ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

২০২৫ সালে বেড়েছে নারী ও শিশু নির্যাতন-চুরি-খুন-অপহরণ

তৌহিদুজ্জামান তন্ময় | প্রকাশিত: ০৮:৩৭ এএম, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫

২০২৫, আলোচিত ও উদ্বেগজনক বছর হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে ক্যালেন্ডারের পাতায়। শিশু ধর্ষণ থেকে শুরু করে প্রকাশ্যে খুন, অপহরণ, পারিবারিক সহিংসতা ও চাঁদাবাজিকে কেন্দ্র করে হত্যাকাণ্ড কোনো কিছুই যেন বাদ পড়েনি এবছর। চুরি, ছিনতাই আর ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে অহরহ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিও ও তথ্য দ্রুত ছড়িয়ে পড়ায় অপরাধের অনেক ধরন মুহূর্তে আলোচনায় চলে আসে। এসবের মধ্যে বেশিরভাগ ঘটনার রহস্যই উদঘাটন হয়নি। আসামিরা থেকেছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। ফলে বেড়েছে অপরাধপ্রবণতা।

মামলা বেড়েছে ১০১২২টি

বিভিন্ন অপরাধে ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ১১ মাসে এক লাখ ৫৮ হাজার ৩৮৩টি মামলা হয়েছে। একই সময়ে ২০২৫ সালে ১০ হাজার ১২২টি মামলা বেশি হয়েছে।

চলতি বছরের ১১ মাসে বিভিন্ন অভিযোগে মামলা হয়েছে এক লাখ ৬৮ হাজার ৫০৫টি। এর মধ্যে জানুয়ারিতে ১৪ হাজার ৫৭২টি, ফেব্রুয়ারিতে ১৩ হাজার দুটি, মার্চে ১৬ হাজার ২৪০টি, এপ্রিলে ১৬ হাজার ৩৬৮টি, মে মাসে ১৬ হাজার ৪৫টি, জুনে ১৫ হাজার ১৬৭টি, জুলাইয়ে ১৫ হাজার ৩৮৯টি, আগস্টে ১৫ হাজার ৬৫৬টি, সেপ্টেম্বরে ১৫ হাজার ৪৩১টি, অক্টোবরে ১৬ হাজার ১৭০টি এবং নভেম্বরে ১৪ হাজার ৪৬৫টি মামলা হয়েছে।

২০২৫ সালে বেড়েছে নারী ও শিশু নির্যাতন-চুরি-খুন-অপহরণ

সবচেয়ে বেশি বেড়েছে নারী ও শিশু নির্যাতন

২০২৪ সালে জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ১১ মাসে নারী ও শিশু নির্যাতনের ১৬ হাজার ৩৬৬টি মামলা হয়। এর মধ্যে জানুয়ারিতে এক হাজার ৪৩টি, ফেব্রুয়ারিতে এক হাজার ৩৭১টি, মার্চে এক হাজার ৫০৯টি, এপ্রিলে এক হাজার ৬২৩টি, মে মাসে এক হাজার ৭৬৭টি, জুনে এক হাজার ৬৮৯টি, জুলাইয়ে এক হাজার ৭০২টি, আগস্টে এক হাজার ৭২টি, সেপ্টেম্বরে এক হাজার ৫৭৮টি, অক্টোবরে এক হাজার ৫৬০টি ও নভেম্বরে এক হাজার ৪৫২টি নারী ও শিশু নির্যাতনের মামলা হয়েছে।

আরও পড়ুন:

শিশু আছিয়া ধর্ষণ ও হত্যার বিচার চেয়েছিল গোটা দেশ
ব্যবসায়ীদের কড়া বার্তা দিতেই সোহাগকে হত্যা করে বুনো উল্লাস
ইন্টারপোলে নাম থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসী কে এই সুব্রত বাইন?

অন্যদিকে ২০২৫ সালের প্রথম ১১ মাসে ২০ হাজার ৬৯১টি নারী ও শিশু নির্যাতনের মামলা হয়েছে। এর মধ্যে জানুয়ারিতে এক হাজার ৪৪০টি, ফেব্রুয়ারিতে এক হাজার ৪৩০টি, মার্চে দুই হাজার ৫৪টি, এপ্রিলে দুই হাজার ৮৯টি, মে মাসে দুই হাজার ৮৭টি, জুনে এক হাজার ৯৩৩টি, জুলাইয়ে দুই হাজার ৯৭টি, আগস্টে ১ হাজার ৯০৪টি, সেপ্টেম্বরে এক হাজার ৯২৮টি, অক্টোবরে এক হাজার ৯৮৫টি ও নভেম্বরে এক হাজার ৭৪৪টি নারী ও শিশু নির্যাতনের মামলা হয়েছে। গত বছরের চেয়ে চলতি বছরের ১১ মাসে নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনায় চার হাজার ৩২৫টি মামলা বেশি হয়েছে।

বেড়েছে চুরি

২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ১১ মাসে সাত হাজার ৯২৬টি চুরির মামলা হয়েছে। এর মধ্যে জানুয়ারিতে ৭৪৯টি, ফেব্রুয়ারিতে ৮২০টি, মার্চে ৮৬৫টি, এপ্রিলে ৮১২টি, মে মাসে ৭২৬টি, জুনে ৭৪৫টি, জুলাইয়ে ৭৮৫টি, আগস্টে ৩৮১টি, আগস্টে ৬০৫টি, অক্টোবরে ৭২২টি ও নভেম্বরে ৭১৬টি চুরির মামলা হয়েছে।

২০২৫ সালের জানুয়ারিতে ৭৯৭টি, ফেব্রুয়ারিতে ৬৭৩টি, মার্চে ৮৬৬টি, এপ্রিলে ৭১৫টি, মে মাসে ৭৬৫টি, জুনে ৭২২টি, জুলাইয়ে ৮৪৯টি, আগস্টে ৯৫৬টি, সেপ্টেম্বরে ৮৮৮টি, অক্টোবরে ৯৩১টি এবং নভেম্বরে ৮৪২টি চুরির মামলা হয়। ১১ মাসে চুরির ঘটনায় মামলা হয়েছে নয় হাজার চারটি। অর্থাৎ গত বছরের চেয়ে এ বছরের ১১ মাসে এক হাজার ৭৮টি বেশি চুরির মামলা হয়েছে।

২০২৫ সালে বেড়েছে নারী ও শিশু নির্যাতন-চুরি-খুন-অপহরণ

খুনের ঘটনায় ১১ মাসে যত মামলা

২০২৫ সালের জানুয়ারিতে ২৯৪ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৩০০ জন, মার্চে ৩১৬ জন, এপ্রিলে ৩৩৬ জন, মে মাসে ৩৪১ জন, জুনে ৩৪৪ জন, জুলাইয়ে ৩৬২ জন, আগস্টে ৩২১ জন, সেপ্টেম্বরে ২৯৭ জন, অক্টোবরে ৩১৯ জন এবং নভেম্বরে ২৭৯ জন খুনের ঘটনায় মামলা হয়েছে। অর্থাৎ ১১ মাসে তিন হাজার ৫০৯টি হত্যা মামলা হয়েছে।

আরও পড়ুন:

সুব্রত বাইনের মেয়ে খাদিজা ৫ দিনের রিমান্ডে
থামছে না বিচারবহির্ভূত হত্যা, ১০ মাসে ঝরেছে ২৯ প্রাণ
জুনে ধর্ষণের শিকার ৬৫ নারী-শিশু, হত্যা ৬৮

অন্যদিকে ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ১১ মাসে হত্যা মামলা হয়েছিল তিন হাজার ২২৮টি। এ বছরের ১১ মাসে ২৮১টি বেশি হত্যা মামলা হয়েছে।

অন্যদিকে, আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তথ্য বলছে, গত ১১ মাসে দেশে রাজনৈতিক কারণে খুন হন ৯৮ জন।

যদিও পুলিশ সদর দপ্তর বলছে, ২০০৯ থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত যারা মামলা করতে পারেনি তাদের কিছু মামলা এখন হয়েছে।

২০২৫ সালে বেড়েছে নারী ও শিশু নির্যাতন-চুরি-খুন-অপহরণ

অপহরণ বেড়ে দ্বিগুণ

২০২৪ সালের প্রথম ১১ মাসে ৫৬৮টি অপহরণের মামলা হয়। এর মধ্যে জানুয়ারিতে ৫১টি, ফেব্রুয়ারিতে ৪৩টি, মার্চে ৫১টি, এপ্রিলে ৫৫টি, মে মাসে ৫০টি, জুনে ৩১টি, জুলাইয়ে ৩২টি, আগস্টে ২৭টি, সেপ্টেম্বরে ৬৫টি, অক্টোবরে ৯৬টি ও নভেম্বরে ৬৭টি অপহরণের মামলা হয়েছে।

অন্যদিকে, ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে ১০৫টি, ফেব্রুয়ারিতে ৭৮টি, মার্চে ৮৩টি, এপ্রিলে ৮৮টি, মে মাসে ৮২টি, জুনে ৮০টি, জুলাইয়ে ১০৯টি, আগস্টে ৯০টি, সেপ্টেম্বরে ৯৬টি, অক্টোবরে ১১০টি ও নভেম্বরে ৯৩টি অপহরণের মামলা হয়েছে। ১১ মাসে অপহরণের মামলা হয়েছে এক হাজার ১৪টি। গত বছরের চেয়ে চলতি বছর ৪৪৬টি মামলা বেশি হয়েছে।

বছরজুড়ে সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা

২০২৫ সালের মার্চ মাসে, মাগুরায় বোনের বাড়ি বেড়াতে গিয়ে ধর্ষণের শিকার হয় আট বছর বয়সী এক শিশু। পরে তার মৃত্যু হয়। শিশুটির ওপর নির্মম এই নির্যাতনের ঘটনা ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়। বিক্ষোভে ফেটে পড়ে সাধারণ মানুষ। শুরু হয় বিক্ষোভ-সমাবেশ। বছরের শুরুতে এটি ছিল সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা।

আরও পড়ুন:

হাদির হত্যার বিচারের দাবিতে উত্তাল ঢাকা
হাদি যাচ্ছিলেন রিকশায়, গুলি করা হয় মোটরসাইকেল থেকে
বিক্ষুব্ধ প্রাণের পথ মিলেছে হাদির জানাজায়

এরপরও চলতে থাকে এ ধরনের ঘটনা। ৮ মার্চ রাতে ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ এলাকায় সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হন অন্তঃসত্ত্বা এক নারী। একই রাতে নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলায় ১৪ বছরের এক কিশোরীকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে নগ্ন ভিডিও ধারণ এবং পরে সেই ভিডিও দেখিয়ে ধর্ষণচেষ্টা করেন মেয়েটির সৎবাবা। ১০ মার্চ রাঙামাটি জেলা শহরে তিন বছরের এক শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে সুভাষ কুমার চাকমা (৬০) নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ডু উপজেলায় চকলেটের প্রলোভন দেখিয়ে সাড়ে চার বছর বয়সী এক শিশুকে ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগী শিশুর মা বাদী হয়ে থানায় মামলা করেন। এ ঘটনায় ১০ মার্চ বিকেলে ১৫ বছর বয়সী অভিযুক্ত কিশোরকে গ্রেফতারও করে পুলিশ।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) ও জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের (ইউএনএফপিএ) ২০২৪ সালে করা এক জরিপে উঠে এসেছে, দেশের ৭০ শতাংশ নারী তাদের জীবদ্দশায় অন্তত একবার হলেও শারীরিক, যৌন, মানসিক ও অর্থনৈতিক সহিংসতার শিকার হন। ২০২৪ সালে বাংলাদেশে ৪১ শতাংশ নারী নানান রকম সহিংসতার শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে ৮ দশমিক ৯ শতাংশ যৌন সহিংসতাজনিত।

২০২৫ সালে বেড়েছে নারী ও শিশু নির্যাতন-চুরি-খুন-অপহরণ

পুরান ঢাকায় পাথর মেরে ব্যবসায়ীকে নৃশংসভাবে হত্যা

পুরান ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয় ভাঙারি পণ্যের ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগ নামে এক ব্যক্তিকে। হত্যার আগে ডেকে নিয়ে তাকে পিটিয়ে এবং ইট-পাথরের টুকরা দিয়ে আঘাত করে মাথা ও শরীরের বিভিন্ন অংশ থেঁতলে দেওয়া হয়। একপর্যায়ে তাকে বিবস্ত্র করা হয়। তার শরীরের ওপর উঠে লাফায় কেউ কেউ। ওই ঘটনার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ একদিন পর ভাইরাল হলে দেশজুড়ে চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে সরব হয় সবাই। এ ঘটনা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া তৈরি হয় সে সময়ে।

২০২৫ সালে বেড়েছে নারী ও শিশু নির্যাতন-চুরি-খুন-অপহরণ

চাপাতি দিয়ে কোপানোর ভিডিও ভাইরাল

বছরের শুরুতে ১০ জানুয়ারি রাতে ঢাকার এলিফ্যান্ট রোডে ব্যস্ত সড়কে প্রকাশ্যেই ২০-২৫ জন দুর্বৃত্তের এক থেকে দেড় মিনিটের অতর্কিত হামলার শিকার হন এলিফ্যান্ট রোড কম্পিউটার ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি ওয়াহেদুল হাসান দীপু এবং ইপিএস কম্পিউটার সিটির (মাল্টিপ্ল্যান) যুগ্ম সদস্য সচিব এহতেশামুল হক। এ ঘটনার ১০-১২ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। তাতে চাপাতি দিয়ে কোপানোর নৃশংসতা দেখে আঁতকে ওঠে সাধারণ মানুষ। দুর্বৃত্তরা মুখ ঢেকে, হেলমেট পরে চালায় এ হামলা।

ঘটনার পর সামনে আসে ৫ আগস্ট পরবর্তীসময়ে জামিনে ছাড়া পাওয়া অপরাধ জগতের শীর্ষ দুই মাফিয়ার নাম। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর গত ১৫ ও ১৬ আগস্ট কারাগার থেকে জামিনে বের হয় এই দুই সন্ত্রাসী। কারাগারে থাকা অবস্থায়ই তারা নিয়ন্ত্রণ করতো অপরাধ জগৎ।

চরমপন্থিদের উত্থান

২১ ফেব্রুয়ারি ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার রামচন্দ্রপুর গ্রামের শ্মশানঘাট মাঠে চরমপন্থি দুই গ্রুপের মধ্যে গোলাগুলিতে পূর্ববাংলা কমিউনিস্ট পার্টির সাবেক শীর্ষ নেতা, একাধিক হত্যা, চাঁদাবাজি ও ডাকাতি মামলার আসামি হানিফসহ (৫০) তিনজনকে হত্যা করা। হত্যার বিষয়ে চরমপন্থি সংগঠন জাসদ গণবাহিনীর নেতা কালু দায় স্বীকার করে গণমাধ্যমকর্মীদের হোয়াটসঅ্যাপে খুদে বার্তা পাঠান।

চরমপন্থি নেতা কালু পরিচয় দিয়ে পাঠানো বিবৃতিতে বলা হয়, ‘ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা, মাগুরা, কুষ্টিয়া, যশোর, খুলনাবাসীর উদ্দেশে জানানো যাচ্ছে, পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টি নামধারী কুখ্যাত ডাকাত বাহিনীর শীর্ষ নেতা অসংখ্য খুন, গুম, দখলদারি, ডাকাতি, ধর্ষণের অভিযোগে অভিযুক্ত হরিণাকুণ্ডুনিবাসী হানিফ তার দুই সহযোগীসহ জাসদ গণবাহিনীর সদস্যদের হাতে নিহত হয়েছেন। এই অঞ্চলের হানিফের সহযোগীদের শুধরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হলো, অন্যথায় আপনাদের একই পরিণতির মুখোমুখি হতে হবে।

গুলি করে ১৬০ ভরি সোনা ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা

২০২৫ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ১০টার দিকে রাজধানীর বনশ্রী ডি ব্লকের ৭ নম্বর রোডের ২০ নম্বর বাড়ির সামনে সোনা ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেনকে (৪৩) গুলি ও ছুরিকাঘাত করে প্রায় ১৬০ ভরি সোনা ও নগদ এক লাখ টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনাটির ৩১ সেকেন্ডের একটি ভিডিও মুহূর্তেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

চাপাতি ভাড়ায় মেলে ‘ছিনতাই প্যাকেজে’

২০২৫ সালের ১১ জুলাই সকালে শ্যামলীতে ঘটে ছিনতাইয়ের ঘটনা। ছিনতাইকারীরা শুধু টাকা-পয়সা বা ব্যাগই নয়, ভুক্তভোগীর গায়ের জামা ও পায়ের জুতাও ছিনিয়ে নিয়েছে। পুরো ঘটনা ধরা পড়ে সিসিটিভি ক্যামেরায় এবং সেই ভিডিও ফুটেজ ভাইরাল হয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। এ ছিনতাইয়ের ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটনে মেলে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য। ছিনতাইয়ের ঘটনায় আসামি গ্রেফতার হয় এবং ব্যবহৃত মোটরসাইকেল ও চাপাতি উদ্ধার করা হয়।

তদন্ত কর্মকর্তারা বলেন, ছিনতাই চক্রটি চাপাতি ও মোটরসাইকেল ভাড়া দেয় মাঠপর্যায়ে ছিনতাইকারীদের। প্রতিদিন ঢাকার একাধিক এলাকায় চাপাতি আর মোটরসাইকেল ভাড়া নিয়ে ছিনতাই কার্যক্রম চালায় চক্রটি। চাপাতি-মোটরসাইকেলের ভাড়া অগ্রিম পরিশোধ করতে হয় না তাদের, ছিনতাই শেষে মালামাল বিক্রির পর ভাড়া দিতে হয়। এমনকি ছিনতাইয়ের মালামাল বিক্রিও করতে হয় ছিনতাই চক্রের মূলহোতাদের কাছে। সব মিলিয়ে দেওয়া প্যাকেজ।

২০২৫ সালে বেড়েছে নারী ও শিশু নির্যাতন-চুরি-খুন-অপহরণ

বছরের শেষেও দিনদুপুরে গুলি করে হত্যা

১০ নভেম্বর প্রায় ২৯ বছর আগের একটি হত্যা মামলায় ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-২ এ হাজিরা দিতে যান তারিক সাইফ মামুন। ফেরার পথে বেলা ১১টার দিকে আদালতপাড়ার কাছে ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে খুন হন তিনি।

প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ জানায়, হাসপাতালের প্রবেশমুখে হঠাৎ দুই দুর্বৃত্ত তার পেছনে এসে খুব কাছ থেকে একাধিক গুলি চালান। গুলি লেগে ঘটনাস্থলেই তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। এরপর হামলাকারীরা স্বাভাবিক ভঙ্গিতে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।

মোহাম্মদপুরে রিকশা আটকে চাপাতি দিয়ে নারীকে আক্রমণ

এবছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি রাতে অপরাধপ্রবণ এলাকা হিসেবে পরিচিত রাজধানীর মোহাম্মদপুরে একটি রিকশা থামিয়ে দুই তরুণ ছিনতাই করে। রিকশায় এক নারীকে বসে থাকতে দেখা যায় এবং তার পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন বোরকা পরা আরেক নারী। এসময় দাঁড়িয়ে থাকা নারীর দিকে এক ছিনতাইকারীকে চাপাতি হাতে তেড়ে আসতে দেখা যায়। সেখানে আরেক ব্যক্তিকে দেখা যায় ছিনতাইকারীদের সরিয়ে দিতে। এমন ঘটনা ব্যাপক আতঙ্ক ছড়ায় জনমনে।

চাহিদামতো চাঁদা না পেয়ে গুলি

২০২৫ সালের ১০ জানুয়ারি সন্ধ্যায় রাজধানীর ধানমন্ডি-৭ এ মোটরসাইকেলে আসা অস্ত্রধারীরা একটি নির্মাণাধীন ভবনের সামনে পিস্তলের ১০টি গুলি ছোড়ে। একটি ভবনের ফটকে পেট্রোল ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে দেয়, ভেঙে ফেলা হয় সিসি ক্যামেরা। নির্মাণাধীন ভবনগুলো থেকে চাহিদামতো চাঁদা না পাওয়ায় গুলি ছুড়ে হুমকি দিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা।

‘অক্সিলিয়ারি ফোর্স’ নিয়োগ পুলিশের

বছরের শুরুর দিক থেকেই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ক্রমাগত অবনতি হওয়ায় ঢাকায় ঈদের আগে বিভিন্ন মার্কেট, ভবন ও বিপণি-বিতানগুলোতে বেসরকারি নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের ‘অক্সিলিয়ারি ফোর্স’ হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। ঢাকা মহানগর পুলিশ অধ্যাদেশ ১৯৭৬-এর ১০ ধারা অনুযায়ী কমিশনার নিজ ক্ষমতাবলে এই নিয়োগ দেন।

প্রাইমএশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র পারভেজ হত্যাকাণ্ড

প্রাইমএশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের টেক্সটাইল বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র জাহিদুল ইসলাম পারভেজ হত্যাকাণ্ডটি ছিল বেশ আলোচিত। হত্যার শিকার পারভেজের মিডটার্ম পরীক্ষা চলছিল। পরীক্ষা শেষে ১৯ এপ্রিল বন্ধু তরিকুল, সুকর্ণ, ইমতিয়াজসহ কয়েকজন বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের একটি শিঙাড়ার দোকানে দাঁড়িয়ে কথাবার্তা বলছিলেন, হাসাহাসি করছিলেন। তাদের পেছনে ফুটপাতে দাঁড়িয়ে ছিলেন ইউনিভার্সিটি অব স্কলার্সের দুই ছাত্রী ও তাদের বন্ধু প্রাইমএশিয়ার মেহেরাজ ইসলাম, আবু জহর গিফফারি পিয়াস ও মাহাথির হাসান। একপর্যায়ে পারভেজদের হাসাহাসি নিয়ে এই শিক্ষার্থীরা নোটিশ করেন। কেন তাদের কটাক্ষ করে হাসাহাসি করা হচ্ছে, তা তারা জানতে চান। এ নিয়ে তাদের মধ্যে কথাকাটাকাটি হয়। পরে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিষয়টি মীমাংসা করলেও পারভেজের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে এবং তাকে হত্যা করা হয়। ‘হামলাকারীরা বান্ধবীদের কাছে নিজেদের ক্ষমতা ও আধিপত্য’ দেখাতে হামলা চালিয়ে পারভেজকে হত্যা করে।

২০২৫ সালে বেড়েছে নারী ও শিশু নির্যাতন-চুরি-খুন-অপহরণ

বছরজুড়ে চলে আন্ডারওয়ার্ল্ডের আধিপত্য

২৫ মে রাতে বাড্ডা এলাকায় বন্ধুদের সঙ্গে দোকানের সামনে বসে চা পান করছিলেন বিএনপি নেতা কামরুল আহসান সাধন। এমন সময় হঠাৎ দুজন লোক তাকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করে। এ হত্যাকাণ্ডে কারা অংশগ্রহণ করেছে, হত্যার নেপথ্যে কারা কিংবা কেন সাধনকে হত্যা করা হয়েছে, হত্যাকাণ্ডের পেছনে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা না থাকলেও ব্যবসা, আধিপত্য এবং আন্ডারওয়ার্ল্ডের গডফাদারের সংশ্লিষ্টতার তথ্য উঠে আসে।

১১ নভেম্বর পুরান ঢাকায় প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা হয় সন্ত্রাসী তারেক সাইদ মামুনকে। আদালতপাড়ায় মামুনকে হত্যার খবর ছড়িয়ে পড়ায় বেশ চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়। ১৫ নভেম্বর লক্ষ্মীপুরের চন্দ্রগঞ্জের পশ্চিম লতিফপুর এলাকায় ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল কালামকে গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। ১৭ নভেম্বর পল্লবীতে একটি হার্ডওয়্যারের দোকানে প্রবেশ করে মুখোশ ও হেলমেট পরা সন্ত্রাসীরা গুলি করে হত্যা করে পল্লবী থানা যুবদলের সদস্য সচিব গোলাম কিবরিয়াকে। আগের মাসে চট্টগ্রামে চলন্ত প্রাইভেটকার থামিয়ে প্রকাশ্যে দিনদুপুরে বিএনপি সমর্থিত এক ব্যবসায়ীকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এসব হত্যাকাণ্ডে আন্ডারওয়ার্ল্ডের আধিপত্য রয়েছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

২০২৫ সালে বেড়েছে নারী ও শিশু নির্যাতন-চুরি-খুন-অপহরণ

গ্রেফতার হয় শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন

২৭ মে ভোরে কুষ্টিয়া শহরের কালীশংকরপুর এলাকায় তিন ঘণ্টার এক শ্বাসরুদ্ধকর অভিযানে তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন ওরফে ফতেহ আলী ও তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী মোল্লা মাসুদ ওরফে আবু রাসেল মাসুদকে আটক করে সেনাবাহিনী। পরে তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানীর হাতিরঝিল এলাকা থেকে সুব্রত বাইনের অন্য দুই সহযোগী শুটার আরাফাত ও শরীফকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের কাছ থেকে পাঁচটি বিদেশি পিস্তল, ১০টি ম্যাগাজিন, ৫৩ রাউন্ড অ্যামোনিশন এবং একটি স্যাটেলাইট ফোন উদ্ধার করা হয়।

২০২৫ সালেও চলতে থাকে ‘মব জাস্টিস’

১৮ মার্চ রাত ১১টার দিকে রাজধানীর খিলক্ষেত এলাকায় ধর্ষণের অভিযোগে ‘মব’ তৈরি করে গণপিটুনি দেওয়া হয় এক কিশোরকে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত কিশোরকে আটক করতে ঘটনাস্থলে যায় পুলিশ। তাকে আটক করে পুলিশের গাড়িতে নেওয়ার পথে খিলক্ষেত বাজারে স্থানীয় জনতা পুলিশের গাড়িতে হামলা চালায়। এসময় পুলিশ সদস্যদের লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে জনতা। এ ঘটনায় খিলক্ষেত থানার পরিদর্শকসহ (তদন্ত) আটজন আহত হন।

২৮ ফেব্রুয়ারি রাতে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা থানা এলাকার আউটার রিং রোডে মোটরসাইকেল আরোহী দুই যুবককে তল্লাশিচৌকিতে থামার জন্য ইশারা দেন দায়িত্বরত পুলিশ সদস্য। এর কিছুক্ষণ পর ১০-১৫ জন এসে ‘ভুয়া পুলিশ’ অপবাদ দিয়ে এসআই ইউসুফ আলীকে মারধর শুরু করেন। ছিনিয়ে নেওয়া হয় সঙ্গে থাকা মোবাইল ফোন, মানিব্যাগ ও ওয়াকিটকি।

রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় গত ৪ মার্চ দিনদুপুরে মব সৃষ্টি করে আক্রমণের সময় ছিনতাইকারী সন্দেহে দুই ইরানি নাগরিকের ওপর হামলা ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। এসময় ইরানি দুই নাগরিক আহত হন এবং তাদের কাছ থেকে নগদ অর্থ ও মোবাইল ফোন ছিনতাই করা হয়।

২০২৫ সালে বেড়েছে নারী ও শিশু নির্যাতন-চুরি-খুন-অপহরণ

বছরের শেষে সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা ওসমান হাদিকে গুলি

১২ ডিসেম্বর খোদ রাজধানীতে ফিল্মি স্টাইলে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদিকে গুলি করে সন্ত্রাসীরা। সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৮ ডিসেম্বর মারা যান তিনি। এই হত্যাকাণ্ড আরও বাড়িয়েছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। নাকের ডগায় ওসমান হাদির খুনিরা দেশ ছেড়ে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছে এমন তথ্যে ফুঁসছে গোটা দেশ। প্রশ্ন উঠছে এ ঘটনায় প্রশাসনের উদাসীনতা কেন, সাধারণ মানুষেরই বা নিরাপত্তা কোথায়?

টিটি/এসএনআর/এমএমএআর/এমএফএ/জেআইএম