শিশুদের পড়াশোনায় আগ্রহী করবেন যেভাবে
সানজানা রহমান যুথী
পড়াশোনা– শব্দটি শুনলেই অনেক শিশু ভয় পেয়ে যায়, কান্নাকাটি করে, পড়তে চায় না। কারণ, পড়াশোনার মাঝে তারা কোনো মজা খুঁজে পায় না। আবার অনেক শিশু আগ্রহ নিয়ে পড়তে চায়। এমনটি কেন হয়?
শিশুর এমন আচরণের পেছনে অনেক কারণই থাকতে পারে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শিশুকে পড়ানোর ধরনের কারণে এমনটি হতে পারে। শিশুরা শুধু সেসব কাজেই আগ্রহ পায় যা তাদের মজা লাগে বা ভালো লাগে। তাই পড়ালেখাকে যদি একটি একঘেয়ে কাজ হিসেবে তাদের সামনে উপস্থাপন করা হয়, তখন স্বাভাবিকভাবেই তারা পড়তে চাইবে না।
বাচ্চাদের কীভাবে পড়ালেখা করানো উচিত যাতে বাচ্চারা সহজেই পড়ালেখার মাঝে আনন্দ খুঁজে পায় — এ বিষয়ে জাগো নিউজের সঙ্গে কথা বলেন বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ পাবলিক কলেজের প্রভাষক জাকিয়া ইসলাম। তিনি বিগত ২০ বছর ধরে শিশুদের শেখানোর সঙ্গে যুক্ত আছেন।
আজ (৫ অক্টোবর) বিশ্ব শিক্ষক দিবস উপলক্ষে জাকিয়া ইসলাম নিজের অভিজ্ঞতা থেকে কিছু টিপস্ তুলে ধরেছেন জাগো নিউজের পাঠক-অভিভাবকদের জন্য।
জাগো নিউজ: আপনার মতে, ছোট শিশুদের পড়ানোর মূল উদ্দেশ্য কী হওয়া উচিত?
জাকিয়া ইসলাম: ছোট থেকে শিশুদের নানা বিষয় জানার জন্য আগ্রহী করে তোলাই আসলে শিক্ষকের প্রথম কাজ। পাশাপাশি তাদের শৃঙ্খলা, নীতিনৈতিকতা ও শিষ্টাচার শেখানো মূল উদ্দেশ্য হওয়া উচিত। কেননা এগুলোর মধ্য দিয়েই শিশু একজন ভালো মানুষ হয়ে ওঠে।

জাগো নিউজ: আপনি শিশুদের শেখানোর জন্য কী ধরনের পদ্ধতি সবচেয়ে কার্যকর বলে মনে করেন?
জাকিয়া ইসলাম: হাতে-কলমে ও খেলার ছলে শেখালে শিশু আগ্রহ পায়। সেই সঙ্গে তার আগ্রহকে উৎসাহ দেওয়া। এই পদ্ধতিগুলোকেই আমি সবচেয়ে কার্যকর বলে মনে করি। খেলার মাধ্যমে শেখানো হলে শিশুরা পড়ালেখায় মনোযোগী হয় এবং শেখাটা দীর্ঘস্থায়ী হয়।
জাগো নিউজ: ক্লাসে শিশুদের মনোযোগ ধরে রাখতে কী কী কৌশল ব্যবহার করা যায়?
জাকিয়া ইসলাম: শিক্ষার্থীদের শেখানোর সময় গল্পের মাধ্যমে সৃজনশীল বিষয়গুলো জানানো যায়। পাশাপাশি পৃথিবীতে প্রতিদিন যে নতুন নতুন আবিষ্কার হচ্ছে, সে সম্পর্কেও তাদের আগ্রহ জাগানো দরকার। পড়ানোর টপিকের সঙ্গে সম্পর্কিত অতীতের কোনো ঘটনা বা প্রাসঙ্গিক বইয়ের গল্প তুলে ধরা যেতে পারে। কখনো খেলার ছলেই শেখানো যেতে পারে বিষয়টি। আসলে শ্রেণিকক্ষে প্রবেশের পর শিক্ষার্থীদের মানসিক অবস্থা ও পরিস্থিতি বুঝে শিক্ষক ঠিক করেন কোন পদ্ধতিটি সবচেয়ে কার্যকর হবে।
জাগো নিউজ: কীভাবে নিশ্চিত হওয়া যায় যে বাচ্চারা বিষয়টি শুধু মুখস্থ করেনি, সত্যিই বুঝেছে?
জাকিয়া ইসলাম: শ্রেণিতে পড়ানোর সময় জানার চেষ্টা করতে হবে যে, বিষয়টা সম্পর্কে তাদের চিন্তা ভাবনা কী, তার পরিবেশের সঙ্গে বিষয়টার মিল আছে কিনা, তারা রিলেট করতে পারছে কিনা? এগুলো খেয়াল করলেই বোঝা যাবে যে, তারা শুধু মুখস্ত করে নিচ্ছে, নাকি বিষয়গুলো ভেতর থেকে বুঝতে পারছে।
জাগো নিউজ: পড়ার পাশাপাশি ভালো আচরণ ও নৈতিক শিক্ষা কীভাবে শেখানো যেতে পারে?
জাকিয়া ইসলাম: আমাদের পরিবর্তন শুধু মুখে মুখেই সীমাবদ্ধ, বাস্তবতায় ভিন্ন। আর নৈতিক শিক্ষা শুধু শিক্ষক বা শুধু অভিভাবক শেখাতে পারেন না। এটি একটি সম্মিলিত চেষ্টা। বাবা- মা সহ, অন্যদেরও উচিত বাচ্চাদের এ বিষয়টা শেখানো। যেমন, যার যার ধর্মীয় বিষয়গুলো মানা, বিভিন্ন বাসার কাজে শিশুদের সংযুক্ত করা, তার মতামত নেয়া এবং গুরুত্ব দেয়া। সেই সঙ্গে অভিভাবকের কথা এবং কাজের মধ্যে মিল আছে কি না, এটাও গুরুত্বপূর্ণ।
জাগো নিউজ: গল্প, গান, ছবি বা নাটক— এগুলো কি শেখার প্রক্রিয়ায় সহায়ক? কীভাবে?
জাকিয়া ইসলাম: হ্যাঁ, আামাদের চারপাশে ঘটে যাওয়া বিষয়গুলো নিয়ে গল্প, গান, নাটক তৈরি হয়। ফলে এটা মনের মধ্যে একটা পরিবর্তন নিয়ে আসে, যা শেখার পরিবেশ তৈরি করে ।
জাগো নিউজ: যখন কোনো শিশু পড়তে আগ্রহ দেখায় না, তখন তাকে অনুপ্রাণিত করতে কী করা যেতে পারে?
জাকিয়া ইসলাম: তার পছন্দের ব্যক্তির উদাহরণ দিয়ে তাকে বোঝানো যেতে পারে। কারণ শিশুরা অনুকরণ করতে চায়্ সামনে একজন রোলমডেল দাঁড় করালে বুঝিয়ে বলা সহজ হয়।
জাগো নিউজ: আপনি কি মনে করেন বাড়ির পরিবেশ শিশুর শেখার ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলে?
জাকিয়া ইসলাম: অবশ্যই। বাসার পরিবেশ শিশুর শিক্ষার ওপর সবচেয়ে বেশি প্রভাব বিস্তার করে। তাই বাবা-মায়ের উচিত সকল কাজ তাদের সঙ্গে নিয়ে করা। যেমন- নাস্তা বানানো, খাবার খাওয়া, টেবিল ম্যানার, খাওয়ার পর টেবিল পরিষ্কার করা, গুছিয়ে রাখা ইত্যাদি। কারণ এগুলোও শিক্ষার অংশ।
জাগো নিউজ: অভিভাবকদের প্রতি আপনার পরামর্শ কি শিশুদের পড়াশোনায় সাহায্য করার জন্য?
জাকিয়া ইসলাম: প্রতিদিন স্কুলে কী শিখেছে, তা জানুন। তার কোনো সমস্যা হচ্ছে কি না বা হোমওয়ার্ক শেষ করেছে কি না - খোঁজ নিন।
এএমপি/জেআইএম