পটুয়াখালীতে শিশুকল্যাণ বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত
পটুয়াখালীতে শ্রমজীবী শিশুদের জন্য প্রতিষ্ঠিত ৪৪ নং শিশু কল্যাণ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নিজস্ব কোনো ভবন না থাকায় শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। শহরের মহিলা কলেজ সড়কের মহিলা সমিতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিত্যক্ত টিনশেডের একটি ঘরে চলছে পাঠদান কার্যক্রম। এক বেলায় শ্রম আর এক বেলায় শিক্ষা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে শ্রমজীবী শিশুদের জীবন।
১৯৯০ সালের ৩১ জানুয়ারি ৪৪ জন শিক্ষার্থী নিয়ে কার্যক্রম শুরু করে বিদ্যালয়টি। বর্তমানে ১২০ জন শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে শিক্ষাগ্রহণ করছে। এর মধ্যে ৭০ জন ছাত্রী ও ৫০ জন ছাত্র রয়েছে। এ বিদ্যালয়টিতে চার জন শিক্ষক ও একজন দফতরি কর্মরত।
জানা গেছে, ২০১৬ সনের ৯ মে মহিলা সমিতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন ভবন নির্মান কাজ শুরু হয়। ফলে শ্রমজীবী শিশুদের পাঠদানের তিনটি টিনশেড কক্ষের মধ্যে একটি অংশ ভেঙে ফেলার প্রয়োজন হওয়ায় বিদ্যালয়ের কার্যক্রম অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার জন্য চিঠি দেয় মহিলা সমিতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। 
শিশু কল্যাণ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এবং পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি জেলা প্রশাসক প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদফতরের শিশু কল্যাণ ট্রাস্টের পরিচালক ও জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে লিখিতভাবে বিষয়টি অবহিত করেন। এর প্রেক্ষিতে ২২ জুন মহিলা সমিতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের যে ভবনে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে, ছুটির পরে সেই ভবনে শিশু কল্যাণ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদফতরের শিশু কল্যাণ ট্রাস্টের যুগ্ম সচিব মো. দেলোয়ার হোসেন স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এ নির্দেশ দেন।
ফলে শিশুরা গাদাগাদি করে ক্লাসে বসে। একসঙ্গে সকল শ্রেণির পাঠদান করায় অনেক হট্টগোলেরও সৃষ্টি হচ্ছে। প্রতিদিন দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৬টা পর্যন্ত পাঠদান করার কথা থাকলেও সাড়ে ৪টা থেকে বিকেল ৬ টা পর্যন্ত চলছে পাঠদান।
৪৪ নং শিশু কল্যান প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বৃত্তিপ্রাপ্ত ছাত্রী শারমিন আক্তার জানায়, সে মায়ের সঙ্গে সংসার চালাতে অন্যের বাড়ি একবেলা কাজ করে অন্য সময়ে অনেক কষ্ট করে পড়ালেখা করে। এ বিদ্যালয় থেকে ৪র্থ শ্রেণিতে বৃত্তি পেয়েছে সে। তাকে লেখা-পড়ায় সহযোগিতা করলে সে পরিবারের অভাব দূর করতে পরবো।
অপরদিকে ৪র্থ শ্রেণির ছাত্রী ফারজানা শহরের চক্ষু হাসপাতাল বস্তিতে বসবাস করে। সে জানায়, মায়ের সাথে সংসারে চালাতে অন্যের বাড়ি দুপুরের খাবারের বিনিময়ে একবেলা কাজ করে স্কুলে আসে।
৪র্থ শ্রেণির ছাত্র ইউসুফ শরীফ জানায়, মায়ের সঙ্গে সে বস্তিতে থাকে। সকাল বেলায় হোটেলে কাজ করে, বিকেলে স্কুলে আসে।
৪৪ নং শিশু কল্যাণ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কহিনুর বেগম বলেন, শিক্ষার জন্য নিজস্ব ভবন খুবই জরুরি। নিজস্ব ভবন থাকলে শ্রমজীবী শিক্ষার্থীর সংখ্যা আরও বাড়বে এবং শিক্ষার মানও উন্নত হবে।
৪৪ নং শিশু কল্যাণ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ও পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক এ কে এম শামিমুল হক সিদ্দিকী বলেন, ‘বিদ্যালয়ের জমি না থাকায় ভবন নির্মাণ সম্ভব হচ্ছে না। বিদ্যালয়ের জন্য কয়েকটি স্থানে জমি দেখেছি। শিগগিরই জমি বন্দোবস্ত দেয়ার ব্যবস্থা করে ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হবে।
মহিব্বুল্লাহ্ চৌধুরী/আরএআর/এমএস