ভিডিও EN
  1. Home/
  2. সাহিত্য

আমিনুল ইসলামের কবিতা

আকাশ-যাত্রীর ডায়েরি

সাহিত্য ডেস্ক | প্রকাশিত: ০১:১৯ পিএম, ১৭ জুলাই ২০২৫

লাগেজ হাতে সক্রিয় প্রত্যাবর্তনের দিন—কয়টা বাজে! আর কতক্ষণ...!
কিন্তু পরিযায়ী তৃষা গোটাতে চায় না পাখা;
গোটানোর শপথ ছিল কি? মনে নেই।
ওদিকে বিভাজিত আকাশ বন্ধ করেছে নীলিমার দ্বার।
সেখানে এখন ঝড়ের পাহারা,—বজ্রপাতের চোখ।
আরও যোগ দিয়েছে টাইফুন-রাফায়াল-বি-টু!
উৎসুক প্রাণে সহযাত্রীদের চোখে খেলা করছে চেনা গন্তব্যের আলো;
তাদের ডানায় প্রতিধ্বনিত রাডারের সফলতায় বেজে ওঠা
ঘণ্টা থেমে যাওয়ার ধ্বনি আর ওদিকে ডানার আভাসে লেখা হচ্ছে
নিবিড় চলার অনুচ্চারিত কাহিনি।
আকাশের পথে শীতের পাখির মতো তারাও কি রেখে যায়
পুনরাবৃত্তির আভাস?
জানি না আমি—জানে না জাকার্তার সমুদ্রচারী হাওয়া।
আকাশে নীড় বাঁধার প্লট নেই ইস্টার্ন হাউজিং লিমিটেড
কিংবা বসুন্ধরা গ্রুপের,
—একথা শুনিয়েছিল যমুনাপাড়ের সাঁঝ,
বিশ্বাসের ভয়ে তখন তা কানে তোলেনি দোলায়িত দিন।
শুধু খড়বিচালি ঠোঁটে নিয়ে আকাশের এক প্রান্ত হতে
আর এক প্রান্তে ছুটে যাওয়া।
নীলিমার ডাক শূন্যতার মতো,
তাই নীড়ের স্বপ্ন ভেঙে গেলেও থেমে যায় না আহত ডানার ইঞ্জিন।

রোদ বাতায়নে স্বপ্ন সম্মোহন—নীল সমুদ্রের তিমি চত্বরে
দুধসাদা সৌন্দর্যের উৎসব—সুর ও তাল, নাচ ও দোলা...
কে বলে যে সাদা কোনো রং নয়!
আহা নীল-সাদা আকাশের নিচে সাদাডানা পরী
উদ্ভিন্ন যৌবনা সায়রা বানু
তবলার তালে তালে নেচে যায় দৌড়মাখা পায়ে:
‘যা যা মেরে বাচপান...’
সাদা দোপাট্টায় উড়ু উড়ু সাদা সাদা ঢেউ ঢেউ...
বাতাসের ঝাপটা খেয়ে
উড়ে এসে আবার জড়িয়ে যায় মুখে,—বুকে... কোমরে...

সেদিকে খেয়াল নেই হুর-পরীদের পার্থিব সংস্করণ
সিঙ্গাপুরী বিমানবালাদের;
তাদের প্রভাতরঙের মুখমণ্ডল আর রাতরঙা চুল চাররঙা চিত্রকল্পে
ডাক দিয়ে যায় স্বপ্নিল চোখের আঙিনায়;
মুগ্ধ দৃষ্টির সামনে বুক ও নিতম্ব রচেছে
প্রশিক্ষিত যৌবনের ছন্দিত মিতালি;
মোহনীয়তার নদী থেকে আছড়ে পড়ে না পাড়ভাঙা ঢেউ;
বিচ্ছুরিত রূপের রোশনাই পাহারা দিয়ে রেখেছে অদৃশ্য বেল্ট;
দুচোখে কোনো শারাব নেই,—সব শারাব হাসছে কাচের বোতলে।
আচ্ছা, ওই চোখগুলি কি ভুলে গেছে
সবুজ ভুলের বর্ণমালা আর কান্নার নদীতে স্নানের উৎসব!

এইসব সীমায়িত উঠোনের উপরে প্রান্তহীন আকাশ;
বোয়িংয়ের ইঞ্জিনিয়ার কি জানে ইঞ্জিনে আর কত গতি যোগ করলে
ডানাগুলো আমাদের নিয়ে যাবে জান্নাতের বিমানবন্দরে,
—একথা ভাবতেই পানীয়ের পসরা নিয়ে বিনয়ী বিমানবালা
মেলে ধরে ডালা: ওয়াইন স্যার? বিয়ার অর জুস?
আমার যা চায় সেটা কীভাবে বুঝবে ওই সিঙ্গাপুরী মেয়ে
যে কোনোদিনও পড়েনি
ওমর খৈয়ামের রুবাইয়াত কিংবা সৈয়দ মুজতবার শবনম!

তো তোমরা যারা মৃত্তিকার গন্ধ নিয়ে আকাশের পরিযায়ী মেহমান,
তারাই জড়িয়ে আবেগের উথাল পাথাল কোমর।
তোমরাও তো যাবে। তো যাও হে ডানার সাথিরা।
তোমাদের ডানায় আজ ডানা ঘষাতে গেলে
উথলে উঠবে মন্থিত বেদনার ফেনা।
কষ্ট হবে। তার চেয়ে এই ভালো—
তোমরাও নিয়ে যাও ডানায় বেঁধে সমবেত ডানার স্মৃতি।
তোমাদের কণ্ঠস্বরে আমি ছিলাম ভুলে-যাওয়া কবির বেদনা;
তোমাদের হাসির জোছনায় আমি ছিলাম ডুবে-যাওয়া চাঁদের আলো;
তোমাদের সুখস্বপ্নে আমি ছিলাম ভোর-বাতাসের অন্তরঙ্গ আভাস।

শিল্পী, শাহীন, শাহনাজ, বকুল,—তোমাদের কাকে যে ভালোবাসিনি,
কপট সৌজন্যের বারোটা বাজিয়ে হয়তো সেকথা বলা যাবে
হৃদয়-ঘেঁষা ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টের কানে।
কিন্তু যাকে ভালোবাসা, তার নামটি ইথারের কানে দিয়ে যাবো কি না
সে কথা ভাবতেই দেখি: ছেড়ে এসেছি দুধসাদা বাগান
শূন্যের চাতালে গতির জোয়ার;
জোয়ারের ওপর আমার পা।
ছুটছে ফ্লাইট—ছুটছে ক্যাপ্টেন—ছুটছি আমিও...
অধরা দূরত্ব বজায় রেখে
আমার পেছনে পেছনে ছুটে আসে ভালোবাসার দিগন্ত।
স্থির শুধু তিনজন হুর-পরী;
তারা দেখে না—বালি-উতারা-কালিমান্তাম
ছুঁয়ে আসা আমার দুচোখে ঘোর রচেছে কীর্তনখোলার একজোড়া ঢেউ।

এসইউ/এএসএম

আরও পড়ুন