যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসীদের গুরুত্ব বোঝাচ্ছে বাল্টিমোর দুর্ঘটনা
২৬ মার্চের সেতু দুর্ঘটনায় হতাহতদের স্বজনদের নিয়ে সংবাদ সম্মেলন। ছবি: এএফপি
যুক্তরাষ্ট্রে একটি কার্গো জাহাজের ধাক্কায় যখন বাল্টিমোর সেতু ভেঙে পড়ে, তখন এর ওপর সড়ক মেরামতের কাজ করছিলেন আটজন অভিবাসী শ্রমিক। দুর্ঘটনার পর দুজনকে জীবিত উদ্ধার করা গেলেও প্রাণ হারান বাকি ছয়জন। অধিকারকর্মীদের মতে, এই দুর্ঘটনাই দেখিয়ে দিচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসীদের ভূমিকা কতটা গুরুত্বপূর্ণ।
অধিকারকর্মী এবং সাবেক নির্মাণ শ্রমিক লুইস ভেগা বলেন, অভিবাসীরা যুক্তরাষ্ট্রে এসে এমন সব কাজ করেন, যা মার্কিনিরা করতে চান না। এসব কাজ খুবই কঠিন, কর্মঘণ্টা দীর্ঘ অথবা কাজের পরিবেশ কঠোর।
তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, হোটেলের রুম কে পরিষ্কার করতে চায়? কে গরমে রোদের নিচে কাজ করতে চায়? কে মাঠে থাকতে চায়?
‘অভিবাসীরা- আমরাই কাজগুলো করে থাকি,’ বলেন হোয়াইট হাউজের উপদেষ্টা টম পেরেজ। তিনি নিজেও একজন ল্যাটিনো অভিবাসী।
আরও পড়ুন>>
পেরেজ বলেন, ছয়জন মারা গেছেন, বাকি দুজন বেঁচে রয়েছেন... এটাই আমেরিকা, যেখানে অভিবাসীরাই গর্ত মেরামত করেন।
কিছুদিন পরেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। তাতে দ্বিতীয়বারের মতো প্রার্থী হচ্ছেন রিপাবলিকান নেতা ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার আগে সাবেক এ প্রেসিডেন্ট জোরালোভাবে অভিবাসনবিরোধী প্রচারণা চালাচ্ছেন। ফলে আশঙ্কা বেড়েছে, পুনর্নির্বাচিত হলে তিনি হয়তো গণহারে অভিবাসী প্রত্যাহার শুরু করবেন। ট্রাম্পের মতে, যুক্তরাষ্ট্রে মাদক ও অপরাধ বৃদ্ধির জন্য অভিবাসীরাই দায়ী।
লুইস ভেগার কথায়, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট দেখতে পাচ্ছেন না, তিনি তার বিষ দিয়ে কতটা ক্ষতি করেছেন। সন্ত্রাসীরা লুকিয়ে সীমান্ত পার হয়ে আসে না, তারা ভিসা নিয়ে আকাশপথে প্রবেশ করে।
আরও পড়ুন>>
- মেক্সিকোতে সন্দেহভাজন ৮ অভিবাসনপ্রত্যাশীর মরদেহ উদ্ধার
- ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে অভিবাসী বহিষ্কার বেড়েছে
- সৌদি আরবে চাকরি ছাড়া কর্মী নিয়োগে ১০ লাখ রিয়াল জরিমানা!
তিনি বলেন, ২০২০ সালে করোনাভাইরাস মহামারির সময় কেউ অন্যদের কাছে গিয়ে কাজ করতে চায়নি। তাহলে কাজগুলো করেছিল কে? হাসপাতালের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা? খাবার সংগ্রহ করা? এগুলো অভিবাসীরা তাদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে করেছিল।
ঝুঁকি বেশি, বেতন কম
সরকারি পরিসংখ্যান অনুসারে, ২০২০-২১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমশক্তির ৮ দশমিক ২ শতাংশ ছিলেন ল্যাটিনো অভিবাসীরা। কিন্তু কর্মক্ষেত্রে মৃত্যুতে তাদের অংশ ছিল ১৪ শতাংশের মতো। ২০২১ সালে দেশটিতে ৭২৭ জন ল্যাটিনো অভিবাসী কর্মী মারা গেছেন, যা এক দশক আগের তুলনায় অন্তত ৪২ শতাংশ বেশি।
কিন্তু কঠিন পরিশ্রমের কাজ করেও ঠিকঠাক বেতন পান না অনেক অভিবাসী শ্রমিক। টাকসনে ঠিকাদারির কাজ করা জ্যাভিয়ের গালিন্দো জানান, অ্যারিজোনায় আইনগতভাবে ন্যূনতম মজুরি হলো প্রতি ঘণ্টায় ১৪ দশমিক ৩৫ মার্কিন ডলার। কিন্তু, অভিবাসী শ্রমিকরা প্রতিদিন মাত্র ৮০ থেকে ১০০ ডলার উপার্জন করেন, এর জন্য কখনো কখনো তাদের ১০ থেকে ১২ ঘণ্টাও কাজ করতে হয়।
আরও পড়ুন>>
- যুক্তরাষ্ট্রের রক্ত খারাপ করছে অবৈধ অভিবাসীরা: ট্রাম্প
- অবৈধ অভিবাসী ইস্যুতে কঠোর হচ্ছে বাইডেন প্রশাসনও
মাত্র ১৪ বছর বয়সে ছাদ পরিষ্কারের মাধ্যমে নিজের কর্মজীবন শুরু করেছিলেন গালিন্দো। তার কথায়, আপনি কখনো একজন শ্বেতাঙ্গকে এই কাজ করতে দেখবেন না।
গালিন্দো নিজের কোম্পানি চালু করেছেন দুই দশক পার হয়েছে। এই দীর্ঘ সময়ের মধ্যে তার কাছে মাত্র একজন শ্বেতাঙ্গ এসেছিলেন গাড়িচালকের চাকরির জন্য। কিন্তু তিনিও বেশিদিন টেকেননি। কিছুদিন পরেই চাকরি ছেড়ে দেন ওই ব্যক্তি।
গালিন্দো বলেন, কাগজপত্রবিহীন অভিবাসী কর্মীরা না থাকলে এই শহরে যা যা নির্মাণ করা হচ্ছে, আমরা তা করতে পারতাম না।
সূত্র: এএফপি
কেএএ/