গণপিটুনি নাকি ক্রসফায়ার!


প্রকাশিত: ০২:১০ পিএম, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

রাজধানীর মিরপুরে পৃথক দু`টি স্থান থেকে ৪ জনের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এক রাতে ৪ ব্যক্তির নিহতের ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। নিহতের ঘটনাকে পুলিশ গণপিটিুনি বললেও প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন ভিন্ন কথা।

পুলিশের বলছে, নিহত চারজনই নাশকতাকারী। এদের মধ্যে একজন ক্রসফায়ারে নিহত হলেও বাকি তিনজন গণপিটুনিতে নিহত হয়েছেন। তবে নিহতদের চারজনের শরীরে গুলির চিহ্ন রয়েছে বলে পুলিশ স্বীকার করেছে।

এলাকাবাসী ও প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, তিনজনকে হাত ও চোখ বেঁধে তাদের উপর্যুপরি গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।

সোমবার দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মিরপুর কাজীপাড়া কৃষিবিদ মার্কেটের পশ্চিম দিকের বাশবাড়ি গলির শেষ মাথায় পাশাপাশি দু`টি সুউচ্চ ভবন। এই দু্ই ভবনের মাঝ গলি থেকেই তিনজনের মরদেহ উদ্ধার করেছে মিরপুর থানা পুলিশ। ভবন দু`টির পাশের দেয়ালে রক্তের দাগ। মাটিতে রক্তের ছাপ। পড়ে থাকতে দেখা গেছে অনেকগুলো গুলির খোসা, লাইলন দড়ি।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, রাতে একটি সাদা মাইক্রোবাসে করে হাত ও পা বেঁধে তিনজনকে ধরে আনা হয় এখানে। এরপর চলে গুলির শব্দ।

ঘটনাস্থলে কথা হয় জাকির নামে স্থানীয় এক বাসিন্দার সথে। যিনি রাতে কিছু মানুষের বাঁচার আকুতি আর মূহুর্মূহু গুলির শব্দ শুনেছেন। তার দাবি, “রাত সাড়ে ১১টার ঘটনা। ভাত খেতে বসেছি। টিভি চলছিল। এমন সময় মূহুর্মূহু গুলির শব্দ। অন্তত ৩০টি গুলির শব্দ। এরপর চিৎকার। বাঁচার আহাজারি, ও বাবারে! বাঁচাও, আমারে বাঁচাও! এরপর আবার নিস্তব্ধতা।”

তিনি বলছিলেন, ভয়ে ঘরের বাইরে বের হতে সাহস পাননি। তবে সকালে ঘুম থেকে ওঠে শোনেন ৩ জন রাতে মারা গেছেন।

স্থানীয় আরেক বাসিন্দা সালমা বেগম বলেন, তিনজনকে হাত ও চোখ বেঁধে গলি দিয়ে নিয়ে আসা হয়। এরপর একটি গাড়িতে পুলিশের একটি দল এসে দাঁড়িয়ে থাকে। এরপর ৫/৬ জন যুবক একটি সাদা মাইক্রোবাস থেকে নেমে বলে শালার পুতেরা কই। এই বলে লাথি আর কিল-ঘুষি, গুলির শব্দ।

ওষুধ বিক্রেতা রনি বলেন, অসংখ্য গুলির শব্দ শুনেছি। তবে কী হয়েছে জানার চেষ্টা না করে ভয়ে দোকান বন্ধ করে বাসায় চলে গেছি।

অন্যদিকে মিরপুরের টেকনিক্যালে ব্রিজের নিচ থেকে ওয়াদুদ (৩৫) নামে এক ব্যক্তি বন্দুকযুদ্ধে মারা গেছেন বলে জানিয়েছে মিরপুর মডেল থানা পুলিশ। নিহত ওয়াদুদ মিরপুর ১০ নম্বর ওয়ার্ড শ্রমিকদলের সভাপতি। রোববার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বাসে ককটেল হামলার ঘটনায় তাকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ।

এব্যাপারে মিরপুর থানার ওসি সালাউদ্দিন বলেন, রোববার সকালে মিরপুরের সিটি কর্পোরেশনের কার্যালয়ের সামনে ওয়াদুদকে আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদে সে স্বীকার করে মিরপুর থানা শ্রমিক দলের সভাপতি পারভেজ ও রুবেল নামে একজনের নির্দেশে বাসে ককটেল হামলা চালিয়েছে। পরে ওয়াদুদকে নিয়ে রাতে পারভেজ ও তার সহযোগীদের ধরতে অভিযান চালানো হয়। টেকনিক্যাল মোড়ের কাছে কল্যাণপুর হাউজিংয়ের কাছে গেলে ওয়াদুদের সহযোগীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়লে পুলিশও পাল্টা গুলি চালায়। পরে তারা পালিয়ে গেলেও ঘটনাস্থল থেকে ওয়াদুদের গুলিবিদ্ধ মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

কাজীপাড়ার বাশবাড়ি গলির থেকে অজ্ঞাত তিন যুবকের লাশ উদ্ধার সম্পর্কে ওসি সালাউদ্দিন বলেন, নাশকতার উদ্দেশ্যে পল্লবী থেকে ওই স্থানে জড়ো হয়েছিল ১০/১৫ জন যুবক। স্থানীয় লোকজন টের পেয়ে তিনজনকে ধরে গণপিটুনি দেয়, বাকিরা পালিয়ে যায়।

তিনি বলেন, পুলিশের কিছু করার ছিল না। কারণ জনরোষে পড়ে তাদের মৃত্যু হয়েছে। নিহতদের শরীরে আঘাতের চিহ্ন থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কারো কাছে লাইসেন্স করা পিস্তল থাকতেই পারে। জীবন বাঁচাতে তারা নাশকতাকারীদের ধৃত করতে পারে।

তিনি আরও বলেন, পিস্তল কেন দেওয়া হয়েছে? জান-মাল বাঁচাতে ব্যবহার করতেই পারে। এরপরেও অবৈধ অস্ত্র দিয়ে গুলি করা হয়েছে কি-না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

তিনি দাবি করেন, যারা গণপিটুনিতে মারা গেছেন তারা যে নাশকতাকারী ছিল তা পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে। উভয় ঘটনায় দু`টি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। তদন্ত শেষে বিস্তারিত জানানো হবে।

জেইউ/এসএ/এএ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।