ইশতেহারে নারী-শিশুর অধিকার নিশ্চিতে ৭ সংস্থার জাতীয় প্ল্যাটফর্ম

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৯:০৮ পিএম, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫

দেশের নারী ও শিশুদের অধিকার, সুরক্ষা ও কল্যাণকে জাতীয় নির্বাচনি ইশতেহারে অগ্রাধিকার দেওয়ার লক্ষ্যে ৭টি শীর্ষ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থা এক হয়ে ‘অ্যাডভান্সিং ইকুয়ালিটি অ্যান্ড জাস্টিস কোয়ালিশন’ নামে একটি জাতীয় প্ল্যাটফর্ম গঠন করেছে।

জোটে রয়েছে: ব্রেকিং দ্য সাইলেন্স, জাগো ফাউন্ডেশন, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন, অক্সফাম ইন বাংলাদেশ, প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ, সেভ দ্য চিলড্রেন ইন বাংলাদেশ এবং ওয়াটারএইড বাংলাদেশ।

জোট এরই মধ্যে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পরামর্শসভা, তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনা এবং কমিউনিটি পর্যায়ের মতামত গ্রহণ কার্যক্রম পরিচালনা করছে। যাতে নগর, গ্রাম ও জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার নারী ও শিশুদের প্রয়োজনীয়তা ও অগ্রাধিকারগুলো সুস্পষ্টভাবে উঠে আসে।

এসব প্রাথমিক পর্যালোচনা প্রতিবেদন এবং জোটের অবস্থানপত্রের (পজিশন পেপার) ওপর ভিত্তি করে ১৪ ডিসেম্বর ঢাকায় রাজনৈতিক দলসমূহের সঙ্গে উচ্চপর্যায়ের সংলাপে জোট তাদের নির্দিষ্ট দাবি ও প্রস্তাবনা উপস্থাপন করবে।

জোটের সদস্যরা জানান, বাংলাদেশের জনসংখ্যার বৃহত্তম অংশ- নারী ও শিশুদের কণ্ঠ, সংগ্রাম এবং আকাঙ্ক্ষা যেন আর কখনো রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতির বাইরে না থাকে, সেই লক্ষ্যেই এই জোটের যাত্রা।

অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারির জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে ইশতেহার প্রণয়নের সময়ই আগামী বছরের বাজেট, সেবাপ্রদান, সামাজিক বিনিয়োগ এবং উন্নয়ন অগ্রাধিকারের দিকনির্দেশনা নির্ধারিত হবে। এখানে নারী ও শিশুদের বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত হওয়া অত্যন্ত জরুরি।

বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ৫০.৮% নারী (ওয়ার্ল্ড ব্যাংক, ২০২৩) এবং ৩৩% শিশু (ইউনিসেফ, ২০২৩), কিন্তু রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতিতে তাদের প্রয়োজনীয়তা আজও অপর্যাপ্তভাবে প্রতিফলিত হয়। জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতা, বাল্যবিয়ে, অশিক্ষা, অপুষ্টি, অনিরাপদ অভিবাসন, এবং জলবায়ু ঝুঁকিসহ বহু স্থায়ী চ্যালেঞ্জ এখনো দেশে বিরাজমান।

ভিএডব্লিউ সার্ভে ২০২৪ (বিবিএস ও ইউএনএফপিএ) অনুসারে, বিবাহিত নারীদের ৭০% জীবনে কখনো না কখনো সঙ্গীর দ্বারা সহিংসতার শিকার হয়েছেন। অন্যদিকে এশিয়ার সর্বোচ্চ বাল্যবিয়ে হার ৫১.৪% বাংলাদেশেই (ইউনিসেফ–ইউএন উইমেন–প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল, ২০২৩)। চর, উপকূল ও বস্তি অঞ্চলের শিশুরা শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সুরক্ষায় মারাত্মক বঞ্চনার সম্মুখীন হচ্ছে, বিশেষ করে প্রতিবন্ধী শিশুরা আরও বেশি বাদ পড়ছে।

বাংলাদেশের জলবায়ু সংকটও সবচেয়ে বড় উদ্বেগের বিষয়। ২০৫০ সালের মধ্যে প্রায় ১ কোটি ৯০ লাখ মানুষ জলবায়ুর কারণে বাস্তুচ্যুত হতে পারে (ওয়ার্ল্ড ব্যাংক, গ্রাউন্ডসওয়েল রিপোর্ট, ২০২১), যার প্রধান ঝুঁকিতে নারী ও শিশুরাই রয়েছে।

প্রাথমিক পরামর্শসমূহে জোট পাঁচটি অগ্রাধিকার ক্ষেত্র চিহ্নিত করেছে, যেগুলোর জন্য জরুরি রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি প্রয়োজন: শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পুষ্টি, সুরক্ষা, জলবায়ু ঝুঁকি, বৈচিত্র্য ও অন্তর্ভুক্তি এবং ওয়াশ।

জোটের সদস্যরা আরও বলেন, নারী ও শিশুদের কল্যাণ কোনো গৌণ বিষয় নয়, এটি একটি ন্যায়ভিত্তিক, সহনশীল ও টেকসই বাংলাদেশের ভিত্তি।

তারা দেশের সব রাজনৈতিক দলকে প্রমাণ-ভিত্তিক, পর্যাপ্ত অর্থায়নসমৃদ্ধ এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক নীতি গ্রহণের আহ্বান জানান, যা নারী ও শিশুদের বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতার প্রতিফলন ঘটাবে।

আইএইচও/এমআইএইচএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।