ধূমপান ছাড়তে চাইলে সময় দিন, আসক্তি কাটান সহজভাবে
বন্ধুদের আড্ডায় নিজেকে বড় দেখানোর কৌতূহল, চাপ, বা কেবল অ্যাডভেঞ্চারের খোঁজে তরুণদের মধ্যে ধূমপানের প্রবণতা অন্য বয়সের তুলনায় বেশি থাকে। অনেকেই প্রথমে শুরু করেন চাপে। কিন্তু অল্প বয়সের এই অভ্যাস কখন নেশায় পরিণত হয়, তা আমরা নিজেরাই বুঝতে পারি না।
আমেরিকান লাইব্রেরি অব মেডিসিনের এক গবেষণা অনুযায়ী, আমেরিকার বেশির ভাগ ধূমপায়ী তাদের প্রথম সিগারেট খায় ১৮-২৫ বছরের মধ্যে। এখন ভাবুন, পুরো বিশ্বের মানুষ এই বয়সে ধূমপানের সঙ্গে পরিচিত হচ্ছে। হাজার ক্ষতির কথা জেনেও অনেকেই ছাড়তে পারছেন না। আমাদের চারপাশেই এমন অনেক উদাহরণ দেখা যায়।
ধূমপানের নেপথ্যে কারণ
ধূমপানের কারণ ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে-মানসিক চাপ, নির্দিষ্ট পরিস্থিতি বা বন্ধুদের প্রভাব। তাই প্রথমে নিজের মধ্যে বোঝার চেষ্টা করুন, কেন আপনি ধূমপান করছেন। কোন সময় বা পরিস্থিতি আপনার ইচ্ছাকে ট্রিগার করে?
ধূমপান ছেড়ে দেওয়াটা কি সহজ
সিগারেট খাওয়া ছেড়ে দেব বলা যতটা সহজ, বাস্তবে ততটা কঠিন। এটি শারীরিক ও মানসিক উভয় দিক থেকে একটি চ্যালেঞ্জ। তাই ধূমপান ছাড়ার জন্য ধৈর্য এবং পরিকল্পনা প্রয়োজন। আসুন জেনে নেওয়া যাক কীভাবে ধূমপান ছাড়তে পারেন-
১. হঠাৎ না করে ধীরে ধীরে কমানো
অনেকেই হঠাৎ ধূমপান ছাড়ার চেষ্টা করেন, কিন্তু এটি কার্যকর হয় না। হঠাৎ ছাড়লে দুর্বল মুহূর্তে আবার সিগারেট খেতে পারেন। এছাড়া নিকোটিনের অভাবে মানসিক চাপ বেড়ে যায়। তাই ধীরে ধীরে সংখ্যা কমানোই ভালো। যদি দিনে ১০টি সিগারেট খান, প্রথম সপ্তাহে ৮টি খান, পরের সপ্তাহে ৫টি, তারপর ২টি। চতুর্থ সপ্তাহে দিনে ১টি বা একেবারেই না খাওয়ার চেষ্টা করুন। এইভাবে ধাপে ধাপে কমালে ধূমপান ত্যাগ করা সহজ ও দীর্ঘস্থায়ী হয়।
২. পরিবেশকে পরিবর্তন করুন
মনে রাখতে হবে, ধূমপান ত্যাগ একটি যুদ্ধে নামার মতো। এখানে কোনো দুর্বলতা চলবে না। কাপড়চোপড়ে লেগে থাকা সিগারেটের গন্ধ আপনাকে আবার টানে দিতে পারে, তাই কাপড়চোপড় ধুয়ে পরিষ্কার করুন এবং অ্যাশ ট্রে ফেলে দিন।
যেসব বন্ধুরা ধূমপান করে, সাময়িকভাবে তাদের সঙ্গে দেখা এড়িয়ে চলুন। এমন জায়গায় যাওয়া থেকেও বিরত থাকুন যেখানে সবাই সিগারেট খায়। গন্ধ নাকের কাছে এলে বা অন্য কাউকে ধূমপান করতে দেখলে ইচ্ছা বাড়ে, তখন গাম বা চকলেট চিবাতে পারেন।
৩. নিজের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করুন
ব্রেইন কখন সিগারেট চাইতে পারে? পরীক্ষার চাপের সময়, গভীর রাতে দুঃখের গান শোনার সময়, অথবা দুপুরের খাবারের পর-এই সময়গুলোতে সতর্ক থাকুন। প্রয়োজনে চাপ এড়িয়ে চলুন বা বিকল্প হিসেবে চুইংগাম, যষ্টিমধু বা আদা-লবঙ্গ চিবাতে পারেন।
সিগারেট ছাড়ার সময় মাথাব্যথা, অস্থিরতা বা বিষণ্নতার মতো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। তাই ধৈর্য ধরে এটি মোকাবেলা করতে হবে।
ধূমপান ছাড়ার মনস্থির করা মানে অর্ধেক পথ অতিক্রম করা। নিজেকে সামলে রাখতে পারলেই চিরদিনের মতো মুক্তি মিলবে। ধৈর্য, পরিকল্পনা ও সচেতনতার সংমিশ্রণে সফল হওয়া সম্ভব।
সূত্র: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, আমেরিকান লাইব্রেরি অব মেডিসিন, টোবাকো ফ্রি লাইফ
আরও পড়ুন:
মাইগ্রেন শুধু মাথায় নয়, পেটেও হতে পারে
অঙ্কুরিত আলুতে স্বাস্থ্যঝুঁকি, জানুন গবেষণা কী বলছে
এসএকেওয়াই/এমএস