ফরিদপুরে পুরান ঢাকার হাজী ও নান্না বিরিয়ানির নাম ভাঙিয়ে প্রতারণা

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি ফরিদপুর
প্রকাশিত: ০৩:৫৯ পিএম, ০৭ অক্টোবর ২০২৫

ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলা সদরের থানা রোডের সিটি ব্যাংকের বিপরীত পাশে অবস্থিত কয়েকটি খাবারের হোটেল। সেখানে একটি রেস্তোরাঁয় চোখে পড়বে আকর্ষণীয় একটি সাইনবোর্ড। যেখানে বড় অক্ষরে লেখা ‘পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী হাজীর বিরিয়ানি হাউজ’। দোকানে ঢুকতেই আরেকটি সাইনবোর্ডে লেখা ‘পুরান ঢাকার নান্না কাচ্চি ঘর’। নাম শুনে মনে হবে ঢাকার ঐতিহ্যবাহী জনপ্রিয় হাজী বা নান্না বিরিয়ানির কোনো আউটলেট, কিন্তু বাস্তবে তা নয়। মূলত এসব স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানের নাম ও খ্যাতিকে পুঁজি করে গ্রাহকদের আকৃষ্ট করার কৌশল হিসেবে এই নাম ব্যবহৃত হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ক্রেতারা আসল হাজী এবং নান্না বিরিয়ানির স্বাদ পেতে সেসব রেস্তোরাঁয় ’ঢুঁ’ মারেন। কিন্তু খাবার শেষে ক্রেতারা চিন্তা করেন টাকাটা জলে ভেসে গেলো কিনা। ক্রেতারা না বুঝেই নকল এসব রেস্তোয়াঁয় ঢুকে নিন্মমানের খাবার খেয়ে প্রতারিত হচ্ছেন প্রতিনিয়ত। এতে করে ঢাকার ঐতিহ্যবাহী খাবারগুলো সম্পর্কে তাদের মনে বিরূপ ধারণাও তৈরি হচ্ছে।

রেস্তোরাঁর কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী হাজী এবং নান্না বিরিয়ানির নাম ব্যবহার হলেও আদতে দু’টি নামের একটিও পুরান ঢাকার নামকরা আসল হাজী কিংবা নান্না বিরিয়ানি নয়। মূলত নামকরা হাজী এবং নান্না বিরিয়ানির নাম ভাঙিয়ে ফায়দা নিতেই এ কূটকৌশলের আশ্রয় নিয়েছে তারা।

অভিযোগ রয়েছে, পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী হাজী এবং নান্না বিরিয়ানির নাম ভাঙ্গিয়ে গড়ে ওঠা এই বিরিয়ানি হাউজের খাবার তৈরিতে ব্যবহার হয় নিম্নমানের উপাদান। ফ্রিজে সংরক্ষিত মাংস রান্না, পোড়া তেলের ব্যবহার, পরিমাণে কম দেওয়া এবং ক্ষতিকর ক্যামিকেল মিশ্রণের অভিযোগও রয়েছে অসাধু বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে।

প্রতিদিন সকাল থেকে শুরু হয়ে মধ্যরাত পর্যন্ত চলে এই বিরিয়ানি বিক্রি। কম খরচে বেশি লাভের আশায় স্বাদকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে খাবারের গুণগত মান বজায় রাখায় ভ্রুক্ষেপ নেই তাদের। সুস্বাস্থ্যের তোয়াক্কা না করে খাবার অতি সুস্বাদু ও মুখরোচক করতে ব্যবহার করা হচ্ছে ক্ষতিকারক নানা কেমিক্যাল ও সুগন্ধি বাড়ানোর উপাদান। দিনের পর দিন একই তেল ব্যবহার করা হয়। খাবার তৈরির সময়েও অপরিশোধিত পানি ব্যবহার করা হয়, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।

হাজী এবং নান্না বিরিয়ানি খেয়ে উপজেলার বারাংকুলা গ্রামের জাহিদুল হক মোল্যা নামে এক ব্যক্তি জানান, ব্যবসা বাড়ানোর জন্য দোকানের মালিক হাজী বিরিয়ানির নাম দিয়েছেন। এটা আসল হাজী বিরিয়ানি নয়। পুরান ঢাকার আসল হাজী বিরিয়ানি কেমন, তা দূর থেকে গন্ধ শুকেই বলে দেয়া যায় এটা ঐতিহ্যবাহী হাজী বা নান্নার বিরিয়ানি।

পুরান ঢাকার হাজীর বিরিয়ানির সঙ্গে তাদের কী সম্পর্ক অথবা শাখা কিনা এ ব্যাপারে কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেনি রেস্তোরাঁর ম্যানেজার আব্দুর রহমান। তবে কেন হাজী এবং নান্না বিরিয়ানির নাম ব্যবহার করা হয়েছে এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আমাদের মালিক পুরান ঢাকার হাজী বিরিয়ানির দোকানে একসময় কাজ করতেন। এজন্য আমরা দোকানের নাম হাজী বিরিয়ানি হাউজ দিয়েছি।

পরবর্তীতে রেস্তোরাঁর সাইনবোর্ডে থাকা দোকানের মালিক মো. ইয়াছিন শেখের মোবাইলে কল করা হলে তিনি জানান, আমি এখন ওই দোকানে যাই না। আমি রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলাতে থাকি।

তবে পুরান ঢাকার হাজী কিংবা নান্না বিরিয়ানির প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে এড়িয়ে যান তিনি।

আলফাডাঙ্গা উপজেলা কনজুমার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সাধারণ সম্পাদক মিয়া রাকিবুল বলেন, ক্রেতারা না বুঝেই নাম নকল করা হাজী এবং নান্না বিরিয়ানির স্বাদ নিতে রেস্তোয়াঁয় ঢুকে নিন্মমানের খাবার খেয়ে প্রতারিত হচ্ছেন প্রতিনিয়ত। এতে করে ঢাকার ঐতিহ্যবাহী খাবারগুলো সম্পর্কে তাদের মনে বিরূপ ধারণাও তৈরি হচ্ছে। এ ব্যাপারে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

এ বিষয়ে আলফাডাঙ্গা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এ কে এম রায়হানুর রহমান বলেন, বিষয়টি খোঁজ-খবর নিয়ে দেখবো। ভোক্তা প্রতারিত হচ্ছে এমন কোনো সংশ্লিষ্ট বিষয় পেলে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এন কে বি নয়ন/এনএইচআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।