শেখ হাসিনা ভাঙা তরীকে নিয়ে গেলেন সাফল্যের চূড়ায়!

জাগো নিউজ ডেস্ক
জাগো নিউজ ডেস্ক জাগো নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: ১২:৫৪ পিএম, ১৭ মে ২০২৪

শেখ মারুফা নাবিলা

কুর্মিটোলা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে থামলো একটি বিমান। বিমানের সিঁড়িতে এসে দাঁড়ালেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। এমন নয় যে তিনি এই প্রথম বিমানে করে দেশে ফিরে এলেন। তবে এই ফেরার সাথে মিল নেই আগের কোনো ফেরার। এ যেন ফিরে আসা নিজের আবেগী বাংলায় বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নপূরণের উদ্দেশ্যে।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কালরাতে শেখ হাসিনা স্বামীর সাথে জার্মানিতে। সাথে ছোটবোন শেখ রেহানা। তিনি তখন স্রেফ একজন গৃহিণী। কিন্তু তাঁর জীবনে হঠাৎ করেই নেমে এলো বিষাদের ঘোর অন্ধকার। দেশে সপরিবারে খুন হলেন বঙ্গবন্ধু। পাকিস্তানি ঘাতকদের সাথে চক্রান্ত করে এ দেশেরই কিছু কুলাঙ্গার বুলেটের আঘাতে ঝাঁঝরা করে দিয়েছিল বঙ্গবন্ধুর দেহ। সেই থেকে শুরু এরকম স্বেচ্ছায় প্রবাস যাপন। এ দেশে তখন বঙ্গবন্ধুর নাম নেওয়া অনেটা মহাপাপ। সোনার বাংলাকে হায়েনার মতো ক্ষত-বিক্ষত করে খাচ্ছিল কিছু মানুষরূপী শয়তান, খুনী। দেশের মানুষের কোনো স্বাধীনতা ছিল না। স্বৈরশাসকের হাতে জিম্মি ছিল সোনার বাংলা।

বঙ্গবন্ধু যখন নিহত হলেন; তখন তার বয়স ছিল মাত্র ৫৫ বছর আর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বয়স ২৭। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার আড়াই মাসের মাথায় সংঘটিত হয় ইতিহাসের আরও এক নির্মম এবং ঘৃণিত হত্যাকাণ্ড। বাংলার চার নেতা ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর নিহত হলেন জেলের ভেতর। এই চরম ক্রান্তিকালে বাংলাদেশ হয়ে পড়ে নেতৃত্বশূন্য। সঠিক নির্দেশনার অভাবে আওয়ামী লীগ তখন বিভাজিত।

শেখ হাসিনা তখন দিল্লিতে। ১৯৮১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি দলের কাউন্সিল অধিবেশনে ড. কামাল হোসেন প্রস্তাব করেন শেখ হাসিনাকে দলের সভাপতি করার। আবদুল মালেক উকিল, জোহরা তাজউদ্দীন, তোফায়েল আহমেদ প্রমুখ ব্যক্তিবর্গ এই প্রস্তাবে সমর্থন জানান। অনেকেই ছুটে যান দিল্লি এই খবর পৌঁছে দেওয়ার জন্য। আওয়ামী লীগকে সঠিক নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য এবং দেশের সাধারণ মানুষের সেনাশাসকের অত্যাচার মুক্তির জন্য তখন একজন নেতারই দরকার ছিল। আর তিনি হলেন বঙ্গবন্ধু তনয়া শেখ হাসিনা।

১৭ মে ১৯৮১ সালে শেখ হাসিনা প্রত্যাবর্তন করেন নিজ দেশে। দেশত্যাগের সময় তিনি রেখে গিয়েছিলেন একটি সুখী পরিবার এবং স্বাধীন দেশ। কিন্তু ছয় বছর পর তিনি যখন ফিরলেন তখন কোথাও কেউ নেই। তবে বিমানবন্দরের বাইরে নেমেছিল লাখো জনতার ঢ্ল। স্বৈরাচারী সরকারকে অবাক করে দিয়ে কুর্মিটোলা বিমানবন্দর ছেয়ে গিয়েছিল সাধারণ মানুষে। ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগানে মুখরিত ছিল বাংলার আকাশ-বাতাস। আবেগে উদ্বেলিত শেখ হাসিনাকে বরণ করে নিয়েছিল প্রকৃতিও। ঘণ্টায় ৬৫ মাইল বেগে বয়ে যাওয়া কালবৈশাখী ঝড় আর আকাশ ভেঙে নামা বৃষ্টি স্বাগতম জানিয়েছিল এ দেশে আর একাত্মতা প্রকাশ করেছিল আবেগের সাথে।

১৮ মে ১৯৮১, সোমবার, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন সম্পর্কে দৈনিক সংবাদ-এ প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘‘রাজধানী ঢাকা গতকাল (১৭ই মে, ১৯৮১) মিছিলের শহরে পরিণত হয়েছিল। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত মিছিল। শুধু মিছিল আর মিছিল। প্রচণ্ড ঝড়-বৃষ্টিও মিছিলের গতিরোধ করতে পারেনি। শ্লোগানেও ভাটা পড়েনি। লাখো কণ্ঠের শ্লোগান নগরীকে প্রকম্পিত করেছে। গতকালের ঢাকা ন’বছর আগের কথাই বারবার স্মরণ করিয়ে দিয়েছে।

১৯৭২ সালের ১০ই জানুয়ারি যে দিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে স্বদেশে এসেছিলেন, সে দিন স্বজন হারাবার কথা ভুলে গিয়েও লাখ লাখ জনতা রাস্তায় নেমে এসেছিল নেতাকে এক নজর দেখার জন্য। সেদিনও হয়েছে তাই। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের কন্যা শেখ হাসিনাকে এক নজর দেখার জন্য ঢাকায় মানুষের ঢল নেমেছিল।

কুর্মিটোলা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও শেরেবাংলানগর পরিণত হয়েছিল জনসমুদ্রে। ফার্মগেট থেকে কুর্মিটোলা বিমানবন্দর পর্যন্ত ট্রাফিক বন্ধ ছিল ছ’ঘণ্টা।’’

দেশে ফিরে দলের হাল ধরেন শেখ হাসিনা। দলের অবস্থা তখন ভাঙা তরীর মতো। সাংগঠনিক অবস্থা খুবই খারাপ। সেই অবস্থায় নিজের নেতৃত্বগুণ আর পরিশ্রম দিয়ে সঠিক পথে নিয়ে আসেন আওয়ামী লীগকে। বিশ্বস্ত কিছু নেতা-কর্মীর সহায়তা এবং অক্লান্ত পরিশ্রমে সঠিক পথে চলতে শুরু করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। শেখ হাসিনার হাত ধরে পতন ঘটে স্বৈরশাসনের এবং গণতন্ত্রের সূচনা হয় এই বাংলায়।

দেশে ফেরার পর অনেকবার হত্যাচেষ্টার কবলে পড়েন শেখ হাসিনা। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা ছিল অন্যতম ভয়াবহ এক হামলা। কিন্তু আল্লাহ্ তাআলার অশেষ রহমতে কোনো হত্যাচেষ্টাই স্পর্শ করতে পারেননি এই মহান নেত্রীকে। একাই তিনি প্রতিনিয়ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাকে বাস্তবে রূপ দিতে। দেশীয় এবং বৈদেশিক চক্রান্তকে পরাস্ত করে সচল রাখছেন দেশের উন্নয়নের চাকা। পিতা বঙ্গবন্ধুর মতোই প্রতিনিয়ত রাজনৈতিক প্রজ্ঞার পরিচয় দিচ্ছেন বিশ্বের রাজনৈতিক অঙ্গনে। এই মহান নেত্রীর হাত ধরেই বাংলাদেশ বিশ্ব দরবারে ধীরে ধীরে পরিচিতি লাভ করছে এক উন্নত রাষ্ট্র হিসেবে।

লেখক: সহকারী অধ্যাপক, সমাজকর্ম বিভাগ, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

এসইউ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।