উত্তরায় দম্পতির ওপর হামলাকারীদের বিষয় যা জানালো পুলিশ

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০২:২০ পিএম, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

রাজধানীর উত্তরার ৭ নম্বর সেক্টর এলাকায় মেহেবুল হাসান (৩৭) ও তার স্ত্রী নাসরিন আক্তার ইপ্তিকে (২৮) ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি হামলার চাঞ্চল্যকর ঘটনায় জড়িত পুরো চক্রের পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশ।

গ্রেফতাররা হলেন, মো. মোবারক হোসেন (২৫) রবি রায় (২২), মো. আলফাজ মিয়া ওরফে শিশির (২২), সজীব (২০) ও মেহেদী হাসান সাইফ (২৪)।

পুলিশ জানায়, গ্রেফতাররা মূলত একটি গ্যাং। গ্যাংটির দুই সদস্য বিকট শব্দে মোটরসাইকেল চালিয়ে যাওয়ার সময় একটি রিকশাকে ধাক্কা দিয়ে রিকশা যাত্রীদের সঙ্গে বাগবিতণ্ডায় জড়ায়। এসময় ভুক্তভোগী মেহেবুল হাসান তাদের ঝামেলা করতে নিষেধ করলে তার ওপর হামলা করে।

উত্তরায় দম্পতির ওপর হামলাকারীদের বিষয় যা জানালো পুলিশ

বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান উত্তরা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) রওনক জাহান।

তিনি বলেন, গত সোমবার রাত আনুমানিক ৯টা ১৫ মিনিটের দিকে ৭ নম্বর সেক্টরের ৯ নম্বর রোডের বাসার সামনে অজ্ঞাতনামা কয়েকজন অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী এক দম্পতিকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কোপায়। এমন খবরে উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশের একটি টহল টিম তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে জনগণের সহায়তায় ঘটনায় জড়িত মো. মোবারক হোসেন ও রবি রায়কে গ্রেফতার করে।

এ ঘটনায় ভুক্তভোগী নাসরিন আক্তার ইপ্তি বাদী হয়ে উত্তরা পশ্চিম থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে একটি মামলা করেন। এ মামলায় মঙ্গলবার বিকেলে আব্দুল্লাহপুর পশ্চিমপাড়া থেকে রামদা দিয়ে দম্পতিকে কুপিয়ে আহত করা আসামি আলফাজ মিয়া ওরফে শিশিরকে গ্রেফতার করা হয়।

ডিসি রওনক জাহান আরও বলেন, পরবর্তীসময়ে আলফাজের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বুধবার রাত ২টার দিকে গাজীপুরের কোনাবাড়ী এলাকা থেকে সজিবকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে আহত করা অন্য আসামি মেহেদী হাসান সাইফকে টঙ্গীর মাজার বস্তি এলাকা থেকে বুধবার ভোরে গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতার সাইফের কাছ থেকে এ ঘটনায় ব্যবহৃত একটি মোটরসাইকেল ও ঘটনার সময় তার পরিহিত একটি শার্ট জব্দ করা হয়।

আরও পড়ুন:

এছাড়া আজ বুধবার সকালে আলফাজ মিয়া ওরফে শিশির ও মেহেদী হাসান সাইফের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তুরাগ নদীর পাড় থেকে ঘটনায় সময় ব্যবহৃত দুটি রামদা উদ্ধার করা হয়।

সেদিন যা ঘটেছিল

উত্তরা বিভাগের ডিসি বলেন, ওই রাতে মেহেবুল হাসান ও নাসরিন আক্তার ইপ্তি দম্পতি উত্তরা পশ্চিম থানাধীন আমির কমপ্লেক্স থেকে কেনাকাটা করে বাসায় ফিরছিলেন। এসময় ৭ নম্বর সেক্টরের ওই স্থানে তিন ব্যক্তি দুটি মোটরসাইকেল নিয়ে বিকট শব্দ করে এলোমেলোভাবে চালিয়ে যাওয়ার সময় একটি মোটরসাইকেল সামনে থাকা একটি রিকশাকে ধাক্কা দেয়। রিকশাটিতে চার বছরের একটি শিশু তার মায়ের সঙ্গে ছিল। শিশুটির বাবা রিকশা থেকে নেমে মোটরসাইকেলচালক আসামি মো. মোবারক হোসেনের সঙ্গে বাগবিতণ্ডা শুরু করে।

এ সময় রিকশার পেছনে থাকা ভুক্তভোগী দম্পতি তাদের ঝামেলা করতে নিষেধ করে। সে সময় রিকশার যাত্রীরা চলে যান। এ ঘটনায় মোটরসাইকেলে থাকা তিনজন মেহেবুল হাসানের সঙ্গে তর্ক শুরু করে এবং এক পর্যায়ে তাকে মারধর শুরু করে। এ সময় তারা বলতে থাকে ‘আমাদের চিনিস? আমরা কে?’

সে সময় ভুক্তভোগী দম্পতি আশেপাশের লোকজনের সহযোগিতায় আক্রমণকারী একজনকে ধরে ফেলে ও তার মোটরসাইকেল আটক করে। এ সময় ফোন করে সে তার আরও কয়েকজন সহযোগীকে ডেকে নিয়ে আসে। তারা দেশীয় অস্ত্র রামদাসহ ঘটনাস্থলে এসে উপস্থিত জনসাধারণের মধ্যে ভয়ভীতি সৃষ্টি করে রামদা দিয়ে মেহেবুল হাসানকে এলোপাতাড়ি আঘাত করতে থাকে।

উত্তরায় দম্পতির ওপর হামলাকারীদের বিষয় যা জানালো পুলিশ

এ সময় নাসরিন আক্তার ইপ্তি তার স্বামীকে বাঁচানোর জন্য চেষ্টা করলে সন্ত্রাসীরা তাকেও রামদা দিয়ে আঘাত করে। এতে ওই দম্পতি শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত হন।

খবর পেয়ে উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশের টহল টিম দ্রুততম সময়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে জনগণের সহায়তায় মোবারক হোসেন ও রবি রায়কে গ্রেফতার করে।

যারা কুপিয়েছে তারা উত্তরার বাসিন্দা কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, তারা কেউই উত্তরার বাসিন্দা নয়। তারা অন্য এলাকা থেকে এসে এখানে তাণ্ডব চালায়। এ ধরনের অস্ত্রশস্ত্র তাদের আশেপাশেই হয়তো আছে।

ছিনতাইকারীদের গ্রেফতার করলে পুনরায় তারা জামিনে বেরিয়ে আসছে

প্রতিনিয়ত উত্তরায় ছিনতাইয়ের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, উঠতি বয়সী ও মাদকাসক্তরা ছিনতাইয়ের কাজে জড়িত। এসব অপরাধী পথশিশু হিসেবে বড় হয়েছে। পরবর্তীসময়ে তারা মাদকাসক্তের সঙ্গে জড়িত হয়েছে। অনেকক্ষেত্রে ভুক্তভোগীরা মামলা দিতে চান না৷ তবে তাদের ধরতে নিয়মিত অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তাদের যতই গ্রেফতার করা হয় পুনরায় তারা জামিনে বেরিয়ে আসে। তাদের বিচারকার্য অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়ে কারণ তাদের কোনো স্থায়ী ঠিকানা নেই।

ডিএমপির উত্তরা বিভাগ থানার ওসি থেকে শুরু করে ডিসি পর্যন্ত সরকারি নম্বরে ফোন দিলে তারা কেউ রিসিভ করেন না। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিসি রওনক জাহান বলেন, ব্রিফিং চলাকালীনও অসংখ্য ফোন আসছে। কীভাবে এখন ফোনকলগুলো রিসিভ করবো। সে ক্ষেত্রে আপনারা (সাংবাদিক) থানার ডিউটি অফিসারকে ফোন করবেন। এছাড়া ডিএমপি মিডিয়া সেন্টার থেকেও আপনারা তথ্য পেতে পারেন।

টিটি/এসএনআর/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।