ভিডিও EN
  1. Home/
  2. রাজনীতি

৩৪ বছর পর গণভোটের আলোচনা, ঐকমত্য হলে ইসি কতটুকু প্রস্তুত

মফিজুল সাদিক | প্রকাশিত: ০২:৫১ পিএম, ১১ অক্টোবর ২০২৫

বাংলাদেশে সর্বশেষ গণভোট হয়েছিল ১৯৯১ সালে। এখন জুলাই জাতীয় সনদকে আইনি ভিত্তি দিতে ৩৪ বছর পর ফের আলোচনায় এসেছে এ ভোটাভুটি। বিএনপি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনে গণভোট চায়, অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী আগামী নভেম্বর মাসেই গণভোট চায়।

নির্বাচন কমিশন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে যখন এগোচ্ছে তখন জুলাই সনদ বাস্তবায়নের জন্য গণভোটের দাবিও জোরালো হচ্ছে। সংসদ নির্বাচনের বাইরে নির্বাচন কমিশনে ‘গণভোট’ নিয়ে আলোচনা না হলেও সরকারের সিদ্ধান্ত এলে তা বাস্তবায়নের বিষয়ে এগোতে প্রস্তুত সাংবিধানিক সংস্থাটি।

এবার ১২ কোটি ৬৩ লাখেরও বেশি ভোটারের সংসদ নির্বাচনে থাকবে ৪০ হাজারেরও বেশি ভোটকেন্দ্র। সেখানে ভোটকক্ষ থাকবে আড়াই লক্ষাধিক। এছাড়া প্রথমবারের মতো প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য পোস্টাল ব্যালটে ভোটের আয়োজনও রয়েছে। প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের এ সংসদ নির্বাচনে লোকবল নিয়োজিত থাকবে ১০ লাখেরও বেশি।

অন্তর্বর্তী সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী বছর রোজার আগে ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে হবে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এ জন্য চলতি বছরের ডিসেম্বরে তফসিল ঘোষণার কথা রয়েছে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনের (ইসি)।

বাংলাদেশে রাষ্ট্রপতি আস্থা গণভোট হয় ১৯৭৭। সামরিক শাসনের গণভোট হয় ১৯৮৫ সালে। বাংলাদেশের সংবিধান বিষয়ক গণভোট হয় ১৯৯১ সালে। এখন পরবর্তী গণভোট কিভাবে হবে এবং হলে নির্বাচন কমিশনের আয়োজনের প্রস্তুতি কেমন তা নিয়ে আলোচনা চলছে।

গণভোট নিয়ে যা ভাবছে ইসি

গণভোট নিয়ে কথা হলে নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ বলেন, ‘এটা (গণভোট) নির্ভর করছে রাজনৈতিক ঐকমত্যের ওপর। এটা রাষ্ট্রীয় ব্যাপার, সরকারের ব্যাপার। সরকার যদি মনে করে গণভোট করবে, তাহলে আমরা গণভোট ইনশাআল্লাহ করবো।’

আরও পড়ুন
জুলাই সনদ বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় দলগুলোর মতানৈক্য
গণভোট ও সংসদ নির্বাচন একই দিনে করার পরামর্শ ফেমা সভাপতির
জামায়াতের নির্বাহী পরিষদের বৈঠক, জুলাই সনদের আলোকে নির্বাচন দাবি

সংসদ নির্বাচন ও গণভোট একসঙ্গে হলে বড় ব্যয় সাশ্রয় হবে বলে মনে করেন আব্দুর রহমানেল মাছউদ। তিনি বলেন, ‘একজন নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নয়, দেশের একজন জ্যেষ্ঠ নাগরিক হিসেবে বলছি, গণভোট যদি করতেই হয় তাহলে একদিনে করাটাই ভালো হবে। শত শত কোটি টাকার বিষয়। এত ব্যয়বহুল কাজ দুই দিনে করাটা কঠিন হবে। কাজেই সরকার যদি সিদ্ধান্ত নেয়, আমাদের কোনো বিষয় নয়, দুই নির্বাচন একত্রে করলে কোটি কোটি টাকা বেঁচে যায়।’

৩৪ বছর পর গণভোটের আলোচনা, ঐকমত্য হলে ইসি কতটুকু প্রস্তুত

বিএনপি একই দিনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট চায়/ছবি: সংগৃহীত

এ নির্বাচন কমিশনারের মতে, সংসদ নির্বাচন ও গণভোট একসঙ্গে করা সম্ভব। তবে ভোটকেন্দ্র ও ভোটকক্ষ কিছু বাড়ানো লাগতে পারে। এছাড়া খুব যে অসম্ভব তা নয়, বরং একসঙ্গেই ভালো।

গণভোটের আইনগত দিক নিয়ে এ অবসরপ্রাপ্ত বিচারক বলেন, ‘আইনগত কোনো সমস্যা থাকার কথা নয়। জনগণই সব ক্ষমতার উৎস। এখন একটি জিনিস জনগণের কাছে উপস্থাপন করা হচ্ছে, জুলাই সনদে এ লেখা রয়েছে- আপনি পক্ষে দেবেন, না কি বিপক্ষে দেবেন (ভোট)। জনগণের রায় যদি হয়ে যায়, সেটাই তো সবচেয়ে বড় শক্তি। এ ব্যাপারে যদি মনে হয় আইনে সামান্য পরিবর্তন করতে হবে, তাহলে সরকার করবে। সরকার বা ঐকমত্য কমিশনে যদি এ সিদ্ধান্ত (ভোট নেওয়া) হয় তখন আমাদের বিষয়টা কীভাবে বাস্তবায়ন করা যায় দেখব। আইনগত কাঠামোর মধ্যে থেকে বাস্তবায়ন করবো।’

গণভোট আয়োজন জাতীয় নির্বাচনের জন্য ঘোষিত ফেব্রুয়ারির সময়ে কোনো প্রভাব ফেলবে না বলে মনে করেন এ নির্বাচন কমিশনার। তিনি বলেন, দুই নির্বাচন একসঙ্গে হলে ভালো। সবই একই থাকবে, শুধু দুটি ব্যালট পেপার। একটি জাতীয় নির্বাচনের, আরেকটি গণভোটের। একই ব্যক্তি দুটি ভোট দেবেন। একটি প্রার্থীকে, আরেকটি হ্যাঁ বা না ভোট।

আগের তিন গণভোট

রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সরাসরি ভোটের মাধ্যমে জনগণের মতামত নেওয়ার পদ্ধতিই হলো গণভোট। এর মাধ্যমে তাদের কাছে কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় চূড়ান্তভাবে গ্রহণ বা প্রত্যাখ্যানের জন্য উপস্থাপিত হয়। বাংলাদেশে স্বাধীনতার পর এ পর্যন্ত তিনবার যথাক্রমে ১৯৭৭, ১৯৮৫ ও ১৯৯১ সালে গণভোট হয়েছে।

•১৯৭৭ সালের ৩০ মে প্রথমবার গণভোট হয় রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এবং তার অনুসৃত নীতি ও কর্মপন্থার প্রতি জনগণের মতামত যাচাইয়ের জন্য। প্রদত্ত ভোটের ৯৮ দশমিক ৮৭ শতাংশ ‘হ্যাঁ’ এবং ১ দশমিক ১৩ শতাংশ ‘না’ ভোট পড়ে।

•দ্বিতীয়বার ১৯৮৫ সালের ২১ মার্চ গণভোট হয়। বিষয় ছিল রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের অনুসৃত নীতি ও কর্মপন্থার প্রতি আস্থা এবং স্থগিত সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন অনুষ্ঠান পর্যন্ত তার রাষ্ট্রপতি পদে অধিষ্ঠিত থাকা। মূলত সামরিক শাসকের বৈধতা দেওয়ার জন্য এ গণভোট হয়। প্রদত্ত ভোটের ৯৪ দশমিক ৫ শতাংশ ‘হ্যাঁ’ আর সাড়ে ৫ শতাংশ ‘না’ ভোট দেন।

•১৯৯১ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর সংবিধানের ১৪২ (১ক) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী তৃতীয়বারের মতো গণভোট হয়। জনগণের সামনে প্রশ্ন ছিল- গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান (দ্বাদশ সংশোধন) বিল, ১৯৯১-এ রাষ্ট্রপতির সম্মতি দেওয়া উচিত কি না? এ প্রশ্নের মাধ্যমে মূলত জনগণের কাছে ভবিষ্যতে দেশে কোন ধরনের সরকার পদ্ধতি হবে তা উপস্থাপিত হয়। এতে ‘হ্যাঁ’ ভোট ৮৪ শতাংশ ও ‘না’ ভোট ছিল ১৫ দশমিক ৬২ শতাংশ।

প্রয়োজন আইন সংশোধন

সংসদবিষয়ক গবেষক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক নিজাম উদ্দিন আহমদ জানান, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সঙ্গে গণভোট দেওয়াই হচ্ছে এখন সবচেয়ে সহজ উপায়।

অধ্যাপক নিজাম বলেন, ‘সেটা করতে গিয়ে সংবিধান সংশোধন করছেন না। জনগণের কাছে সংবিধান সংশোধনের প্রস্তাবনা রাখছেন। জনগণ এ প্রস্তাবনা গ্রহণ করলে তাহলে পরবর্তী সংসদে হবে। জনরায় হিসেবে গণভোট হবে। সংবিধান সংশোধন করছেন না, রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার কোনো ব্যত্যয় ঘটছে না। রাষ্ট্রপতি অর্ডিন্যান্সের মাধ্যমে সংবিধান সংশোধন করতে পারবেন না। অতএব, এর মধ্যে কোনো বাধা নেই।’

আরও পড়ুন
তফসিলের আগেই গণভোট হওয়া উচিত: ইসলামী আন্দোলন
গণভোট ও পিআর দাবিতে জাতি আবারও বিভক্ত হচ্ছে: সালাহউদ্দিন
জুলাই সনদ বাস্তবায়নে গণভোটের প্রস্তাব, সিদ্ধান্তের পথে দলগুলো

এ বিশেষজ্ঞ জানান, ২০১১ সালে গণভোটের বিধান বাতিল করা হয়। এ বছর বিধানটি ফেরানোর রায় এসেছে। সরকার চাইলে জনমত যাচাইয়ের জন্য গণভোট করতে পারে। মানুষ সায় দিলে নতুন সংসদ এলে সাংবিধানিক প্রক্রিয়ায় সংশোধনীগুলো আনা হবে।

তিনি বলেন, ‘স্পেসিফিক চারটি আর্টিকেলের বিষয়ে গণভোটের বিধান রয়েছে। কিন্তু আইনগত কোনো বাধা নেই। গণভোট করতে পারবেন। হাইকোর্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকার সংক্রান্ত মামলার রায়ে গণভোট ফেরানোর কথা রয়েছে। গণভোট করতে হলে আরপিও (গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ) সংশোধন করতে হবে। ইলেকশন কমিশনকে বলতে হবে গণভোট করেন।’

৩৪ বছর পর গণভোটের আলোচনা, ঐকমত্য হলে ইসি কতটুকু প্রস্তুত

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দুই মাস আগে গণভোট চায় জামায়াতে ইসলামী/ছবি: সংগৃহীত

অধ্যাপক নিজাম সংসদ নির্বাচন ও গণভোট একসঙ্গে করার পক্ষে মত দেন। তিনি বলেন, কেন দুই মাসের মাথায় কোটি কোটি টাকা খরচ করা হবে, এত ব্যয় করার মানে হয় না।

সংকট থেকে উত্তরণে গণভোট একটি ভালো উদ্যোগ জানিয়ে এ বিশেষজ্ঞ বলেন, এটি করতে ১৯৯১ সালের গণভোট আইন ও গণভোট বিধি রয়েছে; তা সংশোধন করলেই হয়ে যাবে।

পৃথিবীর অনেক দেশেই সাধারণ নির্বাচনের সঙ্গে গণভোট হয়ে থাকে জানিয়ে অধ্যাপক নিজাম বলেন, ‘একসঙ্গে হলে মানুষের কনফিউজ হওয়ার সম্ভাবনা কম। সাধারণ মানুষ ইউপি নির্বাচনে তিনটি ব্যালটে ভোট দিতে অভ্যস্ত; এখানে দুটি ব্যালট হবে। গণভোট করতে কোনো বাধা দেখছি না আর। প্রয়োজন হলে বিদ্যমান আইন সংশোধন করে অধ্যাদেশ করলেই হবে; সংবিধান সংশোধন করতে হবে না এজন্য।’

সর্বশেষ অভিজ্ঞতা

ইসির সাবেক কর্মকর্তা মিহির সারওয়ার মোর্শেদ ১৯৯১ সালে গণভোট আয়োজনে যুক্ত ছিলেন। নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি জানান, রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার থেকে সংসদীয় পদ্ধতির সরকার ব্যবস্থায় ফেরা নিয়ে এ গণভোট হয়। ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ ভোট হয়। তখন রিটার্নিং কর্মকর্তা জেলা প্রশাসক ছিলেন। গণভোটে মানুষের আগ্রহ থাকে খুব কম। উপস্থিতি খুবই কম থাকে, যদিও ফলাফল একটু অন্যরকম আসে। ওই সময়ের খবরের কাগজ দেখেন, উপস্থিতি কম ছিল। তবে গণভোটের বিষয়ে ট্রাইব্যুনালে মামলাসহ নানা ধরনের কিছু তো হয় না। ফলে যে ফলাফল আসে তাই ফাইনাল।

তিনি জানান, ১৯৯১ সালে জাতীয় নির্বাচনের পরে গণভোট হয়েছিল। গণভোট আইন, বিধি মেনে নির্বাচনটি করা হয়। এমন ভোট সংসদ নির্বাচনের সঙ্গে করতে গেলে ভালো হয়। জাতীয় নির্বাচনের জন্য ভোটকেন্দ্রে যে ব্যালট বাক্স লাগবে, তার সমান ব্যালট বাক্স লাগবে গণভোটে।

সাবেক এ কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা যে গণভোট করলাম সেটা রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার থেকে প্রধানমন্ত্রী শাসিত সরকারের যাওয়ার বিষয়ে। ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ ভোট হলো। সেখানে কোনো প্রার্থী নেই, ভোটার স্লিপ দেওয়া হয় না; ভোটারদের সম্মানের সঙ্গে আমন্ত্রণ জানানো হয় না। এজন্য ভোটাদের আগ্রহ, উপস্থিতি ছিল খুব কম। এবার রাজনৈতিক দল সহায়তা করলে হয়তো উপস্থিতি বাড়তে পারে।’

দরকার প্রচার

নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য আব্দুল আলীম জানান, গণভোট আর সংসদ নির্বাচন দুটি দুই জিনিস, আলাদা ব্যালট পেপার হবে। এজন্য নির্বাচন কমিশনকে দুই রকমের ব্যালট পেপার প্রস্তুত ও ব্যালট বাক্স আলাদা করতে হবে।

তিনি বলেন, সবশেষ ১৯৯১ সালে দেশের মানুষ গণভোট দিয়েছে। এরপর ভুলে গেছে এ জিনিস। গণভোট নিয়ে সাধারণের ধারণা, জ্ঞানে একটা শূণ্যতা রয়েছে এত বছরের। কাজেই গণভোট কী, কেন এটা নিয়ে ব্যাপক প্রচার, সিভিক এডুকেশন দরকার পড়বে। প্রচার না করলে যতটুকু জ্ঞান দরকার ভোট প্রয়োগ করতে, তা আর হবে না।

এ নির্বাচন বিশেষজ্ঞ জানান, ব্যালট পেপার ছাপা, স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স ও ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ এবং ভোটারদের এ প্রক্রিয়ায় যুক্ত করা- এসবই কমবেশি চ্যালেঞ্জিং কাজ। খুব তাড়াতাড়ি সিদ্ধান্ত হলে তাহলে ইসির জন্য বেশি চ্যালেঞ্জিং হবে না। আর স্থানীয় সরকার নির্বাচনে তিনটি ব্যালট পেপারে ভোট করা ও ভোট দেওয়ার অভিজ্ঞতা রয়েছে। তাতে এবার গণভোট হলে ভোটারদের বোঝাতে সমস্যা হবে না।

নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের এ সদস্য বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলো ঐকমত্য হলে, গণভোটে সবাই এখন রাজি। কোন সময় হবে সেটা নিয়ে ভিন্নমত আছে। খুব গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ঐকমত্য; দলগুলো ঐকমত্য হলে এ সময়ে গণভোট করবো; তাহলে আর কোনো চ্যালেঞ্জ থাকে না।’

গণভোটের পূর্বাপর

নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে জানানো হয়, এটি মূলত জনমত যাচাইয়ের একটি পদ্ধতি, যা বহু বছর আগে থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চালু রয়েছে। কমিশনের পক্ষ থেকে গণভোটের বিধানটি আগামী সংসদে উত্থাপন করে পাস করানোর সুপারিশ করা হয়েছে।

বাংলাদেশের আদি অর্থাৎ ৭২-এর সংবিধানে গণভোটের বিধান ছিল না। ১৯৭৯ সালে জেনারেল জিয়াউর রহমান পঞ্চম সংশোধনী সংবিধানে যুক্ত করেন। এর মাধ্যমে সংবিধান-সংশোধন সংক্রান্ত ১৪২ অনুচ্ছেদে (১ক) দফা যুক্ত করা হয়, যাতে বলা হয়: ‘(১) দফায় যাহা বলা হইয়াছে, তাহা সত্ত্বেও এই সংবিধানের প্রস্তাবনা অথবা ৮, ৪৮, ৫৬, ৫৮, ৮০ বা ৯০ক অনুচ্ছেদ অথবা এই অনুচ্ছেদের কোনো বিধানাবলির সংশোধনের ব্যবস্থা রহিয়াছে এরূপ কোনো বিল উপরিউক্ত উপায়ে গৃহীত হইবার পর সম্মতির জন্য রাষ্ট্রপতির নিকট উপস্থাপিত হইলে উপস্থাপনার সাত দিনের মধ্যে তিনি বিলটিতে সম্মতিদান করিবেন কি করিবেন না এই প্রশ্নটি গণ-ভোটে প্রেরণের ব্যবস্থা করিবেন।’

এছাড়া পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে ১৪২ অনুচ্ছেদে গণভোট সম্পর্কিত (১খ), (১গ) এবং (১ঘ) যুক্ত করা হয়। পরে ১৯৯১ সালে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সমঝোতার ভিত্তিতে সংসদীয় গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে সংবিধানের দ্বাদশ সংশোধনী গৃহীত হয়, যার মাধ্যমে ১৪২ অনুচ্ছেদের (১ক) সংশোধন করে ৫৮, ৮০ ও ৯০ক অনুচ্ছেদ সংশোধনের ক্ষেত্রে গণভোটের বিধান বাতিল করা হয়। অর্থাৎ সংবিধানের প্রস্তাবনা, অনুচ্ছেদ ৮, ৪৮ বা ৫৬ সংশোধনের ক্ষেত্রে গণভোট অনুষ্ঠান বাধ্যতামূলক করা হয়।

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০১১ সালের ৩০ জুন জাতীয় সংসদে পাস হওয়া পঞ্চদশ সংশোধনীতে ১৪২ অনুচ্ছেদ প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে গণভোটের বিধান বাতিল করা হয়। তবে ২০২৪ সালের ১৭ ডিসেম্বর সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী মামলায় ১৪২ ধারাটি বাতিল ঘোষণা করে আদালত গণভোটের বিধান ফিরিয়ে আনেন। তবে আদালতের রায়ে গণভোটের বিধানটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে পুনর্বহাল হওয়া নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। কেননা, জেনারেল ক্লজেস অ্যাক্ট ১৮৯৭-এর ৬ ধারা অনুযায়ী কোনো আইনকে পুনর্জীবিত করতে হলে সংসদে আইনটি পাস করানোর দরকার হবে বলে জানায় নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন।

এমওএস/একিউএফ/এমএমএআর/এমএস