ভিডিও EN
  1. Home/
  2. সাহিত্য

ফকির ইলিয়াসের পাঁচটি কবিতা

প্রকাশিত: ০৪:৫৬ এএম, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

অনার্য ভোরের দোসর

মলিন কলমে লেখা উজ্জ্বল অক্ষরগুলো হেসে ওঠে।
পদ্মাকাহিনি পড়ে জেনে যাই আমার প্রপিতামহ ছিলেন
অনার্য ভোরের দোসর। তার কাঁধে নেচে উঠতো মেঘ, মনীষা
আর ময়ুরের পেখম। একেকটি দুপুর, তার বাহুর কাছে চির
নত হয়ে থাকতো বশ্যবাতাস হয়ে । তিনি বাঁশি হাতে নিয়ন্ত্রণ
করতেন উত্তরের উষ্ণ উজান।
 
মাটিকাহিনী পড়ে জেনে যাই আমার মাতামহীর গল্পঘটনা।
আশ্বিনের বিকেলে দাওয়ায় বসে ভাপাপিঠা খেতে খেতে
তিনি বলে যেতেন ,তার বকুলদিঘীতে কীভাবে লেজ দেখাতো
পুষ্ট চিতল।
 
ঐতিহ্যের ঐশ্বর্য নিয়ে জলবাস্তব ঝড়ের জাতকেরা কীভাবে
এনে দিয়েছিল আমাদের মুক্তিসূর্য, একাত্তরের বিকেলে
আমরা কীভাবে হয়েছিলাম বিজয়ী - সে গল্প বলতে বলতে
আমার মা ,
শুধুই কাঁদতেন .....
আর বলতেন , সাজু , ও আমার সাজু তুই কী আর কোনোদিন
ফিরে আসবি না বাপ !
 

বোবাবৃক্ষের ফুল
 
হাতের মুঠোয় ভালোবাসার উষ্ণতা পরখ করতে করতে
ধরে রাখি বিধানের ধন। সম্পদ বলতে যা আছে , তা
কেবল অশ্রুর আখ্যান। আর কিছু ধারণের দিন । হতে
পারে রাতও আমার সারথি। একটা বোবাবৃক্ষের ফুল
 
যারা কথা বলতে পারে না , কেবলই সুবাস ছড়ায়।
 
লিখে রাখি নদীদের ঘ্রাণ। মাঝে মাঝে বোতলের আলোতে,
দেখি তরল ব্যথার বিনয়। কেউ তুলে নেয়নি কোলে। কেউ
বলেনি কাছে এসে, এ উপসর্গ নিরাময় হোক। এই কান্নার
 
কৃপায়, যেভাবে বেঁচে থাকে জীবন প্রত্যন্ত প্রভায় ।

নষ্ট চাঁদের আলোয়

সবুজ চাদরখানি দূরে পড়ে থাকে। সন্ধ্যা ঘনায়
ধর্ষিতা কিশোরীর মুখ দেখে চিনে যাই ঘাতকের ছায়া।
যারা এই নগরকে হত্যা করতে এসেছিল, তাদের পলায়নপথ।
দেখে রাখি , দেহের বেআব্রু আলোতে নষ্ট সূর্যের লুকোচুরি।
প্যাগোডার পতাকায় লোমহর্ষক ফাদারের ছবি।
 
লোকটি আমারও ধর্মপিতা ছিল। জাতপাতের কংক্রিট সড়কে
দাঁড়িয়ে আমিও হতে চেয়েছিলাম চেকস্যান্ড স্ট্রিটের ডরাথি,
কেশবনগরের আলেয়া কিংবা বোলপুরের বিজয়া সান্যাল।
 
হতে পারিনি কিছুই। একটি ঝরাপাতা হয়ে রাস্তায় পড়ে আছি।
আমাকে বারবার মাড়িয়ে যাচ্ছে অজগর পিতৃসাপ ....
 
আরেক জন্মধ্বনি

বিক্রীত নোনাজল হাতে নিয়ে দেখবো- সবই ভূল।
আমাদের কিছু সাক্ষর থেকে যাবে উজ্জ্বল ইথারে
লিঙ্গবৈষম্যের ভোর এসে নির্ণয় করে যাবে সকল
শব্দের দূরত্ব । আর যারা শ্রোতা তারা কেবলই শুনে
যাবে নদীদের কোলাহল, পৃথিবীর আরেক জন্মধ্বনি।
 
রূপের মহিমা নিয়ে একটি দ্রুতগামী তারা ক্রমশঃ
মিশে যাবে আকাশের বিরহসীমানায়। তবে কি মিলন
রত্নপুঞ্জ ছিল দাঁড়িয়ে, আমাদের সাহসের বিপরীতে
নির্মাতা রোদের কিরণ কেবলই এঁকেছিল রেখা এই
যোগাসনে, এই রমণশৃঙ্গারের বিনিদ্র নয়নে ...
 
পৃথিবীর তৃতীয় তৃষ্ণা

হাত ধরে বলেনি- ভালোবাসি লতায় জড়ানো ভোর,
এভাবে আর কোনোদিন শোনায়নি কেউ পাহাড়ের গান
কোলাহল ভেঙে এসে নাড়েনি কড়া, কামনার কথামালায়
পৃথিবীর তৃতীয় তৃষ্ণা , ছোঁয়ায়নি কেউ। শুধু কুয়াশা ছিল
ক্ষুধার, এক বিন্দু জলও এগিয়ে দেয়নি এই পদ্মাপাতাল,
তবুয়ো ভালোবাসার বিষ্ণু আলোয় জ্বালিয়েছি শিখাসমুদ্র।
 
রপ্ত রুপোর সিকি মুঠোয় পুরে , দাঁড়িয়ে থেকেছি ডাকঘরের
অক্লান্ত লাইনে - মোহর চাই। সীলমোহর। চিঠিটা; পৌঁছবে
তো প্রাপকের ঠিকানায় ! এমন ভাবনাবিভায় কাটিয়েছি ভোর।
 
এখন তা গল্প মনে হয়। কিছুই করিনি জমা। শুধুই অপচয়
উড়ে যাও নিমফুল,বলো সেই নদীটিরে- যে কেবল ছুঁয়েছে হৃদয় !

এইচআর