ইনানিতে বঙ্গবন্ধুর ‘অজ্ঞাতবাসে’ সহযোগিতাকারী আদিবাসীদের সংবর্ধনা
১৯৫৮ সালে রাজনৈতিক হুলিয়া মাথায় নিয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘অজ্ঞাতবাসে’ থাকা কক্সবাজারের ইনানি অরণ্যের সেই চেনছড়ি চাকমা পল্লীর আদিবাসী পরিবারের সদস্যদের সন্মাননা জানানো হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর ৯৭তম জন্মদিনে জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা এবং কক্সবাজার সদর আসনের এমপি সাইমুম সরওয়ার কমল উখিয়ার অরণ্যঘেরা ইনানি চেনছড়ি গ্রামে গিয়ে ১০ আদিবাসী পরিবারের সদস্যদের হাতে রজনীগন্ধা দিয়ে সন্মাননা জানান।
আদিবাসী পল্লীর প্রয়াত চাকমা নেতা ফেলোরাম রোয়াজা ছিলেন জাতির জনকের অন্যতম ঘনিষ্টজন। সেই প্রয়াত চাকমার বাগান বাড়িতে ছিল বঙ্গবন্ধুর এককালের ‘অজ্ঞাতবাস।’ প্রয়াত ফেলোরাম রোয়াজা চাকমার উত্তরসুরি সদস্যদের সন্মাননা জানাতেই জাতির জনকের ৯৭তম জন্মদিন উপলক্ষে বৃহস্পতিবার জেলা প্রশাসন চেনছড়ি চাকমা পল্লীতে এ ব্যতিক্রমধর্মী অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
সমুদ্র পাড়ের অরণ্যঘেরা ইনানি চেনছড়ি গ্রামটি এখন ইতিহাসের অংশ। কক্সবাজার জেলা শহর থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দক্ষিণের এ গ্রামটি জাতির জনকের স্মৃতি বিজড়িত। আজ থেকে প্রায় ৫৮ বছর আগে ১৯৫৮ সালে পূর্ব পাকিস্তানের নিষিদ্ধ রাজনীতির এক দুঃসময়ে পূর্ব বাংলার অবিসংবাদিত নেতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এখানেই এসেছিলেন ‘অজ্ঞাতবাসে।’
গ্রামের আদিবাসী নেতা প্রয়াত ফেলোরাম রোয়াজা চাকমার বাগান বাড়িতে অবস্থান করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। এ কারণেই ইনানি চেনছড়ি গ্রামটি এখন ইতিহাসের অংশ হয়ে পড়েছে। দীর্ঘকাল ধরে জাতির নিকট অজানা ছিল এই ইতিহাস।
পরবর্তীতে এ সংক্রান্ত ইতিহাস জানাজানি হয় ২০১০ সালের ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ৯১তম জন্মদিনে। গণমাধ্যমে ‘ইনানিতে বঙ্গবন্ধুর অজ্ঞাতবাস’ শীর্ষক অজানা অধ্যায় নিয়ে এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ পায়। প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর সেই দুর্গম এলাকায় বঙ্গবন্ধুকে রান্না করে খাওয়ানো শতায়ু নারী স্থানীয় প্রয়াত সখিনা খাতুন এবং বঙ্গবন্ধুকে সহযোগিতাকারী আদিবাসী নেতা প্রয়াত ফেলোরাম রোয়াজা চাকমার পরিবারের কথাও আলোচনায় উঠে আসে।
ইতিহাসের এই অজানা অধ্যায়ের সঙ্গে জড়িত উখিয়ার দুই বঙ্গবন্ধুভক্ত সোনার পাড়ার মুক্তিযোদ্ধা মাস্টার লোকমান হাকিম এবং রাজাপালং খয়রাতি গ্রামের বাসিন্দা মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক শতায়ু আবদুল খালেকও এখন কালের সাক্ষী হয়ে রয়েছেন।
বৃহস্পতিবার বঙ্গবন্ধুর ৯৭তম জন্মদিন উপলক্ষে কক্সবাজার সদর-রামু আসনের এমপি সাইমুম সরওয়ার কমল, জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন এবং পুলিশ সুপার শ্যামল কুমার নাথসহ জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা, মুক্তিযোদ্ধা, সাংবাদিক এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা চেনছড়ি আদিবাসী পল্লীতে যান। তারা জাতির জনকের স্মৃতি বিজড়িত স্থানটি পরিদর্শন করেন।
এমপি কমল প্রয়াত আদিবাসী নেতা ফেলোরাম চাকমার উত্তরসুরি আদিবাসী দরিদ্র পরিবারের সদস্যদের জন্য এক লাখ টাকার অনুদানও ঘোষণা দেন। আদিবাসীদের ৫ দশমিক ৫৭ একরের সরকারি খাস জমির অবৈধ দখলদারদের সরিয়ে অবিলম্বে ঘেরা দিয়ে সেখানে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি ফলক স্থাপনের কথাও জানান জেলা প্রশাসক।
এসময় অন্যান্যের মধ্যে কক্সবাজারের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ পরিচালক (উপ-সচিব) আবুল ফজল মো. আলাউদ্দিন খান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ড. অনুপম সাহা, উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাঈনুদ্দিন, উখিয়া থানার ওসি হাবিবুর রহমান, উপজেলা ভূমি কর্মকর্তা (এসি ল্যান্ড) নুরুদ্দিন মাহমুদ শিবলী, মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ শাহজাহান ও মুক্তিযোদ্ধা পরিমল বড়ুয়া, সাংবাদিক তোফায়েল আহমদ ও মুহাম্মদ আলী জিন্নাত, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি আবদুর রহিম, উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা কবির আহমদ ও একটি বাড়ি একটি খামার সমন্বয়ক আবদুল করিম, জালিয়াপালং ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন চৌধুরী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়াও দিবসটি উপলক্ষে প্রশাসন, জেলা ও উপজেলা শহরে রাজনৈতিক, সামাজিক ও পেশাজীবী সংগঠন এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান র্যালিসহ দিনব্যাপি নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
সায়ীদ আলমগীর/বিএ