রাত জেগে থাকলে ব্লাড সুগার বেড়ে যায় কেন
রাত জেগে থাকা এখনকার সময়ে খুব সাধারণ একটি অভ্যাস। যেন অঘোষিত দায়িত্ব! আবার কাজের চাপ, মোবাইল স্ক্রলিং বা সিরিজ দেখা — সব মিলিয়ে অনেকেই নিয়মিত দেরি করে ঘুমাতে যান।
কিন্তু আপনি কি জানেন, এই অভ্যাস রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে? বিশেষ করে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য রাত জাগা মারাত্মক ক্ষতিকর হতে পারে।
গবেষণায় দেখা গেছে, যখন আমরা কম ঘুমাই, শরীরের জৈবিক ঘড়ি বা সার্কাডিয়ান রিদম বিঘ্নিত হয়। এই রিদম শরীরের হরমোনের ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণ করে — বিশেষ করে ইনসুলিন হরমোন, যা রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে। ঘুমের অভাবে ইনসুলিন কম কার্যকর হয়, ফলে শরীর রক্ত থেকে গ্লুকোজ যথাযথভাবে শোষণ করতে পারে না। এর ফলেই ব্লাড সুগার বেড়ে যায়।
আরেকটি কারণ হলো কর্টিসল নামের ‘স্ট্রেস হরমোন’। রাত জেগে থাকলে কর্টিসলের মাত্রা বেড়ে যায়, যা শরীরকে বাড়তি গ্লুকোজ তৈরি করতে উৎসাহিত করে। তাই আপনি না খেয়েও সকালে রক্তে শর্করার মাত্রা বেশি দেখতে পারেন।
রাত জাগা মানে শুধু কম ঘুম নয়, বরং খাওয়ার অভ্যাসেও বিশৃঙ্খলা তৈরি হওয়া। অনেকে রাত জেগে হালকা খাবার, কফি বা মিষ্টি জাতীয় কিছু খান, যা ইনসুলিনের ভারসাম্য আরও নষ্ট করে দেয়। একই সঙ্গে ঘুমের ঘাটতি শরীরে ক্লান্তি এনে শারীরিক পরিশ্রম কমিয়ে দেয় — ফলে ক্যালরি খরচও কমে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে পর্যাপ্ত ঘুম ঠিক ততটাই গুরুত্বপূর্ণ, যতটা সঠিক খাবার ও ব্যায়াম। প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে যাওয়া ও ৭–৮ ঘণ্টা গভীর ঘুম নেওয়ার অভ্যাস তৈরি করলে ইনসুলিনের কাজ স্বাভাবিক থাকে, ফলে ব্লাড সুগারও নিয়ন্ত্রণে থাকে।
রাত জাগা অভ্যাসে পরিণত হলে শুধু ডায়াবেটিস নয়, উচ্চ রক্তচাপ, স্থূলতা ও হৃদরোগের ঝুঁকিও বেড়ে যায়। তাই স্বাস্থ্য ভালো রাখতে ঘুমই হতে পারে আপনার প্রতিদিনের চিকিৎসা।
সূত্র: স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি স্লিপ মেডিসিন, আমেরিকান ডায়াবেটিস অ্যাসোসিয়েশন, হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুল
এএমপি/জিকেএস