচের গুঁড়া, ধনিয়ার গুঁড়া, ভাজা জিরার গুঁড়া দিয়ে অল্প পানিসহ কষাতে হবে। এরপর স্বাদমতো লবণ ও কাঁচা মরিচ দিয়ে পানি দিতে হবে। বলক এলে ডিম ভেঙে সাবধানে দিতে হবে। প্যান ঢাকনা দিয়ে ঢেকে তিন থেকে চার মিনিট পর সাবধানে নেড়ে দিতে হবে। একটি তেজপাতা ছিঁড়ে দিতে হবে। ঝোল কমে গেলে নামিয়ে পরিবেশন করুন। গরম ভাত, রুটি, পরোটা বা পোলাওয়ের সঙ্গে ডিমের এই তেলানি খেতে দারুণ লাগবে। তবে এত কিছু না থাকলেও সমস্যা নেই, শুধু পেঁয়াজ বেরেস্তা ও কাঁচামরিচ তেল পানি দিয়ে ডিম ভেঙে দিয়েও রান্না করা যায় ডিম তেলানি।


এফএ/জিকেএস