ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

ক্রেতা সংকট

হিমাগারের আলু নিয়ে বিপাকে কৃষক-ব্যবসায়ী

আল মামুন | জয়পুরহাট | প্রকাশিত: ০৪:৪৮ পিএম, ২২ অক্টোবর ২০২৫

এ বছর জয়পুরহাটের ২১টি হিমাগারে আলু মজুত করা হয়েছিল দুই লাখ ছয় হাজার মেট্রিক টন। লাভের আশায় মজুত করা আলু এখন গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে কৃষক ও ব্যবসায়ীদের। হিমাগারে গত বছর এই সময়ে বস্তা প্রতি আলুর দাম ছিল ৩০০০-৩২০০ টাকা পর্যন্ত, কিন্তু সেই আলুই এবার প্রতি বস্তা বিক্রি হচ্ছে ৫৫০-৬০০ টাকায়। ফলে এবার আলু চাষ কমানোর কথা ভাবছেন কৃষকরা। অন্যদিকে আলু নিয়ে সরকারের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

কালাই উপজেলার আওরা গ্রামের কৃষক আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘গত বছর আট বিঘা জমিতে আলু লাগিয়েছিলাম, সেখান থেকে হিমাগারে ৩০০ বস্তা আলু রেখেছি। সেই আলু বিক্রি করতে এসেছি, কেউ কিনছে না। অনেক কষ্ট করে ২০ বস্তা বিক্রি করে হিমাগার ভাড়া বাদে ১৫০০ টাকা পেলাম।’

‘আমি হিমাগারে ৫০ বস্তুা আলু রেখেছিলাম যে, কিছু আলু বিক্রি করে সার-বীজ কিনে এবার নতুন আলু লাগাবো। কিন্তু এসে দেখছি এক বস্তা আলু বিক্রি করে ৯০-১০০ টাকা পাওয়া যাচ্ছে। এবার সব জমিতে সরিষা লাগাবো এক শতকও আলু লাগাবো না।’

তিনি আরও বলেন, ‘এবার আর আমি আলু লাগাবো না। লাগালেও এক দেড় বিঘা লাগাবো শুধু খাওয়ার জন্য।’

আরও পড়ুন
ঘোষণা দিয়েও আলু কেনেনি সরকার, পড়তি দামে লোকসানে কৃষক
সরকারি মূল্য নির্ধারণের দাবিতে নওগাঁয় সড়কে আলু ফেলে বিক্ষোভ
কুড়িগ্রামে হিমাগারের ভাড়া বৃদ্ধি, আলু ফেলে রাস্তা অবরোধ

ক্ষেতলাল উপজেলার বটতলী গ্রামের কৃষক নুরুল ইসলাম বলেন, ‘হিমাগারে ৫০ বস্তুা আলু রেখেছি। ভাবলাম কিছু আলু বিক্রির টাকায় সার-বীজ কিনে এবার নতুন আলু লাগাবো। কিন্তু এসে দেখছি এক বস্তা আলু বিক্রি করে ৯০-১০০ টাকা পাওয়া যাচ্ছে।’

তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘এবার সব জমিতে সরিষা লাগাবো এক শতকও আলু লাগাবো না।’

‘গত বছর এই সময়ে হিমাগার থেকে বেশিরভাগ আলু বের করা হলেও এ বছর এখন পর্যন্ত অর্ধেক আলুও বের হয়নি। এতে আমরা শঙ্কায় আছি।’

কৃষকদের পাশাপাশি ব্যবসায়ীরাও আলু মজুত করে লোকসানে পড়েছেন। ব্যাংক কিংবা এনজিও থেকে লোন নিয়ে আবার কেউ গরু-ছাগল বিক্রি করে লাভের আশায় আলু রেখেছিলেন হিমাগারে। এখন তাদের অবস্থাও পথে বসার মতো।

এম ইশরাত হিমাগারের মৌসুমি আলু ব্যবসায়ী আতোয়ার হোসেন ৮০০ বস্তুা আলু রেখেছিলেন, সব মিলিয়ে বস্তা প্রতি তার খরচ হয়েছিল ১৪৫০-১৫০০ টাকা। এখন সেই আলু বস্তা প্রতি বিক্রি হচ্ছে ৫৫০-৬০০ টাকা। ফলে বস্তাপ্রতি লোকসার গুনতে হচ্ছে ৭০০-৮০০ টাকা।

হিমাগারের আলু নিয়ে বিপাকে কৃষক-ব্যবসায়ী

এম ইশরাত হিমাগারের ম্যানেজার রাইহান হোসেন বলেন, ‘গত বছর এই সময়ে হিমাগার থেকে বেশিরভাগ আলু বের করা হলেও এ বছর এখন পর্যন্ত অর্ধেক আলুও বের হয়নি। এতে আমরা শঙ্কায় আছি।’

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সাদিকুল ইসলাম জানান, বিগত বছরের তুলনায় গত বছর চাষাবাদ ও ফলন বেশি হওয়ায় এবার আলুর দাম কম। এবার আলুর লক্ষ্যমাত্রা কমানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।

এদিকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে বেঁধে দেওয়া ২২ টাকা কেজি দরে সরকারের আলু কেনার বিষয়ে কিছুই জানেন না জেলা কৃষি বিপণন কর্মকর্তা মেহেদী হাসান।

হিমাগারের আলু নিয়ে বিপাকে কৃষক-ব্যবসায়ী

তিনি বলেন, ‘আমরা এখন পর্যন্ত ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছ থেকে কোনো নোটিশ পাইনি।’

এক সপ্তাহ পরই নতুন আলু লাগানো শুরু হবে। অথচ হিমাগারে এখনো এক লাখ মেট্রিক টনের বেশি আলু মজুত রয়েছে। এমন অবস্থায় সরকার আলু নিয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেবেন এমন প্রত্যাশা কৃষক ও আলু ব্যবসায়দের।

এমএন/জিকেএস