ভিডিও EN
  1. Home/
  2. অর্থনীতি

দ্বিগুণ হচ্ছে ভ্যাট, প্লাস্টিক পণ্য-এসি-ফ্রিজের দাম বাড়তে পারে

সাইফুল হক মিঠু | প্রকাশিত: ১২:০১ পিএম, ২৬ মে ২০২৫

আগামী অর্থবছরের বাজেটে প্লাস্টিকের তৈরি আসবাবপত্র, তৈজসপত্রসহ সব ধরনের পণ্যে মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট দ্বিগুণ করতে যাচ্ছে সরকার। একইভাবে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র (এসি) ও ফ্রিজের ভ্যাট হার দ্বিগুণ করা হচ্ছে।

এসব পণ্যে সাড়ে ৭ শতাংশ ভ্যাট রয়েছে, যা বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হবে।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভ্যাট বাড়লে পণ্যের দাম বাড়বে। এতে বিক্রি কমে যাবে। ক্ষতিগ্রস্ত হবে দেশের অর্থনীতি।

অন্যদিকে মাটি ও পাতার তৈরি তৈজসপত্রে ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়া হবে। এসব পণ্যে ১৫ শতাংশ ভ্যাট রয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

দ্বিগুণ হচ্ছে ভ্যাট, প্লাস্টিক পণ্য-এসি-ফ্রিজের দাম বাড়তে পারে

বাংলাদেশ প্লাস্টিক দ্রব্য প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিজিএমইএ) তথ্য মতে, বাংলাদেশে প্লাস্টিক পণ্যের অভ্যন্তরীণ বাজার প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা। অভ্যন্তরীণ চাহিদা প্রায় শতভাগ পূরণ করতে পারছে দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো।

বিজ্ঞাপন

প্লাস্টিক খাতের বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে আরএফএল, গাজী, বেঙ্গল, ওয়ালটন, আকিজ, তানিন ইত্যাদি। অন্যদিকে ওয়ালমার্ট, টেসকো, জারার মতো আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডগুলো বর্তমানে বাংলাদেশি প্লাস্টিক পণ্যের আন্তর্জাতিক ক্রেতা। সর্বশেষ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দেশ থেকে ১০ কোটি ৭৩ লাখ ডলারের প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানি হয়। প্লাস্টিক শিল্পের সঙ্গে জড়িত পাঁচ হাজার প্রতিষ্ঠানের মধ্যে অধিকাংশই ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠান, যেখানে কর্মসংস্থান হচ্ছে ১৫ লাখ মানুষের।

ভ্যাট বাড়ালে এ শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে জানিয়েছেন বিপিজিএমইএ সভাপতি সামিম আহমেদ। জাগো নিউজকে তিনি বলেন, ভ্যাট বাড়লে প্লাস্টিক শিল্পে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। বিক্রি কমে যাবে, উদ্যোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। প্লাস্টিকের পণ্য সাধারণ মানুষ ব্যবহার করেন। ফেরিওয়ালারা এসব পণ্য বিক্রি করেন।

দ্বিগুণ হচ্ছে ভ্যাট, প্লাস্টিক পণ্য-এসি-ফ্রিজের দাম বাড়তে পারে

বিজ্ঞাপন

সামিম আহমেদ আরও বলেন, ব্যবসায় মন্দা, কাঁচামালের মূল্য বৃদ্ধিসহ নানান কারণে আমরা এবার রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারবো না। প্রায় ২০ শতাংশের মতো পিছিয়ে আছি। ১০ মাসে ২৭৬ মিলিয়ন ডলারের রপ্তানি হয়েছে, যা ২৯৬ মিলিয়ন ডলার হওয়ার কথা ছিল। এখন আবার ভ্যাট বাড়লে আমাদের বিক্রি কমবে। উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হবে, যার প্রভাব পড়বে রপ্তানিতেও।

প্লাস্টিক পণ্য, এসি ও ফ্রিজের ভ্যাট বাড়ানো প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এনবিআরের এক কর্মকর্তা বলেন, এই শিল্পগুলো ভালো করছে। দেশীয় পণ্য সবার ঘরে ঘরে। আমদানি নির্ভরতা দূর হয়েছে। এসব খাতে আর ভ্যাট সুবিধার প্রয়োজন নেই।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, দেশীয় ফ্রিজ ও এসির উৎপাদকেরা কারখানা থেকে সরবরাহ পর্যায়ে এই ভ্যাট দেন। এই হার ১৫ শতাংশ করা হলে ভ্যাট রেয়াত নিতে পারবেন। ফ্রিজ ও এসির উপকরণ বা যন্ত্রাংশ সাধারণত প্রতিষ্ঠিত সরবরাহব্যবস্থা বা প্রতিষ্ঠান থেকে কেনা হয়।

বিজ্ঞাপন

ইলেকট্রনিক্স পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ইলেক্ট্রোমার্টের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুরুল আফসার জাগো নিউজকে বলেন, ভ্যাট দ্বিগুণ হলে ফ্রিজের দাম দুই থেকে তিন হাজার টাকা ও এসির দাম তিন থেকে চার হাজার টাকা বেড়ে যাবে। দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা এখনও ঘুরে দাঁড়ায়নি। এই উদ্যোগে ক্রেতারাই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।

দ্বিগুণ হচ্ছে ভ্যাট, প্লাস্টিক পণ্য-এসি-ফ্রিজের দাম বাড়তে পারে

তিনি বলেন, দাতা সংস্থার চাপ আছে। কিন্তু সেটা মেটাতে অন্য শিল্প যেগুলো দীর্ঘদিন সুবিধা পাচ্ছে সেগুলোর সুযোগ-সুবিধা কমানো যেতো। বাংলাদেশের ইলেকট্রনিকস খাত মাত্র যাত্রা শুরু করেছে। রপ্তানিও বাড়ছে। এমন সময় এ ধরনের সিদ্ধান্ত আমাদের বড় ক্ষতির মুখে ফেলবে।

বিজ্ঞাপন

চলতি বছরের শুরুতে এসি ও ফ্রিজ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের আয়কর দ্বিগুণ করে সরকার। ২০০৯ সাল থেকে ইলেকট্রনিকস শিল্পের করে ছাড় দিয়েছে সরকার। এসব শিল্পের করপোরেট কর, কাঁচামাল আমদানিতে অগ্রিম আয়কর এবং উৎপাদন ও সরবরাহ পর্যায়ে কর ছাড় দেওয়ায় দেশে এক ডজনের বেশি শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। এসব শিল্প ২০২১ সাল থেকে যন্ত্রপাতি আমদানিতে ২ শতাংশ এআইটি এবং আয়ের ওপর ১০ শতাংশ কর দেওয়ার সুবিধা পেয়ে আসছিল। এসব সুবিধা ২০৩২ সাল পর্যন্ত বলবৎ থাকার কথা ছিল। তবে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মাঝামাঝি সময়ে ফ্রিজার, রেফ্রিজারেটর, এয়ারকন্ডিশনার ও কম্প্রেসারে করপোরেট কর ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২০ শতাংশ করা হয়েছে।

দ্বিগুণ হচ্ছে ভ্যাট, প্লাস্টিক পণ্য-এসি-ফ্রিজের দাম বাড়তে পারে

সংশ্লিষ্টরা জানান, এখন এসির বাজারের দুই-তৃতীয়াংশই দেশীয় ব্র্যান্ডগুলোর দখলে। বর্তমানে বছরে গড়ে সাত লাখ এসি বিক্রি হয়। দ্রুত এ খাতের চাহিদা বাড়ছে। অন্যদিকে ফ্রিজের বাজারেও দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর শক্তিশালী অবস্থান আছে। প্রতি বছর গড়ে ২০ থেকে ২৫ লাখ ফ্রিজ বিক্রি হয়।

বিজ্ঞাপন

এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, সুপারি, হোগলা পাতা ও মাটির তৈরি তৈজসপত্রের ভ্যাট অব্যাহতির সিদ্ধান্ত নিতে পারে সরকার। ভোক্তাপর্যায়ে এসব পণ্যে ১৫ শতাংশ ভ্যাট রয়েছে।

একটা সময় এসব শিশুদের খেলনা হিসেবে ও হাত পাখা বানাতে ব্যবহার হলেও এখন সুপারির খোল দিয়ে তৈরি হচ্ছে পরিবেশবান্ধব প্লেট, চামচ, ট্রে, শো পিসসহ একাধিক পণ্য। এসব পণ্য নিয়ে কাজ করছেন শতাধিক উদ্যোক্তা।

দ্বিগুণ হচ্ছে ভ্যাট, প্লাস্টিক পণ্য-এসি-ফ্রিজের দাম বাড়তে পারে

জানতে চাইলে এই ধরনের পণ্য তৈরির প্রতিষ্ঠান দেশীয় বিশ্রুতির কর্ণধার আল মাহাদী জাগো নিউজকে বলেন, পরিবেশবান্ধব ও দামে সাশ্রয়ী হওয়ায় দিন দিন এর চাহিদা বাড়ছে। এক থেকে দুটি মেশিন দিয়ে সুপারি পাতার খোল দিয়ে ২০ ধরনের পণ্য বানানো সম্ভব। ভ্যাট অব্যাহতিতে এ খাতে আরও নতুন উদ্যোগ আসবে।

এসএম/এমএমএআর/জিকেএস

আরও পড়ুন

বিজ্ঞাপন