ভিডিও EN
  1. Home/
  2. লাইফস্টাইল

চিঠি লিখলে কি মানসিক শান্তি পাওয়া যায়

মামুনূর রহমান হৃদয় | প্রকাশিত: ০১:৫৪ পিএম, ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫

একটা সময় দূরে কোথাও গেলে প্রিয়জনের খোঁজ নেওয়ার একমাত্র ভরসা ছিল কাগজে লেখা চিঠি। ডাকপিয়নের সাইকেলের ঘন্টার টিংটিং শব্দ মানেই ছিল প্রতীক্ষার অবসান।

হলুদ খামে ভরা কয়েকটি লাইনে ফুটে ওঠা হাসি, কান্না, ভালোবাসা বা দুঃখ সবই যেন একসঙ্গে পৌঁছে যেত প্রাপকের কাছে। চিঠির সেই মায়াবী স্পর্শ আজও অনেককে শিহরিত করে, মনে করিয়ে দেয় সম্পর্কের গভীরতা।

কিন্তু বাস্তবতা হলো, চিঠির প্রথা আজ প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে। তার জায়গায় এসেছে মেসেঞ্জার, মোবাইল এসএমএস, ইমেইল ও হোয়াটসঅ্যাপের মতো দ্রুতগামী যোগাযোগ মাধ্যম।

তবু মানুষের ভেতরের আবেগ সবসময় এত দ্রুত প্রকাশ পায় না। কখনও কখনও ধীরে বসে লেখা কয়েকটি শব্দই সবচেয়ে নির্ভুলভাবে প্রকাশ করে মনের অনুভূতিকে। এজন্যই মনোবিদরা চিঠি লেখাকে একটি কার্যকর মানসিক থেরাপি হিসেবে বিবেচনা করেন। শোক কাটানো, রাগ মুক্ত করা কিংবা নিজেকে বোঝার জন্য চিঠি লেখা একটি অনন্য পদ্ধতি।

প্রশ্ন উঠতে পারে হঠাৎ কেন চিঠি লেখা নিয়ে আলোচনা! কারণ আজ ১ সেপ্টেম্বর, বিশ্ব চিঠি লেখা দিবস। প্রতি বছরের এই দিনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পালিত হয় দিবসটি। প্রযুক্তি যতই উন্নত হোক না কেন, চিঠির এক বিশেষ মানসিক ভূমিকা আজও অটুট।

চিঠি লিখলে কি মানসিক শান্তি পাওয়া যায়

বিশ্বের বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত চিঠি বা জার্নাল লেখার অভ্যাস মানসিক চাপ কমায়। অনেক থেরাপিস্ট রোগীদের মৃত প্রিয়জনের উদ্দেশে চিঠি লিখতে বলেন। এতে ভেতরে জমে থাকা কান্না, অপরাধবোধ বা না বলা কথাগুলো বেরিয়ে আসে। একে বলা হয় ‘ক্লোজার’। আবার কারো প্রতি প্রবল রাগ থাকলে তাকে উদ্দেশ্য করে চিঠি লেখা, পরে তা ছিঁড়ে ফেলা বা পোড়ানো এটিও চিকিৎসকরা পরামর্শ দেন। এটি এক ধরনের ক্যাথারসিস, যা আবেগের বোঝা হালকা করতে সাহায্য করে।

রিসার্চগেটের গবেষণায় দেখা গেছে, কলেজ শিক্ষার্থীরা যখন নিয়মিত চিঠি লিখেছে, তাদের ঘুমের গুণমান বেড়েছে এবং অসুস্থতার কারণে অনুপস্থিত দিনের সংখ্যা কমে গেছে। অন্য গবেষণায় পাওয়া যায়, নিজের প্রতি সহানুভূতি দেখিয়ে লেখা চিঠি উদ্বেগ কমায়, আত্মসমালোচনা হ্রাস করতে সাহায্য করে। কোভিড মহামারির সময়ও কিছু মানুষ আবার চিঠি লেখার যুগে ফিরে গিয়েছিলেন। তখন ডাকবাক্সে আসা চিঠি পেয়ে অনেকে তাদের মন ভালো হওয়ার কথা জানিয়েছেন।

তাই চিঠি শুধুই খবর পৌঁছে দেওয়ার মাধ্যম নয়। বরং, এটি মানসিক স্বস্তি দেওয়া, সম্পর্ক গভীর করা এবং নিজেকে বোঝার একটি সুযোগ। দ্রুত বার্তা পাঠানোর যুগে চিঠি হলো ধীর এবং চিন্তাশীল একটি অভ্যাস, যা আমাদের আবেগকে ধীরে ধীরে গুছিয়ে নেয়। ধীরে লেখা প্রতিটি শব্দ আমাদের মনের ভাবকে পরিষ্কার করে, সম্পর্কের বন্ধনকে আরও দৃঢ় করে এবং এক ধরনের আত্মপর্যালোচনার সুযোগ তৈরি করে।

চিঠি লিখলে কি মানসিক শান্তি পাওয়া যায়

চিঠি হারিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু এর প্রয়োজনীয়তা শেষ হয়নি। বরং প্রযুক্তির ভিড়ে এটি হয়েছে একটি ‘থেরাপিউটিক টুল’। একজন শিশু বা তরুণ যখন তার অনুভূতি লিখে প্রকাশ করে, তখন সেটি তার মানসিক চাপ কমায়। একজন কর্মজীবী যখন দিনের শেষে নিজের অভিজ্ঞতা বা কষ্ট লেখা চিঠিতে তুলে ধরে, তখন তার মন শান্ত হয়। এমনকি প্রিয়জনকে লেখা চিঠি সম্পর্ককে আরও গভীর করে।

তাই আজ বিশ্ব চিঠি লেখা দিবসে আমরা শুধু স্মৃতিচারণ করি না; আমরা মনে করি, এই সহজ অথচ গভীর অনুশীলন আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য কতটা কার্যকর হতে পারে। আধুনিক প্রযুক্তি আমাদের দ্রুত খবর পৌঁছে দেয়, কিন্তু চিঠি দেয় চিন্তাশীলতা, মননশীলতা এবং মানসিক শান্তি। এক খামের মধ্যে বাঁধা কয়েকটি লাইন আমাদের মনকে শিথিল করতে, আবেগকে সাজাতে এবং সম্পর্ককে সুগভীর করতে পারে। এটাই যেন‌ চিঠির এক অমূল্য শক্তি!

তথ্যসূত্র: রিসার্চগেট, থেরাপিস্ট এইড, ভেরিওয়েল মাইন্ড

এএমপি/এমএস

আরও পড়ুন