আইএসপিআর

খাগড়াছড়িতে নারী-শিশুদের ‘নাশকতামূলক কাজে’ বাধ্য করছে ইউপিডিএফ

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৯:২৬ এএম, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫
খাগড়াছড়িতে ১৪৪ ধারা জারির পর গতকাল রোববার সেনাসদস্যদের টহল/ছবি: জাগো নিউজ

খাগড়াছড়িতে গত ১০ দিনে নতুন করে অস্থিরতা তৈরির পেছনে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলকে অস্থিতিশীল করা এবং পাহাড়ি-বাঙালি দাঙ্গা বাঁধানোর বড় ধরনের ষড়যন্ত্র দেখছে সেনাবাহিনী। আর সেজন্য পাহাড়ি সংগঠন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টকে (ইউপিডিএফ) দায়ী করা হয়েছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) এক বিবৃতিতে।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে—বিগত কয়েক দিনের ঘটনা পর্যবেক্ষণে এটি স্পষ্ট যে, ইউপিডিএফ এবং তার অঙ্গসংগঠনগুলো পার্বত্য চট্টগ্রামকে অস্থিতিশীল করার লক্ষ্যে সুপরিকল্পিতভাবে এলাকার নারী এবং স্কুলগামী কোমলমতি শিশুদের বিভিন্ন পন্থায় তাদের নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণে বাধ্য করছে।

ঘটনার সূত্রপাত গত বছরের সেপ্টেম্বরে
আইএসপিআর জানায়, ২০২৪ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়িতে মোটরসাইকেলচালক মামুন হত্যাকাণ্ডের জেরে ইউপিডিএফ দীঘিনালা ও রাঙ্গামাটিতে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়ানোর চেষ্টা করে। নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে তিনজন নিহত ও বেশ কয়েকজন আহত হয়। এর এক বছর পূর্তিতে চলতি বছর ইউপিডিএফ পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে প্রতিবাদ মিছিলের আয়োজন করে এবং অনুরূপ উত্তেজনা সৃষ্টির চেষ্টা করে।

খাগড়াছড়িতে নারী-শিশুদের ‘নাশকতামূলক কাজে’ বাধ্য করছে ইউপিডিএফ

ধর্ষণ অভিযোগ ও উত্তেজনা
চলতি বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর রাতে খাগড়াছড়ির সিঙ্গিনালা এলাকায় এক স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। ইউপিডিএফের দাবিকৃত সন্দেহভাজন শয়ন শীলকে ২৪ সেপ্টেম্বর সেনাবাহিনী গ্রেফতার করে। পরে তাকে রিমান্ডে নেয় পুলিশ। আইনি প্রক্রিয়া চলমান থাকলেও ইউপিডিএফের অঙ্গসংগঠন পিসিপির নেতা উখ্যানু মারমা ‘জুম্ম ছাত্র জনতার’ ব্যানারে খাগড়াছড়িতে বিক্ষোভ ও মানববন্ধনের ডাক দেন।

আরও পড়ুন
থমথমে খাগড়াছড়ি, দোকানপাট বন্ধ
খাগড়াছড়িতে সেনা-পুলিশসহ আহত অনেকে, তিন পাহাড়ি নিহত

ক্রমবর্ধমান সহিংসতা
২৪ সেপ্টেম্বরের প্রতিবাদের ধারাবাহিকতায় ২৫ সেপ্টেম্বর ইউপিডিএফের আহ্বানে অর্ধদিবস হরতাল পালিত হয়। একই সময়ে দেশি-বিদেশি কিছু ব্লগার ও পার্বত্য অঞ্চলের কয়েকজন দায়িত্বশীল ব্যক্তি অনলাইনে বাঙালিদের উদ্দেশে অপপ্রচার চালান বলে অভিযোগ ওঠে।

২৬ সেপ্টেম্বর উখ্যানু মারমার নেতৃত্বে ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের উসকানিতে খাগড়াছড়ি জুড়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। অবরোধ চলাকালে ইউপিডিএফের প্ররোচনায় টহলরত সেনাদলের ওপর ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করা হয়, এতে তিনজন সেনা সদস্য আহত হন। সেনাবাহিনী সংযম দেখিয়ে বলপ্রয়োগ না করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখে।

খাগড়াছড়িতে নারী-শিশুদের ‘নাশকতামূলক কাজে’ বাধ্য করছে ইউপিডিএফ

২৭ সেপ্টেম্বর দাঙ্গার চেষ্টা
পরদিন ২৭ সেপ্টেম্বর ইউপিডিএফ কর্মীরা পুনরায় দাঙ্গা-হাঙ্গামার চেষ্টা চালায়। খাগড়াছড়ি পৌরসভা এলাকায় বাঙালি ও সাধারণ মানুষের ওপর গুলি, ভাঙচুর, অ্যাম্বুলেন্সে আক্রমণ এবং রাস্তা অবরোধ করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটায়। পরিস্থিতি পাহাড়ি–বাঙালির সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় রূপ নিলে জেলা প্রশাসন খাগড়াছড়ি ও গুইমারায় ১৪৪ ধারা জারি করে। সেনাবাহিনী, বিজিবি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দ্রুত তৎপরতায় সেদিন রাতেই উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণে আসে।

২৮ সেপ্টেম্বর রামসু বাজারে সংঘর্ষ
পরদিন সকাল থেকেই ইউপিডিএফ কর্মীরা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে গুইমারা উপজেলার রামসু বাজারে অবরোধ গড়ে তোলে। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ইউপিডিএফ কর্মীরা বাঙালি জনগোষ্ঠীর সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় জড়ায় এবং সেনাবাহিনীর ওপর দেশীয় অস্ত্র, ইট-পাটকেল ও গুলতি নিয়ে হামলা চালায়। এতে সেনাবাহিনীর তিন কর্মকর্তা ও ১০ সদস্য আহত হন। একই সময়ে রামগড়ে বিজিবির গাড়ি ভাঙচুর ও সদস্যদের আহত করার ঘটনাও ঘটে।

বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রামসু বাজারের পাশের উঁচু পাহাড় থেকে ইউপিডিএফ সশস্ত্র দল প্রায় ১০০-১৫০ রাউন্ড গুলি ছোড়ে, যাতে সেনাসদস্যসহ পাহাড়ি-বাঙালি এলাকাবাসী অনেকে গুলিবিদ্ধ হন। সেনা টহল দল দ্রুত অভিযান চালালে সশস্ত্র দল পালিয়ে যায়। এসময় ইউপিডিএফের বহিরাগত দুষ্কৃতকারীরা রামসু বাজারের ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় লিপ্ত হয়। অতিরিক্ত সেনাদল মোতায়েনের পর বিকেল সাড়ে ৪টায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।

ষড়যন্ত্রের অভিযোগ
আইএসপিআর জানিয়েছে, ইউপিডিএফ নারী ও স্কুলগামী শিশুদের নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে বাধ্য করছে এবং বহিরাগত সন্ত্রাসীদের দেশীয় অস্ত্রসহ পার্বত্য অঞ্চলে নিয়ে আসছে। ২৮ সেপ্টেম্বর বিকেলে বিজিবির কাপ্তাই ব্যাটালিয়নের একটি চেকপোস্টে ইউপিডিএফের পরিবহনকৃত বিপুল দেশীয় অস্ত্রও জব্দ করা হয়।

বিভিন্ন প্রমাণাদি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে সংরক্ষিত
আইএসপিআর বলেছে, গত ১৯ থেকে ২৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত খাগড়াছড়ি এবং গুইমারা এলাকায় বিভিন্ন ঘটনাকে পুঁজি করে আইনের আশ্রয় না নিয়ে পার্বত্য অঞ্চলকে অস্থিতিশীল এবং সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সংগঠনের বিষয়টি একটি বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের অংশ বলে প্রতীয়মান। এ বিষয়ে বিভিন্ন প্রমাণাদি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে সংরক্ষিত রয়েছে।

আরও পড়ুন
পাহাড়ে সরকারি বাহিনী ছাড়া কারও কাছেই অস্ত্র থাকতে পারবে না

গত কয়েকদিনের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পার্বত্য অঞ্চলের সব জাতিগোষ্ঠীর রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ ও জনসাধারণকে সংযত আচরণ করার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে।

দেশের অখণ্ডতা রক্ষায় দৃঢ়প্রতিজ্ঞ সেনাবাহিনী
পার্বত্য অঞ্চলের স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে সেনাবাহিনীসহ সব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সহযোগিতা করতে বিশেষভাবে অনুরোধ করা হলো। সব ধরনের অপপ্রচার, মিথ্যা প্রচারণা, উসকানিমূলক কর্মকাণ্ড সত্ত্বেও সেনাবাহিনী বাংলাদেশের অবিচ্ছেদ্য এই অংশের অখণ্ডতা রক্ষায় দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।

পার্বত্য চট্টগ্রামের সব জাতিগোষ্ঠীর নিরাপত্তা নিশ্চিতে এবং দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সেনাবাহিনী যে কোনো ধরনের পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলেও উল্লেখ করেছে আইএসপিআর।

টিটি/এমকেআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।