ঈদের দ্বিতীয় দিন শিশুদের কোলাহল-আনন্দে রঙিন হাতিরঝিল

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৭:০৪ পিএম, ০৮ জুন ২০২৫
ঈদের ছুটিতে শিশুদের নিয়ে হাতিরঝিলে ঘুরতে এসেছেন অনেকেই

ঈদুল আজহার ছুটির ফাঁকে রাজধানী যখন কিছুটা নিস্তরঙ্গ, তখন হাতিরঝিলে দেখা গেলো বিপরীত চিত্র। লেকপাড়ের শান্ত জলরাশি আর খোলা আকাশের নিচে ঈদের নতুন পোশাক পরে খেলায় মেতে উঠেছে শত শত শিশু। মা-বাবা, দাদা-দাদি, খালা-ফুপু কিংবা চাচা-মামার হাত ধরে ঈদের আনন্দ মাতোয়ারা হতে ছোট্ট পায়ে ছুটে এসেছে তারা।

এতে ঈদের দ্বিতীয় দিন রোববার (৮ জুন) রাজধানীর হাতিরঝিল যেন পরিণত হয়েছে শিশুদের স্বপ্নের আনন্দভূমিতে। চলছে হইচই, কোলাহল আর রঙিন পোশাকে সেজে ওঠা শিশুদের নির্ভেজাল আনন্দের মেলা। পুরো হাতিরঝিল যেন রূপ নিয়েছে এক উন্মুক্ত শিশুপার্কে।

বিজ্ঞাপন

বিকেল ৫টার দিকে হাতিরঝিল এলাকায় পৌঁছাতেই চোখে পড়ে পরিবারসহ ঘুরতে আসা শত শত শিশুর কেউ বেলুন কিনছে, কেউ আইসক্রিম খাচ্ছে, কেউবা বাবা-মায়ের হাত ধরে হাঁটছে। মাঝেমধ্যে বাবা অথবা মা শিশুর সঙ্গে ছবি তুলছেন। হাতিরঝিলে ঘুরতে আসা অনেকেই বসে বসে দেখছেন ছোটদের উচ্ছ্বাস।

ঈদের দ্বিতীয় দিন শিশুর কোলাহল-আনন্দে রঙিন হাতিরঝিল

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

মোহাম্মদপুর থেকে আসা আট বছরের মেহজাবিন জানায়, আব্বু ও আম্মুর সঙ্গে ঘুরতে এসেছি। অনেক মজা হচ্ছে। আইসক্রিম খেয়েছি, ফুচকা খেয়েছি। আম্মু একটা খেলনা কিনে দিয়েছে।

কাকরাইল থেকে বাবা-মায়ের সঙ্গে আসা চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী জারিফ বলেন, কাল আব্বু অনেক ব্যস্ত ছিল। কোরবানির মাংস কাটাকাটি, ভাগ করতে সন্ধ্যা হয়ে যায়। তাই কাল ঘুরতে বের হতে পারিনি। আজ আব্বু, আম্মু এবং আমার বনু (বোন) মিলে ঘুরতে এসেছি। আমাদের মতো অনেকেই ঘুরতে এসেছে। খুব মজা হচ্ছে।

সে আরও জানায়, আজ অনেক ঘোরাঘুরি করবো। এখন ঈদের ছুটি। পড়ার কোনো চাপ নেই। আব্বু-আম্মু দুজনই বলেছে আজ যতক্ষণ খুশি ঘুরতে পারবো। যা খেতে চাইবো তাই খেতে দেবে। আইসক্রিম আমার খুব প্রিয়। হাতিরঝিলে ঢুকেই একটি আইসক্রিম খেয়েছি। আমার বনুও খেয়েছে। আমরা আজ অনেক আনন্দ করছি।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

ঈদের দ্বিতীয় দিন শিশুর কোলাহল-আনন্দে রঙিন হাতিরঝিল

মুগদা থেকে হাতিরঝিলে ঘুরতে আসা তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী জারা বলে, আব্বু, আম্মু, খালামণি, মামার সঙ্গে এখানে ঘুরতে এসেছি। খালামণি চকলেট কিনে দিয়েছে। মামা খেলনা দিয়েছে। আজকে খুব মজা হচ্ছে।

সে বলে, স্কুল খোলা থাকলে আম্মু সবসময় পড়তে বলে। খেলার সুযোগ হয় না। খালামণি ও মামা আজ আমাদের বাসায় ঘুরতে এসেছে। এর জন্য আব্বু, আম্মু সবাইকে নিয়ে এখানে এসেছে।

বিজ্ঞাপন

শুধু শিশুদেরই নয়, অভিভাবকদের মাঝেও দেখা গেছে আনন্দের ছাপ। তেজগাঁও থেকে আসা ফারহানা ইসলাম বলেন, সারাবছর তো পড়াশোনার চাপ। ঈদের ছুটিতে বাচ্চাদের একটু ঘুরে বেড়াতে দেওয়া দরকার। হাতিরঝিল খোলামেলা, নিরাপদ- তাই এখানে আসা।

তিনি বলেন, শিশুর মুখে হাসি মানেই পরিবারের খুশি। আমাদের একটাই সন্তান। ঈদের এই বিশেষ দিনে ওর মুখে হাসি ফোটাতে পারাই আমাদের সবচেয়ে বড় আনন্দ। খোলামেলা পরিবেশে আইমান (ফারহানার ছেলে) ছোটাছুটি করছে। এতে ও খুব আনন্দ পাচ্ছে, আমাদেরও ভালো লাগছে।

শান্তিনগর থেকে ছেলে ও মেয়েকে নিয়ে হাতিরঝিলে ঘুরতে এসেছেন মোরসালিন আহমেদ। জাগো নিউজকে তিনি বলেন, ঢাকা শহরে খোলামেলা পরিবেশের যথেষ্ট অভাব রয়েছে। খোলামেলা পরিবেশের সবচেয়ে ভালো বিনোদনকেন্দ্র হাতিরঝিল। এজন্য ওদের নিয়ে হাতিরঝিলে ঘুরতে এসেছি।

বিজ্ঞাপন

ঈদের দ্বিতীয় দিন শিশুর কোলাহল-আনন্দে রঙিন হাতিরঝিল

তিনি বলেন, আমরা যত কষ্ট করি সবাই তো ছেলে-মেয়ের জন্য। ওদের খুশি, ওদের ভালোই তো আমাদের সুখ। সবসময় চেষ্টা করি ওদের হাসিখুশি রাখতে। কিন্তু ব্যস্ত জীবনে ওদের নিয়ে ঘোরাঘুরির সুযোগ খুব কম পাই। তাই যখনই সুযোগ হয় ওদের নিয়ে ঘুরতে বের হই। এখন ঈদের লম্বা ছুটি। এই ছুটির ভেতরে ওদের নিয়ে ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় ঘোরাঘুরির ইচ্ছা আছে।

হাতিরঝিলের নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করা এক আনসার সদস্য বলেন, হাতিরঝিলে যারা ঘুরতে এসেছেন তারা যাতে নিরাপদে ঘোরাঘুরি করতে পারেন সে বিষয়ে আমরা নজর রাখছি। শিশু ও নারীদের হাঁটাচলায় যাতে কোনো বিঘ্ন সৃষ্টি না হয়, হকাররা যাতে কাউকে বিরক্ত না করেন সেদিকে খেয়াল রাখছি।

বিজ্ঞাপন

jagonews24.com

জাগোনিউজের খবর পেতে ফলো করুন

হাতিরঝিলে পার্কের পাশে ফুচকা বিক্রি করা মো. ইসরাফিল বলেন, ঈদের লম্বা ছুটির কারণে বেশিরভাগ মানুষ গ্রামে চলে গেছেন। যারা ঢাকায় আছেন তারা পরিবার পরিজন নিয়ে ঘুরতে আসছেন। গতকাল ঈদের দিন মানুষের উপস্থিতি কম ছিল। আজ মানুষের উপস্থিতি অনেক ভালো। যারা আসছেন তাদের মধ্যে শিশুদের সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি।

এমএএস/এএমএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন jagofeature@gmail.com ঠিকানায়।