বিচার বিভাগে ঐতিহাসিক ঘটনা ও আলোচিত রায়ের বছর
ফাইল ছবি
সময়ের পরিক্রমায় বিদায় নিচ্ছে ২০২৫ সাল। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের এই এক বছরে আলোচনায় ছিল দেশের বিচার বিভাগ। এ সময়ে দেশের ইতিহাসে উচ্চ আদালতে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক বিচারক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বিচারক নিয়োগে অধ্যাদেশ ও হাইকোর্টে বিচারপতি নিয়োগে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। বিচার বিভাগের পূর্ণ স্বাধীনতার জন্য পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠা তথা বছরের শেষ দিকে এসে ১১ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় উদ্বোধন, নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরে আসা এবং ২০২৪ সালের ৮ আগস্ট গঠিত হওয়া সরকারের বৈধতা নিয়ে দায়ের করা রিটের রায় ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে।
গত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে রাজনৈতিক দল হিসেবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন ও প্রতীক হারানোর পর আবার সেটি সুপ্রিম কোর্টের রায়ের মধ্যে দিয়ে ফিরে পাওয়া, সুপ্রিম কোর্টের রায়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার স্ত্রী ড. জুবাইদা রহমান, জামায়াত নেতা এটিএম আজহারুল ইসলামকে মামলা থেকে খালাস দেওয়াসহ আদালতে ঘটে যাওয়া বেশ কিছু বিষয় ছিল আলোচনায়।
অন্তর্বর্তী সরকারের শপথ বৈধ: আপিল বিভাগ
শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের গঠন ও শপথ গ্রহণ বৈধ বলে হাইকোর্টের দেওয়া রায় বহাল রাখেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। গত ৪ ডিসেম্বর প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যের আপিল বিভাগের বেঞ্চ সর্বসম্মতিক্রমে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে করা লিভ টু আপিল খারিজ করে রায় দেন।
এর আগে গত ১৩ জানুয়ারি অন্তর্বর্তী সরকারের গঠন ও শপথ গ্রহণের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে আইনজীবী মুহাম্মদ মহসেন রশিদের করা রিটটি সরাসরি খারিজ করেন হাইকোর্ট। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে পরে তিনি আপিল বিভাগে আবেদন করেন।
হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ আদেশে পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছিল, ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার আইনি নথিপত্র দ্বারা সমর্থিত এবং জনগণের ইচ্ছায় গঠিত হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের মতামতের ভিত্তিতে এই সরকারের গঠন ও শপথকে যৌক্তিক বলে উল্লেখ করেছিলেন হাইকোর্ট।
আরও পড়ুন
বিচার বিভাগের স্থিরতা হতে পারে জাতির নির্ভরযোগ্য স্থিতিশীলতার উৎস
সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয়ের অর্জন-ব্যর্থতা আমাদের মেনে নিতে হবে
অন্তর্বর্তী সরকারের শপথ বৈধ: আপিল বিভাগ
তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ফিরলো, কোন নির্বাচনে কার্যকর
এরপর ২৫ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের ওই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল করেন মুহসেন রশিদ। ওইদিন আপিল বিভাগে শুনানিতে আবেদনকারী আইনজীবী মহসেন রশিদ নিজেই নিজের পক্ষে শুনানি করেন।
আদেশের পর সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে মামলার অন্যতম ইন্টারভেনার আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির সাংবাদিকদের বলেন, আপিল বিভাগের এই আদেশের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হলো যে বর্তমান সরকার জনগণের সার্বভৌম অভিপ্রায়ের ভিত্তিতে গঠিত হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘এই সরকার যেসব কাজ করছে, তা মূলত জনগণের সেই সার্বভৌম ক্ষমতারই বহিঃপ্রকাশ। আমাদের সুপ্রিম কোর্ট আজ সংবিধানের এই মৌলিক নীতিটি আবারও নিশ্চিত ও ঘোষণা করলো।’
শিশির মনির আরও বলেন, এই আদেশের ফলে বর্তমান সরকারের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড—বিশেষ করে নির্বাচন, বিচার ও সংস্কার—এই তিন ম্যান্ডেটের বৈধতা নিয়ে আর কোনো প্রশ্ন তোলার সুযোগ থাকবে না।
সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় অধ্যাদেশ জারি
গত ৩০ নভেম্বর আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় অধ্যাদেশ, ২০২৫ জারি করে। এ অধ্যাদেশে পৃথক সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছে। এ অধ্যাদেশ পুরোপুরি কার্যকর হওয়ার পর নিম্ন আদালতের বিচারকদের বদলি, পদোন্নতি, শৃঙ্খলাজনিত বিষয়, ছুটির পাশাপাশি নিম্ন আদালতের বিচারকদের নিয়োগের সব কিছু সুপ্রিম কোর্টের সচিবালয় করবে।
সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় ভবন উদ্বোধন
বিচার বিভাগের পূর্ণ স্বাধীনতা নিশ্চিতে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা করেছে সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয়। গত ১১ ডিসেম্বর বিকেলে সুপ্রিম কোর্টের প্রশাসনিক ভবন-৪ এ সচিবালয় উদ্বোধন করেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ।

বাংলাদেশে স্বাধীন বিচার বিভাগের দাবি কয়েক যুগ ধরে বিভিন্ন মহল থেকে করা হচ্ছিল। এ নিয়ে নানান আলোচনা-সমালোচনা ও সভা-সমাবেশের মধ্যে ১৯৯৫ সালে বিসিএস বিচার অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব মাসদার হোসেন ও তার সহকর্মীরা বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগের প্রভাব থেকে মুক্ত করার দাবিতে মামলা করেন। ওই মামলায় ১৯৯৯ সালে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ স্বাধীন বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠার চূড়ান্ত রায় দেয়। সেই রায়ের ২৬ বছর পর বিচার বিভাগের জন্য আলাদা সচিবালয় করার পদক্ষেপ গত ২০ নভেম্বর সরকারের অনুমোদন পায়।
সুপ্রিম কোর্টের বিচারক নিয়োগ আইন
সুপ্রিম কোর্টের বিচারক নিয়োগের আইন মূলত বাংলাদেশের সংবিধান, বিশেষত ৯৫ অনুচ্ছেদ দ্বারা পরিচালিত হয়, যেখানে রাষ্ট্রপতি প্রধান বিচারপতি এবং অন্যান্য বিচারপতি নিয়োগ দেন। তবে, এই প্রক্রিয়াকে আরও স্বচ্ছ ও স্বাধীন করতে সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টের বিচারক নিয়োগ অধ্যাদেশ, ২০২৫ জারি করা হয়েছে। এতে প্রধান বিচারপতি রাষ্ট্রপতিকে পরামর্শ প্রদানের একটি কাঠামো দিয়েছে, যদিও এই অধ্যাদেশ নিয়ে বিতর্ক ও রিট হয়েছে, যা বিচার বিভাগীয় নিয়োগে একটি নতুন আইন বা নীতিমালার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছে।
আরও পড়ুন
শপথ নিলেন হাইকোর্টের ২১ বিচারপতি
প্রধান বিচারপতির বাসভবনসহ যেসব এলাকায় সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ
সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় অধ্যাদেশ জারি
সুপ্রিম কোর্টের বর্ষপঞ্জি অনুমোদন, অবকাশকালীন ছুটি ৬৩ দিন
সুপ্রিম জুডিসিয়াল অ্যাপয়েন্টমেন্ট কাউন্সিল
সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে অতিরিক্ত বিচারক পদে নিয়োগে আগ্রহী ব্যক্তিদের কাছ থেকে দরখাস্ত আহ্বান করা হয়েছে। ২০২৫ সালের সুপ্রিম কোর্টের বিচারক নিয়োগ অধ্যাদেশের ৭(ক) ধারা অনুসারে অতিরিক্ত বিচারক পদে নিয়োগের উদ্দেশ্যে এই দরখাস্ত আহ্বান করা হয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে গত ২৬ নভেম্বর এই গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগে বিচারক নিয়োগের লক্ষ্যে উপযুক্ত ব্যক্তি বাছাই করে প্রধান বিচারপতি কর্তৃক রাষ্ট্রপতিকে পরামর্শ দিতে ‘সুপ্রিম কোর্টের বিচারক নিয়োগ অধ্যাদেশ-২০২৫’ গত ২১ জানুয়ারি গেজেট আকারে জারি করে আইন মন্ত্রণালয়।
অধ্যাদেশের ৩ ধারা অনুসারে, সুপ্রিম কোর্টের বিচারক পদে নিয়োগের নিমিত্ত বা পরামর্শ প্রদান প্রক্রিয়ায় প্রধান বিচারপতিকে সহায়তার উদ্দেশ্যে উপযুক্ত ব্যক্তি বাছাইপূর্বক সুপারিশ করার জন্য একটি স্থায়ী কাউন্সিল থাকবে। আর তা ‘সুপ্রিম জুডিসিয়াল অ্যাপয়েন্টমেন্ট কাউন্সিল’ নামে অভিহিত হবে।
অধ্যাদেশের বিধান অনুসারে ‘সুপ্রিম জুডিসিয়াল অ্যাপয়েন্টমেন্ট কাউন্সিল’ গঠিত হয়েছে। প্রধান বিচারপতি এই কাউন্সিলের চেয়ারপারসন। আর হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত বিচারক নিয়োগ বিষয়ক সুপারিশ সম্পর্কে অধ্যাদেশের ৭ ধারায় বলা রয়েছে। ৭(ক) ধারা অনুসারে কাউন্সিল উপযুক্ত ব্যক্তিদের প্রয়োজনীয় তথ্য নিজ উদ্যোগে সংগ্রহ করতে পারবে। এছাড়া ফরমে প্রার্থীদের কাছ থেকে গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে দরখাস্ত আহ্বান করবে। এরপর অতিরিক্ত বিচারক পদে নিয়োগে আগ্রহী ব্যক্তিদের কাছ থেকে দরখাস্ত আহ্বান করে গত ২৮ মে সুপ্রিম কোর্ট থেকে প্রথমবারের মতো গণবিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৫ আগস্ট হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত বিচারক হিসেবে ২৫ জনকে নিয়োগ দেয় সরকার। হাইকোর্ট বিভাগে এর আগে কখনো একসঙ্গে এত বেশি সংখ্যক বিচারক নিয়োগ দেওয়া হয়নি।
সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিলে হাইকোর্টের বিচারপতি অপসারণ
সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের অপসারণ ক্ষমতা সংসদের হাতে ন্যস্ত করা হলেও পরে হাইকোর্ট বিভাগ ও আপিল বিভাগ এ সংশোধনীকে অবৈধ ঘোষণা করেন। যদিও এ বিষয়ে দায়ের করা রিভিউ আবেদন দীর্ঘদিন অনিষ্পন্ন ছিল। সর্বশেষ ২০২৪ সালের ২০ অক্টোবর আপিল বিভাগ রিভিউ নিষ্পত্তি করলে সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল পুনরুজ্জীবিত হয়। এরপর প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে তিন সদস্য বিশিষ্ট কাউন্সিল কার্যক্রম শুরু করে। অন্য দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী।
আরও পড়ুন
তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাতিলের রায় দেওয়া হয় অসৎ উদ্দেশ্যে
বর্তমান সংবিধানই বিচার বিভাগের বৈধতার বাতিঘর: প্রধান বিচারপতি
হাসিনা পালানোয় স্বাধীনভাবে কাজ করতে পেরেছে বিচার বিভাগ
প্রকল্পে ৫০ কোটি টাকা পর্যন্ত অনুমোদন দিতে পারবেন প্রধান বিচারপতি
সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিলের তদন্তের পর রাষ্ট্রপতি তিনজন বিচারপতি অপসারণ করেন। এর মধ্যে বিচারপতি খিজির হায়াতকে গত ১৮ মার্চ এবং বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামানকে ২১ মে অপসারণ করা হয়। এছাড়া সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারকে অপসারণ করা হয়েছে। সংবিধানে পুনর্বহাল করা অনুচ্ছেদ ৯৬-এর দফা (৬) অনুযায়ী তাদের অপসারণ করেন রাষ্ট্রপতি। আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ফিরলো
নির্বাচনকালীন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংবিধানে পুনর্বহালের রায় দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। তবে আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নয়, তার পরের জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে এ ব্যবস্থা কার্যকর হবে বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে। শুনানিতে আইনজীবীরাও এ সংক্রান্ত বিষয়ে মতামত দিয়েছিলেন। আদালত তাদের মতামত গ্রহণ করে রায়ে উল্লেখ করে দেওয়ায় সর্বোচ্চ আদালতের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন আইনজীবীরা।
এ সংক্রান্ত বিষয়ে রায় ঘোষণার নির্ধারিত দিনে ২০ নভেম্বর প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যের আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ ও নিয়মিত বেঞ্চ রায় ঘোষণা করেন। আপিল বিভাগের বেঞ্চের অন্য ছয় বিচারপতি হলেন মো. আশফাকুল ইসলাম, বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী, বিচারপতি মো. রেজাউল হক, বিচারপতি এস এম ইমদাদুল হক, বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি ফারাহ মাহবুব।
১৪ বছর আগে বাতিল হওয়া তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা আপিল বিভাগের রায়ের মাধ্যমে সংবিধানে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পুনর্বহাল হয়েছে বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান।
আইনজীবীরা জানান, নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহাল করে রায় দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। রায়ে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করে দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ থেকে উদ্ভূত আপিল আদালত মঞ্জুর করেছেন। এই রায়ের ফলে তত্ত্বাবধায়ক সরকার সংক্রান্ত সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী পুনর্বহাল হলো বলে জানান তারা।
জামায়াতের নিবন্ধন ও অন্যান্য বিষয়ে ইসিকে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ
রাজনৈতিক দল হিসেবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করা হাইকোর্টের রায় বাতিল করে রায় দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। একই সঙ্গে বাতিল হওয়া নিবন্ধন ও অন্যান্য বিষয়ে দলটির করা আবেদন নিষ্পত্তি করতে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) নির্দেশ দিয়েছেন।
এছাড়া সর্বোচ্চ আদালত বলেন, জামায়াতে ইসলামীর ‘পেন্ডিং রেজিস্ট্রেশন’ ও অন্যান্য বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। অন্যদিকে, দলীয় প্রতীক সংক্রান্ত জামায়াতের আবেদন প্রত্যাহারের আবেদন কোনো পর্যবেক্ষণ না দিয়ে মঞ্জুর করেন সর্বোচ্চ আদালত।
দলটির পক্ষে করা আপিল মঞ্জুর করে ১ জুন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের চার সদস্যের বেঞ্চ এ রায় দিয়েছেন।
আরও পড়ুন
তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলের রায়ে ত্রুটি স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান ছিল
সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় উদ্বোধন
পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল হলে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পূর্ণাঙ্গভাবে ফিরবে
ক্ষমতাবানের পক্ষ নিলে বিচার বিভাগের আলাদা অস্তিত্বেরই প্রয়োজন নেই
রায়ের পর জামায়াতের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির বলেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী আজ দেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের মাধ্যমে তার নিবন্ধন ফিরে পেলো। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে দায়ের করা মামলার মাধ্যমে জামায়াতের নিবন্ধন কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। আজকের এ রায়ের মাধ্যমে বহুদলীয় গণতান্ত্রিক এবং অংশগ্রহণমূলক সংসদ প্রাপ্তি নিশ্চিত হলো।
খালেদা জিয়ার খালাসের রায় আপিলেও বহাল
জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় সাত বছরের কারাদণ্ড ও ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড থেকে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে হাইকোর্টের দেওয়া খালাসের রায় বহাল রেখেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। হাইকোর্টের ওই রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ ও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা পৃথক তিনটি লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) খারিজ করে ৩ মার্চ সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আপিল বিভাগের বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
মৃত্যুদণ্ড থেকে খালাস পান এটিএম আজহার
মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে করা মামলায় জামায়াতে ইসলামীর নেতা এটিএম আজহারুল ইসলামকে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে রায় ঘোষণা করেছিলেন তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। ওই মৃত্যুদণ্ড থেকে খালাস দিয়ে রায় ঘোষণা করেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
আজহারুলের আপিল আবেদন মঞ্জুর করে ২৭ মে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বীন সাত সদস্যের বিচারপতির আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ ও নিয়মিত বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন। বেঞ্চের সাত বিচারপতি সর্বসম্মতিক্রমে এ রায় দিয়েছেন। রায়ে আপিল বিভাগ অবিলম্বে এটিএম আজহারুল ইসলামকে মুক্তির নির্দেশ দেন।
তারেক-বাবরের খালাসের রায় আপিলেও বহাল
২০০৪ সালের একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ সব আসামিকে খালাস দিয়ে হাইকোটের দেওয়া রায় বহাল রেখেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা আপিলের শুনানি শেষে ৪ সেপ্টেম্বর প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন ছয় সদস্যের বিচারপতির আপিল বিভাগের বেঞ্চ এ সংক্রান্ত বিষয়ে রায় দেন।
১০ বছরের সাজা থেকে খালাস পান তারেক
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ১০ বছরের সাজা থেকে খালাস দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। রায়ে বিচারিক আদালতের সাজাও বাতিল করা হয়েছে। তিনজনের করা আপিল গ্রহণ করে ১৫ জানুয়ারি এ রায় দেন প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের আপিল বিভাগের বেঞ্চ। রায়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, ছেলে তারেক রহমানসহ সবাই খালাস পেয়েছেন।
জুবাইদার ৩ বছর ও তারেক রহমানকে ৯ বছরের দণ্ড থেকে খালাস
জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের মামলায় তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমানের তিন বছরের কারাদণ্ডাদেশের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল আবেদন গ্রহণ করে তাকে দণ্ড থেকে খালাস দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে ওই আবেদনে মামলার দুই ধারায় তারেক রহমানকে ছয় এবং তিন বছরের কারাদণ্ড থেকেও খালাস দেওয়া হয়েছে। ডা. জুবাইদা রহমানের করা আপিল আবেদন মঞ্জুর করে ২৮ মে হাইকোর্টের বিচারপতি মো. খসরুজ্জামানের একক বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন।
সুপ্রিম কোর্টের এজলাসে প্রবেশ সীমিত
নিরাপত্তার কারণে সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগের এজলাসকক্ষে ১৫ ডিসেম্বর থেকে আইনজীবী ছাড়া বিচারপ্রার্থী বা অপ্রত্যাশিত কোনো ব্যক্তির প্রবেশাধিকার নিয়ন্ত্রিত করে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন। প্রধান বিচারপতির আদেশক্রমে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান সিদ্দিকীর সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে এমন তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এছাড়া সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে যে কোনো ধরনের সমাবেশ, মিছিল, বৈধ বা অবৈধ সব ধরনের অস্ত্র, মারণাস্ত্র, বিস্ফোরক ও মাদকদ্রব্য বহন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ আদেশ ১৫ ডিসেম্বর থেকে কার্যকর বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।
এতে বলা হয়, ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এ আদেশ বলবৎ থাকবে। নির্দেশ অমান্য করলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আদালত এ বিষয়ে আইনজীবী, আইনজীবীর সহকারী, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও বিচারপ্রার্থীদের সচেতন থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন।
এফএইচ/এমএমএআর/এমএফএ/এমএস