ডিসি সম্মেলন শুরু রোববার
২০২৪ সালের সম্মেলনের ৪৬ শতাংশ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন

গত বছর জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলনে নেওয়া সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের হার অন্যান্য বছরের তুলনায় কমেছে। এ পর্যন্ত ২০২৪ সালের সম্মেলনের মাত্র ৪৬ শতাংশ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হয়েছে।
শনিবার (২ মার্চ) সচিবালয়ে ‘জেলা প্রশাসক সম্মেলন-২০২৫’ নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব শেখ আব্দুর রশীদ।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, গত বছর ডিসি সম্মেলনে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি মোট ৩৮১টি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে বাস্তবায়ন হয়েছে ১৭৭টি সিদ্ধান্ত। বাস্তবায়নাধীন ২০৪টি। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের হার ৪৬ শতাংশ।
তিনি বলেন, যেসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য বিবেচনাধীন, সেসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নাধীন হিসেবে দেখানো হয়েছে। যেসব সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ/সিদ্ধান্তের অধিকাংশ বাস্তবায়িত হয়েছে, সেসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হিসেবে দেখানো হয়েছে। প্রত্যেকটি মন্ত্রণালয়/বিভাগ/কার্যালয়ের যথাযথ তৎপরতা, আন্তরিকতা ও ঐকান্তিক প্রচেষ্টা থাকায় জেলাপ্রশাসক সম্মেলন ২০২৪-এ গৃহীত সিদ্ধান্তের শতকরা ৪৬ শতাংশ বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়েছে।
‘জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী অন্তর্বর্তী সরকার প্রতিষ্ঠার পর সরকারের দর্শনের সঙ্গে সম্পৃক্ত কিছু প্রস্তাব বাস্তবায়ন করা হয়নি। ফলে বিগত জেলাপ্রশাসক সম্মেলনগুলোর তুলনায় এ বছর সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হার কম হয়েছে। তবে মধ্যমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়ন হলে গত বছরের সম্মেলনের বাস্তবায়ন অগ্রগতি হার ৪৬ শতাংশ থেকে আরও বাড়বে।’
গত বছর (২০২৪) ডিসি সম্মেলন চলাকালে এর আগের বছরের (২০২৩) সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন অগ্রগতি ছিল ৬২ শতাংশ, ২০২৫-এ এসে দেখা গেছে ২০২৩ এর বাস্তবায়ন অগ্রগতি ছিল ৭৬ শতাংশ বলেও জানান শেখ আব্দুর রশীদ।
গত ডিসি সম্মেলনে নেওয়া বিভিন্ন স্থাপনার নাম বিশেষ কোনো ব্যক্তির নামে করার প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়ন হয়নি বলেও জানিয়েছেন তিনি।
এবার সম্মেলনে উঠছে ৩৫৪ প্রস্তাব
মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, তিন দিনব্যাপী জেলা প্রশাসক সম্মেলন শুরু হচ্ছে রোববার (১৬ ফেব্রুয়ারি)। সকাল সাড়ে ১০টায় নিজ কার্যালয়ের শাপলা হলে সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। গত বছরের মতো এবার জেলা প্রশাসক সম্মেলনের মূল ভেন্যু রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তন। এবার ডিসি সম্মেলন শেষ হবে ১৮ ফেব্রুয়ারি (মঙ্গলবার)।
তিনি বলেন, সম্মেলনে এবার বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সঙ্গে মোট কার্য-অধিবেশন হবে ৩০টি এবং চারটি হবে বিশেষ অধিবেশন। বিশেষ অধিবেশনগুলোর মধ্যে রয়েছে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান, প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ, প্রথম উপদেষ্টার সঙ্গে একটি মুক্ত আলোচনা এবং বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গেও একটি সভা হবে।
ডিসি সম্মেলন সামনে রেখে এবার ডিসি ও বিভাগীয় কমিশনারদের কাছ থেকে ৩৫৪টি প্রস্তাব পাওয়া গেছে বলেও জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
ডিসি সম্মেলনকে সামনে রেখে এবার ডিসি ও বিভাগীয় কমিশনারদের কাছ থেকে পাওয়া এক হাজার ২৪৫টি প্রস্তাবের মধ্যে ৩৫৪টি প্রস্তাব কার্যপত্রে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
তিনি বলেন, পাওয়া প্রস্তাবগুলোর মধ্যে জনসেবা বৃদ্ধি, স্বাস্থ্যসেবা বৃদ্ধি, জনদুর্ভোগ কমানো, রাস্তাঘাট ও ব্রিজ নির্মাণ, পর্যটনের বিকাশ, আইন কানুন বা বিধিমালা সংশোধন জনস্বার্থ সংরক্ষণের বিষয়গুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করা হয়েছে। বেশি সংখ্যক প্রস্তাব সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ সংশ্লিষ্ট, ২৮টি।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, প্রধান প্রধান আলোচ্য বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে- ভূমি ব্যবস্থাপনা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম জোরদারকরণ; দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যক্রম; স্থানীয় পর্যায়ে কর্ম-সৃজন ও দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচি বাস্তবায়ন; সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচি বাস্তবায়ন; তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার এবং ই-গভর্ন্যান্স; শিক্ষার মান উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ; স্বাস্থ্যসেবা ও পরিবার কল্যাণ; পরিবেশ সংরক্ষণ ও দূষণ রোধ; ভৌত অবকাঠামোর উন্নয়ন এবং উন্নয়নমূলক কার্যক্রমের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও সমন্বয়ের বিষয়গুলোকে আলোচনার জন্য প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে।
এবার রাষ্ট্রপতি সঙ্গে ডিসিরা সৌজন্য সাক্ষাৎ করছেন না। অন্যান্য বছর থাকলেও এবার কেন রাষ্ট্রপতির সঙ্গে ডিসিদের সৌজন্য সাক্ষাৎ রাখা হয়নি- জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ওনার (রাষ্ট্রপতি) সিডিউলের সঙ্গে মেলেনি।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের স্পিরিট নিয়ে আপনারা ডিসিদের কি বার্তা দিবেন জানতে চাইলে শেখ আব্দুর রশিদ বলেন, উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি শুরুই হবে একটি ভিডিও প্রদর্শনের মাধ্যমে। যেখানে এই আন্দোলনটা কীভাবে হয়েছিল, কীভাবে আন্দোলনের ফল লাভ হলো, সেই বিবরণ সেখানে থাকবে। সুতরাং আপনারা বুঝতে পারছেন আমরা সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়ে এটা দেখতে চাইছি। এছাড়া বিপ্লবোত্তর আইন-শৃঙ্খলার বিষয়টিও আমরা শুরুতেই তুলব। সেখানে এটি প্রাধান্য পাবে বলে আমরা আশা করছি।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গত বছর ডিসি সম্মেলনের বাজেট ছিল ২ কোটি টাকার কিছু বেশি। এবার আমরা ১ কোটি ৭০ লাখ বা এর কাছাকাছি রাখার চেষ্টা করব। আশা করছি এর থেকে কিছু টাকা আমরা বাঁচাতেও পারবো ইনশাআল্লাহ।
আরএমএম/এমএএইচ/জেআইএম