ভিডিও EN
  1. Home/
  2. ফিচার

বুড়িগঙ্গা: ভেনিসের সঙ্গে যার তুলনা করতেন ইউরোপীয়রা

মামুনূর রহমান হৃদয় | প্রকাশিত: ১২:২৬ পিএম, ১৮ নভেম্বর ২০২৩

মানুষের সুখ-দুঃখের গল্পের সঙ্গে জড়িয়ে আছে বহু নদীর নাম। একইসঙ্গে জড়িয়ে আছে নানা পৌরাণিক গল্প। পর্যটক ও বণিকদের বিচরণের গল্পও আছে নদী জুড়ে। সময়ের সঙ্গে বদলে গেছে সেসব নদীর সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক জীবনের চিত্র। এ পালাবদলের এমনি একটি নদীর নাম বুড়িগঙ্গা।

রাজধানী ঢাকার পাশ দিয়ে বয়ে চলা নদী বুড়িগঙ্গা। একসময়ের খরস্রোতা নদীটি সময়ের বিবর্তনে দূষণের কবলে মৃতপ্রায়। পানিতে বাসা বেঁধেছে ভয়ংকর সাকার মাছ। স্বচ্ছতা হারিয়ে পরিণত হয়েছে অঘোষিত বিশাল ড্রেনে। নদীর অব্যক্ত কথা যেন কানে নেয় না কেউ।

অথচ বুড়িগঙ্গা কখনো ছিল ভারী বর্ষণ শেষে উত্তাল নদী, আবার কখনো ছিল বয়ে চলা শান্ত নদী। পূর্ণিমার আলোয় নিঃসঙ্গ নৌকার বুকে টিমিটিম করে জ্বলতো বাতি। সেই আলোয় নৌকায় ভোজ সারতেন দিন জুড়ে পরিশ্রম করা মাঝি-মাল্লারা।

আরও পড়ুন: বিশ্বের বিপজ্জনক ৫ নদীতে নামলেই মৃত্যু

এছাড়াও মানুষ একটু প্রশান্তির জন্য বুড়িগঙ্গায় বেড়াতে যেত। নৌকা করে পাড়ি জমাত এপার-ওপার। নদীর জল দুই হাতে ভরে শূন্যে ছুড়ে দিত, সেই জল পড়ত গায়ে। কিশোরের দল ঝাঁপিয়ে পড়ত নদীর জলে। মাঝিদের মুখে শোনা যেত ভাটিয়ালি গান। জাল ভর্তি মাছ ধরে জেলেদের মুখে ফুটত হাসি। কী মনোরমই না ছিল সেসব দৃশ্য।

অতীতে বুড়িগঙ্গা নদী ছিল ঢাকা শহরের প্রাণকেন্দ্র। এই নদীর জন্যই বাংলার সুবেদার মুকাররম খাঁ নদীর তীরবর্তী রাতের শহরকে আলোকিত করতে সব নৌকায় ফানুস জ্বালানোর ব্যবস্থা করেন।

বর্ষাকালে বুড়িগঙ্গার রূপে মুগ্ধ হয়ে ইতালির ভেনিস শহরের সঙ্গে তুলনা করেছে বহু ইউরোপীয় বণিক। বর্তমানে শহরের কলকারখানা, জলযান ও গৃহস্থালি থেকে নির্গত রাসায়নিক পদার্থ, রং আর বিষাক্ত দ্রব্য এই নদীর পানি নষ্ট করে ফেলেছে।

আরও পড়ুন: চারপাশে শুধুই পানি, একটি বাড়িই দ্বীপের সঙ্গী

বুড়িগঙ্গার পরিবেশ মানুষের শরীরের জন্যও অস্বাস্থ্যকর হয়ে উঠেছে। প্রায় ৬২ রকমের রাসায়নিক বর্জ্যে বিষাক্ত হয়ে গেছে বুড়িগঙ্গার পানি। বাতাসে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ। নদীর তলদেশে জমাট বেঁধেছে ৮ ফুট পুরু পলিথিনের স্তর। আর এই দূষণের মাঝে, দেশি প্রজাতির মাছের জন্য ক্ষতিকর; সাকার মাছ করছে রাজত্ব।

এই বুড়িগঙ্গাকে জীবিত করে তুলতে সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি জনসচেতনতা প্রয়োজন। পাশাপাশি দীর্ঘদিনের বর্জ্য অপসারণ করতে হলে হাতে নিতে হবে সুপরিকল্পিত পরিকল্পনা। তাহলেই বুড়িগঙ্গাকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব। তবে নদীর রং, বেশভূষা বা আচার-আচরণ পরিবর্তন হলেও আজও বয়জেষ্ঠ্যদের চোখে ভাসে আগের দিনের বুড়িগঙ্গার সেই দৃশ্যপট।

কেএসকে/জেআইএম

আরও পড়ুন