৩০ বছর পর ইতালির মার্সি গ্রামে আনন্দের বার্তা নিয়ে শিশুর জন্ম
ইতালির আব্রুজ্জো অঞ্চলের গিরিফালকো পাহাড়ের ঢালে অবস্থিত একটি প্রাচীন গ্রাম পাগলিয়ার দেই মার্সি। এখানে মানুষের চেয়ে বিড়ালের সংখ্যাই বেশি। সরু গলিপথে ঘুরে বেড়ানো, বাড়িতে ঢোকা–বের হওয়া আর পাহাড়মুখী দেয়ালে গা এলিয়ে দেওয়া বিড়ালই যেন গ্রামটির প্রাণ। দীর্ঘদিন ধরে জনসংখ্যা কমে আসায় সেখানে নেমে এসেছে এক ধরনের নিস্তব্ধতা।
তবে সেই নীরবতা ভেঙে গ্রামটিতে আনন্দের বার্তা নিয়ে এসেছে একটি শিশুর জন্ম। প্রায় ৩০ বছর পর পাগলিয়ার দেই মার্সিতে লারা নামের শিশুটি জন্ম নিয়েছে । তার জন্মের মধ্য দিয়ে গ্রামের মোট জনসংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে আনুমানিক ২০ জনে। নিজ বাড়ির সামনে থাকা গির্জায় তার খ্রিস্টধর্মীয় দীক্ষা অনুষ্ঠানে অংশ নেয় পুরো গ্রামবাসী এমনকি বিড়ালরাও। এ ঘটনা এতটাই বরল যে, মাত্র নয় মাস বয়সেই লারা হয়ে উঠেছে গ্রামের প্রধান পর্যটন আকর্ষণ।
৪২ বছর বয়সী চিনজিয়া ত্রাবুক্কো রোমের কাছে ফ্রাস্কাতিতে জন্মগ্রহণ করেন এবং বহু বছর রোমে কাজ করেছেন। পরে তিনি সিদ্ধান্ত নেন, শহরের কোলাহল ছেড়ে নিজের দাদার জন্মস্থান পাগলিয়ার দেই মার্সিতে পরিবার গড়বেন। এখানেই তার পরিচয় হয় স্থানীয় নির্মাণশ্রমিক পাওলো বুসি (৫৬)-র সঙ্গে।
লারার জন্মের পর তারা ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি সরকারের ঘোষিত ১,০০০ ইউরো ‘বেবি বোনাস’ পেয়েছেন। পাশাপাশি মাসে প্রায় ৩৭০ ইউরো শিশুভাতা পাচ্ছেন।
লারা’র মা চিনজিয়া ত্রাবুক্কো বলেন, যারা পাগলিয়ার দেই মার্সির নামই শোনেনি তারাও এখন এখানে আসছে শুধু লারার কথা শুনে। নয় মাস বয়সেই সে যেন এক তারকা।
লারার জন্ম গ্রামটির জন্য আশার আলো হলেও, একই সঙ্গে এটি ইতালির গভীরতর জনসংখ্যা সংকটের কথাও স্মরণ করিয়ে দেয়। ইতালির জাতীয় পরিসংখ্যান সংস্থা ইস্তাত এর তথ্যমতে, ২০২৪ সালে দেশটিতে জন্মের সংখ্যা নেমে এসেছে সর্বনিম্ন ৩ লাখ ৬৯ হাজার ৯৪৪-এ। এটি টানা ১৬ বছরের নেতিবাচক প্রবণতা। একই সঙ্গে ২০২৪ সালে জন্মহার নেমে এসেছে ১ দশমিক ১৮ যা ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্যতম সর্বনিম্ন।
এই পতনের পেছনে রয়েছে চাকরির অনিশ্চয়তা, তরুণদের দেশ ছাড়ার প্রবণতা, কর্মজীবী মায়েদের জন্য পর্যাপ্ত সহায়তার অভাব, পুরুষ বন্ধ্যাত্ব বৃদ্ধি এবং অনেকেরই সন্তান না নেওয়ার সিদ্ধান্ত।
২০২৫ সালের প্রথম সাত মাসের প্রাথমিক তথ্য মতে, ইতালির ২০টি প্রশাসনিক অঞ্চলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি জন্ম হ্রাস ঘটেছে আব্রুজ্জো অঞ্চলে। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় জন্ম কমেছে ১০ দশমিক২ শতাংশ।
পাগলিয়ার দেই মার্সি ছোট একটি গ্রাম হলেও এটি ইতালিজুড়ে বুড়িয়ে যাওয়া জনসংখ্যা, ফাঁকা স্কুল আর বাড়তে থাকা অর্থনৈতিক ও সামাজিক চাপ ছড়িয়ে পড়া বাস্তবতার প্রতিচ্ছবি।
গ্রামের মেয়র জিউসেপিনা পেরোজ্জি বলেন, এই গ্রাম দীর্ঘদিন ধরেই জনশূন্যতার শিকার। প্রবীণদের মৃত্যু হচ্ছে, কিন্তু নতুন প্রজন্ম আসছে না।
সূত্র : দ্য গার্ডিয়ান
কেএম