উচ্চ ঝুঁকি থাকলেও বিদেশফেরত যাত্রীর সংখ্যা কমছে না

মনিরুজ্জামান উজ্জ্বল
মনিরুজ্জামান উজ্জ্বল মনিরুজ্জামান উজ্জ্বল , বিশেষ সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ১০:৪৭ পিএম, ০৭ মার্চ ২০২০

বাংলাদেশের মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকলেও বিদেশফেরত যাত্রীর সংখ্যা কমছে না। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক সম্প্রতি করোনাভাইরাস পরিস্থিতি সম্পর্কে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এতে সংক্রমণের ঝুঁকির বিষয়টি বিবেচনা করে, খুব বেশি প্রয়োজন না হলে বিদেশ গমনাগমন না করা, বিশেষ করে চীনসহ আক্রান্ত দেশগুলোতে গমনাগমন না করার পরামর্শ দিয়েছিলেন।

ইতোমধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ নিজেদের নিরাপত্তার স্বার্থে ফ্লাইট পরিচালনা বন্ধ করে দিয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ তীব্র ঝুঁকি এড়াতে এখনও ফ্লাইট বন্ধ, কিংবা বিদেশ থেকে আসা যাত্রীর সংখ্যা কমাতে পারেনি

বিমান, স্থল, সমুদ্র ও রেল স্টেশন দিয়ে এখনও প্রতিদিন প্রায় ১৬ হাজার যাত্রী বিভিন্ন দেশ থেকে ফিরে আসছে। এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাস আক্রান্ত কোনো রোগী শনাক্ত না হলেও, বিদেশফেরত যাত্রীদের মাধ্যমে যেকোনো সময় দেশে এ ভাইরানে রোগী শনাক্ত হতে পারে বলে স্বাস্থ্য ও রোগতত্ত্ব বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন।

ঘনবসতিপূর্ণ দেশ হওয়ায় বাংলাদেশে কয়েকশ হাজার মানুষ করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হতে পারে বলে তারা আশঙ্কা করছেন। এ কারণে অনতিবিলম্বে বিদেশ থেকে যাত্রী আসা-যাওয়া বন্ধ করার ব্যাপারে কার্যকর ও দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়া প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন বিশেষজ্ঞরা।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, স্বাস্থ্য অধিদফতরের কাছে করোনাভাইরাস শনাক্তকরণের জন্য ব্যবহৃত রি-এজেন্ট সীমিত। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, চীন ও দক্ষিণ কোরিয়া থেকে মাত্র দেড় হাজার রি-এজেন্ট ডোনেশন পাওয়া গেছে। ফলে দেশেে একসঙ্গে হাজার হাজারর আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেলে পরিস্থিতি সামাল দেয়া মুশকিল হয়ে পড়বে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা শনিবার (৭ মার্চ) করোনাভাইরাস পরিস্থিতি সম্পর্কিত প্রেস ব্রিফিংয়ে জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে সর্বমোট ১৫ হাজার ৬৯৭ জন ফিরেছেন। তার মধ্যে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তজার্তিক বিমানবন্দর, চট্টগ্রামে হযরত শাহ আমানত ও সিলেটের শাহজালাল আন্তজার্তিক বিমানবন্দর দিয়ে ৭ হাজার ৪৬৫ জন, বিভিন্ন স্থলবন্দর দিয়ে ৭ হাজার ৭০৮ জন, চট্টগ্রাম ও মংলা সমুদ্র বন্দর দিয়ে ২১০ জন, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট ও বেনাপোল রেল স্টেশন দিয়ে ফেরা ৩১৪ জনের হেলথ স্ক্রিনিং করা হয়েছে। গত ২১ জানুয়ারি থেকে ৬ মার্চ পর্যন্ত ৪ লাখ ৯৪ হাজার ৭০৫ জনের হেলথ স্ক্রিনিং করা হয়। সন্দেহভাজন ১১১ জনকে পরীক্ষা করা হলেও তাদের কারও শরীরে করোনাভাইরাস ধরা পড়েনি।

আইইডিসিআর পরিচালক অধ্যাপক ডা. স্রেবিনা জানান, দক্ষিণ কোরিয়া, ইরান ও ইতালির সার্বিক পরিস্থিতি এখনও উদ্বেগজনক। সিঙ্গাপুর, আরব আমিরাত, ইতালি ছাড়া অন্যান্য দেশে এখন পর্যন্ত কোনো প্রবাসী বাংলাদেশি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়নি। সিঙ্গাপুরে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন বাংলাদেশি রোগীর অবস্থার উন্নতি হয়নি। আরেকজন প্রবাসী বাংলাদেশিও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। চীনের উহান থেকে দিল্লিতে আসা ২৩ জন বাংলাদেশি নাগরিক শহরটি ৪০ মাইল দূরে একটি কোয়ারেন্টাইনে আছেন।

শনিবার রাতে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদের কাছে জানতে চাওয়া হয়, দেশে করোনাভাইরাসের ঝুঁকি রয়েছে কি-না। তিনি বলেন, বাংলাদেশ করোনাভাইরাস সংক্রমণের উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। দেশে এখনও কোনো রোগী না পাওয়া গেলেও, পাওয়া যে যাবে না তা বলা যাচ্ছে না। দেশে করোনাভাইরাসের রোগী পাওয়া গেলে কী করতে হবে, সে ব্যাপারে সার্বক্ষণিক মনিটরিং করা হচ্ছে। বিভিন্ন বন্দর দিয়ে আসা বিদেশফেরত যাত্রীদের হেলথ স্ক্রিনিং করা হচ্ছে। সন্দেহভাজনদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে।

উচ্চ ঝুঁকিতে থাকলেও বিমানবন্দরসহ বিভিন্নভাবে বিদেশফেরত যাত্রীদের গমনাগমন বন্ধ করা প্রয়োজন কি-না, এমন প্রশ্নের জবাবে ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, এ ব্যাপারে প্রয়োজন হলে সরকারের নীতিনির্ধারকরা সিদ্ধান্ত নেবেন বলে তিনি প্রশ্নটি এড়িয়ে যান।

এমইউ/এমএসএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।