নির্যাতন করে ৭২ লাখ টাকা আদায়
এএসপি-ওসির বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ হাইকোর্টের নজরে
ফাইল ছবি
উচ্চ আদালত থেকে জামিন পাওয়ার পরও কয়েকজন আসামি ও তাদের স্বজনদের ওপর নির্যাতন চালিয়ে ৭২ লাখ টাকা আদায়ের অভিযোগটি আদালতের নজরে এনেছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মজিবুর রহমান। শরিয়তপুরের এএসপি ও পদ্মা সেতুর দক্ষিণ থানার ওসির বিরুদ্ধে এ অভিযোগ করা হয়।
রোববার (১১ জুন) হাইকোর্টের বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আমিনুল ইসলামের বেঞ্চে নির্যাতনের বিষয়টি উপস্থাপন করা হয়।
জাগো নিউজকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রপক্ষের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার সারোয়ার হোসেন বাপ্পি।
নির্যাতনের বিষয়টি উপস্থাপন করা হলে আদালত বলেন, লিখিত আবেদন দাখিল করুন। আমরা ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবো। কিন্তু রোববার এ বিষয়ে শুনানি ও আদেশের জন্য দুপুরে বিরতির পর আসতে বললেও আইনজীবী উপস্থিত হতে না পারায় এ বিষয়ে শুনানি ও আদেশ দেননি হাইকোর্ট।
আরও পড়ুন: মহাসড়কে গাড়ি থামিয়ে পুলিশের চাঁদাবাজি
পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উচ্চ আদালত থেকে জামিন পাওয়া কয়েকজন আসামি ও তাদের স্বজনদের ওপর নির্যাতন চালিয়ে ৭২ লাখ টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে দুই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। শরিয়তপুরের নড়িয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) রাসেল মনির ও পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ করা হয়।
ভুক্তভোগীর বড় ভাই আবু জাফর ঠান্ডু জেলা পুলিশ সুপার বরাবর অভিযোগ করেন। এ ঘটনায় শরীয়তপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) মোহাম্মদ বদিউজ্জামানকে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি করা হয়েছে।
ঘটনায় অভিযুক্তদের সম্পৃক্ততা পেলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন শরীয়তপুরের পুলিশ সুপার।
পুলিশ, ভুক্তভোগী ও অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ২৩ মে দ্রুত বিচার আইনে পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানায় একটি ছিনতাই মামলা হয়। মামলায় জাজিরা উপজেলার নাওডোবা আহম্মেদ চোকদার কান্দি এলাকার সাদ্দাম চোকদার, বকুল চোকদারসহ নয়জনকে আসামি করা হয়। সেই মামলায় ২৯ মে সাদ্দাম, বকুল, সাইদুল উচ্চ আদালত থেকে জামিনে বের হন।
আরও পড়ুন: পুলিশের চাঁদাবাজি বরদাস্ত করা হবে না
জামিনে আসার পর ৩০ মে রাতে তারা এ মামলার আরেক আসামি আনোয়ারকে নিয়ে ঢাকা কেরানীগঞ্জ সাদ্দামের বন্ধু আলমগীর চোকদারের বাসায় যান। ওইদিন রাতে তথ্য পেয়ে সেই বাসায় হাজির হন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাসেল মনির ও ওসি মোস্তাফিজুর রহমান, জাজিরা উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রুবেল বেপারীসহ ১০-১২ জন পুলিশ সদস্য।
অভিযোগে বলা হয়, এ সময় সাদ্দাম তাদের জামিনের কাগজ দেখালে তা ছিঁড়ে ফেলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার। পরে সাদ্দাম ও বকুলকে লাথি, কিল-ঘুষি, চড়-থাপ্পড়সহ পুলিশের লাঠি (ডাণ্ডা), কাঠ, হাতুড়ি দিয়ে বেধড়ক মারধর করা হয়। একপর্যায়ে প্লাস দিয়ে হাত ও পায়ের নখ তুলে ফেলা হয়।
সাদ্দাম পানি চাইলে ছোট ভাই বকুলকে দাঁড় করিয়ে মুখে প্রস্রাব করতে বলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাসেল মনির। পরে সাদ্দামের শরীরে প্রস্রাব করেন বকুল। এমন নির্যাতন চলে রাত ১টা থেকে পরদিন ৩১ মে সকাল ৮টা পর্যন্ত।
আরও পড়ুন: পুলিশের আচরণে বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার ক্ষোভ
অভিযোগে জানা যায়, কিছুক্ষণ পর ওই চারজনকে গামছা ও কালো কাপড় দিয়ে চোখ বেঁধে গাড়িতে করে জাজিরা প্রান্তে পদ্মা সেতুর নিচে আনা হয়। পরে সাদ্দাম ও বকুল এবং সাইদুল ও আনোয়ারকে পৃথক দুই স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়।
এরপর সাদ্দাম-বকুলকে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও ওসি বলেন, ‘সাইদুল-আনোয়ারকে ক্রসফায়ার দিয়ে দিয়েছি। তোরা ৭২ লাখ টাকা দিবি, তা না হলে তোদেরও ক্রসফায়ার দিয়ে দেওয়া হবে’।
অভিযোগে বলা হয়, এভাবে সারাদিন রেখে রাতে পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানায় এনে ৭২ লাখ টাকা চাঁদা চেয়ে বেত ও কাঠ, কোদালের বাট, লাঠি দিয়ে আবার বেধড়ক মারা হয় সাদ্দাম ও বকুলকে। সারারাত চলে এ নির্যাতন। এরপর টাকার জন্য বকুলের স্ত্রী সানজিদা, দুই বছরের সন্তান, বাবা রশিদ চোকদার, মা রমেলা ও চাচাতো ভাই আবু জাফর ঠান্ডুকে থানায় এনে সারারাত আটকে রাখা হয় এবং শারীরিক নির্যাতন করা হয়।
অভিযোগ থেকে আরও জানা যায়, পরে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও ওসির কাছে পাঁচটি চেকের মাধ্যমে ৭২ লাখ টাকা দিলে নির্যাতন থেকে মুক্তি মেলে সাদ্দাম ও বকুলের। এ দু-দিন যন্ত্রণায় চিৎকার করলেও তাদের খাবার ও ওষুধ দেননি অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও ওসি।
এফএইচ/জেডএইচ/জেআইএম