গণঅভ্যুত্থানে শহীদ
দুই মরদেহ তোলার পর ডিএনএ সংগ্রহ ও ময়নাতদন্ত সম্পন্ন
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের পরিচয় শনাক্তে আন্তর্জাতিক বিধি মেনে কাজ করছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এরই মধ্যে কবর থেকে উত্তোলিত দুটি মরদেহের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ ও ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করা হয়েছে। আরও তিনটি মরদেহের এ-সংক্রান্ত কাজ চলমান।
সোমবার (৮ ডিসেম্বর) এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) জসীম উদ্দিন খান।
রোববার (৭ ডিসেম্বর) রাজধানীর মোহাম্মদপুরের রায়েরবাজার শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ-সংলগ্ন কবরস্থান থেকে ধারাবাহিকভাবে ১১৪টি মরদেহ উত্তোলন করে শনাক্তকরণ কার্যক্রম শুরু হয়।
জসীম উদ্দিন খান বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে স্বজন হারানো পরিবারগুলোর মধ্যে সাতটি পরিবারের ১১ জন সদস্য সিআইডিতে এসে তাদের ডিএনএ নমুনা দিয়ে গেছেন। এখন সিআইডির কাজ হচ্ছে, গণঅভ্যুত্থানের সময় যাদের নাম-পরিচয়হীন অবস্থায় দাফন করা হয়েছিল, তাদের ডিএনএর সঙ্গে পরিবারের সদস্যদের নমুনা মিলিয়ে পরিচয় শনাক্ত করা। এটি হচ্ছে সিআইডির মূল উদ্দেশ্য।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘প্রথম দিন (রোববার) দুটি বডি কবর থেকে উত্তোলন করে ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ এবং পোস্টমর্টেম সম্পন্ন করে পুনরায় কবরস্থ করা হয়েছে। যথারীতি আজ আমাদের সকাল থেকে কাজ শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে তিনটি বডির ডিএনএ সংগ্রহের কাজ চলছে, তা চলমান থাকবে।’
এর আগে রোববার এই কার্যক্রম সম্পর্কে এক সংবাদ সম্মেলনে সিআইডি প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মো. ছিবগাত উল্লাহ জানান, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শাহাদতবরণকারী অজ্ঞাতনামা শহীদদের লাশ আন্তর্জাতিক রীতি মেনে উত্তোলন করা হবে।
ছিবগাত উল্লাহ বলেন, ‘আনাসের মতো যারা বুকের রক্ত ঢেলে দেশের জন্য রাজপথে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন, তাদের প্রতি আমাদের গভীর শ্রদ্ধা। এই কবরস্থানে যারা নাম-পরিচয়হীন অবস্থায় শুয়ে আছেন, তাদের পরিচয় তখন যাচাই-বাছাই করা হয়নি। তাদের পরিচয় উদ্ঘাটন করা জাতির কাছে আমাদের একটি দায়িত্ব। আজ সেই মহান কাজের সূচনা হলো।’
সিআইডি প্রধান জানান, জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তরের (ওএইচসিএইচআর) মাধ্যমে আর্জেন্টিনা থেকে ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ লুইস ফন্ডিব্রাইডার ঢাকায় এসে পুরো কার্যক্রমে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তিনি গত ৪০ বছরে ৬৫টি দেশে একই ধরনের অপারেশন পরিচালনা করেন।
আরও পড়ুন
জুলাই আন্দোলনে শহীদ ১১৪ জনের পরিচয় শনাক্তে মরদেহ উত্তোলন রোববার
আন্তর্জাতিক প্রটোকল মেনেই শহীদদের মরদেহ তোলা হবে: সিআইডি প্রধান
তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক রীতি-মিনেসোটা প্রটোকল অনুসরণ করে মরদেহ উত্তোলন, ময়নাতদন্ত, ডিএনএ নমুনা সংগ্রহসহ প্রতিটি ধাপ সম্পন্ন হবে। এজন্য সিটি করপোরেশন, ঢাকা মেডিকেল, ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ, ডিএমপি, বিভাগীয় কমিশনারসহ সব অংশীজনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
মরদেহ উত্তোলন থেকে পুনরায় দাফন পর্যন্ত নির্দিষ্ট ধাপে সব কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে জানিয়ে ছিবগাত উল্লাহ বলেন, আবেদন অনুযায়ী প্রাথমিকভাবে ১১৪টি কবর চিহ্নিত হয়েছে, যা বাস্তবে কমবেশি হতে পারে। মরদেহ উত্তোলনের পর ময়নাতদন্ত, হাড়ের নমুনা বা কোষ সংগ্রহ এবং ডিএনএ প্রোফাইল তৈরি করা হবে। পরিচয় নিশ্চিত হলে ধর্মীয় সম্মান বজায় রেখে আবার দাফন করা হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে সিআইডি প্রধান বলেন, পরিচয় শনাক্তের পর কেউ যদি মরদেহ গ্রহণ করতে চান তাহলে গ্রহণ করতে পারবেন। আবেদনের বিষয়ে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত ১০ জন স্বজন আবেদন করেছেন, আরও কেউ থাকলে সিআইডিতে যোগাযোগ করতে পারবেন। সিআইডি হটলাইনে যোগাযোগ করলে স্বজনদের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হবে।
ছিবগাত উল্লাহ বলেন, ‘আমরা জানি না কোন কবরে কে আছেন। তাই সময় কত লাগবে বলা সম্ভব নয়। তবে আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি এই প্রক্রিয়ায় সব শহীদের পরিচয় আমরা বের করতে পারবো।’
সহযোগিতার আহ্বান জানিয়ে সিআইডি প্রধান সাংবাদিকদের অনুরোধ করে বলেন, ‘আন্তর্জাতিক প্রটোকল অনুযায়ী মরদেহের কোনো ছবি বা সংবেদনশীল তথ্য প্রকাশ করা যাবে না। এটি অত্যন্ত সম্মানজনক ও মানবাধিকার-সংশ্লিষ্ট কাজ। আপনাদের আগের মতোই সহযোগিতা চাই।’
পরিবারগুলোর প্রতি সহানুভূতি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘অনেক বাবা-মা, ভাই-বোন বছর ধরে ঘুরে বেড়িয়েছেন তাদের আপনজনদের পরিচয় জানার জন্য। আমরা চাই, এই জাতীয় বেদনার দায় থেকে দেশকে যেন মুক্ত করতে পারি।’
এসময় আর্জেন্টিনার ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ লুইস ফন্ডিব্রাইডার বলেন, ‘আমি গত তিন মাস ধরে সিআইডির সঙ্গে কাজ করছি। আমি নিশ্চয়তা দিচ্ছি, এই কাজ আন্তর্জাতিক ফরেনসিক মানদণ্ড অনুসরণ করে করা হবে। আন্তর্জাতিক রীতি অনুসরণ করে স্থানীয় সংস্থাকে (সিআইডি) সহায়তা করা হবে।’
কেআর/একিউএফ/এমএস