আ’লীগের সমাবেশে যোগ দিতে শিক্ষার্থীদের বাধ্য করলেন প্রধান শিক্ষক
কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশে দুই স্কুলের শিক্ষার্থীদের জোরপূর্বক অংশগ্রহণ করানোর অভিযোগ উঠেছে প্রদান শিক্ষকের বিরুদ্ধে। স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও সভাপতির নেতৃত্বে মিছিল সহকারে শিক্ষার্থীদের নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
দলীয় সভায় স্কুলের ছেলেমেয়েদের নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসিয়ে রাখায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অভিভাবকরা। এ সময় প্রচণ্ড গরমে অসুস্থ হয়ে পড়েছে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী।
জানা গেছে, গত সোমবার কুমারখালী উপজেলার যদুবয়রা ইউনিয়নের চৌরঙ্গী কলেজ মাঠে সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সেলিম আলতাফ জর্জ এর অনুগত আওয়ামী লীগ নেতারা শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশের আয়োজন করে। এই সমাবেশে দুটি স্কুলের শিক্ষকদের নেতৃত্বে প্রায় তিন শতাধিক শিক্ষার্থী মিছিল করে সমাবেশে যোগ দেয়। সমাবেশে চৌরঙ্গী বহুমুখী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রেজাউল করিম মিলন ও সভাপতি মাহফুজুর রহমানসহ অন্য শিক্ষকরাও অংশ নেন।
আরও পড়ুন: ময়মনসিংহে সমাবেশের অনুমতি চেয়ে জামায়াতের আবেদন
উত্তর চাঁদপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ আলী ও সভাপতি (কুমারখালীর এমএন হাইস্কুলের শিক্ষক) তৌহিদুল ইসলাম শিক্ষার্থীদের মিছিল নিয়ে সমাবেশে আসে। সমাবেশের জন্য সামনে রাখা চেয়ারে বসতে দেওয়া হয় ছেলে-মেয়েদের। এ সময় গরমে অনেকে বই খাতা দিয়ে বাতাস করতে থাকে। আবার অনেকে গরমে অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাদের দীর্ঘক্ষণ বসিয়ে রাখা হয়। সমাবেশ শেষ হলে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। এ সংক্রান্ত একাধিক ভিডিও ও ছবি পাওয়া যায়। সেখানেও বড় মিছিল নিয়ে আসতে দেখা যাচ্ছে প্রধান শিক্ষক ও সভাপতিসহ অন্যদের।
একটি ভিডিওতে দেখা যায় মাঝখানে থেকে মিছিলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন চৌরঙ্গী বহুমুখী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। তার ডান পাশে সহকারী প্রধান শিক্ষক। বাম পাশে সভাপতিসহ অন্য একজন। মিছিলের সামনে একটি নৌকা বানিয়ে সেটি ঠেলে আনছেন শিক্ষার্থীরা। স্কুলের ব্যান্ডদল বাদ্য বাজাচ্ছে আর পেছনে মেয়েদের একটি দল জাতীয় পতাকা হাতে নিয়ে হেঁটে আসছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে চৌরঙ্গী বহুমুখী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষার্থী জানায়, স্কুল ছিল বিকেল ৪টা পর্যন্ত। এমপির সমাবেশে যাওয়ার জন্য কড়া নির্দেশ ছিল স্যারদের। এজন্য ছুটির পর যেন কেউ চলে যেতে না পেরে সেজন্য তাদের বই ও ব্যাগ জোরপূর্বক রেখে দেওয়া হয়। এরপর সাড়ে ৪টার দিকে স্কুলের প্রধান শিক্ষক রেজাউল করিম মিলন ও সভাপতি মাহফুজুর রহমান মিছিল সহকারে তাদের সমাবেশে নিয়ে যায়।
আরও পড়ুন: রাজশাহীতে সমাবেশ করতে চায় জামায়াত, পুলিশের কাছে আবেদন
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অভিভাবক বলেন, ছুটি হলেও বাচ্চাদের ব্যাগ রেখে দেওয়া হয়। সমাবেশে না গেলে শাস্তি দেওয়ার ভয় দেখানো হয়। প্রধান শিক্ষক লোক ভালো না, তাই সমাবেশে যেতে বাধ্য হয় সবাই। এ বিষয়ে প্রতিবাদ করার সাহস নেই কারো।
উত্তর চাঁদপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের স্কুলের অষ্টম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী বলেন, সমাবেশে যাওয়ার আগে স্কুলে থাকতে বলা হয় সবাইকে। আমরাও দুপুরে না খেয়ে বিকেল পর্যন্ত ছিলাম। যারা কাছের তারা বাড়ি থেকে খেয়ে এসেছিল। আমাদের কষ্ট হয়েছে। শোডাউন ও মিছিল সহকারে স্যাররা আমাদের নিয়ে যান। মিছিলে প্রধান শিক্ষক-সভাপতিসহ অন্যরা শিক্ষকরা ছিলেন। আমাদের সব শিক্ষক-শিক্ষিকাও হাজির ছিলেন সেখানে।
শিক্ষার্থীদের দলীয় সমাবেশে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে স্কুলের প্রধান শিক্ষক রেজাউল করিম মিলন বলেন, আমরা কোনো শিক্ষার্থীকে মিছিল করে সমাবেশে নিয়ে যাইনি। এমপি আসার কারণে অভিভাবকরা তাদের সন্তানকে নিয়ে গেছেন।
চৌরঙ্গী বহুমুখী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি মাহফুজুর রহমান বলেন, আমি সমাবেশে ছিলাম না। তবে অল্প কিছু ছেলেমেয়ে সমাবেশে গিয়েছিল। তারা বেশি সময় ছিল না। এমপির কাছে কিছু দাবি-দাওয়া থাকায় শিক্ষার্থীদের নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।
আরও পড়ুন: শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে আন্দোলন গ্রহণযোগ্য নয়: শিক্ষামন্ত্রী
এদিকে যদুবয়রা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বলেন, স্থানীয় শিক্ষার্থীদের মধ্যে এমপি ৬০০ বাইসাইকেল বিতরণ করবেন বলে শিক্ষার্থীদের সমাবেশে আনা হয়। আর যারা আসতে চাননি, তাদের স্কুল দুটির প্রধান শিক্ষক-সভাপতি মিলে জোরপূর্বক মিছিল নিয়ে সমাবেশে আসে। গরমে অনেকেই অসুস্থ পড়েন। এভাবে স্কুল শিক্ষার্থীদের সমাবেশে আনার কোনো নিয়ম ও বিধান নেই।
কুমারখালী উপজেলা শিক্ষা অফিসার এজাজ কায়সার বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। কেউ আমাকে জানায়নি।
আল-মামুন সাগর/জেএস/এমএস