মেলা নয় যেন সবজির ক্ষেত

রাজধানীর খামারবাড়ির কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ (কেআইবি) চত্বরে শুরু হয়েছে তিন দিনব্যাপী জাতীয় সবজি মেলা। শুক্রবার বিকেলে মেলার উদ্বোধন করেন কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক। মেলায় এবারের প্রতিপাদ্য- ‘পুষ্টি ও সুস্বাস্থ্যের জন্য নিরাপদ সবজি’। মেলায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তের কৃষকের পাশাপাশি ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারাও স্টল দিয়েছেন।
মেলায় প্রায় ২০০ প্রজাতির বেশি শাক-সবজির সরবরাহ রয়েছে। শুধু ক্ষেতে নয়, পাহাড়, জঙ্গল, বন-বাদাড়, ক্ষেতের আইল, রাস্তার ধারে অজানা এমন কিছু শাক-সবজি পাওয়া যায় যেগুলো স্থান পেয়েছে মেলায়। সব মিলিয়ে দেশে কত প্রকার শাক-সবজি উৎপাদন হয়, তা মেলায় গেলে দেখা যায়।
এই মেলা শুধু সবজি কেনাবেচা নয়। বিভিন্ন অঞ্চলের বিভিন্ন ধরনের শাক-সবজির সঙ্গে মানুষকে পরিচয় করিয়ে দিতে, এসব শাক-সবজির গুণাগুণ, আবাদের কৌশল, সবজি চাষে কীভাবে লাভবান হবেন সে জন্য বিভিন্ন বীজ কোম্পানি, প্রতিষ্ঠান এবং সংস্থা স্টল ও প্যাভিলিয়ন নিয়ে বসেছে। কোন সময় কোন সবজি চাষ করলে কৃষক লাভবান হবে বীজ কোম্পানির লোকজন সে বিষয়েও দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন।
সবজি মেলায় শোভা পাচ্ছে বাহারি রঙের সবজি। মেলার প্রধান ফটকের দুই পাশে পর্দায় টানানো ১৩২ প্রকার শাক-সবজির ছবি। এগুলো দেখে মানুষ বুঝতে পারবে যে শাক-সবজি প্রকারভেদ কত? তাছাড়া বর্তমান প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা বিশেষ করে যারা ঢাকা শহরে বেড়ে উঠছে তাদের জন্য সুবর্ণ সুযোগ শাক-সবজি চেনা ও জানার জন্য। মেলা শুরু হওয়ার পর থেকেই অনেকেই তাদের সন্তানদের মেলায় নিয়ে আসছেন। তারা ঘুরে ঘুরে দেখছেন এসব আয়োজন। পানির ভেতর সবজি চাষ করা যায় এ কৌশল দেখেও অনেকে অবাক।
মোহাম্মদপুর থেকে আবদুল হামিদ সন্তানদের নিয়ে সবজি মেলায় এসেছেন। বিভিন্ন শাক-সবজির সঙ্গে তাদের পরিচয় করিয়ে দেন। আবদুল হামিদ এক প্রশ্নের জবাবে জাগো নিউজকে বলেন, সন্তানদের মেলায় নিয়ে এসেছি শাক-সবজির সঙ্গে পরিচয় করানোর জন্য। কারণ তারা তো বাসাবাড়ির বাইরে যায় না। বাসাবাড়িতে আমরা যে সব শাক-সবজি খাই তার প্রকারভেদ খুব বেশি না। এখানে এসে কমপক্ষে দুশ’র বেশি সবজির সঙ্গে পরিচয় হলো। শুধু সবজি দেখে নয়, মেলার ভেতরে স্থান পাওয়া শতাধিক ধরেনর সবজি ছাড়াও ফটকের দুই পাশে যে ১৩২ প্রকার সবজির ছবি আছে সেগুলো দেখেও তারা চিনতে পারলো শাকসবজি কত প্রকারের হয়। এ ছাড়া মেলায় এসে ওদের একটা বিনোদনও হলো।
এ বিষয়ে কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন, শাক-সবজি এবং এর পুষ্টি সম্পর্কে জনগণের মধ্যে সচেতনতা তৈরির জন্যই এ মেলার আয়োজন। পুষ্টি ও সুস্বাস্থ্যের জন্য নিরাপদ সবজি আমাদের খেতে হবে। না হলে স্বাস্থ্যবান জাতি গড়ে তুলতে পারব না আমরা।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা গ্রীষ্মকালীন টমেটো, পেঁয়াজ, লাউ, করলাসহ বেশ কয়েকটি সবজির নতুন জাত উদ্ভাবন করেছেন। বেসরকারি কয়েকটি বীজ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানও এগিয়ে এসেছে।
তিনি আরও বলেন, একজন সুস্থ-সবল মানুষের প্রতিদিন ২২০ গ্রাম করে বছরে কমপক্ষে ৮০ কেজি সবজি খাওয়া উচিত। কিন্তু আমরা সেখানে অনেক কম সবজি খাচ্ছি। জাপান, জার্মানি ও যুক্তরাষ্ট্রে জনপ্রতি বার্ষিক সবজি ভোগের পরিমাণ যথাক্রমে ১০০, ৯২ ও ১১৬ কেজি।
মেলায় যে সব শাক-সবজি উঠেছে তার মধ্যে ফুলকপি, বাঁধাকপি, চীনা বাঁধাকপি, ব্রকলি ছাড়াও রয়েছে শুকুরনটে, গোবরানটে, বাঁশনটে, রক্ত শাক, প্লীহানটে, কংকানাটে, লাল শাক, ডাটা শাক, আপনটে, কাঁটানটে, শাকনটে, পাতাবোকা কচু, বিষ কচু, তাপা কচু, পানি কচু, লতি কচু, মুখী কচু, ফিনি কচু, সাঞ্চি শাক, কাকি শাক, মালঞ্চ শাক, তেরা শাক, গিটশাক, গন্ধ কচু, বাপা কচু, মান কচু, সালু কচু, প্রেম কচু, পইদনাল, নারিকেলি কচু, সালাদ কচু, কাটা কচু, ঘেঁট কচু, ওল কচু, বুনো ওল, লম্বা ওল, নেপালি ওল, মৌলভী কচু, সুরমা কচু, হেলেঞ্চা, মুলা, করোলা, নেটি শাক, লাউ, সরিষা শাক, চাল কুমড়া, ব্রাসেলস স্প্রাউট, মিষ্টি কুমড়া, চীনা বাঁধাকপি, কলমি শাক, ওলকপি, গিমা কলমি, মিষ্টি আলু, পালং শাক, বিট, বথুয়া শাক, সাঁচি শাক, কাঁচা পেঁপে, পুঁইশাক, কানাই ঝিঙ্গা, লেটুস পাতা, শালগম, বাবুচি শাক, চীনা শাক, তেল কচু, শসা, স্কোয়াশ, পটল, ঝিঙ্গা, ধুন্দুল, বন চিচিঙ্গা, কাকরোল, বন কাকরোল, মেটে আলু, জুম আলু, শিমুল আলু, ডুমু শিম, পাতা পেঁয়াজ, শতমূলী, রক্তদ্রোণ, শ্বেতদ্রোণ, শাকালু, কামরাঙ্গা সিম, মটরশুটি, তরোয়াল শিম, ব্রুকচি সিম, ত্রিপত্রী শাক, বরবটি, বনফুল, ঝাড় সিম, চুকুর, নাপা শাক, ঢেঁডশ, টক ভেন্ডি, রাম ভেন্ডি, ঢিমা শাক, সজিনা, ইচোর কাঁঠাল ডুমুর, কাঁচা কলা, শাপলা, বেগুন, মাশরুম, সুরমা দানা শাক, টমেটো, মিষ্টি মরিচ, লেলং পাতা, গোল আলু, বাঁশ কোডল, থানকুনি শাক, ব্রাহ্মী শাক, নুনিযা শাক, গাজর, পাট শাক, ফুটি বেগুন, মিষ্টি বেগুন, তীত বেগুন, হার্ট বেগুন ও সচি শাক।
মেলায় বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ৬৫টি স্টল ও ৩টি প্যাভিলিয়ন অংশ নিয়েছে। সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সর্বসাধারণের জন্য মেলা উন্মুক্ত। মেলা চলবে রোববার পর্যন্ত।
এফএইচএস/জেএইচ/জেআইএম